
হত্যার ঘটনা বাড়ায় অস্বস্তিতে মানুষ
তুচ্ছ ঘটনায় হত্যার ঘটনা ঘটেই চলছে,এমনকি আধিপত্য বিস্তার, স্ট্যান্ড দখলের ঘটনায় চলমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় নগরবাসি। দলমত নির্বিশেষে নগরীর প্রায় সব মানুষই এই ভয়াবহ অবক্ষয় ও এর পাশবিকতার বিস্তার নিয়ে শঙ্কিত-সংক্ষুব্ধ। সচেতন মহল মনে করেন বিচারহীনতার সংস্কৃতি ও সামাজিক অবক্ষয়ের কারনে এই সকল অপরাধ বেরেছে।
ভয়ঙ্কর সব হত্যাকান্ডের ঘটনা জনসমাজে উন্মোচিত হয়ে পড়ার পরও এসব অপরাধিরা কারাগারে-আদালতে বিশেষ মর্যাদা নিয়ে আয়েশে দিন কাটাতে পারে, আর নানাভাবে বিচারকে প্রভাবিত করার অপচেষ্টা করে , তাহলে তাদের শেঁকড় কতটা মজবুত আর কতটা বিস্তৃত তা সহজেই অনুমেয়।
এদিকে সম্প্রতি গত বছরের ৫ আগষ্টের পরে নানা অপরাধে ঘটনা বেড়ে গেছে। তার মাঝে তুচ্ছ ঘটনা কেন্দ্র করে হত্যার ঘটনাও ঘটছে। এতে করে নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে স্বজনকে হত্যা বা হত্যার পর নিজে আত্মহত্যা করা নাানা ধরনের অপরাধের ঘটনা বেড়েছে। আবার অনেকেই আইন নিজের হাতে তুলে আধিপত্য ধরে রাখার জন্য মতের বিপক্ষ লোকদের হত্যা করতে কর্ণপাত করছেন না।
আবার কেউ কেউ আইনকে তোয়াক্কা না করেই দিব্বি অপরাধ করে যাচ্ছে। এই সকল অপরাধ ঘটছে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের শেল্টারে। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে ২০২৪ সনের ৫ আগষ্টে অপরাধীদের শেল্ট্রা দিতেন ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ তবে এখনতো তারা নেই তাহলে অপরাধীরা কার থেকে শেল্টার পায়। যদিও নারায়ণগঞ্জের অপরাধ মাত্রায় বিএনপি দুই গ্রুপের একাধিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এমনকি এক গ্রুপ আরেক গ্রুপের উপর হামলা করে হত্যা করতে কর্ণপাত করছে না।
সম্প্রতি বন্দর সহ সারা জেলায় অপরাধ বেড়ে যাওয়ায় মানুষের মাঝে আতঙ্ক তৈরী হয়েছে। সেই সাথে চুরি ছিনতাই,ডাকাতির ঘটনা বেরে যাওয়া সড়কে চলাচলে নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে মানুষ। এছাড়া অপরাধ দমনে পুলিশ প্রশাসন ব্যর্থ হওয়ায় তাদের দায় এড়িয়ে যেতে পারে না বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক। বিগত সময়ে নারায়ণগঞ্জের আনাচে কানাচে পাড়া মহল্লার অপরাধীদের শেল্টার দিয়েছে ওসমান সম্রাজ্যের ক্যাডার বাহিনী মাদক, চাদাঁবাজ, সন্ত্রাস, ভুমিদস্যু,ইভটিজিং নামক অপরাধ ঘটিয়ে বিত্তশালী হয়েছে।
সম্প্রতি অপরাধীরা ফের মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। বিভিন্ন অপকর্ম চালিয়ে তাদের অপরাধ কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে সচেতন মহলে প্রশ্ন উঠেছে গত বছরের ৫ আগষ্টের পরে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা পালিয়ে গেলেও সম্প্রতি সময়ের মাথা চাড়া দিয়ে গর্জে উঠা কিশোর গ্যাং,মাদক কারবাড়ি, ভুমিদস্যু, চাদাঁবাজদের কারা শেল্টার দিচ্ছে।যদিও এই অভিযোগের তীর বিএনপি নেতাদেরকে দোষারপ করছে।
অন্যদিকে অপরাধ ও সমাজ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঘটনার পর বিচারে দীর্ঘসূত্রিতা, সামাজিক বন্ধনের অনুপস্থিতি, ইন্টারনেটের অপব্যবহার. অসহিষ্ণুতা, মাত্রাতিরিক্ত ক্ষোভ, রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক বৈষম্য, পরকীয়া সমস্যা, নৈতিকতা ও মূল্যবোধের অবক্ষয়ের চিত্র ফুটে উঠছে একের পর এক লোমহর্ষক ঘটনায়।
তুচ্ছ কারণে খুনের ঘটনা ঘটতে কর্ণপাত হচ্ছে না। গত এক সপ্তাহ না যেতেই বিএনপির একাধিক গ্রুপের মাঝে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে নিহত হয়। তার মাঝে সবচেয়ে বেশি সম্প্রতি সময়ে আলোচিত হয়েছে বন্দরের জোরা খুনের ঘটনা। যা নিয়ে পুরো শহরে আলোচনা তৈরী হয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে গত এক সপ্তাহে নারায়ণগঞ্জের এলাকায় ঘটে যাওয়া কয়েকটি ঘটনা সমাজকে নাড়া দিয়েছে। সর্বত্র আলোচনা চলছে কেন এবং কি কারনে হত্যা সহ নানা অপরাধ বেড়েই চলছে। এতে করে প্রশাসন তাদের ব্যর্থতার দায় এড়িয়ে যেতে পারে কী না তা নিয়ে সর্বত্র প্রশ্ন উঠেছে।
