Logo
Logo
×

বিশেষ সংবাদ

সিরাজউদ্দৌলা সড়কের যানজট নিরসনে

রেলওয়ের জমি থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের দাবি

Icon

লতিফ রানা

প্রকাশ: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

রেলওয়ের জমি থেকে অবৈধ  স্থাপনা উচ্ছেদের দাবি

রেলওয়ের জমি থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের দাবি

Swapno



# বৃহত্তর স্বার্থে ক্ষুদ্রতর স্বার্থ বলি দিতে হয় : আফজাল হোসেন পন্টি
# যানজট নিরসনে উচ্ছেদের বিষয়টিকে আমি সমর্থন করি : হাজী নুর উদ্দিন
# এসব স্থাপনা উচ্ছেদ করে সড়ক নির্মাণে যানজট অনেকটাই কমবে : তরিকুল সুজন



নারায়ণগঞ্জ কলেজ, নারায়ণগঞ্জ হাই স্কুল, নারায়ণগঞ্জের সবচেয়ে বড় পাইকারি কাঁচাবাজার (দিগুবাবুর বাজার), দেশের অন্যতম চাল-ডাল-আটা-ময়দা ও কেমিক্যালের পাইকারী বাজার খ্যাত টানবাজার এবং ফলপট্টি ও চারারগোপের মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকাটি মূলত নবাব সিরাজউদ্দৌলা সড়ককে কেন্দ্র করে। একই সাথে নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় রেলস্টেশন, কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল, লঞ্চটার্মিনাল এবং নারায়ণগঞ্জের তথা বাংলাদেশের অন্যতম ব্যস্ততম খেয়াঘাটের মতো খুবই গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোর যানবাহন ও মানুষের চলাচলের চাপও সিরাজউদ্দৌলা সড়কের উপর পড়ছে।


তার উপর মারার উপর খারার ঘা হিসেবে সড়কটির তিন চতুর্থাংশই আছে ভাসমান হকারদের দখলে। সিরাজউদ্দৌলা সড়কের ১নং রেলগেট থেকে চারারগোপ অঞ্চল পর্যন্ত জায়গাকে যানজটমুক্ত করার জন্য এর পাশে থাকা এন. ইসলাম মার্কেট, নারায়ণগঞ্জ শপিং কমপ্লেক্স, মাউরা হোটেলসহ এখানে সকল প্রকার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের মাধ্যমে সড়কটি প্রশস্তকরণে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের সচেতন মহল।


নারায়ণগঞ্জবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায় শহরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা যানজট। যা শহরের বিষফোড়া হিসেবে পরিচিত। এই সিরাজউদ্দৌলা সড়কের যানজট নিরসনে একাধিকবার উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়। কিন্তু তা ছিল আংশিক, তাই আলোর মুখ দেখেনি। তাই কদম রসুল সেতুকে কেন্দ্র করে এই সড়কের পাশে থাকা রেলওয়ের জমিটি সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করায় এখানে থাকা স্থাপনা উচ্ছেদ করা অনেকটাই সহজতর হবে বলে তাদের ধারণা।


স্থানীয়দের মতে একটি চক্র তাদের হীন স্বার্থ হাসিলের জন্য এই এই জায়গাগুলো কুক্ষিগত করে রেখেছে। তাদের নেপথ্যে শহরের শত্রু হিসেবে পরিচিত বেশ কিছু রাঘব বোয়াল সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন বলে এই চক্রটি প্রশাসনকেও বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখানোর মতো স্পর্ধা দেখাচ্ছে বলে তাদের অভিমত। তাদের আস্কারায় হাতে গোনা কয়েকজন লোকের কাছে শহরের লাখ লাখ লোক জিম্মি হয়ে আছে বলেও মনে করেন তারা। তাই যত দ্রুত সম্ভব এই জমিতে থাকা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জ এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই স্থানটিকে যানজট সমস্যার হাত থেকে রেহাই করার জন্য জোর দাবি জানিয়েছেন শহরবাসী।
 
এই বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আফজাল হোসেন পন্টি যুগের চিন্তাকে বলেন, এখানকার সড়কটির একটি বড় অংশই সব সময় হকারদের অবৈধ দখলে থাকে। এখানে বেশ কিছু অপ্রয়োজনীয় স্থাপনাও আছে, যেগুলো এই যানজটের মূল কারণ। এখানে রেলওয়ের জায়গা থাকলে সেখান থেকে অবশ্যই স্থাপনা উচ্ছেদ করে যানবাহন চলাচলের জন্য জায়গা করে দেওয়া উচিৎ।


এখানে থাকা এন. ইসলাম মার্কেট, নারায়ণগঞ্জ শপিং কমপ্লেক্সসহ বেশকিছু অস্থায়ী দোকানপাট নির্মাণের মাধ্যমে দখল হয়ে যাওয়া জায়গাটা উদ্ধার কাজে বাধা দেওয়ার জন্য তারা যে যুক্তিটি প্রদান করতে পারে তা হলো এখানে যাদের দোকানপাট আছে তাদের জীবিকার সমস্যা হবে বলে। কিন্তু প্রশাসন এটা বিবেচনা কখন নিবে! প্রশাসন কি ৫ জন লোকের জন্য ১০ হাজার লোককে কষ্ট দিবে?


নাকি ১০ হাজার লোকের জন্য ৫ জন লোককে উচ্ছেদ করবেন এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এখান দিয়ে প্রতিদিন কমপক্ষে ৫০ হাজার লোক যাতায়াত করে। সেখান দিয়ে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, যাত্রীসহ নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকার মানুষের যাতায়াত করতে হয়। এখন এখানকার একটি দুটি মার্কেটের জন্য কি আপনি হাজার হাজার মানুষকে কষ্ট দিতে পারেন? অবশ্যই না। আপনি যদি মনেই করেন যে, তাদের প্রতি অন্যায় হচ্ছে তাহলে নারায়ণগঞ্জ শহরের অন্য জায়গায় তাদের পুনর্বাসন করুন। কিন্তু এখানে এতগুলো মানুষকে কষ্ট দিয়ে মার্কেটের কয়েকজন লোকের চিন্তা করবেন এটা কোনভাবেই সমর্থন করা যায় না।


এই বিষয়ে আমরা নারায়ণগঞ্জবাসীর সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ নুর উদ্দিন আহমেদ বলেন, রেলওয়ের যে জায়গাটা সিটি করপোরেশনের কাজের জন্য দেওয়ার চুক্তি করা হয়েছে তা এই এলাকার যানজট নিরসনে খুব দ্রুত উচ্ছেদের বিষয়টিকে আমি সমর্থন করি। এটা করলে এখানকার সাধারণ মানুষের উপকারে আসবে। এখান দিয়ে যে যানবাহনগুলো চলাচল করে সেসব যানবাহন এবং সাধারণ জনসাধারণ, ছাত্র-জনতা যারাই এই পথ দিয়ে চলাচল করে সবার জন্যই চলাচলের একটি রাস্তা হবে এবং তারা নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারবে।


নারায়ণগঞ্জ জেলা গণ সংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক তরিকুল সুজন বলেন, আমি নিশ্চিতভাবেই মনে করি যে, নারায়ণগঞ্জের জনসংখ্যার তুলনায় সড়কের পরিমান অনেক কম। যেটুকু সড়ক আছে সেটুকুও আমরা ঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারছি না। তারমধ্যে নারায়ণগঞ্জে যে বিপনীবিতান আছে তার কোনটাতেই পাকিংয়ের জন্য জায়গা নেই। আমরা দেখতে পাচ্ছি বর্তমানে সিটি করপোরেশনের ড্রেনেজে ব্যবস্থার মাধ্যমে মূল সড়ক আরও সংকুচিত হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জের সড়কগুলোর দু’পাশ দিয়ে হকার বসে সাধারণ জনগণের চলাচলসহ যানবাহন চলাচলেরও ব্যঘাত ঘটাচ্ছে।


আমরা দেখেছি সিটি করপোরেশন এবং রেলওয়ের অনেক জায়গাই দখল করে অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। কর্তৃপক্ষ যদি এসব অবৈধ মার্কেট ও স্থাপনাকে উচ্ছেদ করে সড়ক নির্মাণের জন্য ব্যবহার করে তাহলে আমরা আশা রাখি নারায়ণগঞ্জের যানজট অনেকাংশেই কমে আসবে এবং নারায়ণগঞ্জের জনজীবনে একটা স্বস্তি ও শান্তি চলে আসবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন