হোটেল ওয়েস্টিনে মনোনয়নপ্রত্যাশী শাহআলম-সেন্টুপন্থীদের গোপন বৈঠক

যুগের চিন্তা রিপোর্ট
প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
-copy-68c6991f6a2e9.jpg)
হোটেল ওয়েস্টিনে মনোনয়নপ্রত্যাশী শাহআলম-সেন্টুপন্থীদের গোপন বৈঠক
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে নারায়ণগঞ্জ-০৪ আসনে এখন চলছে নানা হিসেব-নিকেশ। এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে একদিকে যেমন তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা তৈরি হয়েছে, অন্যদিকে ভেতরে ভেতরে চলছে স্নায়ুযুদ্ধ। নারায়ণগঞ্জের অন্যান্য আসনের তুলনায় এ আসনকে ঘিরে জটিলতা অনেক বেশি বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি মনির হোসেন কাসেমীকে ঘিরেই বিএনপির ভেতরে তৈরি হয়েছে নতুন শঙ্কা। কারণ ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি জোট তাকে ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন দিয়েছিল। এ বছরও ধারণা করা হচ্ছে একই কৌশল অবলম্বন করে তাকে জোটের পক্ষ থেকে আবারও প্রার্থী করা হতে পারে।
এমন সম্ভাবনা বিএনপির বেশ কয়েকজন হেভিওয়েট নেতাকে অস্বস্তিতে ফেলেছে। তাদের মতে, দলের দীর্ঘদিনের আন্দোলন-সংগ্রামে যাঁরা ত্যাগ-তিতিক্ষা করেছেন, এবার অন্তত তাঁদের কাউকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে সুযোগ দেওয়া উচিত।
এই আশঙ্কা থেকেই সম্প্রতি রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেল ওয়েস্টিনে আয়োজন করা হয় এক গোপন বৈঠকের। বৈঠকে নেতৃত্ব দেন বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী শাহ আলম। উপস্থিত ছিলেন ব্যবসায়ী নেতা মোহাম্মদ আলী, কুতুবপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মনিরুল আলম সেন্টু, স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা পান্না মোল্লা, ইউনাইটেড ক্লাবের সভাপতি তাপুসহ আরও কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি।
সূত্র জানায়, বৈঠকে মূলত আলোচনা হয় যদি বিএনপি এবারও দলীয় প্রার্থী না দিয়ে জোটের শরিক মনির কাসেমীকে মনোনয়ন দেয়, তবে শাহ আলম স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন। সে অনুযায়ী তিনি তৃণমূল নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করার কাজও শুরু করেছেন।
শাহ আলমের ঘনিষ্ঠরা মনে করেন, তিনি এই আসনে জনপ্রিয়তার দিক থেকে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী। তৃণমূল নেতাকর্মীদের সমর্থন নিয়ে যদি তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, তবে মনির কাসেমীর মতো প্রার্থীর বিপক্ষে সহজেই বিজয় অর্জন করতে পারবেন। তাদের মতে, কাসেমী ভোটযুদ্ধে তুলনামূলকভাবে দুর্বল প্রতিদ্বন্দ্বী।
অন্যদিকে বিএনপির ভেতরে একটি প্রবল মত উঠে এসেছে যে, দীর্ঘ আন্দোলন, মামলা-হামলা আর দমন-পীড়নের শিকার হওয়ার পর দলের কর্মী-সমর্থকেরা চান দলীয় কাউকে এই আসনে প্রার্থী করা হোক। এ আসনটিকে তারা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন, কারণ নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে এ আসনের ফলাফল ঢাকার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলেও প্রভাব ফেলতে পারে।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, নারায়ণগঞ্জ-০৪ আসন এখন বিএনপির ভেতরে দ্বন্দ্বের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। একদিকে রয়েছেন দলীয় প্রার্থী হতে আগ্রহী ও ত্যাগী নেতারা, অন্যদিকে রয়েছেন জোটের শরিক হিসেবে মনির কাসেমীর মতো প্রার্থীর সম্ভাবনা।
শাহ আলম যদি সত্যিই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নামেন, তবে বিএনপি নেতৃত্বের জন্য তা বড় চাপ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এতে ভোট বিভক্ত হওয়ার শঙ্কাও তৈরি হবে। অন্যদিকে বিএনপি যদি শেষ পর্যন্ত দলীয় প্রার্থীকে প্রাধান্য দেয়, তাহলে জোটের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের টানাপোড়েন তৈরি হওয়ার আশঙ্কা আছে।
সব মিলিয়ে বলা যায়, আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনকে ঘিরে যে সমীকরণ তৈরি হয়েছে, তা শুধু বিএনপির ভেতরেই নয়, বরং জোটের ভেতরেও বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। ওয়েস্টিনের গোপন বৈঠক সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছে এই আসনে লড়াই শুধু প্রার্থী বনাম প্রার্থীর নয়, বরং দল বনাম জোট এবং তৃণমূল বনাম কেন্দ্রীয় কৌশলের।