Logo
Logo
×

বিশেষ সংবাদ

১৩ জুলাই থেকে আন্দোলনের তীব্রতা বাড়তে শুরু করে

Icon

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশ: ১৩ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম

১৩ জুলাই থেকে আন্দোলনের তীব্রতা বাড়তে শুরু করে

১৩ জুলাই থেকে আন্দোলনের তীব্রতা বাড়তে শুরু করে

Swapno

সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা এবং ৪৪ শতাংশ মেধাদের চাকরির সুযোগের প্রতিবাদে বিভিন্ন সময় চাকরি প্রার্থীসহ শিক্ষার্থীদের মনে ক্ষোভের সঞ্চয় হওয়ার কারণে বিভিন্ন সময় কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করে শিক্ষার্থীরা। তবে ২০১৮ সালের আন্দোলনে সরকার কোটা বাতিল ঘোষণার পর ২০২৪ সালের ৫ জুন সেই ঘোষণাকে বাতিল করে আদালত পুনরায় কোটাকে বহাল করলে কোটা আন্দোলনের পুনরায় সূচনা ঘটে। পরবর্তীতে যা তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।


সে সময় শিক্ষার্থীরা জানায়, মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানদের কোটার বিরুদ্ধে তাদের কোন অভিযোগ নেই, কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-পুতি ও পোষ্যদের কোটার সংস্কার চান তারা। তারা আরও জানায়, তারা কোটা প্রথা পুরোপুরি বাতিলের জন্যও আন্দোলন করছেন না। তাদের দাবি ছিল কোটার পরিমাণ ৫৬ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ করার। বিশেষজ্ঞদের মতে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে হয়তো ২০ থেকে ২৫ শতাংশে নামিয়েও শিক্ষার্থীদের সাথে একটি সমঝোতা করা যেতো। কিন্তু সরকার তা না করে পুরো হার্ডলাইনে যায় এবং পরাস্ত হতে বাধ্য হন।


শুরুতে আন্দোলন সভা-সমাবেশের মধ্যে স্থির থাকলেও ধীরে ধীরে তার প্রকোপ বাড়তে থাকে। জুন মাসে পবিত্র ঈদ-উল-আজহার ছুটির পর জুলাইয়ের প্রথম থেকেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে চলতে থাকে কোটা বিরোধী আন্দোলন।


২০২৪ সালের ১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করে ও তিনদিনের কর্মসূচি ঘোষণা করে। এরমধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে। এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মিনারের সামনে অবস্থান নেয়।


এরপর ৬ জুলাই পর্যন্ত দেশ জুড়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ, মানববন্ধন, মহাসড়ক অবরোধ ইত্যাদি কর্মসূচি পালন করে। ৭ জুলাই শিক্ষার্থীদের ডাকা ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচীর আওতায় ৯ জুলাই পর্যন্ত বিক্ষোভ সমাবেশ, মিছিল, মহাসড়ক অবরোধ ইত্যাদি কর্মসূচি পালন করে শিক্ষার্থীরা।


এরপর ১০ জুলাই ঢাকার বিভিন্ন স্থানে অবরোধের কারণে ঢাকার পরিবহন ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়ে এবং আন্দোলনের কারণে দূরপাল্লার বাসগুলো বন্ধ হয়ে যায়। এদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শাহবাগের রাস্তা অবরোধ করে। সেখানে শিক্ষার্থীদের সামনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ব্যারিকেড দিয়ে অবস্থান গ্রহণ করে। সেদিন দুপুরে কোটাব্যবস্থা বাতিল করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ে চার সপ্তাহ স্থিতাবস্থা দেওয়া হয়েছে বলে জানা যায়। তাই শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থেকে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করেন প্রধান বিচারপতি।


১১ জুলাই বৃষ্টির মধ্যেই পুলিশের বাধাকে অতিক্রম করে শাহবাগে তাদের অবরোধ কর্মসূচী শুরু করে। সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে যোগ দেয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তবে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা পুলিশি বাধার ফলে পিছিয়ে যেতে বাধ্য হয়। অন্যদিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে কর্মসূচী পালনকালে পুলিশের হামলার শিকার হয় অনেক শিক্ষার্থী। হামলার শিকার হয় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও। এর প্রতিবাদে পরের দিন বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের ঘোষণা দেয় তারা।


১২ জুলাই পুলিশের গুলি, লাঠিচার্জ ও টিয়ারসেল উপেক্ষা করে শাহবাগে জড়ো হয় হাজার হাজার শিক্ষার্থী। এর আগের দিন দেশের বিভিন্ন জায়গায় কোটা বিরোধী আন্দোলনের ঘোষিত বাংলা ব্লকেডে প্রশাসনের ব্যাপক হামলার প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে দেশব্যাপী বিক্ষোভ ও সমাবেশ চলে। একই দিনের কর্মসূচীর মধ্যে ছিল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষোভ, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মশাল মিছিল, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল, চট্টগ্রামে লং মার্চ এবং রাজশাহীতে রেলপথ অবরোধসহ দেশজুড়ে প্রতিবাদ। এই আন্দোলনের প্রেক্ষিতে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে স্বাধীনতা বিরোধীদের প্রেতাত্মারা ষড়যন্ত্র করছে।

আগের দিন এক ঘোষণার মাধ্যমে ১৩ জুলাই থেকে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় ও জেলায় জেলায় অনলাইন ও অফলাইন বৈঠকের কর্মসূচী ডাকা হয়। একই সাথে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। ১৩ জুলাই বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ হতে জরুরী অধিবেশন ডেকে যৌক্তিকভাবে কোটা সংস্কার করে আইন পাশ করার দাবিতে পরের দিন সকাল ১১টায় গণপদযাত্রা করে রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়।


এদিন রাজশাহীতে রেলপথ অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করে। ঢাকায় ঢাবির শিক্ষার্থীরা সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলন করেন, তারা অভিযোগ করেন “মামলা দিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে বাধার চেষ্টা করা হচ্ছে”। এ সময় আন্দোলনকারীরা জানান, ‘তারা মুক্তিযোদ্ধা কোটার বিরুদ্ধে না, তবে নাতি-পুতি ও পোষ্যদের কোটার বিরুদ্ধে’। এদিন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল ছাত্রদের রাস্তা অবরোধ না করে আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দেন।  

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন