Logo
Logo
×

বিশেষ সংবাদ

সরকারের রোমহর্ষক হত্যা রূপ নেয় গণঅভ্যুত্থানে

Icon

লতিফ রানা

প্রকাশ: ১১ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম

সরকারের রোমহর্ষক হত্যা রূপ নেয় গণঅভ্যুত্থানে

সরকারের রোমহর্ষক হত্যা রূপ নেয় গণঅভ্যুত্থানে

Swapno

 # ১৮ জুলাই প্রাণ থাকা সত্ত্বেও ইয়ামিনকে গাড়ি থেকে বস্তার মতো ছুঁড়ে ফেলে পুলিশ


২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান কোন রাজনৈতিক আন্দোলন ছিলো না। এদেশের শিক্ষার্থীদের দাবি ছিল বহুদিন যাবত চলে আসা কোটা পদ্ধতির সংস্কার। যেখানে সরকারি চাকরিতে ১৭ কোটি মানুষের এই দেশের কোটায় মেধার বাইরে এক কোটিরও কম মানুষের জন্য ছিল শতকরা ৫৬ জনের চাকরির সুযোগ।


আর ছিল মেধার ভিত্তিতে থাকা বাকি ১৭ কোটি মানুষের জন্য বরাদ্দ ছিল শতকরা মাত্র ৪৪ জনের সুযোগ। আর এই অযৌক্তিক নীতি সংস্কারের মাধ্যমে কমিয়ে একটি সামঞ্জস্যপুর্ণ সংখ্যায় নিয়ে আসার দাবি ছিল তাদের। আর এই দাবি আদায় করতে গিয়ে যখন সরকারের বিভিন্ন অপকৌশলের শিকার হয় তারা।


এমনকি সরকারের বিভিন্ন পেটোয়া বাহিনী ও দলীয় ক্যাডাররা শিক্ষার্থীদের নৃশংস্যভাবে জখম করা শুরু করে এবং একটা পর্যায়ে তারা হত্যার নেশায় মত্ত হয়ে প্রকাশ্যে রাস্তার উপর পৈশাচিকভাবে বন্দুক তাক্ করে পাখির মতো মানুষ মারা শুরু করে।  সে সময় ঢাকার বিভিন্ন এলাকার রাস্তার উপর সারি সারি লাশ পড়ে থাকতে দেখা যায়।


সেসব হত্যার বর্ননা এতটাই রোমহর্ষক যে, তা বাংলাদেশের কোন পৈশাচিক সিনেমার গল্পকেও হার মানাবে। এর মধ্যে আবু সাঈদের মৃত্যুর ঘটনা, ইয়ামিন, গোলাম নাফিজ, আনাস, ইমাম হোসেনের মুত্যৃর কাহিনীর দৃশ্য ছিল খুবই করুন। এমনকি পুলিশ সদস্যদের বলতে শোনা যায় “একটা মরছে, আরও কয়েকটা ফালা”।


বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের সর্ব সংখ্যা ১৫৮১ জন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিষয়ক উপ-কমিটি। যদিও এই সংখ্যাই শেষ নয় বলে জানানো হয়েছে। এর আগে গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর ঘোষণা করা শহীদের তালিকায় ৭০৮ জনের নাম ছিল। নিজ দেশের সরকারের হাতে এত অল্প সময়ে এত মানুষ শহীদ হওয়ার ঘটনা এদেশের ইতিহাসে একটি পৈশাচিক ও কলঙ্কিত অধ্যায় হয়ে থাকবে বলে সচেতন মহল মনে করেন।


সাভারের গণহত্যার ঘটনায় কমপক্ষে ১৫ জনকে হত্যা করা হয় বলে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে জানা গেছে। শুধু মাত্র ঢাকার রায়েরবাগ কবরস্থানেই ৪৬টি বেওয়ারিশ লাশ দাফন করা হয় বলে জানা গেছে। ৫ আগস্ট সকালের দিকে শেখ হাসিনা পলায়নের আগে রাজধানীর চাঁনখারপুল এলাকায় মার্চ টু ঢাকা ঠেকাতে পুলিশের সর্বোচ্চ নির্মমতায় লাশের স্তুপ সৃষ্টি করার খবর পাওয়া যায়।


একই দিন শেখ হাসিনার পতনের সময়ও সাভারের আশুলিয়ায় একটি ভ্যানের মধ্যে বেশ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ জীবিত এবং মৃতদেহ একত্রে করে আগুন লাগিয়ে পুড়ে ফেলে পুলিশ সদস্যরা। যার মধ্যে চারজনের পরিচয় মিলেছে বলে জানা গেছে।
 
২০২৪ সালে যখন সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে তখন ১৬ জুলাই দুপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পার্ক মোড়ে গুলিবিদ্ধ হন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন।


তাকে হত্যার ভাইরাল হওয়া ভিডিও ও স্থির চিত্রে দেখা যায় নিরস্ত্র অবস্থায় তাকে খুব কাছ থেকে প্রকাশ্যে একাধিক গুলি করে এক পুলিশ সদস্য। সেখানেই সে লুটিয়ে পড়লে তাকে আন্দোলনকারীরা হাসপাতালে নিয়ে সেখানে তার মৃত্যু হয়।
 
১৮ জুলাই রাজধানী মিরপুরের মিলিটারী ইন্সটিটিউট অব সাইন্স এন্ড টেকনোলোজী (এমআইএসটি)’র কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী  শায়িখ আশাবুল ইয়ামিন। তার বাসা সাভারেরর ব্যাংক টাউন এলাকায়। একটি ভিডিওতে দেখা যায় তার প্রাণ থাকা সত্ত্বেও পুলিশের একটি গাড়ি হতে পুলিশ সদস্যরা তাকে চালের বস্তার মতো করে টেনে হিঁচড়ে রাস্তার উপর ফেলতে।


২০ জুলাই যাত্রাবাড়ির কাজলা এলাকার চায়ের দোকানে থাকা ইমাম হোসেনসহ বেশ কয়েকজনকে লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটায় পুলিশ। এরপর পুলিশ তাদের দৌড় দিতে বলে। যখন ইমাম হাসান দৌড় দেয় তখন তাকে পেছন থেকে গুলি করে পুলিশ। সে সময় তার এক বন্ধু তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করে। কিন্তু সে হাঁফিয়ে উঠলে এবং তার বন্ধু যখন তাকে আর টেনে নিতে পারছে না তখন আবারও ইমাম হাসানকে লক্ষ্য করে গুলি করতে শুরু করে পুলিশ।
 
৪ আগস্ট ফার্মগেট এলাকায় গুলির আঘাতে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গোলাম নাফিজ। এ অবস্থায় এক পুলিশ তার অজ্ঞান দেহটিকে রিকশায় তুলতে বাধ্য করে। পুলিশ তাকে একটি বস্তার মতো করে রিকশার উপর তোলে এবং পুলিশের এক সদস্য বলে তারে আরও দুটি গুলি কর। এ অবস্থায় ফার্মগেটের একটি হাসপাতালে নিয়ে যেতে চেষ্টা করে রিকশা চালক নূর মোহাম্মদ। কিন্তু পথে তাকে আটকে দেন ছাত্রলীগের ক্যাডাররা। পরে নূর মোহম্মদ তাকে খামারবাড়ির দিকে নিয়ে যান। সেই ভিডিও ভাইরাল হলে রিকশার পিছনে থাকা নাম্বার নিয়ে নাফিজের বাবা ফোন করেন রিকশা চালককে। পরে তিনি জানতে পারেন তার ছেলের মরদেহ পড়ে আছে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গে।
 
বিশ্লেষকদের মতে ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান কোন রাজনৈতিক আন্দোলন ছিলো না। এদেশের শিক্ষার্থীদের দাবি ছিল বহুদিন যাবত চলে আসা কোটা পদ্ধতির সংস্কার। যেখানে সরকারি চাকরিতে ১৭ কোটি মানুষের এই দেশের কোটায় মেধার বাইরে এক কোটিরও কম মানুষের জন্য ছিল শতকরা ৫৬ জনের চাকরির সুযোগ। আর ছিল মেধার ভিত্তিতে থাকা বাকি ১৭ কোটি মানুষের জন্য বরাদ্দ ছিল শতকরা মাত্র ৪৪ জনের সুযোগ।


আর এই অযৌক্তিক নীতি সংস্কারের মাধ্যমে কমিয়ে একটি সামঞ্জস্যপুর্ণ সংখ্যায় নিয়ে আসার দাবি ছিল তাদের। আর এই দাবি আদায় করতে গিয়ে যখন সরকারের বিভিন্ন অপকৌশলের শিকার হয় তারা। এমনকি বিভিন্ন পেটোয়া বাহিনী ও দলীয় ক্যাডার দিয়ে শিক্ষার্থীদের যেভাবে নৃশংস্যভাবে জখম করা শুরু করে তখনই প্রথমে শিক্ষার্থীদের অভিভাবক শিক্ষকরা মাঠে নামা শুরু করে। একটা পর্যায়ে সরকারী খুনীরা হত্যার নেশায় মত্ত হয়ে উঠে এবং প্রকাশ্যে রাস্তার উপর বন্দুক তাক্ করে পাখির মতো মানুষ মারা শুরু করে তখনই এদেশের আপামর জনগণের রক্তে এক হিম শীতল স্রোত বইতে শুরু করে।


বুক চিতিয়ে জীবন দিতে শুরু করে একের পর এক শিক্ষার্থী। এখানে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে কোন রাজনৈতিক চরিতার্থ না থাকায়ে তাদের সাথে আন্দোলনে নেমে আসে এদেশের লাখো লাখো মানুষ এবং ফ্যসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটিয়ে ক্ষ্যান্ত হন তারা।

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন