বছর শেষ হলেও জেলা ক্রিড়া সংস্থায় শুন্য পদ পুরণ হয়নি
যুগের চিন্তা রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম
বছর শেষ হলেও জেলা ক্রিড়া সংস্থায় শুন্য পদ পুরণ হয়নি
গত সাড়ে ১৫ বছর পুরো নারায়ণগঞ্জে গডফাাদার খ্যাত সাবেক এমপি শামীম ওসমান ওসমানের লুটপাটের অন্যতম জায়গা ছিল জেলা ক্রীড়া সংস্থা। এখানে তার শ্যালক তানভীর আহম্মেদ টিটুকে বসিয়ে উন্নয়নের নামে নতুন খেলোয়ার তৈরীর চেয়ে লুটপাটের ত্রাস চালিয়েছে। ২০১১ সন থেকে জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক পদ টিটু দখল করে নিরবে টাকার লুটপাট চালিয়েছে বলে ক্রীড়াবিদদের অভিযোগ।
জেলা ক্রীড়া সংস্থাকে কুক্ষিগত করে একটি রুমে বসে নিজেদের মনমত কমিটি বানিয়ে যেমনে ইচ্ছা তেমনিভাবে ব্যবহার করেছে বিগত সময়ের কমিটিতে থাকা ব্যক্তিরা। অথচ গত ১৫ বছরে এখান থেকে ভালো মানের খেলোয়ার তৈরী হওয়ার সুযোগ থাকলেও তাদের হাতে জিম্মি থাকায় তা হয়ে উঠে নাই। খেলার নাম করে ক্রীড়া মন্ত্রণালয় থেকে বাজেট এনে তা আত্মসাত করে এখন চোরের মত পালিয়ে গেছে। তাদের দাপুটের কারনে তাদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খোলার সাহস পর্যন্ত দেখান নাই বলে একাধিক সুত্র জানান।
এদিকে অপরাধ জগতের মাফিয়া গডফাদার শামীম ওসমানের শ্যালক জেলা ক্রীড়া সংস্থার পদ ছাড়লেও নতুন কমিটি গঠনে তেমন কোন তোর জোড় নেই। ইতোমধ্যে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে শেখ হাসিনা পালিয়েছে বছর হতে যাচ্ছে। তবে তার পনতের ঘন্টা শুরু হয় জুলাই কোটা আন্দোলনের মাধ্যমে যা পরবর্তিতে ১ দফা আন্দোলনে গিয়ে আওয়ামী লীগের পতন ঘটে। কিন্তু বছর পার হতে যাচ্ছে এখনো জেলা ক্রীড়া সংস্থায় কমিটি হয় নাই। কার আশায় কিংবা কার ইশারায় এখানকার কমিটি হচ্ছে না তা নিয়ে রযেছে নানা প্রশ্ন। ৫ আগষ্টের পরে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পরে নারায়ণগঞ্জ থেকে শামীম ওসমান সৈনিকরাও পালিয়েছে। তার মাঝে জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক তানভীর আহম্মেদ টিটুও পালিয়েছে। সেই থেকে ৪ মাস হতে চলেছে এখনো পর্যন্ত এখানে নতুন নেতৃত্ব কিংবা কমিটি হয় নাই।
তাছাড়া জেলা ক্রীড়া সংস্থা নিয়ে মুখ খুলেছেন ক্রীড়া সংগঠক ও নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অবকমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি সাবেক সভাপতি মাসুদুজ্জামান বলেছেন, নারায়ণগঞ্জে ক্রীড়া সহ বিভিন্ন সংগঠন মুখ থুবড়ে পড়েছিল। প্রায় ষোল বছর এক জায়গা থেকে কথা বলা হতো, অন্য কেউ কিছু বলার সুযোগ পেতেন না। আমাদের কথা বলার কোন সুযোগ করে দেয়নি। সুস্থ ধারায় ফিরতে হলে ক্রীড়া জগতকে সুন্দর করে গড়ে তুলতে হবে।
অপরদিকে সচেতন মহল সহ ক্রীড়া অঙ্গন থেকে দাবী উঠেছে জেলা ক্রীড়া সংস্থাকে সংস্কার করে নারায়ণগঞ্জের খেলা ধুলার আগের ঐতিহ্য যেন ফিরিয়ে আনা হয়। সেই সাথে এখান থেকে মুনেম মুন্্নার মত জাতীয় দলে দায়িত্ব পালন করার মত খেলোয়ার তৈরী হয়। জেলা ক্রীড়া সংস্থাকে কুখ্যিগত করে ওসমান পরিবার এটাকে নিজেদের অপকর্মের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করেছে। এখানে বসে জুয়ার আসর বসিয়ে লাখ লাক টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে।
এছাড়া নারায়ণগঞ্জ ফতুল্লা স্টোডিয়ামকে সংস্কার করার জন্য ২শ’ কোটি টাকার বরাদ্দ আসে। যার কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। এই কাজের টেন্ডার থেকে টিটু বিশাল অংকের টাকা কমিশন হিসেবে নিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তার এই অপকর্মের সাথে তাদের গোলাম হওয়া কিছু ব্যক্তিকে নামকাওয়াস্তে কমিটিতে নিয়েছে। তারাও তাদের অপরাধ জগতকে জায়েজ করার জন্য বসেছে।
জানা যায়, ২০১১ সন থেকে এ পর্যন্ত টানা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সহ পুরো পরিষদ তাদের মনমত হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে কেউ দাড়াতে গেলে তাকে ধরে এনে জেলা ক্রীড়া সংস্থার টর্চার সেলে নিয়ে মারধর করে বসিয়ে দেয়া হত। তাদের মাইরের ভয়ে আর কেউ দাড়াতে সাহস দেখাত না। তাছাড়া তারা ক্রীড়া সংস্থাকে নিজেদের সম্পত্তি বানিয়ে ফেলেছে। তাদের বাইরে গিয়ে কেউ মত প্রকাশ করার সুযোগ পেতনা। ওসমান পরিবার থেকে যেভাবে বলা হত সেই ভাবে চলত।
জেলা ক্রীড়া সংস্থার তানভীর আহম্মেদ টিটুর অপকর্মের স্বাক্ষী ছিলেন কমিটিতে থাকা তাদের অনুগত ব্যক্তি জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সহ সভাপতি ফারুক বিন ইউসুফ পাপ্পু, অতিরিক্ত সাধারণ সম্পাদক পদে মো: ইব্রাহিম চেঙ্গিস, যুগ্ম সম্পাদক পদে খোরশেদ আলম নাসির, মোস্তফা কাওছার, কোষাধ্যক্ষ পদে মো. জাহাঙ্গীর হোসেন মোল্লা, কার্যকরী পরিষদ সদস্য পদে খন্দকার শাহ্ আলম, জাকির হোসেন শাহীন, মো. রবিউল হোসেন, গোলাম গাউছ,
মো. মাকসুদ উল আলম, মো. জাহাঙ্গীর আলম, মাহমুদা শরীফ, মো. আসলাম, মাহবুবুল হক উজ্জল, ফিরোজ মাহমুদ সামা, আতাউর রহমান মিলন, ডা. মো. রকিবুল ইসলাম শ্যামল, মোহাম্মদ মাহবুব হোসেন বিজন, গৌতম কুমার সাহা, কার্যকরী পরিষদ উপজেলা সদস্য সিরাজ উদ্দিন আহমেদ, এস.এম আরিফ মিহির, কার্যকরী পরিষদ সদস্য রোকসানা খবির। এদের মাঝে যুগ্ম সম্পাদক পদে খোরশেদ আলম নাসির টিটুর সেকেন্ড ইন্ড কমান্ড হিসেবে কাজ করেছেন বিগত সময়ে।
টিটু যা বলতেন তিনি তাই করতেন। এমনকি খেলার নাম করে বিভিন্ন ব্যবসায়ী মহল থেকে বড় অংকের টাকা চাদাঁবাজি করার অভিযোগও রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। এছাড়া নীট কনসার্ন র্টুনামেন্টের নামে চালিয়েছে চাদাবাজির রামরাজত্ব। এতে সায় দিয়েছে কোষাধ্যক্ষ পদে মো. জাহাঙ্গীর হোসেন মোল্লা।
উল্লেখ্য গত ৫ আগষ্ট আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর সকল সেক্টরে রদবদল হচ্ছে। কিন্তু জেলা ক্রীড়া সংস্থায় এখনো পর্যন্ত নতুন নেতৃত্ব তৈরী হয় নাই। যদিও সরকারি প্রতিষ্ঠান হওয়ায় পদাদিকার বলে জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি জেলা প্রশাসক। তাই তিনি চাইলে যে কোন সময় নতুন কমিটি গঠন করতে পারে। ওসমান অনুসারীরা পালিয়ে থাকায় জেলা ক্রীড়া সংস্থা শুন্যতা তৈরী হয়ে রয়েছে। কিন্তু এখনো জেলা ক্রীড়া সংস্থা নেতৃত্বে শুন্যতা পুরণ হয় নাই।


