উইজডমে সেলিম ওসমানের গোপন মিটিংয়ের প্রস্তুতি

যুগের চিন্তা রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
-copy-68c3e7f74baee.jpg)
উইজডমে সেলিম ওসমানের গোপন মিটিংয়ের প্রস্তুতি
গণঅভ্যুত্থানের আগে নারায়ণগঞ্জের কুখ্যাত ওসমান পরিবারের সদস্য সাবেক এমপি সেলিম ওসমান, শামীম ওসমান ও প্রয়াত নাসিম ওসমানের ছেলে সন্ত্রাসী আজমেরী ওসমানদের তথা ওসমানীয় সম্রাজ্যের নাম শুনলে নারায়ণগঞ্জ শহরের মানুষের মাঝে ‘কাঁপন’ ধরত। এই ওসমান সম্রাাজ্যের অন্যতম কর্ণধার ব্যবসায়ী নেতা হিসেবে পরিচিত পাওয়া ব্যক্তি গডফাদার শামীম ওসমানের ভাই সেলিম ওসমান ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো নিয়ন্ত্রণ করে সেখানে ব্যাপক চাঁদাবাজি করতেন তারা ক্যাডার বাহিনী দ্বারা এমন অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ২০২৪ সনের ৫ আগষ্টে আওয়ামী লীগের পতন হলে ওসমানীয় সাম্রাাজ্যের পতন ঘটে। গত এক বছরের বেশি সময় ধরে তাদের কাউকে পাওয়া যায়নি। যদিও রাজনৈতিক মহল থেকে একাধিকবার দাবী জানানো হয় সেলিম ওসমানকে গ্রেপ্তারের। কিন্তু তাকে এখনো গ্রেপ্তার করা হয় নাই।
এদিকে রাজনৈতিক মহল থেকে অভিযোগ উঠেছে নারায়ণগঞ্জে বিশৃঙ্খলা তৈরী করে অস্থিতিশীল করার জন্য সেলিম ওসমান নানাভাবে অর্থ বিনিয়োগ করছে। এমনকি সেলিম ওসমানের মালিকানাধীন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান উইজডম গার্মেন্টস এ তিনি মাঝে মধ্যে এসে মিটিং পরিচালনা করেন। সেই সাথে কিভাবে বিশৃঙ্খলা তৈরী করা যায় তা নিয়ে নানা গোপন মিটিং করছেন। বিগত সময়ে সেলিম ওসমানের সাথে থাকা তার ঘনিষ্ঠ লোকদের মাঝে একাধিক সুত্র জানান, আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে ২০ সেপ্টেম্বর সন্ধার পরে রাতের বেলায় সেলিম ওসমানের ফ্যাক্টরীতে বড় জমায়েত করে গোপন মিটিং হতে যাচ্ছে। এই সভাকে সফল করার জন্য ৫০ লাখ টাকার বাজেট করা হয়েছে। কয়েকটি সুত্র জানান, সাবেক এমপি সেলিম ওসমান চাচ্ছে নারায়ণগঞ্জে অস্থিতিশীল তৈরী করতে। যাতে বুঝানো যায় মানুষ এখন ভালো নেই। তারা আগেই ভালো ছিল এমন কিছু কর্মকান্ড তৈরী করে তা দেখাতে চান।
অপরদিকে বিগত আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছর শাসনামলে সবচেয়ে বেশি সুবিধা নিয়েছে ওসমান পরিবার। শামীম ওসমান পরিবারের তারা তিন ভাই এমপিত্বের স্বাদ নিয়েছে। কিন্তু চোরে না শুনে ধর্মের কাহিনী। তাদেরও এখন সেই অবস্থা হয়েছে। বিগত সময়ে ওসমান সম্রাজ্যের কর্ণধার হিসেবে সেলিম ওসমান নানা অপকর্মে জড়িয়ে বিতর্কিত হয়েছে। তার মাঝে বন্দরের শিক্ষক শ্যমল দত্তকে কান ধরে উঠবস করিয়ে ব্যাপক সমালোচিত হয়। এছাড়া ব্যবসায়ীদের কাছে তিনি আতঙ্ক। বিগত সময়ের এমপিত্বের স্বাদ তারা এখনো ফিরে পেতে চায়। আর এজন্য জাতীয় পার্টির সাবেক এই এমপি নানা ছলেবলে আবার ফিরে আসতে চায়।
