Logo
Logo
×

বিশেষ সংবাদ

গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার পতনের ৬ মাস

১০০ মামলায় আসামী প্রায় ১০ হাজার

Icon

সাইমুন ইসলাম

প্রকাশ: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

১০০ মামলায় আসামী প্রায় ১০ হাজার
Swapno

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার সম্মিলিত গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতন ঘটে গতবছরের ৫ আগস্ট। শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পরও নানাপন্থায় আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের একটি বড় অংশ দেশ ছেড়েছেন। তবে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী গোছের একটি বড় অংশ দেশে থেকেই নানাপন্থায় দেশকে অস্থিতিশীল করার মিশনে লিপ্ত রয়েছেন। ৫ আগস্টের পর বিএনপির কিছু বিএনপির কিছু নেতার বিশৃঙ্খলায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবস্থা আরো খারাপের দিকে যায়। ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার পতনের ৬ মাস পর শনিবার রাত থেকে  দেশব্যাপী সন্ত্রাসবাদ দমন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করা এবং অপরাধীদের আইনের আওতায় নিতে সারাদেশে শুরু করা হয় অপারেশন ডেভিল হান্ট নামে এক বিশেষ অভিযান। বিশেষ করে, গাজীপুরের সাম্প্রতিক সহিংস ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এই অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই অপারেশনের ঘোষণা আসার পর থেকে আওয়ামী লীগের গা ঢাকা দিয়ে থাকা একটি বিশাল অংশের নেতারা বাড়ি ছেড়েছেন, সূত্র জানিয়েছে, বিএনপির বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়ানো ব্যক্তিরাও এলাকা থেকে সটকে পড়েছেন।



সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও অন্যান্য নিরাপত্তা সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠকের মাধ্যমে দেশের সামগ্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এরই ধারাবাহিকতায়   ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ নামক বিশেষ অভিযান শুরু হয়। অভিযানটির মূল লক্ষ্য হলো, সন্ত্রাসীদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করা। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল করা। জনসাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ ও দমন করা। অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ। বাংলাদেশের বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যৌথভাবে পরিচালনা করছে, যার মধ্যে রয়েছে,বাংলাদেশ পুলিশ। র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চ (ডিবি)। এই বাহিনীগুলো একযোগে অভিযান পরিচালনা করছে এবং সন্ত্রাসীদের ধরতে বিভিন্ন প্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্য ব্যবহার করছে।



এদিকে হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন থানায় প্রায় ১০০ মামলায় আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা থেকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত প্রায় ১০ হাজার ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলায় আসামি করা হয়েছে। যদিও মামলায় আসামি হলেও একটি বড় অংশ জেলায় নিজ বাড়িতে গা ঢাকা দিয়ে থাকতেন জুলাই-আগস্টে নৃশংসতা চালানো এসব আওয়ামী লীগ নেতারা। বিএনপির বেশ কিছু নেতাকে বশে এনে এবং নানা সুবিধার বিনিময়ে এসব নেতা নারায়ণগঞ্জে অবস্থান করছিলেন বলে জানিয়েছে সূত্র। তাছাড়া পুলিশসহ প্রশাসনে যে পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া চলছিল সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়েই ছাত্রহত্যা মামলার এতো বড় সংখ্যক আসামিরা নির্বিঘ্নে নিজ এলাকাতেই অবস্থান করছিল বলে জানিয়েছে সূত্র। এসব ব্যক্তিই আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের দেশের বাইরে থাকা দেওয়া নির্দেশনা মোতাবেক নারায়ণগঞ্জকে অশান্ত এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি ঘটানোর নষ্ট মিশনে লিপ্ত ছিল বলে জানিয়েছে সূত্র। সুযোগ মতো শামীম ওসমানসহ ওসমানের পরিবারের নির্দেশনায় ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের গুনগান গেয়ে শহর ও শহরতলীর নানা জায়গায় পোষ্টার সাটিয়েছেন তারা। এমনকি জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারের কার্যালয়সহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবনের বাইরেও তারা একই কাজ করেছেন। এই ঘটনায় মোটা দাগে ব্যবস্থা নেয়া সম্ভবপর হয়নি।  



সূত্র জানিয়েছে, ফ্যাস্টি সরকার পতনের পরপরই দেশজুড়ে আওয়ামী সমর্থকদের বিরুদ্ধে গণহারে মামলা হওয়া শুরু হয়। গতবছরেরর ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া এ আন্দোলনের সময় আওয়ামী সমর্থকেরা আন্দোলনকারী উপর যে হামলা করেছে তার প্রেক্ষিতে এ মামলা করা হয়েছে। এ ধরণের মামলায় নারায়ণগঞ্জের ৭ টি থানায় সর্বমোট মামলা হয়েছে প্রায় ১০০ টি।



