Logo
Logo
×

বিশেষ সংবাদ

এবার একাধিক সেতুর জন্য আন্দোলন করবে বন্দরবাসী

Icon

যৃুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশ: ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০০ এএম

এবার একাধিক সেতুর জন্য আন্দোলন করবে বন্দরবাসী
Swapno

# স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও এতটা পিছিয়ে থাকা দুঃখজনক : মাসুদুজ্জামান

# এই সেতু আমরা বাস্তবায়ন করে ছাড়বো ইনশাআল্লাহ : নূর উদ্দিন আহমেদ

# যারা বিভাজনকে উস্কে দিবেন তারা নারায়ণগঞ্জবাসীর শত্রু : তরিকুল সুজন

 

শীতলক্ষ্যা নদীর উপর নির্মাণ শুরু হওয়া কদম রসুল সেতুর কাজ বন্ধ করার যে কোন ষড়যন্ত্র প্রতিহত করার কড়া হুশিয়ারি দিয়েছেন শহর ও বন্দরের সচেতন মহল। এ সময় শহর-বন্দরের মধ্যে কোন বিভাজন সৃষ্টির অপচেষ্টা দূর করা সহ এই নদীর উপর একাধিক সেতু নির্মাণের দাবি জানানো হয়। গতকাল শুক্রবার বন্দরের সিএসডি গেট এলাকায় বন্দর উন্নয়ন ফোরামের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এক মানববন্ধনে এ ধরণের মতামত তুলে ধরেন। ফোরামের সভাপতি হাফেজ মো. কবির হোসেনের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব লতিফ রানার সঞ্চালনায় এই কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। এই দাবির সাথে সংহতি প্রকাশ করেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী শিল্পপতি মাসুদুজ্জামান মাসুদসহ শহরের সচেতন মহল।

 

এ সময় মাসুদুজ্জামান মাসুদ বলেন, এই সেতুর জন্য বন্দরবাসীর যে দাবি, তা শুধুই একটি ইমোশন না। এটা তাদের প্রাণের দাবি, এটাই তাদের বাস্তবতা। আজ স্বাধীনতার ৫৪ বছর পার হয়ে যাওয়ার পরও এই বন্দরবাসী এতটা পিছিয়ে আছে, এটা খুবই দুঃখজনক। এই বন্দরবাসী কতটা বঞ্চিত, এখনও এখানকার মানুষকে চাঁদা দিয়ে ঘাট পার হয়ে আসা-যাওয়া করতে হয়। এটা কোন প্রক্রিয়া হতে পারে না। বন্দরবাসীর নদী পার হওয়ার জন্য এখনও শীতলক্ষ্যা নদীত ৮ থেকে ১০টি ঘাট আছে। এই ২০২৪-২৫ সালেও এখানকার বাসিন্দাদের এধরণের সমস্যা দেখবো এটা সহ্য করা যায় না। আমরা শুধু এই একটা সেতু নিয়েই পড়ে থাকবো না, আমাদের দাবি আরও দুই-তিনটা সেতু। এখানে বন্দর-নারায়ণগঞ্জে কোন বিভেদ বা বিভাজন নাই, আমরা আপনাদের পাশে আছি। এখানে কোন পক্ষ বিপক্ষের বিষয় না, একটা বিষয়ে আপনাদের পাশে আছি, শুধু এই সেতু নয়, যেকোন ন্যায্য দাবি বন্দর উন্নয়ন ফোরামসহ এখানকার যারা উন্নয়নের পাশে থাকেন, আমরাও আপনাদের পাশে থাকবো।

 

আয়োজনে আমরা নারায়ণগঞ্জবাসীর সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ নুর উদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রতিদিন এই নদীর উপর দিয়ে যে লক্ষাধিক মানুষ নৌকার মাধ্যমে পারাপার হয়। প্রায়ই অনেককে বিভিন্ন দুর্ঘটনায় কারণে জীবন বিসর্জন দিতে হয়, ঝর-বৃষ্টির সময় বিভিন্ন ভোগান্তি পোহাতে হয়। এই বিড়ম্বনা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আমরা আরও প্রায় বারো বছর আগেই এই শীতলক্ষ্যা নদীর উপর দিয়ে একটি সেতু নির্মাণের দাবি জানাই। দেশে এমনও জায়গা আছে যেখানে মানুষের তেমন কোন বসবাস নেই, কিন্তু সেতু নির্মাণ করা হয়েছে, তাই আমরাও শহীদ মিনারে সভার মাধ্যমে বন্দরবাসীর জন্য সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়েছি। এই কদম রসুল সেতুর নির্মাণ কাজ যেন বন্ধ রাখা না হয়, সেজন্য আমরা সিটি কর্পোরেশনের আগের এবং বর্তমান প্রশাসককে আলাদা আলাদা স্মারকলিপি দিয়েছি। বর্তমান প্রশাসকও আমাদের কথা দিয়েছেন যে, সেতু নির্মাণ কাজ বন্ধ করা হবে না। তাই কে কি বললো, আমাদের সেদিকে কান দেওয়া দরকার নাই, ঘাবরানোর কিছু নাই। এই সেতু আমরা বাস্তবায়ন করে ছাড়বো ইনশাআল্লাহ।

 

গণসংহতি আন্দোলনের নারায়ণগঞ্জ জেলার সমন্বয়ক তরিকুল ইসলাম বলেন, শহর বন্দরের বিভাজন আমরা চাই না। আমরা অতিদ্রুততম সময়ে কদম রসুল সেতুর বাস্তবায়ন চাই। যারা বিভাজনকে উস্কে দিবেন, দীর্ঘায়িত করবেন, মানুষের মধ্যে ঘৃণা, ক্ষোভ কিংবা শত্রুতা তৈরি করবেন, তারা এপার ঐপার যেপারেরই হোক না কেন, তারা নারায়ণগঞ্জবাসীর শত্রু। তারা নারায়ণগঞ্জের ভালো চান না। আমি চাই, কদম রসুল সেতু অবশ্যই দ্রুত বাস্তবায়ন হবে এবং বন্দরবাসী ল্যান্ডিং মুখ (র‌্যাম্প) যেখানে চায়, সেখানেই করতে হবে।

 

বন্দর উন্নয়ন ফোরামের আহ্বায়ক হাফেজ মোহাম্মদ কবির হোসেন বলেন, গত ১৩ অক্টোবর সিটি কর্পোরেশনের মাসিক আলোচনা সভায় আমি প্রশাসককে বলেছি, স্বাধীনতার পূর্বে পশ্চিম ও পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যে যে বৈষম্য ছিল, স্বাধীনতার পর থেকে আমরা সেই একই বৈষম্যের শিকার। আমি বলেছি, সাবেক মেয়রের সময় যখন বিদ্যমান নকশা তৈরি করা হয় তখন নগর পরিকল্পনাবিদ, প্রকৌশলী এবং আজকে যারা এই নকশার বিরুদ্ধাচরণ করছেন তারাও সে সময় সমর্থন করে এই নকশা অনুমোদন করেছেন। এখন আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। স্বাধীনতার পর নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার সময়ও আমরা কোন উন্নয়নের ছোঁয়া পাইনি। এখনও সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়ার পর অনেকে ষড়যন্ত্র করছেন। যারা এই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছেন সতর্ক হয়ে যান। বন্দরবাসীর উদ্দেশ্যে বলছি, অধিকার কেউ সাজিয়ে রাখে না, আদায় করে নিতে হয়। আজকের মানববন্ধন একটি স্যাম্পল, এই ষড়যন্ত্র রুখে সেতু নির্মাণ বাস্তবায়নে আগামীতে আমরা যেকোন কঠিন কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো।

 

বন্দর উন্নয়ন ফোরামের সদস্য সচিব সাংবাদিক আব্দুল লতিফ রানা বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছরেরও বেশি সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও আজকে আমাদের বন্দরের যোগাযোগ ব্যবস্থার কোন উন্নতি হয়নি। বন্দরে এমন কোন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক নেই, যে সড়কের মাধ্যমে আমরা সহজেই শহর, রাজধানী কিংবা অন্যকোন জেলার সাথে যোগাযোগ করতে পারি। একটা ইমারজেন্সী রোগী নিয়ে যাবো সে ধরণের কোন ভালো যোগাযোগ মাধ্যম নেই। তাই শীতলক্ষ্যা নদীর উপর দিয়ে একটি সেতু নির্মাণ করা এখন বন্দরবাসীর অস্তিত্বের দাবিতে পরিণত হয়েছে। ২০১৭ সালে জাইকার অর্থায়নে এই ৫নং ঘাট দিয়ে এবং হাজীগঞ্জ-নবীগঞ্জ এলাকা দিয়ে দুটি সেতু নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া হয়। কিন্তু এই দীর্ঘ সময়ে আমরা একটি সেতুরও মুখ দেখতে পাইনি। এই সেতু নির্মাণ শুধু বন্দর না, নারায়ণগঞ্জ শহর এলাকারও শতকরা ৯৫ জন লোকের দাবি। এই সেতুর অভাবে বন্দরের উন্নয়ন আটকে আছে। উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা নেই বলে বন্দরের ইউনিয়ন পরিষদগুলোকে সিটি কর্পোরেশনের আওতাভূক্ত করার প্রস্তাব আসায় যেখানে বন্দরবাসীর খুশি হওয়ার কথা, সেখানে বন্দরবাসীকে শঙ্কিত হতে হয়। একই মানের ফ্ল্যাট যেখানে শহরে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা ভাড়া দেওয়া যায়, সেখানে বন্দরে ভাড়া দিতে হয় মাত্র ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা। যার ফলে সিটি কর দিতেই তাদের তাদের হিমশিম খেতে হবে। শীতলক্ষ্যায় সেতু নির্মাণ হলে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নতির কারণে এখানে নতুন নতুন মিল-কারখানা তৈরি হলে এই বৈষম্যও থাকবে না। এই নদীর উপর শুধু একটি সেতু নয়, বর্তমানে সরকারের যে চারটি সেতুর পরিকল্পনা আছে (দুটি রেল সেতু এবং দুটি সড়ক সেতু) আমরা সেই চারটি সেতুরই বাস্তবায়ন চাই।

 

এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মুক্তা বেগম, বন্দর প্রেসক্লাবের প্রধান উপদেষ্টা জিএম মাসুদ, কেন্দ্রীয় যুবদলের সহ-সভাপতি গোলাম মোস্তফা সাগর, ফোরামের যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদ আহমেদ রবি, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জব্বার, এডভোকেট শরিফুল ইসলাম শিপলু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার সাংবাদিক কাজী সাঈদ ও আশিফুজ্জামান দুর্লভ, নারায়ণগঞ্জ সিটি প্রেসক্লাবের সভাপতি সাইফুল্লাহ মাহমুদ টিটু, বন্দর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজ জাহিদ, সাংবাদিক সাব্বির আহমেদ সেন্টু, শিক্ষক আনোয়ার হোসেন, কদম রসুল কলেজের সদস্য সোহেল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী ক্লাবের সহ সাধারণ সম্পাদক শামসুর রহমান জসিম প্রমুখ।

 

মানববন্ধনে বন্দর উন্নয়ন ফোরামের সাথে একত্মতা প্রকাশ করেন ‘পরিবর্তন’, ‘বন্দর থানা ক্রীড়া কল্যাণ পরিষদ’, ‘বন্দর ক্লাব লিঃ’ ও ‘অবিচল রাজবাড়ী’ সহ বন্দরের বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন। ভবিষ্যতে বন্দরের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মসূচিতে তারা একসাথে কাজ করবেন বলেও জানান তারা।

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন