
মাদকের গডফাদাররা অধরা
আইনের সীমাবদ্ধতার কারণে মাদক ব্যবসায়ীদের সহজে গ্রেফতার করা যায় না। সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে মাদক বেচাকেনার স্পটগুলোতে অভিযান চালালেও ধরা পড়ে না মাদকের গডফাদাররা। এর কারণ হিসেবে মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনের সীমাবদ্ধতাকেই দায়ী করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর জানিয়েছে, বিভিন্ন সময়েই মাদক ব্যবসার অনেক গডফাদারকে শনাক্ত করা হয়। তাদের নাম তালিকাভুক্ত করা আছে। কিন্তু আইন অনুযায়ী, সঙ্গে মাদক না পাওয়ায় তাদের গ্রেফতার করা সম্ভব হয় না।
এদিকে সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ শহরের বিভিন্ন স্পটে যৌথবাহিনী অভিযান চালিয়ে অর্ধশতাধিক মদকের সাথে জরিত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করেছে। তার মাঝে অনেককে তাৎখনিক ভাবে শাস্তি দিয়েছে। তথ্যমতে, নারায়ণগঞ্জ জেলার সদর মডেল থানার জিমখানা এলাকায় যৌথ বাহিনীর বিশেষ অভিযানে কুখ্যাত মাদক কারবারি আলম চাঁনসহ মোট ২৪ জনকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিট থেকে রাত ৯টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত পরিচালিত এ অভিযানে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সমন্বয়ে যৌথ বাহিনী অংশ নেয়।
অভিযানকালে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত কুখ্যাত কারবারি আলম চাঁন-কে নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়। তার বসতঘর তল্লাশি করে উদ্ধার করা হয় আনুমানিক দেড় কেজি গাঁজা, ২৫০ মিলিলিটার বিদেশি মদ, বড় ছোরা ৩টি, স্টিলের চাপাতি ১টি, টেটা ১টি ও লোহার পাইপ ২টি। আলম চাঁনের বিরুদ্ধে সদর মডেল থানায় ইতোমধ্যে ১০টি মাদক মামলা রয়েছে। তার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ও অস্ত্র আইনে নতুন মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। অভিযানে আরও দুই নারী মাদক ব্যবসায়ীকেও গ্রেফতার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন পারভীন আক্তার (৩৫), স্বামী মো. ফয়সাল, সাং জিমখানা; তার কাছ থেকে ২৪ পিস ইয়াবা উদ্ধার। আফরিনা ওরফে হাসি (৫০), স্বামী মো. আলমগীর, সাং জিমখানা; তার কাছ থেকে ৩৬ পিস ইয়াবা উদ্ধার। তাদের বিরুদ্ধেও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা রুজু করা হবে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। ছাড়াও একই অভিযানে গাঁজা সেবন ও বহনের অভিযোগে আটক ৫ জনকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট টি এম রাহসিন কবির ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেন।
সাজাপ্রাপ্তরা হলেন , মো. ফয়সাল (২১) – সাজা: ১২ দিন, রিফাত (২০) – সাজা: ১২ দিন, জুবায়ের ভূইয়া রানা (৩৬) – সাজা: ২০ দিন, মো. মোস্তফা হোসেন (২৬) সাজা: ১৪ দিন, অভিনন্দী (৩০) – সাজা: ৭ দিন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা জানান, জিমখানা এলাকাকে মাদকমুক্ত করতে এই ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে। আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে তাদের মাদক সরবরাহকারী ও পৃষ্ঠপোষকদেরও আইনের আওতায় আনার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জিমখানা এলাকা দীর্ঘদিন ধরে মাদক ব্যবসার কেন্দ্রস্থল হিসেবে পরিচিত। কুখ্যাত আলম চাঁনের গ্রেফতার স্থানীয়দের মধ্যে স্বস্তি এনেছে।
নারায়ণগঞ্জে সেনাবাহিনী, জেলা পুলিশ ও মেয়াদী ম্যাজিস্ট্রেটদের যৌথ অভিযানে ৯ জনকে গ্রেপ্তারের পর সাজা প্রদান ও ৯০ জনকে আটক করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যার পর থেকে শহরের চাষাঢ়া রেলওয়ে ষ্টেশনে শুরু হওয়া এই অভিযানে সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের আটক করা হয়েছে এবং প্রাথমিক তদন্তের পর বিভিন্ন অপরাধে যুক্ত আশঙ্কাজনক ব্যক্তিদের মধ্যে কয়েকজনকে দন্ডাদেশ প্রদান করা হয়েছে বলে জানিয়েছে নারায়ণগঞ্জ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, অভিযানে প্রথমে চাষাঢ়া রেলস্টেশন এলাকায় অবস্থানরত সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের মধ্য থেকে প্রাথমিকভাবে প্রায় ৯০ জনকে আটক করা হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদ ও যাচাই-বাছাই শেষে মোট ৯ জনের বিরুদ্ধে উক্ত স্থানে দস্যুতা, মাদকদ্রব্য ক্রয়-বিক্রয় ও অশান্তি সৃষ্টিসহ বিভিন্ন অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় দুইজন ম্যাজিস্ট্রেট তাদের বিভিন্ন মেয়াদের সাজা প্রদান করেছেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারেক আল মেহেদী বলেন, আমরা একটি স্পটকে বেছে নিয়ে ব্লক দিয়ে এই অভিযান পরিচালনা করেছি। প্রাথমিকভাবে সন্দেহভাজন হিসেবে প্রায় ৯০ জনকে আটক করি। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ও যাচাই বাছাই করে ৯ জন আসামিকে দুইজন ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রমাণ করা হয়েছে। মাদকের হার আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় এই অভিযান। সারা নারায়ণগঞ্জ জেলায় এমনকি প্রতিটি এলাকায়, প্রতিটি থানায় এই অভিযান চলবে। মাদককে কেন্দ্র করেই কিশোর গ্যাং সৃষ্টি হচ্ছে, হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা ঘটছে। সেই জন্য আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি এখানে যৌথ বাহিনীর অভিযান অব্যাহ থাকবে। সচেতন মহল বলছে মাদককারবারিদের গডফাদাররা এখনো গ্রেপ্তার হন নাই। তাদেরকে গ্রেপ্তারের দাবী জানান স্থানীয়রা।