
কোথাও নেই জাকির খান
নারায়ণগঞ্জের এক সময়ের আলোচিত নাম জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি জাকির খান। নানান ঢাঁক-ঢোল ও বিশাল শোডাউন দিয়ে গত (১৩ এপ্রিল) কারামুক্ত হওয়ার পর থেকে ৭০ দিন অতিবাহিত হলে ও এই আলোচিত জাকির খানকে রাজনৈতিক বা সামাজিক কোন কার্যক্রমে দেখা যায়নি।
এদিকে জাকির খানের নেতাকর্মীরা তাদের বিভিন্ন দলীয় পোগ্রামে জেলা ও মহানগর বিএনপির আয়োজন উল্লেখ করলে ও এই বলয়ের নেতারা দুই সংগঠনের সাথে কোনভাবেই যুক্ত নন বলে জানা যায়। যাকে ঘিরে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন মহলে জাকির খানের গ্রহণযোগ্যতা এবং জনপ্রিয়তা নিয়ে উঠছে নানা প্রশ্ন।
দীর্ঘ ২১ বছর সিনেমার কাহিনীর মতোই তাকে নিয়ে নানা মুখরোচক চর্চা নারায়ণগঞ্জবাসীর মাঝে থাকলে বর্তমান জাকির খানের গ্রহনযোগ্যতা নিয়ে এরাই নানান প্রশ্ন তুলে যাচ্ছেন, আবার অনেকে বলছে জাকির খান বর্তমানে ‘রেড সিগন্যালে’ রয়েছেন যাকে ঘিরে বর্তমানে তিনি জুম্মার নামাজ ও পরিবারিক কোন কার্যক্রম ছাড়া রাজনৈতিক বা সামাজিক কোন কাজেই অংশগ্রহণ করতে চাইছেন না। তিনি কেন্দ্রীয়ভাবে মাঠে নামার ‘গ্রীন সিগন্যাল’ খুঁজছেন কিন্তু বর্তমানে নির্বাচনী আলোচনায় সিগন্যাল পেয়ে দেওভোগে সীমাবদ্ধ থেকে জেলা ও মহাগরের রাজনীতির সাথে থাকবে কিনা সেই বিষয় নিয়ে চলছে পর্যালোচনা।
সূত্র জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে সাবেক এই ছাত্রদল নেতা জাকির খানের নাম ও ছবি ব্যবহার করে একটি সংঘবদ্ধ চক্র শহরের বিভিন্ন এলাকায় চাঁদাবাজি করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অথচ চাঞ্চল্যকর বিষয় হলো, এই চক্রের বিরুদ্ধে জাকির খান নিজেই পুলিশ সুপার বরাবর অভিযোগ এবং বিভিন্ন কায়দায় প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এমনকি তাঁর নামে খোলা অফিসে তালা দিয়ে ফেস্টুন-সাইনবোর্ড ছিঁড়ে ফেলার পরে ও চলমান এই চাঁদাবাজি, ঝুট সেক্টর নিয়ন্ত্রণ, বিভিন্ন অপকর্ম পরিচালনার অভিযোগ।
তাছাড়া কারামুক্তির পরপরই জাকির খান ঘোষণা দিয়েছিলেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত করেই তিনি রাজনৈতিক ময়দানে অংশ নিবেন। কিন্তু দিন শেষে তিনি তার এই কথা ও রাখলেন না। তিনি মাজার জিয়াউরতের ২৬ দিনে ও রাজনৈতিক বা সামাজিক কার্যক্রমে আসেনি।
শুধু গত (১৯ জুন) বিকালে নারায়ণগঞ্জ শহরে হাকিম প্লাজা মার্কেটে আগুনে ক্ষতিগ্রস্তদের খোঁজ খবর নিতে আসলে ও জানা গেছে বিগত আমল থেকেই এই দেওভোগের সকল ব্যবসায়ী মার্কেট বা সমিতি সবই তাদের দখলে যার ফলে বলা চলে এটা কোন সামাজিক নয়, তার নিজস্ব কাজেই তিনি পরিদর্শনে এসেছিলেন। এর আগে টানা কয়েক মাস যাবৎ জাকির খান কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীদের কাছে তার সাথে জিয়াউর রহমানের মাজার জিয়ারতে দফায় দফায় আবেদন অনুরোধ করলে ও কেউ যেতে রাজি হয়নি।
কিন্তু পরবর্তীতে বিভিন্ন কায়দায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আব্দুস সালাম, কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, যুবদলের কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেনকে তার সাথে জিয়াউর রহমানের মাজার জিয়াউর করতে রাজি করে নিয়ে যায়। এদিকে জাকির খান কেন্দ্রীয় নেতাদের ধারে ধারে যাওয়া ও তাদের সাথে কুশল বিনিময় নিয়ে কাতারভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের (সামি)।
যা তিনি নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন অনলাইন মিডিয়ায় জাকির খানের পক্ষে থাকা নিউজগুলোতে বিরল কমেন্ট করেন যা নিয়ে অনেকটাই ইমেজ ক্ষুন্ন হয়েছিলেন জাকির খান। এর পর থেকেই অনেকটাই কোনঠাসা অবস্থায় পরেন তা ছাড়া নারায়ণগঞ্জ মহানগরের বর্তমানে কিছুসংখ্যক দেওভোগ ভিত্তিক নেতাকর্মী এবং জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম রবি ছাড়া জাকির খানের পাশে নেই কোন বিএনপির নেতাকর্মীই।
ইতিমধ্যে তার কারামুক্তির তার সাথে কুশল বিনিময় ও সাক্ষাৎ করতে বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড থেকে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা তার বাসায় উপস্থিত থাকলে ও তারা তার কর্মকাণ্ডে অনেকটাই নারাজ ছিলেন প্রায়। তারা তার বাসভবনে সাবেক সন্ত্রাসী গডফাদার শামীম ওসমান, অয়ন ওসমান, আজমেরী ওসমানের বহু বাহিনীকে জাকির খানের আশেপাশে লক্ষ্য পায় এর মধ্যে একজন যুবদল নেতা সজল হত্যা মামলার আসামী ও ছিলেন।
সব মিলিয়ে বিএনপির ত্যাগী আন্দোলনে পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের চোখে কোনঠাসা হয়ে পরেছিলেন জাকির খান। তা ছাড়া বর্তমানে তার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে তারা ও তুলছেন প্রশ্ন। তা ছাড়া সর্বশেষ যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ইউটিউবার ও বাংলাদেশি সাংবাদিক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন জাকির খানকে নিয়ে দেওয়া এক বক্তব্যে তিনি জাকির খানকে নারায়ণগঞ্জের গডফাদার শামীম ওসমানের প্রকাশ্যে বিরোধীতা হিসেবে আখ্যাসহ ব্যাপক নির্যাতিত বলে দাবি করেছিলেন।
যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল ট্রপিক হয়ে উঠেছিলো প্রায়। এদিকে সামাজিক যোগাযোগের ফলোয়ার অনেকেই ইলিয়াসকে অনেকই বিশ্বাসী ও গ্রহণযোগ্যতা চোখে দেখে যাকে ঘিরে তার বক্তব্যের মাধ্যমে জাকির খানকে নিয়ে অনেকটাই ভিন্নমত প্রকাশ করতে থাকলেও জাকির খান মাঠে নেমে না এসে সেই বক্তব্যের গ্রহণযোগ্যতা ধরে রাখতে পারলেন না।
বর্তমানে তিনি রাজনৈতিক বা সামাজিকসহ সকল কার্মকাণ্ড জগৎ এর বাহিরে অবস্থান করছেন। তা ছাড়া দীর্ঘ ২১ বছর সিনেমার কাহিনীর মতোই তাকে নিয়ে নানা মুখরোচক চর্চা হতে দেখা গেছে নারায়ণগঞ্জে সর্বমহলে। কিন্তু তার মুক্তির পরপরই সমর্থক ভূরি ভূরি থাকলে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনায় জাকির খান ইস্যু থাকলে ও তা এখন প্রায় প্রকাশ্যে চলে এসেছে। এদিকে চাঁদাবাজি, হত্যা মামলাসহ ৩৩ মামলা থেকে খালাস পাওয়া বিএনপি নেতাকে নিয়ে বিগত দিনে যেমন ছিলো আলোচনা বর্তমানে তার নিস্কিয় কার্মকাণ্ডে বেশি সমালোচনা ঝড় বইছে।