শামীম ওসমানের নির্দেশেই এই হত্যাকাণ্ড,‘শীঘ্রই র্যাবের চার্জশীট’
ত্বকী হত্যায় অয়ন-আজমেরী ওসমান-শাহ নিজাম জড়িত
প্রকাশ: ০২ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
ত্বকী হত্যায় অয়ন-আজমেরী ওসমান-শাহ নিজাম জড়িত
নারায়ণগঞ্জে আলোচিত তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যায় জড়িতদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র (চার্জশীট) দিতে যাচ্ছে র্যাব এ্যাকশন ব্যাটেলিয়ান (র্যাব)। চলতি মাসেই আদালতে এই অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে বলে জানিয়েছেন র্যাব। এক যুগ আগে নারায়ণগঞ্জের তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যা মামলার তদন্ত কার্যক্রম শিগগিরই শেষ করা সম্ভব হবে বলে জানিয়ে গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের করা এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান।
র্যাব-১১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন। তদন্তে অনেক অগ্রগতি জানিয়ে সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘এখনও তদন্ত প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে এবং আমাদের অনেক ডেভলপমেন্টও আছে। আমরা অতি শিগগির এটা দিয়ে দেব বলে আশা করছি।’
ত্বকী হত্যার সাথে সরাসরি নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সন্ত্রাসী পরিবার (ওসমান পরিবার) জড়িত থাকায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে মামালার তদন্ত কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়। শেখ হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার পর বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে আলোচিত ত্বকী হত্যা নিয়ে নতুন করে তদন্ত শুরু হয়।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, অভিযোগপত্রে ত্বকী হত্যার নির্দেশতদাতা হিসেবে সন্ত্রাসীদের গডফাদার শামীম ওসমানের নাম আসতে পারে। এছাড়া শামীম ওসমানের ছেলে অয়ন ওসমান, শামীম ওসমানের সমস্ত অপকর্মের একনিষ্ঠ সহচর যুবলীগ নেতা শাহ নিজাম, শামীম ওসমানের ভাতিজা ও প্রয়াত নাসিম ওসমানের ছেলে আজমেরী ওসমানসহ ১৪ জনের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে র্যাব।
সূত্রগুলো জানিয়েছে, ২০১৩ সালের ৬ মার্চ বিকেলে শহরের কালীর বাজারের বাসা থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হন এ লেভেল পরীক্ষায় রসায়ন ও পদার্থবিদ্যায় বিশ্বের সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়া মেধাবী ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী। ওই দিন শহরের ‘সুধীজন পাঠগারের’ সামনে থেকে শামীম ওসমানের ছেলে অয়ন ওসমানের ক্যাডাররা তাকে তুলে নিয়ে যায়। প্রথমে ত্বকীকে নিযে যাওয়া হয় শহরের সায়াম প্লাজায় অবস্থিত যুবলীগ নেতা শাহ নিজামের টর্চার সেলের। তখন ওই টর্চার সেলে আগে থেকেই অয়ন ওসামন, শাহ নিজাম এবং তাদের বন্ধুরা উপস্থিত ছিল।
সেখানে ত্বকীকে অয়ন ওসমান, শাহ নিজাম ও তার বন্ধুরা মিলে নির্যাতন করে। রাতে ত্বকীকে নিয়ে যাওয়া হয় শহরের আল্লামা ইকবাল রোডে অবস্থিত আজমেরী ওসমানের টর্চার সেলে। সেখানে রাতভর নির্যাতন চালিয়ে ত্বকীকে হত্যা করা হয়। ভোর রাতে আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে তার ক্যাডার বাহিনী ত্বকীর লাশ গুম করতে ৫নয় খেয়াঘাট দিয়ে শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে দেয়। ওই সময় শামীম ওসমানের হস্তক্ষেপে হত্যাকাণ্ডের সাথে অয়ন ওসমান ও তার সমস্ত অপকর্মের দোসর শাহ নিজামকে যাতে মামলায় অভিযুক্ত না করা হয় সে ব্যাপারে নানা তৎপরতা চালায়। দুই দিন পর ৮ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীর কুমুদিনি খাল থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
এই হত্যার ঘটনায় র্যাব দীর্ঘ তদন্ত শেষে আজমেরী ওসামনকে আসামী করে ১১ জনের বিরুদ্ধে চার্জশীট দেওয়ার প্রস্তুতি নেয় এবং র্যাব সংবাদ সম্মেলন করে মামলার তদন্ত শেষ হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানায়। র্যাব ত্বকী হত্যার চার্জশীট অনুমোদনের জন্য তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠালে তিনি এটা দেওয়া যাবেনা বলে ফেরত পাঠান।
এই সময় র্যাবের তদন্তে যে ১১ জনের নাম উঠে এসেছিল।
তদন্তে আজমেরী ওসমান ছাড়া অন্য যাঁদের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেছে তাঁরা হলেন: রাজীব, কালাম শিকদার, মামুন, অপু, কাজল, শিপন, জামশেদ, ইউসুফ হোসেন, সুলতান শওকত ওরফে ভ্রমর ও তায়েবউদ্দিন ওরফে জ্যাকি। এই হত্যা মামলায় আজমেরী ওসমানের ঘনিষ্ঠ ক্যাডার সুলতান শওকত ওরফে ভ্রমর আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দিয়েছিল।
ত্বকী হত্যাকাণ্ডের পর ২০১৩ সালের ১৭ মার্চ ২০১ সদস্য বিশিষ্ট ‘সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চ’ গঠনের পর থেকে এই হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে অনঢ় ছিলেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও নিহত ত্বকীর পিতা রফিউর রাবি। পুরো নারায়ণগঞ্জসহ দেশ ও দেশের বাহির থেকে লাগাতার ত্বকী হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে নানা কর্মসূচি চলেছে এবং যা বর্তমানেও অব্যাহত রয়েছে। নারায়ণগঞ্জবাসীও এই হত্যাকাণ্ডের বিচারের ব্যাপারে সোচ্চার রয়েছে।
এদিকে র্যাব কর্মকর্তারা জানিয়েছে, তারা ইতিমধ্যে আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তাদের তদন্ত শেষ করেছে, কারা এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত সেসব তথ্য-প্রমাণও তারা সংগ্রহ করেছেন। আদালতে চার্জশীট দাখিলের মাধ্যমেই প্রকৃত অপরাধীদের নাম আইনের আওতায় আসবে।
২০২৪ সালের ১ অক্টোবর র্যাব-১১ মিডিয়া অফিসার সহকারী পুলিশ সুপার সনদ বড়ুড়া স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ত্বকী হত্যা মামলায় আব্দুল্লাহ্ আল মামুন (৪০) নামে আরও এক পলাতক আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে প্রায় ২২দিন ত্বকী হত্যা মামলার ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে অভিযান চালিয়ে আজমেরী ওসমানের গাড়িচালক মো. জামশেদসহ ৬ ঘনিষ্ঠ সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
এর মধ্যে আজমেরী ওসমানের সহযোগী কাজল হাওলাদার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন। অন্য দুই আসামি শাফায়েত হোসেন (শিপন) ও মামুন মিয়াকে দুই দফায় ৯ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। গাড়িচালক জামশেদকে ৫ দিনের রিমান্ড শেষে আদালতে হাজির করা হলে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ইয়ার মোহাম্মদ কারাগারে আছেন।