তথ্যমতে, ৫ আগষ্টের পরে শামীম ওসমান দেশের বাইরে পালিয়ে যায়। এমনকি তার স্ত্রী ছেলে ওয়ন ওসমান, ভাতিজা আজমেরী ওসমান দেশ ছেড়ে পালিয়ে রয়েছে। কিন্তু সেলিম ওসমান এখনো দেশ ছেড়ে যাননি। সাবেক এমপি সেলিম ওসমান তার শশুরবাড়ি খুলনায় থাকে। মাঝে মধ্যে যখন ঢাকায় অবস্থান করে তখন নারায়ণগঞ্জের উইজডম ফ্যাক্টরীতে এসে গোপন মিটিং করে চলে যান। কিন্তু গত ১ বছরেও তাকে এখনো গ্রেফতারের আওতায় আনা হয়নি যা নিয়ে উঠছে নানান প্রশ্ন। তার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী হত্যা মামলা রয়েছে। এদিকে পটপরিবর্তনের পরবর্তী সময়ে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের মতো কঠোর কোন এ্যাকশন না থাকায় বর্তমানে নানা লবিংয়ে আবারো আওয়ামী লীগের সাথে লাগায়োভাবে জোট থাকার মতো অন্য কোন দলের সাথে জোটে যেতে চাইছেন তার দল। আর সেই সুযোগে তিনি আবার ফিরে আসতে চান।
সপ্তাহখানিক আগে বন্দরের ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিলে তা অর্থায়ন রয়েছে বলে মনে করেন রাজনৈতিক ব্যক্তি মহল। এতে করে নারায়ণগঞ্জকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টায় মগ্ন হয়ে রয়েছেন তিনি। তা ছাড়া সূত্র মতে জানা যায়, ছাত্র হত্যা মামলায় নারায়ণগঞ্জে অর্ধশত এর অধিক মামলার আসামী হয়ে ও দেশে বর্তমান বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় সেলিম ওসমান এখনো অবস্থানরত রয়েছেন। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জের কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা ও রয়েছেন। তা ছাড়া সেলিম ওসমান গ্রেফতার না হওয়ায় ক্ষুদ্ধ রয়েছে বিএনপি জামায়াতের নেতৃবৃন্দ।
তথ্যমতে, ২০১৪ সালে তৎকালীন জাতীয় পার্টির প্রয়াত এমপি নাসিম ওসমান মারা যাওয়ার পর ভাইয়ের কোঠায় সেলিম ওসমান নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের বিনা ভোটে এমপি হন। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ীদের বড় থেকে বড় ব্যবসায়ী সংগঠন বিকেএমইএ সেই ২০১০ সাল থেকে এককভাবে ফ্যাসিস্ট সরকারের আজ্ঞাবহ ওসমান পরিবারের সেলিম ওসমানের দখলে ছিল। সেলিম ওসমান এককভাবে সকল ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখতেন এবং সেখান থেকে ব্যাপক চাঁদাবাজি করতেন। তার নির্যাতনে নারায়ণগঞ্জ ছেড়েছে বহু ব্যবসায়ী।
এছাড়া এই সেলিম ওসমানের নিয়ন্ত্রণেই ছিলো নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতি যা বর্তমান ওসমান মুক্ত রয়েছে। তা ছাড়া এই সেলিম ওসমানের দ্বারা নারায়ণগঞ্জের ৭২টি ব্যবসায়ী সংগঠনের ব্যবসায়ীরা নির্যাতিত ছিলেন। যা বর্তমানে মুক্ত রয়েছে।
বর্তমানে সমালোচনা উঠছে, কোন ক্ষমতার জোরে এখনো সেলিম ওসমানকে গ্রেফতার করা হচ্ছে। ধারাবাহিকভাবে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক-সদস্য সচিব তাকে গ্রেপ্তারের দাবী উঠালেও এখনো সেলিম ওসমানের বিরুদ্ধে কেন জরুরী পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে ও নারায়ণগঞ্জবাসীর জনমনে ক্ষোভ বিরাজ করছে। তাই তাকে দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবী উঠেছে।