বন্দরবাসীর স্বপ্ন পূরণের আরও এক ধাপ
পাইলিংয়ের মাধ্যমে কদম রসুল সেতুর কাজ উদ্বোধন
লতিফ রানা
প্রকাশ: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
পাইলিংয়ের মাধ্যমে কদম রসুল সেতুর কাজ উদ্বোধন
# আমি সেতুর কাজ বন্ধ না হওয়ার দায়িত্ব নিয়েছিলাম : নাসিক প্রশাসক
# এলাকার ভোগান্তি লাঘবের অংশীদার হতে পেরে আমি খুশি : জেলা প্রশাসক
# নকশা ডিজাইনে আমরা সর্বোচ্চ সতর্কতার সাথে কাজ করেছি : এলজিইডি
পিলার বা খুঁটির পাইলিংয়ের নেট স্থাপন এবং ফলক উম্মোচনের মাধ্যমে উদ্বোধন করা হলো শহর ও বন্দরের দীর্ঘদিনের আকাঙ্খিত কদমরসুল সেতু। যার মাধ্যমে দীর্ঘ ৫৪ বছরের আশা ও আকঙ্খার প্রতিফলন ঘটবে বলে মনে করছেন শহর ও বন্দরের জনগণ। গতকাল বুধবার বিকাল ৪ টার দিকে কালির বাজার চারারগোপ এলাকার দেলোয়া টাওয়ারের সামনের এলাকায় ৫৪ ফুট গভীর পাইলিংয়ের জণ্য লোহার নেট স্থাপনের মাধ্যমে এবং নির্মাণ কাজের ফলক উন্মোচনের মাধ্যমে এই সেতুর কাজের উদ্বোধন করেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রশাসক ড. আবু নছর মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ এর জেলা প্রশাসক জনাব রায়হান কবির, কদম রসুল সেতু’র প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী হরিকিংকর মোহন্ত, নাসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. নূর কুতুবুল আলম, এলজিইডি প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আহসানুজ্জামান, নাসিকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আজগর হোসেনসহ বিভিন্ন কর্মকর্তা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিগণ।
এ সময় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) এর প্রশাসক ড. আবু নছর মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ কদম রসুল সেতুর বিষয়ে বলেন, এই সেতুর নির্মাণ কাজ নিয়ে যখন জনগণের মধ্যে সন্দেহ তৈরি হয়েছিল যে আসলেই সেতুটি নির্মাণ করা হবে কি না! নাকি নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যাবে, সে সময় আমি তাদের নির্মাণ কাজ চলমান রাখার জন্য তাদের আশ্বস্ত করেছিলাম। এখন সেতুর মূল কাজ শুরুর মাধ্যমে সেই যাত্রা শুরু হলো।
সেতুর ল্যান্ডিং পয়েন্ট নিয়ে যানজটের কোন আশঙ্কা নেই। আমরা একাধিক ল্যান্ডিং পয়েন্ট নিয়ে কাজ করার বিষয়ে কাজ করছি। আমাদের নির্মাণ কাজে শহর বন্দর কোন এলাকারই যেন সমস্যা তৈরি না করে সে বিষয়ে সচেষ্ট থাকবো। আমি নির্মাণ প্রতিষ্ঠানকে কাজটি অবশ্যই যেন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই সম্পন্ন হয় সে বিষয়ে তীক্ষè নজর রাখতে বলবো। আশা করি খুব শীঘ্রই এই সেতুর মাধ্যমে শহর ও বন্দরের মানুষের মধ্যকার যোগাযোগ ব্যবস্থার নতুন দিগন্ত উন্মোচন হবে।
নারায়ণগঞ্জ এর জেলা প্রশাসক মো. রায়হান কবির দৈনিক যুগের চিন্তাকে বলেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের দুটি অংশের একটি নদীর পূর্বপাড় বন্দর এলাকায়। একটি সেতুর অভাবে এই এলাকার মানুষের যে ভোগান্তি তা লাঘবের জন্য অনেক দিন যাবতই এই সেতু নির্মাণের চেষ্টা করা হচ্ছিল। সেই হিসেবে কাজটি অনেক দেরিতে শুরু হলো। তারপরও হয়েছে এ জন্য আল্লাহর কাছে শোকর আদায় করছি এজন্য আমরা খুবই খুশি।
যেহেতু এখন সব সমস্যা শেষ, সেতুর কাজ শুরু হয়েছে তা সময় মতো যেন শেষ করা যায় আমরা সেই বিষয়টিতে জোর দিচ্ছি। সেতুর গুণগত মান বজায় রেখে কাজটি যেন সময় মতো শেষ হয় সে জন্য আমরা জেলা প্রশাসন থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।
এলজিইডি নারায়ণগঞ্জ এর প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আহসানুজ্জামান শহর ও বন্দর এলাকার দুই প্রতিনিধির প্রশ্নের জবাবে জানান, এই সেতুটি নারায়ণগঞ্জ শহর ও বন্দরের মানুষের দীর্ঘদিনের আক্ষেপ ঘুচাবে। এই সেতুর ল্যান্ডিং এরিয়ায় যেন কোন প্রকার যানজট সমস্যা না হয় নকশা ডিজাইনের ক্ষেত্রে আমরা সেই বিষয়টিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছি। তাই এই বিষয় নিয়ে কোন সংশয় থাকার কথা নয়।
তিনি আরও জানান, এই সেতু কোন হালকা বা সাধারণ যানবাহনের জন্য নির্মাণ করা হবে না। এই সেতু দিয়ে যেন ভারি যানবাহন চলাচল করতে পারে সেই বিষয়ের উপরও আমরা বিশেষ নজর দিয়েছি। দেশের প্রথম সারির চার-পাঁচটি সেতুর মতো মজবুত করে এর পিলার নির্মাণ করা হচ্ছে। তাই শুধু মাত্র ছোট যানবাহন চলাচল করতে পারবে বিষয়টি তা নয়।
২০১৮ সালের ৯ অক্টোবর একনেকের সভায় কদম রসুল সেতুটি নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া হয়। সেতুটি নির্মাণে কাজ করছে চায়নার দুটি সরকারি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে ১৯ পিলালের জন্য মাটি পরিক্ষার কাজ শেষ করে কর্তৃপক্ষ। সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ করার জন্য ২০২৮ সালের জুন মাস পর্যন্ত মেয়াদ দেওয়া হয়েছে। এই সেতুটি বাংলাদেশের সর্ব বৃহৎ ক্যাবল স্টেড ব্রিজ হবে বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন এবং এলজিইডি কর্তৃপক্ষ। সেতু নির্মাণের ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৩৫ কোটি ১৮ লাখ টাকা।
মোট ২৬ টি পিলারের মাধ্যমে সেতুটি নির্মাণ হবে বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। যার মধ্যে শহরের ১৪ টি এবং বন্দর এলাকায় ১২টি পিলার নির্মাণ করা হবে। গাড়ি চলাচলের জন্য দুটি লেন থাকলেও দুই পাশে জনসাধারণের চলাচলের জন্য আলাদা দুটি ফুটপাতের ব্যবস্থা থাকবে।