এই ভয়াবহ চিত্র জেলার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও সামাজিক প্রেক্ষাপট নিয়ে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। জানাযায়, নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে দুইজনের মৃত্যুর ঘটনায় দুটি হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। আর দুই মামলায় আসামি করা হয়েছে নাসিকের সাবেক দুই কাউন্সিলরসহ ১১২ জনকে।
এ পর্যন্ত ৮জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রাজমিস্ত্রী আব্দুল কুদ্দুস ও স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা মেহেদী হাসানের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে আব্দুল কুদ্দুসের মৃত্যুর ঘটনায় তার মেয়ে রোখসানা আক্তার রোববার রাতে বন্দর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। আর মেহেদী হাসান মৃত্যুর ঘটনায় আজ দুপুরে তার ভাই খালেদ সাইফুল্লাহ বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন।
এর আগে ২১ জুন বন্দরে চাদাঁবাজি, মাদককারবারি টাকার ভাগ সহ আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনায় দুজন নিহত হন।
এই ঘটনার রেশ না কাটতেই নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ঘর ভাড়া পাওনা নিয়ে ভাড়াটিয়ার সঙ্গে তর্কের জেরে মো. আবুল বাশার (৭০) নামের এক বাড়ি মালিকের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার (২৩ জুন) রাত সাড়ে ১১ টায় নাসিক ১নং ওয়ার্ডস্থ পাইনাদি নতুন মহল্লা এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শাহিনূর আলম।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত ভাড়াটিয়া পরিবারের তিন সদস্যকে আটক করেছে পুলিশ। আটকরা হলেন: মো. তছর উদ্দিনেটর ছেলে সোহাগ হোসেন (২৯), সোহাগের স্ত্রী আলেহা বেগম (২২) এবং সোহাগের মা ফাতেমা বেগম (৪৫)।
স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, দীর্ঘ একবছরের বেশি সময় ধরে ভিকটিমের বাড়ির ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করছেন আটককৃত অভিযুক্তরা। গেলো ৩ মাস ধরে ঘর ভাড়া পরিশোধ করতে ব্যর্থ হচ্ছে তারা। যার ফলে ভিকটিম উক্ত ভাড়াটিয়াদের বাড়ি ছাড়ার কথা জানান। এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে প্রায় সময়ে ঝগড়া সৃষ্টি হচ্ছিল। এর ফলশ্রুতিতে সবশেষ গতকাল সোমবার রাতে বাড়ির মালিক অভিযুক্তদের ঘরে তালা ঝুলিয়ে দেন। পরবর্তীতে রাত সাড়ে ১১ টার সময়ে অভিযুক্ত সোহাগ বাসায় এসে দেখতে পান যে তাদের বাড়ির গেটটি আটকানো রয়েছে। তখন বাড়িওয়ালার ছেলে নাফিজ (৩৫) কে বিনয়ের সঙ্গে গেট খুলে দেয়ার জন্য অনুরোধ করে যান। একপর্যায়ে গেট খুলে দিয়ে ভিকটিমের ছেলে নাফিজ উচ্চ মেজাজে ভাড়াটিয়া সোহাগের সঙ্গে বাকবিতন্ডায় জড়ান।
এ সময় তাৎক্ষণিক ভিকটিমের আরেক ছেলে বাধন ও (৩২) ঘটনাস্থলে এসে উক্ত বাকবিতন্ডায় লিপ্ত হয় এবং দুইভাই মিলে ভাড়াটিয়া সোহাগের সাথে হাতাহাতি শুরু করে। উভয়ের ঝগড়ার আওয়াজ শোনে সোহাগের স্ত্রী ও তার মা এবং বাড়ি মালিক ভিকটিম আবুল বাশার এসে তাদের শান্ত করার চেষ্টা করে।
ঝগড়া থামাতে গিয়ে ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে ভিকটিম ধাক্কা লেগে পরে যান। পরে তাৎক্ষণিক আহত অবস্থায় তাকে প্রথমে প্রো-অ্যাকটিভ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে অবস্থার অবনতি দেখে প্রো অ্যাকটিভ হসপিটালে না রেখে পরবর্তীতে খানপুর ৩০০ শষ্যা হাসপাতালে নিয়ে গেলে ওইখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
তথ্যমতে, দুই দিনের ব্যবধানে তিন হত্যার ঘটনায় মানুষের মাঝে আতঙ্ক তৈরী হয়েছে। সেই সাথে আসামীরা জামিনে এসে আবারও অপরাধে জরিয়ে পড়ে বলে তথ্য উঠে আসে জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মতবিনিময় সভায়। ওই সভায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তাসনিম বলেন,আমরা অপরাধীদের গ্রেপ্তার করি, কিন্তু কিছু দিন পরেই দেখা যায় তারা জামিনে এসে আবারও চুরি ছিনতাই সহ হত্যার ঘটনায় জরিয়ে যাচ্ছে। এজন্য অপরাধ দমনে সামাজিক ভাবে সর্বস্তরের মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে।
আমরা নারায়ণগঞ্জবাসী সংগঠনের সভাপতি নুর উদ্দিন বলেন, প্রশাসনের সাথে সামাজিক ভাবে অভিভাবক মহলকে এগিয়ে আসতে হবে। নগরবাসির মতে অপরাধ বেড়ে যাওয়ায় প্রশাসন তাদের ব্যর্থতার দ্বায় এড়িয়ে যেতে পারেন না। প্রশাসনকে সকলের সহযোগিতা করতে হবে। তাহলে সমাজে যদি অপরাধ কমানো যায়।