তবে সবচেয়ে বেশি মামলা হয়েছে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় যার সংখ্যা ৪৫ টি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মামলা হয়েছে ফতুল্লা থানায় যার সংখ্যা ২৫ টি। ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ মিলিয়েই মোট মামলা হয়েছে ৭০ টি। অন্যদিকে সদর থানায় মামলা হয়েছে ৬ টি, সোনারগাঁ থানায় মামলা হয়েছে ১৪ টি, বন্দর থানায় মামলা হয়েছে  ২টি, আড়াইহাজার থানায় মামলা হয়েছে ৩ টি, রূপগঞ্জ থানায় মামলা হয়েছে ৫ টি।



নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের সংসদীয় আসন ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জে এত বেশি সংখ্যক মামলা হওয়ায় অবাক হওয়ার মতো কিছু দেখছেন না স্থানীয়রা। এই এলাকাদ্বয়ের একাধিক গণ্যমান্য ব্যাক্তির সাথে কথা বললে তারা অভিমত ব্যাক্ত করে বলেন শামীম ওসমান দেড় দশক ধরে ফতুল্লা সিদ্ধিরগঞ্জে যে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন এবং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে প্রকাশ্যে দলবদল নিয়ে সাধারণ মানুষের উপর হামলা করেছে। তার মতো প্রকাশ্যে নারায়ণগঞ্জের আর কোনো এমপি মাঠে অস্ত্র নিয়ে হামলা করেনি। সেই প্রেক্ষিতে তার সংসদীয় আসনে আরো মামলা হলেও অবাক হওয়ার মতো কিছু দেখছেন না তারা।



শুধু তাই নয়, নারায়ণগঞ্জের মধ্যে আন্দোলনের সময় সাধারণ মানুষ ও ছাত্র-জনতার উপর সবচেয়ে বেশি হামলার ঘটনা ঘটেছে ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জেই। অন্যদিকে সবচেয়ে কম মামলা হয়েছে বন্দর ও আড়াইহাজার থানায়।
আন্দোলনের সময় সৃষ্ট পরিবেশ নিয়ে সাধারণ মানুষ বলেন বিগত সরকারের সমর্থকেরা বিশেষ করে শামীম ওসমান সহ বিভিন্ন এমপি ও এমপির ঘনিষ্ঠরা যেসকল কর্মকান্ড করেছেন তাদের অতিদ্রুত বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান তারা।



অন্যদিকে এইধরণের কিছু মামলা নিয়ে সম্প্রতি কিছু বিতর্ক  শুরু হয়েছে। এ ধরণের মামলার বাদীরা অনেকেই স্বীকার করছেন তারা না জেনেই কারো প্ররোচনায় পরে মামলাগুলোর বাদী হয়েছে। তবে প্রশাসন বলছে মামলা যেহুতু হয়েছে সেহুতু মামলা নিয়ে সুষ্ঠু তদন্ত তারা করছেন। তবে সাধারণ মানুষের দাবি ঘটনার সাথে যারা সত্যিকারের অর্থে যুক্ত এবং যারা বিগত সরকারের শাসনামলে বিভিন্নভাবে মানুষকে শোষণ করেছে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের গ্রেফতার অভিযান জোরালোভাবে চালানো উচিত।



সর্বশেষ সারাদেশে অপারেশন ডেভিল হান্ট পরিচালনা করে এক হাজার ৩০৮ জনকে গ্রেফতার করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) পুলিশ সদর দফতর থেকে এই তথ্য জানানো হয়। পুলিশ সদর দফতর জানায়,  রোববর দুপুর পর্যন্ত এক হাজার ৩০৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে মেট্রোতে ২৭৪ জন আর রেঞ্জে এক হাজার ৩৪ জন।



তবে এ অপারেশন এর ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ এর পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার জানান ভিন্ন কথা। তিনি যুগের চিন্তাকে বলেন, আমরা সেই অর্থে এই কার্যক্রম এখনো শুরু করিনি। যৌথ বাহিনী নিয়ে খুব দ্রুত এ কার্যক্রম শুরু করবো।তবে আমাদের নিয়মিত গ্রেফতার অভিযান চলছেই।


এদিকে অপারেশন ডেভিল হান্ট'এর খবরে গোটা নারায়ণগঞ্জ এর সন্ত্রাসীরা আতঙ্কে রয়েছে। তবে সাধারণ মানুষ বলছে, এই ধরনের তৎপরতার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। কারণ সরকার পতনের পর অপরাধীরা বেপরোয়া হয়ে পড়েছিলো। তাদের নিয়ন্ত্রণে এমন পদক্ষেপ জরুরি।

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন