আ.লীগের জন্ম বায়তুল আমান অপরাধীদের আশ্রয়কেন্দ্র

যৃুগের চিন্তা রিপোর্ট
প্রকাশ: ২০ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০০ এএম

আ.লীগের জন্ম বায়তুল আমান অপরাধীদের আশ্রয়কেন্দ্র
# বায়তুল আমান শামীম ওসমানের দাদার বাড়ি
গত ৫ আগষ্টে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তোপের মুখে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থেকে পদত্যাগ করেন। বরাবর রাজনৈতিক মহল থেকে অভিযোগ উঠছে অন্তর্বর্তীকালিন সরকারের প্রশাসনের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে অপরাধীরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এই সুযোগে প্রকৃত অপরাধীরা তাদের অপরাধ মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে। এছাড়া অর্ন্তবর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পরেই পুলিশ প্রশাসন এখনো পর্যন্ত পুরোপুরিভাবে নিজেদের কাজ করতে পারছে না বলে অভিযোগ উঠছে। তাছাড়া নারায়ণগঞ্জে হত্যা-চাদাঁবাজি সহ নানা অপরাধ বেড়ে গেছে। বিশেষ করে রাত যত গভীর হতে থাকে নারায়ণগঞ্জ চাষাড়া মোড়ে অপরাধীদের আনা গোনা ততো বাড়তে থাকে। অপরাধ চক্রের খপ্পরে শহরের বাইরে থেকে আসা অনেককে সর্বস্ব হারাতে হচ্ছে।
এদিকে ২০২৪ সনের জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের পর নারায়ণগঞ্জের চাষাড়ায় অবস্থিত পলাতক দল আওয়ামী লীগের ইতিহাস ঐতিহ্যবাহী বাইতুল আমান ভবন গুড়িয়ে দেওয়া হয়। বলা হয়ে থাকে এখান থেকে আওয়ামী লীগের জন্ম হয়েছে। এরপর থেকেই ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকলেও সময়ের পরিবর্তে এখন এই বাড়িটি হয়ে যায় অপরাধীদের আতুড়ঘর।
অভিযোগ আছে রাতের অনিরাপদ চাষাড়ায় দুরদূরান্ত থেকে আগত সাধারণ নিরীহ মানুষদের পরিত্যক্ত এই ভবনের ভিতরে নিয়ে এসে সর্বস্বান্ত করে দেয়। এখানেই শেষ নয়; বিভিন্ন ডিস্ট্রিক্ট থেকে আগত নারীদের জোরপূর্বক তুলে এনে এখানেই চালানো হয় পাশবিক নির্যাতন (ধর্ষণ)। নারায়ণগঞ্জের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও বিষয়টি সম্পর্কে অবগত, কিন্তু অপরাধ দমনে তাঁদের প্রয়াস খুবই সামান্য। তারা এ বেপারে দায় এড়িয়ে চলতে পারেন না।
অপরদিকে, নারায়ণগঞ্জে অপরাধ এতোদিন আওয়ামী লীগের শেল্টারে চললেও এখন তা বিএনপির নিয়ন্ত্রনে চলে গেছে। কিশোর গ্যাং, কিশোর আড্ডা, সিনিয়র জুনিয়র নিয়ে নিয়মিত ঝগড়া এমনকি খুনাখুনি এসব এখন নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। উঠতি বয়সী কিশোরদের অপরাধ নিয়ে সমাজে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়ে হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে খোদ অভিভাবক মহলও রয়েছে চরম দুঃশ্চিন্তায়। আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে এ বিষয়ে আইন প্রয়োগের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো অভিভাবকদের ভূমিকা। বেশি বেড়েছে ছিনতাই, চুরি, ডাকাতি, দস্যুতা ও মাদকসংক্রান্ত অপরাধ।
তথ্যমতে, এই বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়ায় অবস্থিত সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের দাদার বাড়ি বায়তুল আমান ভবন ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে বিএনপির নেতাকর্মী ও স্থানীয় জনতা। ওই দিন একটি বুলডোজার বায়তুল আমান ভবনের পূর্বপাশে গিয়ে অবস্থান নেয়। পরে রাত সাতটায় প্রথমে কয়েকজন যুবক ভবনের ভেতরে গিয়ে বারান্দায় উঠে ঘুরাঘুরি করতে থাকে। পরে বুলডোজার দিয়ে প্রথমে ভবনের পূর্বপাশ দিয়ে ভাঙ্গতে শুরু করে। মুল ফটক ভেঙে বুলডোজার ভিতরে ঢুকে ভবন ভাংচুর করে। তখন আগে থেকেই দ্বিতলার বারান্দায় থাকা যুবকরা আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় আওয়ামীলীগ, শেখ হাসিনা ও শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে নানা শ্লোগান দেন জনতা। বর্তমানে ভবনটি অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে।
এছাড়া গত বছরের ৫ আগষ্টের পর ভবনটি ভেঙ্গে ফেলায় তা অপরাধীদের নিয়ন্ত্রনে চলে গেছে। শহরের ছিন্তাইকারী ও টোকাইরা রাতের বেলা ভবনের ভিতরে শুয়ে থাকে। গভীর রাত হলেও তারা ছিনতাই কাজে ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি গভীর রাতে নারীদের একে পেলে তাদের আটকিয়ে নানা ভাবে হেনস্থা করে। দিনের বেলা এসে এক দল টোকাই এখানে সময় কাটায়। টোকাই ছিনতাইকারীরা নিজেদের আড্ডাখানা বানিয়ে ফেলেছে। এক সময়ের দাপুটে থাকা আওয়ামী লীগের জন্ম হওয়া ভবনকে এখন পরিত্যক্ত বানিয়ে রেখেছে। তাছাড়া অপরাধীদের আখড়ায় পরিনত হওয়ায় মানুষের জন্য আতঙ্কে পরিনত হয়েছে।
নগরবাসির মতে, চাষাড়া মোড়ের বায়তুল আমান ভবনের বিপরীত পার্শে রাইফেল ক্লাবের সাথেই ট্রাফিক পুলিশের বক্স। এখানে পুলিশের নিয়োজিত টিম থাকলেও তারা যেন না দেখার ভান করে থাকেন। এতে করে পুলিশের অবহেলার দায় এড়িয়ে যেতে পারে না বলে মন্তব্য করেন সচেতন মহল।
মহানগর বিএনপির আহবায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খাঁন বলেন, শামীম ওসমানদের অন্যায় জুলুম অত্যাচারে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে তাদের এই ভবন ভেঙে দেয়। কেননা এই ভবনটি তাদের টর্চার সেল হিসেবে নগরবাসীর কাছে পরিচিত ছিল। বিক্ষুব্ধ জনতা ভবনটি ফেঙে ফেলেছে বলে আমরা শুনেছি।