খালেদা জিয়া এখন সব মানুষের হৃদয়ে
# নিজ গুনেই তিনি মানুষের ভালোবাসা জয় করেছেন : মডেল মাসুদ
# ওনার একক প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণতাই তাকে সম্মানিত করেছে : সাখাওয়াত
# অনেক আক্রোশের শিকার হবে জেনেও তিনি কখনও আপোস করেননি : প্রাইম বাবুল
বার্ধক্যজনিত নানা স্বাস্থ্য জটিলতার কারণে বেশ কিছুদিন যাবত রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বাংলাদেশের তিনবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী এবং সাবেক রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমানের স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। যার নামের পূর্বে আপোসহীন নেত্রী, দেশনেত্রী, গণতন্ত্রের মা হিসেবে জনগণের প্রশংসা পেয়েছেন। অতি সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকারও তাঁকে দেশের ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ বা ভিভিআইপি হিসেবে ঘোষণা করে সম্মানিত করেছেন।
খালেদা জিয়ার এই প্রাপ্তি তাঁর চৌচল্লিশ বছরের কর্মের ফসল। ক্ষমতার জন্য কোন শক্তির কাছে আপোস না করা, দেশের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করা এবং জীবনের প্রতিটি মুহুর্তে সাধারণ মানুষসহ সাধারণ নেতা কর্মীদের প্রতি ভালোবাসা জ্ঞাপন করা ছিল তার প্রতিটি কর্মের প্রকাশ। এর প্রতিটি বিষয়ই দলমত নির্বিশেষে সকল মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি। এদেশের জনগণ যেখানে অন্যান্য দলের প্রধানদের ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য করে, দেশ ছেড়ে যেতে বাধ্য করে, সেখানে এই নেত্রীর সুস্থতার জন্য দলমত নির্বিশেষে সবাই হাত তুলে পরম করুনাময় আল্লাহর নিকট দোয়া প্রার্থনা করেন।
দলের বিভিন্ন নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন সমর্থকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, খালেদা জিয়া যতটা দেশ ও দেশের মানুষের জন্য চিন্তা করতেন, ভাবতেন সে তুলনায় তিনি কখনও নিজের বা নিজের পরিবারের কথা ভাবতেন না। তাইতো ’৮৬ সালে এরশাদের নির্বাচনে যাবেন না বলে ঘোষণা দেওয়ার পরও যখন অন্যান্য দল আপোস করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন, খালেদা জিয়া সেখানে অংশগ্রহণ না করে আপোসহীন নেত্রীর খেতাব লাভ করেন।
’৯১ সালে তার কাছে সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তিনি রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা পরিবর্তন করে প্রধানমন্ত্রী শাসিত সরকার ব্যবস্থা করেন। ’৯৬ সালে তিনি জনগণের কথা বিবেচনা করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালু করেন এবং ঘোষণা অনুযায়ী ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে নির্বাচন দেন। ২০০৬ এর পর সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত তত্ত্ববধায়ক সরকারের সময় তার দুই সন্তান অমানুষিক নির্যাতনে শিকার হওয়ার পরও তিনি দেশ ছেড়ে যেতে রাজি হননি। তার দেশপ্রেম ও আপোষহীন মনমানসিকতার কারণে একছেলের মৃত্যু প্রতক্ষ করতে হয় বলে তার সমর্থকদের দাবি।
একই সাথে অন্য ছেলেকে মৃত্যুর হাত থেকে ফিরে আসার বিষয়টিও নিজের চোখে দেখতে হয় বলে মনে করেন তারা। একই সাথে খালেদা জিয়ার সেই জনগণের প্রতি ভালোবাসা এবং দেশপ্রেমের কারণেই তার আজকের এই শারীরিক অবস্থা বলেও তাদের সন্দেহ। তবে সবশেষে তিনি এদেশের সব দলের সমর্থক সহ এদেশের সাধারণ মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিতে পেরেছেন বলে আজ তারা গর্বিত।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন পাওয়া মাসুদুজ্জামান মাসুদ যুগের চিন্তাকে বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে এদেশের মানুষই আপোসহীন নেত্রী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। কারণ তিনি দেশের জন্য গণতন্ত্রের জন্য ও জনগণের অধিকারের প্রশ্নের বিষয়ে কখনো আপস করেননি। ন্যায়বিচার, স্বৈরাচারবিরোধী সংগ্রাম এবং জনগণের ভোটাধিকারের মতো মৌলিক বিষয়ের ক্ষেত্রে তিনি সবসময় অটল থেকেছেন। রাজনৈতিক চাপ, রাষ্ট্রীয় বাধা কিংবা বারবার প্রতিকূল পরিস্থিতি তাকে তার নীতি থেকে সরাতে পারেনি।
সত্যের পথে হাঁটতে গেলে অনেক বাধা এবং প্রতিহিংসার শিকার হতে হবে জেনেও তিনি পিছু হটেননি। তাঁর দৃঢ়তা, সাহস এবং সংগ্রামী মনোভাব নেতৃত্বের নতুন মানদণ্ড তৈরি করেছে। রাজনীতিতে যে অনমনীয় নৈতিক অবস্থান প্রয়োজন তিনি সেই অবস্থান ধরে রেখে প্রমাণ করেছেন নীতি বিক্রি হয় না, বিশ্বাস ভাঙা যায় না, আদর্শে ছেদ পড়ে না। কোন প্রলোভন, কোন সমঝোতার প্রস্তাব বা কোন চাপ তাকে বিচলিত করতে পারেনি। জনগণের অধিকার, গণতন্ত্রের মর্যাদা এবং দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে তিনি বারংবার নির্ভীক ভূমিকা রেখেছেন।
তাই এদেশের মানুষ তাকে শুধু একটি দলের নেতা হিসেবে দেখেন না। দেখেন দেশ ও দেশের মানুষের জন্য একজন অটল সংগ্রামী নেত্রীকে। তার নীতির প্রতি নিষ্ঠা, তার সাহস, তার দৃঢ়চেতা অবস্থানই তাকে আপোসহীন নেত্রী হিসেবে ইতিহাসে জায়গা করে দিয়েছে। তার এই উপাধি শুধু সম্মানের নয়, এটি তার ত্যাগ, অধ্যবসায় এবং নেতৃত্বের জীবন্ত দলিল। এদেশের মানুষ চায় খুবই শীঘ্রই এই দেশপ্রেমিক নেত্রী দেশের টানে, দেশের জনগণের ভালোবাসার টানে আবার সুস্থ হয়ে সবার মাঝে ফিরে যেন আসেন।
নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের সাবেক তিনবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী। একজন সেনাপ্রধান একজন রাষ্ট্রপ্রধান একজন স্বাধীনতা ঘোষকের স্ত্রী। তিনি বাংলাদেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দলের চেয়ারপার্সন। সর্বপ্রথম আমি দেশবাসীর নিকট আহ্বান জানাবো, সবাই যেন উনার সুস্থতার জন্য দোয়া করেন। বর্তমানে বেগম খালেদা জিয়াকে সরকার ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ ঘোষণা করে যে সম্মানে ভূষিত করেছেন তা শুধু খালেদা জিয়াকে একা না, বরং সারা বাংলাদেশের মানুষকেই সম্মানিত করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় জিয়াউর রহমান যখন দেশের জন্য যুদ্ধ করেন তখন বেগম খালেদা জিয়াকে ওনার পরিবার সহ অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে।
১৯৮১ সালে জিয়াউর রহমান শহীদ হওয়ার পর ওনি একজন সাধারণ গৃহবধূ থেকে অনেক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হওয়ার পরও শক্তভাবে সব কিছু মোকাবেলা করেছেন। ওনার একক প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণতার কারণে ১৯৯১ সালে প্রথম বারের মতো এবং পরে আরও দুইবার এদেশের মানুষ ওনাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত করেন। ওনার গুনের কারণেই বিএনপি আজ দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে এবং অবস্থান ধরে রেখেছেন। ওনার ওপর, ওনার পরিবারের উপর এত বিপদ আসার পরও তিনি দেশ ছাড়তে রাজি হননি। অন্যান্য রাজনীতির প্রধানদের যে ধরনের কথাবার্তা সেদিক দিয়ে ওনার কথাবার্তা, আচার-ব্যবহার, ভাব-ভঙ্গি, মানুষকে ভালোবাসা, কাছে টেনে নেওয়া এগুলো সবই ছিল একটি ঐশ্বরিক গুন। তাই তার এই জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে আজ সারা দেশের মানুষ তার জন্য হাত তুলবে দোয়া করবে এর চেয়ে বড় পাওনা আর কি হতে পারে।
প্রাইম গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং বিএনপি নেতা আবু জাফর আহমেদ বাবুল বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া জীবনে কখনও আপোস করেননি। গত ১৯৮৬ সালে এরশাদ সরকারের আমলের নির্বাচনে অনেক প্রতিশোধের শিকার হবে জেনেও আপোস করেননি, অংশগ্রহণ করেননি। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় (২০০৬-২০০৮ সাল) যখন অন্যান্য দল আপোস করে বিদেশ চলে যেতে চায় তখনও তিনি আপোস করেননি। দেশের বাইরে আমার কোন জায়গা নেই বলে স্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি। ১৯৯০ এর আন্দোলনে ওনার ভূমিকা ছিল সবচেয়ে বেশি। জনগণের স্বার্থে তিনি ১৯৯১ সালে নির্বাচিত হওয়ার পর রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার পরিবর্তন করে প্রধানমন্ত্রী শাসিত সরকার ব্যবস্থার চালু করেন। অথচ রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার চালু থাকলে ওনার সরকারের দীর্ঘস্থায়ীত্বের জন্য আরও বেশি সুবিধা হতো।
জনগণের কথা বিবেচনা করে তিনি ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালু করেন। ওনি যখন লন্ডনে চিকিৎসার জন্য গিয়েছিলেন তখন ইচ্ছে করলেই তিনি সেখানে থেকে যেতে পারতেন। ওনি জানতেন দেশে শেখ হাসিনা ওনার কি ধরণের ক্ষতি করতে পারেন। তারপরও তিনি দেশে ফিরে এসেছেন। ওনি দেশে আসলেন এবং প্রতিহিংসা শিকার হয়ে জেলে গেলেন। সেখানে শেখ হাসিনা আক্রোমের বশবর্তী হয়ে ওনাকে স্লো পয়জনিংয়ের মাধ্যমে আজকের এই অবস্থার সৃষ্টি করেছেন।
ওনি ’৯৬ সালে ঘোষণা দিয়েছিলেন ওনি নির্বাচিত হওয়ার পর আবারও নির্বাচন দিবেন, ওনি ওনার কথা রেখেছেন ’৯৬ সালে দ্বিতীয় নির্বাচন দিয়েছেন। শেখ হাসিনা ’১৪ সালেও এমন ঘোষণা দিয়েছিলেন কিন্তু তারপরও তিনি তার কথা রাখেননি। খালেদা জিয়া কথা দিয়ে কথা রাখেন। সর্বশে পরিস্থিতি দেখেন, শেখ হাসিনাকে এদেশের মানুষ লাঞ্ছিত করে সরকার থেকে এবং দেশ থেকে বিদায় করেছেন। অন্যদিকে বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতার জন্য এদেশের দলমত নির্বিশেষে সব শ্রেণির মানুষই মন থেকে দোয়া করছেন। এটাতেই প্রমাণ হয় তিনি এদেশের মানুষের কতটা প্রিয়।


