‘ভাইয়ের’ পক্ষে ভোট চাওয়ার রাজনীতিতে সাড়া দেবে জনগণ’

শুভ্র কুমুদ
প্রকাশ: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

‘ভাইয়ের’ পক্ষে ভোট চাওয়ার রাজনীতিতে সাড়া দেবে জনগণ’
রাষ্ট্রের সকল ক্ষমতার উৎস জনগণ। অথচ জনগণকেই তার প্রাপ্ত সেবা নিতে সবসময় বঞ্চিত হতে হয়। ইংরেজদের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত বিলোপ হয়েছে, জমিদারী প্রথারও বিনাশ হয়েছে তাও জনগণের ভাগ্য বদলায়নি। রাজা-বাদশা, ইংরেজ, পাকিস্তান শাসনামল শেষেও শোষণের যাঁতাকলে আজও পিষ্ট জনগণ। পতিত ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের আমলে তো জনগণের কোন ভোটের মূল্যায়ন করার প্রয়োজনই পড়েনি। জনগণের টাকায় লুটেরাদের বিশাল বহর দিয়ে হাজার হাজার কোটি দেশের বাইরে পাচার করলেও বদলায়নি জনগণের ভাগ্য। নারায়ণগঞ্জের শামীম ওসমান, সেলিম ওসমানসহ গোটা ওসমান পরিবার আয়েশী জীবন কাটিয়েছেন রাজা-বাদশাদের মতোন। তাদের পালিত সন্ত্রাসীদের দিয়ে জনগণকে করেছে শোষণ,নিপীড়ন, জুলুম। বাদ যায়নি নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের তৎকালীন মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা নজরুল ইসলাম বাবু গংরাও। তাদের প্রত্যেকেরই পালিত সন্ত্রাসী বাহিনী, পারিবারিক বাহিনী ছিল। এসব সন্ত্রাসীরা একদিকে চালাতো লুটপাট, তারসাথে জনগণকে শোষণের সবধরণের আয়োজন ছিল। ২৪’র গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্টদের বিদায়ে নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখছে পুরো বাংলাদেশ। তবে ফ্যাসিস্টদের সেই নৈরাজ্য, দখলের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ছে বেশ কয়েকটি দল। ফ্যাসিস্টদের ফেলে যাওয়া পুরনো কৌশলেই তারা জনগণের ভোট পাওয়ার আশা করছে।
ইতিমধ্যেই ঘোষণা হয়েছে সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নিষেধাজ্ঞা থাকায় ফ্যাসিস্টরা এই নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেনা। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, গণসংহতি আন্দোলন, খেলাফতে মজলিসসহ বেশ কিছু নিবন্ধিত দলের প্রার্থীরা নির্বাচনে অংশ নিতে প্রচারণা চালাচ্ছেন। নিবন্ধনের অপেক্ষায় থাকা আরো কিছু দলের নেতাকর্মীরাও জনগণের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। তবে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, জনগণের কাছে যেই মূল্যবান ভোট তারা প্রত্যাশা করছেন, তা নেবার জন্য স্বশরীরে এখনো খুব কম প্রার্থীই হাজির হচ্ছেন। দলীয় কার্যক্রম তো বটেই, আরো অন্যান্য প্রচারণায় ‘অমুক ভাইয়ের পক্ষে প্রচারণা’; ‘তমুক ভাইয়ের সালাম নিন’; ‘অমুক ভাইয়ের পক্ষে দুস্থদের সহায়তা’, ‘তমুক ভাইয়ের পক্ষে র্যালি’ ইত্যাদি ইত্যাদি। এসব প্রচারণাকে মোটেও ভালো চোখে দেখছে না জনগণ।
বাংলাদেশ তো বটেই, পুরো এশিয়া জুড়েই রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণের সূচনা হয়েছে। শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, নেপাল থেকে ‘ জেন জি’ (জেনারেশন জেড) যে বার্তা দিচ্ছে তা সাধারণ জনগণ লুফে নিচ্ছে। এখন মানুষ আর দখলের রাজনীতি চায় না। কেউ হাট-ঘাট দখল করে চাঁদাবাজি করে রাজনীতির পেট ভরাক, আর কেউ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ভয় দেখিয়ে মানুষকের মতামতকে কুক্ষিগত করে ফেলুক এমন রাজনীতি জনগণ পছন্দ করছেনা। যার ফলে যেসব রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ উঠছে তাদের জনপ্রিয়তা তলানীতে গিয়ে ঠেকছে। তাই আগের মতো ‘ভাইয়ের পক্ষে ভোট চাওয়ার রাজনীতি’ যে হালে পানি পাবে না এটি মোটামোটি পরিস্কার।
গত ৬ মাসের বেশি সময় ধরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রচার-প্রচারণায় বিভিন্ন নেতা এবং পাতি নেতাদের সৌজন্যে যে বায়োস্কোপ নারায়ণগঞ্জে প্রদর্শিত হচ্ছে সেটিকে মোটেও ভালোভাবে নিচ্ছেনা সাধারণ মানুষ। চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে আড্ডায় কিংবা পারিবারিক খোশগল্পে এসব ‘রাজা-মহারাজা’ প্রার্থীদের নিয়ে নানা ঠাট্টা-মশকরা চলছে। তারা বলছে, ১৯৫০ সালের রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইনের মাধ্যমে জমিদারদের যে জমিদারী একেবারে শেষ হয়ে গিয়েছিল, সেই পতিত জমিদারী নিয়ে যারা জনগণের ভোট শুধুমাত্র ভাড়াটে লোকদের শোডাউনে পেয়ে যাবেন এমনটা যারা আশা করছেন তাদের জন্য আগামীর নির্বাচনে বেশ বড়সরো দুঃসংবাদ অপেক্ষা করছে। যারা সত্যিকার অর্থেই নির্বাচন করতে চান, তাদেরকে জনগণের কাছে যেতে হবে। তাদের সমস্যার কথা শুনতে হবে, সমাধানের আশ^াস ও সমাধান দিতে হবে। নাগরিক যে সকল সমস্যায় সাধারণ মানুষ জর্জরিত সেসকল সমস্যা হৃদয় নিয়ে অনুধাবন করতে হবে, তারাই আসলে পাবেন সাধারণ মানুষের ভোট।
জনগণের ভোট পাওয়ার জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদেরও বুদ্ধিদীপ্ত এবং সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিতে হবে প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রে। শুধু মাত্র আর্থিক সক্ষমতা আর লোকের বহর দেখে যেসকল দল তাদের প্রার্থী নির্বাচন করবে এবারের নির্বাচনে তাদের ভরাডুবি হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। স্বশরীরে যারা জনগণের কাছে গিয়ে যারা সমর্থন যোগাতে পারবেন তারাই জনগণের সেবা করার সুযোগ পাবেন। সম্প্রতি শেষ হওয়া ‘ডাকসু নির্বাচন’ এর উৎকৃষ্ঠ উদাহরণ হতে পারে!