Logo
Logo
×

বিশেষ সংবাদ

না.গঞ্জবাসী ঝুকিপূর্ণ ভবন অপসারণের দাবি

শক্তিশালী ভূমিকম্পে ভয়ঙ্কর কম্পন

Icon

লতিফ রানা

প্রকাশ: ২৩ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

শক্তিশালী ভূমিকম্পে ভয়ঙ্কর কম্পন

শক্তিশালী ভূমিকম্পে ভয়ঙ্কর কম্পন

Swapno



# আমরা দ্রুত এই বিষয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি : জেলা প্রশাসক
# মাউশির ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকায় না.গঞ্জের ৪ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
# ভূমিকম্পে রূপগঞ্জে দেয়াল ধসে নিহত ১
# এই ভূমিকম্প নারায়ণগঞ্জের জন্য সতর্ক সংকেত : হাজী নূরউদ্দিন আহমেদ


নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ৫.৭ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে হওয়া এ ভূমিকম্পে তীব্র ঝাঁকুনি অনুভূত হয় ঢাকায়। যা দেশের ভেতরে উৎপত্তি হওয়া গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী এবং ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের এ যাবত কালের সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প বলেও জানা যায়। প্রতিবেশি জেলা নরসিংদীর মাধবদী এলাকা থেকে উৎপত্তি হওয়া এই ভূমিকম্পটি হিরোশিমার পারমানবিক বোমার সমান শক্তিশালী বলেও বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে।


এই শক্তিশালী ভূমিকম্পের আঘাতে নারায়ণগঞ্জে ১ জনের মৃত্যুসহ বেশ কয়েকজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ভূমিকম্পে আতঙ্কিত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন অনেকে। এই ভূমিকম্পকে নারায়ণগঞ্জের জন্য সতর্ক সংকেত উল্লেখ করে এখানকার জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো দ্রুত অপসারণ এবং ভবিষ্যতে বিল্ডিং কোড মেনে ভবন নির্মাণ করার বিষয়ে প্রশাসনকে কঠোর হওয়া প্রয়োজন বলে সচেতন মহলের দাবি।


বিভিন্ন মাধ্যম থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী গতকালের ভূমিকম্পটি নরসিংদী জেলার মাধবদী এলাকা থেকে উৎপত্তি। যা নারায়ণগঞ্জ জেলার খুব কাছাকাছি এলাকা। গত তিন দশকের মধ্যে দেশজুড়ে যা সর্বোচ্চ এবং ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের ইতিহাসের সর্বোচ্চ শক্তিশালী ভূমিকম্প বলে বিশ্লেষকদের অভিমত। এরই মধ্যে গতকালের ভূমিকম্পে রূপগঞ্জ উপজেলায় দেয়াল ধসে ফাতেমা নামের ১০ মাস বয়সী এক শিশুর করুণ মৃত্যু ঘটে।


নিহত ফাতেমা গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের ইসলামবাগ ৫ নম্বর ক্যানেল এলাকার আব্দুল হকের মেয়ে। এ সময় গুরুতর আহত হন নিহত শিশুর মা কুলসুম বেগম ও প্রতিবেশী জেসমিন বেগম। এরই মধ্যে জেলার বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন ভবনে ফাটলসহ হেলে পড়ার ঘটনা ঘটেছে বলে বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করা হয়। এরমধ্যে ফাটলের ঘটনা দেখা গেলেও হেলে পড়ার কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এছাড়াও ভূমিকম্পের পর শহরের খানপুর হাসপাতাল থেকে আতঙ্কগ্রস্ত ৭ জন রোগীকে চিকিৎসা প্রদান করা হয় বলে জানা গেছে।

এমতবস্থায় দেশের অন্যতম শিল্প ও বাণিজ্যিক জেলা এবং জনবহুল ঐতিহাসিক জেলা হিসেবে পরিচিত এই জেলার অসংখ্য পুরাতন, জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো এখনই অপসারণ করা না হলে তা বড় ধরণের কোন দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে বলে সচেতন মহলের অভিমত। নারায়ণগঞ্জ শহরের মধ্যে টানবাজার, এসএম মালেহ রোড, মহিমা গাঙ্গুলী, গলাচিপা, নিতাইগঞ্জ, চাষাঢ়া এলাকা সহ  এসব ভবন অবস্থিত। যেখানে অত্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে এখনও লোকজন বাস করছে বলে জানা যায়। এছাড়াও সদর, বন্দর, সোনারগাঁও, রূপগঞ্জ ও আড়াই হাজারের বিভিন্ন এলাকায় এখনও অনেক জরাজীর্ণ ও ঝুকিপূর্ণ ভবন রয়েছে বলে জানা যায়। যেগুলো খুবই পুরাতন, মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে বসবাসের অনুপোযুক্ত হয়ে পড়েছে। অনেকগুলোতে এমনিতেই পলেস্তার খসে পড়ছে, কিংবা দেয়ালের মধ্যে ফাটল সৃষ্টি হয়েছে।


অন্যদিকে বাংলাদেশ মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের তালিকা অনুযায়ী নারায়ণগঞ্জের বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবনকে অতিঝুঁকিপূর্ণ আখ্যা দিয়ে এগুলো ভেঙ্গে ফেলার সুপারিশ করেছে বলে জানা যায়। যার মধ্যে রয়েছে নারায়ণগঞ্জের দেলপাড়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, নারায়ণগঞ্জের সরকারি কদম রসুল কলেজ, নারায়ণগঞ্জ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, নারায়ণগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজ এর ভবন। এর বাইরেও জেলার বিভিন্ন জায়গায় আরও একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে যেখানে পলেস্তার খসে পড়ছে বলেও বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মিডিয়ায় খবর প্রকাশ করা হয়।


পুরাতন ভবনগুলো অপসারণের বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের নবনিযুক্ত জেলা প্রশাসক মো. রায়হান কবির যুগের চিন্তাকে বলেন, আমরা আগামীকাল (আজ) থেকেই এই বিষয়ে কাজ শুরু করতেছি। এরই মধ্যে এর সাথে জড়িত বিভিন্ন বিভাগকে এ ধরণের জরাজীর্ণ কিংবা ঝুঁকিপূর্ণ কোন ভবন থাকলে তার তালিকা তৈরি করার জন্য আমি নির্দেশ দিয়েছি। আর এই বিষয়ে যদি পুরানো কোন তালিকা থেকে থাকে, তাহলে সেই তালিকা নিয়ে কাজ করার জন্য বলেছি। আমি যেন এসব তালিকা দেখে বা বর্তমান অবস্থার উপর ভিত্তি করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নিতে পারি। আশা করতেছি আমরা কাল (আজ) থেকেই এই কাজ শুরু করতে পারবো।


এই বিষয়ে জানতে চাইলে আমরা নারায়ণগঞ্জবাসী’র সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ নূরউদ্দিন আহমেদ বলেন, এই ভূমিকম্প আমাদের নারায়ণগঞ্জবাসীর জন্য একটি সকর্ত সংকেত। এর উৎপত্তিস্থল আমাদের নারায়ণগঞ্জের খুব কাছাকাছি এলাকা থেকে। তাই আমাদের এখনই সতর্ক হতে হবে। নারায়ণগঞ্জে বিগত ১০-১৫ বছর যাবত যেসব ভবন তৈরি করা হয়েছে তার মধ্যে বেশ কিছু ভবন আছে যা বিল্ডিং কোড মেনে তৈরি করা হয়েছে। বাকি প্রায় সব ভবন নির্মাণেই কোন প্রকার বিল্ডিং কোড মেনে করা হয়নি। তাই প্রশাসনের একদিকে যেমন জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো চিহ্নিত করা প্রয়োজন, একই সাথে ভবিষ্যতে যেসব ভবন তৈরি করা হবে সেগুলো যেন বিল্ডিং কোড মেনে তৈরি করা হয়, সে বিষয়ে প্রশাসনের তদারকী ও নজরদারী বাড়ানো উচিৎ।

ভূমিকম্পে নিহত মেয়ের দাফনে থাকতে পারেননি, স্ত্রীকে নিয়ে ঘুরছেন হাসপাতালে

রূপগঞ্জে ভূমিকম্পে দেয়াল ধসে ১ বছর বয়সি কন্যাশিশু ফাতেমা নিহত ও তার মা কুলসুম বেগম ও প্রতিবেশী জেসমিন বেগম আহত হওয়ার ঘটনায় হৃদয় বিদারক ঘটনার অবতারণা হয়েছে।  গতকাল শুক্রবার বিকালে শিশু ফাতেমার দাফন সম্পন্ন হয়েছে। এতে অংশ নিতে পারেননি তার মা-বাবা।  নিহত ফাতেমার বাবা আব্দুল হক গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের ইসলামবাগ ৫ নাম্বার ক্যানেল এলাকার বাসিন্দা। তিনি তার স্ত্রী কুলসুমকে নিয়ে হাসপাতালে ঘুরছেন।


এ বিষয়ে ফাতেমার বাবা-মার সঙ্গে থাকা খালু মোহাম্মদ হোসেন জানিয়েছেন, আব্দুল হক তার স্ত্রীকে নিয়ে দুপুর থেকে হাসপাতালে-হাসপাতালে ঘুরছেন। এখন পর্যন্ত তিনটি হাসপাতালে গেলেও উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারেননি। দুটি হাসপাতালে শয্যা না থাকায় তার ভর্তি নেওয়া হয়নি।

এর আগে কুলসুমকে রূপগঞ্জের ইউএস বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে জরুরি বিভাগে প্রাথমিক চিকিৎসার পর শয্যা না থাকার কথা জানানো হয়। পরে তাকে বেসরকারি ঢাকা ন্যাশনাল হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে ভর্তি নিতে অপারগতা প্রকাশের কথা জানানো হয়।

মোহাম্মদ হোসেন বলেন (তার ভাষায়), দুপুর থেইকা আমরা ঘুরতেছি। ঢাকা মেডিকেলে খালি ওয়াশ কইরা ব্যান্ডেজ কইরা বলে সিট নাই, বাড়িতে নিয়ে যেতে। কিন্তু মাথায় এমন আঘাত পাওয়া রোগী যার কোনো হুঁশ নাই, কথা বলতে পারে না, তারে কেমনে বাড়িতে নেই। কিন্তু ভাই, কোথাও ভর্তি করাতে পারতেছি না। মোবাইল ফোনে মোহাম্মদ হোসেন বলেন, আমরা গরিব মানুষ, ক্ষমতা নাই। নাইলে তিনটা জায়গায় গিয়াও চিকিৎসা কেন পামু না? আমার সোনার বাংলাদেশে গরিবের চিকিৎসা নাই।

সবশেষ অবস্থার কথা জানতে চাইলে তিনি জানান, চিকিৎসকের পরামর্শে এখন তারা আগারগাঁওয়ের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস ও হাসপাতালে যাওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্সের জন্য অপেক্ষা করছেন। তিনি বলেন, ‘ওই হাসপাতালে যাওয়া পর্যন্ত আমার শালি বাঁচে কিনা শিওর না’।

শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটের দিকে ভূমিকম্পের ঘটনা ঘটে। স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকালে ভূমিকম্পের সময় ঘটনাস্থলে হয়ে ভুলতা গাউছিয়া যাওয়ার সময় সড়কের পাশের দেয়াল ধসে শিশু ফাতেমা, তার মা কুলসুম বেগম ও প্রতিবেশী জেসমিন বেগমের ওপর পড়ে। এ সময় ঘটনাস্থলেই নবজাতকের মৃত্যু হয়। পরে তারা দেয়ালের নিচ থেকে শিশুর লাশ উদ্ধার করেন। আহত অবস্থায় শিশুটির মা কুলসুম বেগম ও প্রতিবেশী জেসমিন বেগমকে উদ্ধার করে স্থানীয় বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন।

এ বিষয়ে ভুলতা পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মোখলেসুর রহমান বলেন, ভূমিকম্পে দেয়াল ধসে ফাতেমা নামের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এ সময় স্থানীয়রা শিশুটির মা কুলসুম বেগম ও প্রতিবেশী জেসমিন বেগমকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে স্থানীয় বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান।

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন