Logo
Logo
×

বিশেষ সংবাদ

শহরে প্রবেশ নিয়ে স্বেচ্ছাসেবীদের উপর অটোচালকদের হামলা

Icon

রাকিবুল ইসলাম

প্রকাশ: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

শহরে প্রবেশ নিয়ে স্বেচ্ছাসেবীদের উপর অটোচালকদের হামলা

শহরে প্রবেশ নিয়ে স্বেচ্ছাসেবীদের উপর অটোচালকদের হামলা

Swapno

# অটোচালকদেরকেও আইন মেনে চলতে হবে: এড.সাখাওয়াত

# অটো চালকরা লঁক্ষমতা দেখাবেন না: মামুন মাহমুদ

# প্রশাসনকে তোয়াক্কা না করে দাঙ্গা তৈরীতে লাগামহীন অটোচালকরা

# যানজট নিরসনে শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তা চান


ঢাকা নারায়ণগঞ্জ লিংরোড সংলগ্ম জেলা প্রশাসকের তোড়নের সামনে অটো ইজিবাইক চালকরা রাস্তা বন্ধ করে বিক্ষোভ করে। আর এতে করে ৪ ঘন্টা যান চলাচল বন্ধ ছিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সড়কে। এসময় অটো চালকরা তাদের গাড়ি রাস্তার মাঝে বেরিকেড তৈরী করে সকল যানচলাচল বন্ধ করে দেয়। অটো ইজিবাইক চালকদের শহরে প্রবেশ করতে না দেয়ায় যানজট নিরসনে থাকা স্বেচ্ছাসেবি শিক্ষার্থীদের সাথে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটায় তারা রাস্তা বন্ধ করে রাখে। অভিযোগ উঠেছে অটো চালকরা পরিকল্পিতভাবে যানজট নিরসনে নিয়োজিত শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালায়। এতে দুই পক্ষের প্রায় ১০ জন আহত হন। গতকাল বুধবার ১৭ সেপ্টেম্বর ঢাকা নারায়ণগঞ্জ লিংরোড সড়কে জেলা  প্রশাসকের গেটের সামনে এই ঘটনা ঘটে। পরে এই ঘটনায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কার্যালয়ে অটো ইজিবাইক চালক শিক্ষার্থী, বিএনপি জামায়াত সহ প্রশাসনের সকলে মিটিং বসে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হয়। প্রায় ৪ ঘন্টা পরে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে অটোচালকরা সড়ক থেকে চলে যেতে বাধ্য হয়।  


এদিকে গতকালকে জেলা প্রশাসনের সভায় জেলা মহানগর বিএনপির নেতৃবৃন্দ, জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধি, ইসলামী আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ থেকে অটো ইজিব্ইাক মালিক সমিতি সহ প্রশাসনের সকলে মিলে সিদ্ধান্ত হয় অবৈধ অটো ইজিবাইক চালকরা নারায়ণগঞ্জ শহরে প্রবেশ করতে পারবে না। এই সিদ্ধান্ত আরও ২ মাস আগে জেলা আইনশৃখলা কমিটিতেও নেয়া হয়। সেই সিদ্ধান্ত মোতাবেক তা বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলামের অনুরোধে যানজট নিরসনে নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স ও বিকেএমইএ থেকে ২০ জন স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষার্থীকে নিয়োজিত করা হয়। তারা যানজট নিরসনের সাথে প্রশাসনের দেয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছেন। কিন্তু প্রশাসনের সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দাঙ্গা তৈরী করেন বেপরোয়া অটো ইজিবাইক চালকরা। কেননা অভিযোগ উঠেছে তারা জোর করে শহরে প্রবেশ করতে চাইলে  যানজট নিরসনে নিয়োজিত শিক্ষার্থীরা বাধা প্রদান করলে তাদের উপর গাড়ি উঠে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এমনকি বেপরোয়া অটো চালকরা শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালিয়ে তাদের ৮ জনকে আহত করে। যা নিয়ে নগরবাসি থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী সমাজ রাজনৈতিক বোদ্ধামহল উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তবে এই ঘটনায় অটো ইজিবাইক চালকদের কয়েকজন আহত হয়েছে বলে তারা দাবী করেন।


জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বলেন, “এইটা একটা অনাকাঙ্খিত ঘটনা। ভুল বোঝাবুঝি থেকে একটা ঘটনা ঘটে গেছে। পরে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে আলোচনায় এইটার একটা সমাধান হয়েছে। ইজিবাইক চালকরাও ট্রাফিক নির্দেশনা মেনে চলবেন।” আগামীতে এ ধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে সে বিষয়ে পুলিশের নজরদারি থাকবে বলেও জানান এসপি।’


যানজট নিরসনে স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান বলেন, আমরা তাদের শত্রু না, তারা অবৈধ ভাবে জোর করে শহরে প্রবেশ করতে চায়। তারা মাদক খেয়ে কখনো আমাদের উপর কখনো মানুষের উপর গাড়ি উঠায় দেয়।  তারা বেপরোয়া ভাবে চালানোর কারনে তাদরকে শহরে প্রবেশ করতে দেয়া হয় না। তাছাড়া তারা বলছে আমরা তাদের উপর  হামলা করছি, কিন্তু সকল অটো চালকদের একই জায়গায় হাত কাটা।আমরা যদি তাদের উপর হামলা করতাম তাহলে তারা বিভিন্ন জায়গায় ব্যথা পেত কিন্তু তাদের অন্য কোন জায়গায় ব্যথা পায় নাই।  


আরেক শিক্ষার্থী বলেন, যানজট নিরসনে চেম্বার অব কমার্স ও বিকেএমইএ থেকে আমাদের নিয়োজিত করা হয়। অটো ইজিবাইক চালকদেরকে সম্পুর্ণ ভাবে চাষাড়া শহরে প্রবেশ করতে দেয়ার জন্য নিষেধ করা হয়েছে। আমাদের যে ভাবে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে আমরা সে ভাবে কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু যখনি গত ১ মাস যাবত অটো চালকদের শহরে প্রবেশ করতে দেয়া হয় না তখন থেকে তারা নানা ভবে বিশৃঙ্খলা তৈরী করছে। তারা শহরে প্রবেশ করে রাস্তার মাঝে গাড়ি রাখায় বাধা দিলে আমাদের উপর চড়াও হয়। অটো চালকদের হামলায় যানজট নিরসনে  নিয়োজিত ফারদিনের হাতে তিন শিলি লেগেছে,রহিম মুন্সির পায়ে ব্যাথা পাইছে,একই ভাবে শাহিন খন্দকারের পায়ে তারা হামলা করে, তাছাড়া গতকালকের ঘটনায় আসিফ ও মারুফকে বেধরক ভাবে মারা হয়। আবু সাইদের উপর হামলা চালিয়ে তার উপর ২০ জন মিলে মারধর করতে থাকে। আমরা নগরবাসির জন্য যানজট নিরসনে কাজ করে আসছি। অটো চালকরা যেন শৃঙ্খলায় থাকে তার জন্য আমাদেয়র নিয়োজিত করা হয় কিন্তু সেখানে তারা বেপরোয়া হয়ে আমাদের উপর পরিকল্পিত ভাবে হামলা চালায়।


আহত শিক্ষার্থী মারুফ জানান, ডিসি অফিস থেকে আমাদের জানানো হয়েছে চেম্বার অব কমার্স ভবনের পর থেকে শহরের চাষাঢ়ায় অটো চালকরা প্রবেশ করতে পারবে না। কিন্তু তারা প্রবেশ করার জন্য আমাদের সাথে বল প্রয়োগ করতে থাকে। গতকাল সকালে দুজন অটো চালক প্রবেশ করতে চাইলে তাদের বাধা প্রদান করলে তাদের ১০থেকে ১৫ জন মিলে আমাদের ১ জন শিক্ষার্থীর উপর হামলা চালায়। এমনকি সইচ গিয়ার চাকু দিয়ে আঘাত করে।


নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক আহমেদুর  রহমান তনু বলেন, যানজট নিরসনে নিয়োজিত শিক্ষার্থীদের যে হামলার ঘটনা ঘটেছে তার দায় দুই পক্ষের। আমরা গত এক মাস যাবত প্রশাসনের সাথে মিলে যানজট নিরসনে কাজ করে যাচ্ছি তার সুফল সকলেই পাচ্ছে। এমনকি অটো চালকরা এখন আগের থেকে বেশি টিপ মারতে পারছে। একটা এম্বুলেন্স যেখানে ২ থেকে ৩ ঘন্টা লেগে যেত চাষাড়া মোড় পাড় হতে এখন তা ১০ মিনিটে পার হতে পারছে। নারায়ণগঞ্জটা সকলের তাই সকলকে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে।


নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খাঁন বলেন, আমরা কেউ আইনের উর্ধে নয়। ডিসি এসপি থেকে শুরু আমরা যারা রাজনীতি করি আমাদেরকে আইন অনুযায়ী চলতে হয়। যার অটো ইজিবাইক চালান তাদেরকেও আইন মেনে চলতে হবে। আইন কারো হাতে তুলে নিতে পারবে না। আজকের ঘটনায় দুই পক্ষের ব্যক্তিরা আইন হাতে তুলে নিয়েছে। রক্তাক্তের জন্য শহরে যানজট নিয়োজিত শিক্ষার্থীরা কাজ করছে না। তারা শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করছে। অটো চালকরা কতুটুকু যেতে পারবে আর কতুটুক যেতে পারবে না তার বিধি বিধান লিখে তাদের মাঝে বিলি করে দেয়া উচিত। অনেক সময় যাত্রীদের পিড়া পরিতে শহরে চলে যায় তারা। শিক্ষার্থীদের উপর আঘাত হোক আমরা সেটা চাই না। আজকে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে থাকার কথা কিন্তু তারা আজকে নারায়ণগঞ্জের মানুষের শৃঙ্খলার স্বার্থে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা চাই এই ধরনের ঘটনা না ঘটুক। কারো উপর কোন ধরনের আক্রমন না হোক। সকলে নিয়ম মেনে চলাচল করুক।


জেলা বিএনপির আহবায়ক মামুন মাহমুদ বলেন, যে অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটেছে তা আমাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ঘটেছে। নারায়ণগঞ্জবাসির সুবিধার্থে চেম্বার অব কমার্স ও বিকেএমই শিক্ষার্থীদের যানজটে নিয়োজিত করেছে। সকলের সুবিধার জন্য অটো চালকদের শহরে প্রবেশে নিষেধ করা হয়েছে। এখানে কেউ কারো প্রতিপক্ষ ভাবার দরকার নেই। ছাত্ররা সংখ্যায় কম ছিল বিধায় অটো চালকরা তাদের উপর হামলা করবেন এটা কি হতে পারে। আমাদের গাড়ি নিয়ে যখন প্রশাসন মামলা করে তখন আমরাতো কেউ রাস্তা বন্ধ করি না। কিন্তু আপনারা কেন রাস্তা বন্ধ করে রাখেন। অটো চালকরা আমাদের সকলের সিদ্ধান্ত মানেন কি না তা জানিয়ে যাবেন। যেখানে প্রশাসন থেকে শুরু করে সকলে মিলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় তখন আপনারা অটো চালকরা কেন মানবেন না। তাহলে অটো চালকরা কি ক্ষমতা দেখাবেন না। নিজেদের শক্তিশালী ভাববেন না। কোন ক্রমে কেউই আইন তুলে নিবেন না।

জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম বলেন, সকলকে আইন মেনে চলতে হবে। আইনের ব্যত্যয় ঘটালে আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবো। নারায়ণগঞ্জ শহরকে যানজট মুক্ত রাখার জন্য আমরা সকল ভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছি। এমনকি সকলে মিলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে শহরে কোন অটো প্রবেশ করতে পারবে না। আর এটা  সকলের মানা উচিত।


Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন