
সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহবায়ক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি
সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহবায়ক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি বলেছেন, আমাদের সন্ত্রাসীর তকমার কারণে আমাদের পরিচয়টি উঠে এসেছে এটি একটি সন্ত্রাসী নগরী, এটি একটি গডফাদারের নগরী। এখানে মানুষ বসবাস করলে লাশের পর লাশ তারা ফেলে দেয়। তবে এই প্রচারণাটি মিথ্যে নয়, এর বাস্তবতা এখানে রয়েছে আমরা তা দেখেছি। বিগত ১৫/১৬ বছর আমরা দেখেছি যে, ওসমান পরিবার আমাদের নারায়ণগঞ্জ শহরে দাবড়িয়ে বেড়িয়েছে তারা শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় এই সরকারের প্রশাসনের ছত্রছায়ায় এখানে হেন কোন কর্ম নেই যে, তারা করেনি। চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব, মাদকের ব্যবসা, সমস্ত অপকর্ম তারা করেছে। যারা এর প্রতিবাদ বা বিরোধিতা করেছে আমরা দেখেছি তাদের লাশ পড়েছে। প্রায় আট-দশটা টর্চার সেল ছিল। ২০১৩ সালে আমরা এই টর্চার সেলগুলোর ঠিকানা দিয়ে এগুলো বন্ধ করতে বলেছিলাম। প্রশাসন উদ্যোগ নিয়ে এগুলো বন্ধ করেছিল। কিন্তু পরবর্তীতে আবার অন্য জায়গায় এই টর্চার সেলগুলো শুরু হয়েছে। তারা টানবাজারের বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা নিতো। চাঁদা দিতে কেউ অস্বীকার করলে তারা তাদের টর্চার সেলে এনে নির্যাতন করে এমনি একটি অবস্থা তৈরি করতো যে, তাদের কথা না মানলে লাশ ঐ শীতলক্ষ্যায় ভাসতো। এই ভয়ে ্এই আতঙ্কে আমাদের এই নারায়ণগঞ্জে মানুষ ছিল, ব্যবসায়ী ছিল এবং তাদের সহযোগী যে যে জায়গা বা ক্ষেত্রগুলো তারা নিয়ন্ত্রণ করেছে, ব্যবসাক্ষেত্র, সাংবাদিকতা, আদালতসহ বিভিন্ন জায়গায় তাদের তাবেদার তৈরি করেছিল। এরা যে সবাই-ই ৫ আগস্টের পর পালিয়েছে তা নয়, এদের কেউ কেউ দেশ ছেড়ে পালিয়েছে আবার অনেকেই দেশে এখনও বহাল তবিয়তেই আছে। কেমন নারায়ণগঞ্জ চাই এর উত্তরে প্রথমেই বলতে হবে আমরা যানজটহীন নারায়ণগঞ্জ চাই। চাষাঢ়া থেকে ডিআইটি যেতে আধাঘন্টা পৌনে এক ঘনটা সময় লাগে। শহরে বের হলে এই শহরে কোন প্রশাসন বা মা-বাপ রয়েছে বলে আমাদের মনে হয় না। এটি নিরসনের মূল দায়িত্ব হলো সিটি কর্পোরেশনের।
গতকাল নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাব ভবনের ৭ম তলায় ‘ আমরা কেমন নারায়ণগঞ্জ চাই?’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন।
‘আমার নারায়ণগঞ্জ’ এই গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে। সংগঠনটির সভাপতি বিশিষ্ট ব্যবসায়ী নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি হয়েছেন মডেল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিটিজেন ব্যাংক পিএলসি’র অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মাসুদুজ্জামানের সভাপতিতেত্ব গোলটেবিল বৈঠকে নারায়ণগঞ্জের নানাবিধ সমস্যা ও সমাধান সম্পর্কে বক্তব্য উপস্থাপন করেন নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন, নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহবায়ক এড.সাখাওয়াত হোসেন খান, সদস্য সচিব এড.আবু আল ইউসুফ খান টিপু, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদের সদস্য মাওলানা মঈনুদ্দিন আহমদ, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী প্রাইম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবু জাফর আহমেদ বাবুল, বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি প্লামি ফ্যাশনস এর এমডি ফজলুল হক, জামায়াতে ইসলামী নারায়ণগঞ্জের আমীর মাওলানা আব্দুল জাব্বার, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি, মানবাধিকারকর্মী ও নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি এড.মাহবুবুর রহমান মাসুম, নাগরিক কমিটির সভাপতি এবি সিদ্দিকী, আমরা নারায়ণগঞ্জবাসী সংগঠনের সভাপতি হাজী নুরউদ্দিন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সভাপতি মুফতি মাসুম বিল্লাহ, গণসংহতি আন্দোলনের নারায়ণগঞ্জ সমন্বয়ক তরিকুল সুজন, ন্যাপ নারায়ণগঞ্জের সাধারণ সম্পাদক এড.আওলাদ হোসেন, বাংলাদেশ টেক্সটাইল গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি এড. মাহবুবুর রহমান ইসমাইল, নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি আরিফ আলম দিপু, সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জীবন প্রমুখ। গোলটেবিল বৈঠকে নারায়ণগঞ্জ জেলার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সিটি কর্পোরেশনের এখানে কি নূন্যতম কোন ভূমিকা রয়েছে? ফুটপাত দখল করে রাস্তার অর্ধেক পর্যন্ত হকাররা দখল করে নিয়েছে। আওয়ামী লীগের সময় আমরা দেখেছি তাদের বাহিনী কিভাবে চাঁদা তুলেছে, কিভাবে এই দখল বাণিজ্য করেছে, আজকে কি চাঁদা তোলা বন্ধ হয়েছে, কেন এটা বন্ধ হয়নাই। সিটি কর্পোরেশন তার এই দায়িত্বটা কেন পালন করছে না। সিটি কর্পোরেশন তাদের এই মূল দায়িত্বগুলো পালন না করে, তারা নিয়োগ বাণিজ্যে নিয়োজিত হয়েছে। বিভিন্নজনকে তারা ২ লাখ, ৫ লাখ ৭ লাখ করে টাকা নিয়ে এখানে নিয়োগ দিচ্ছে। রিকশার লাইসেন্স দিয়ে তারা একটি বাণিজ্য করেছে। আমরা দেখেছি যে, নারায়ণগঞ্জে কিছু লোক রয়েছে, যারা নারায়ণগঞ্জে এসে কিছু ব্যবসা বাণিজ্য করে, নারায়ণগঞ্জে তারা থাকে না। নারায়ণগঞ্জের মানুষের কি অবস্থা এটা নিয়ে তাদের কোন মাথা-ব্যথা নেই। তারা যাচ্ছে তাই করে যাচ্ছে। নারায়ণগঞ্জটা এমন একটা জায়গা যে এখান থেকে শুধু টাকা কামানো যাবে, লুটপাট করা যাবে, মাথায় বারি দেওয়া যাবে, প্রতিবাদ করলে শীতলক্ষ্যায় লাশ ফেলা যাবে। কিন্তু তারা নারায়ণগঞ্জ থেকে টাকা পয়সা লুটপাট করবে। এই বালুর মাঠ দখল করেছিল শাহ নিজাম ও কাজলসহ শামীম ওসমানের লোকজন। এটা দখল করে তারা আরেক জায়গায় বিক্রি করে দিয়েছিল। এটা নিয়ে আমরা দীর্ঘদিন আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। ২০১২ সালে নাসিম ওসমান তার বাহিনী নিয়ে এটি দখল করার উদ্যোগ নিলো, দখল করে মার্কেট করবে। আমরা প্রতিবাদ করাতে সেখানে বিভিন্ন ঘটনা ঘটেছিল। গুলি ও টিয়ারসেল নিক্ষেপ হয়েছে, রক্তারক্তি হয়েছে এটা বন্ধ হয়েছে। পরে তিন বছর আগে আবার শুরু। জাতীয়পার্টির আকরাম আলী শাহীন, ভিপি বাদল অর্থাৎ ঐ গং। যারা সরকারী জায়গা পেলেই তারা মনে করে এটাই তাদের জায়গা। হাইস্কুলের উল্টো দিকে যে মার্কেট গড়ে উঠেছে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে সে সময় এই ভিপি বাদল ও নাসিম ওসমান তারা ছিল সেখানে। প্রশাসন ও পুলিশ তাদের সাথে মিলেমিশে এই দখল বাণিজ্য, মাদক বাণিজ্য সবকিছুই তারা করে যাচ্ছে।
আমরা শান্তিপূর্ণ মানুষের বাস উপযোগী একটি নারায়ণগঞ্জ চাই। সকাল হলেই মানুষ ছিনতাইয়ের কবলে পড়ে, এখানে পুলিশ কোন দায়িত্ব পালন করছে না। আমাদের ছেলে-পুলের কোন নিরাপত্তা নাই। তারা লাশে পরিণত হচ্ছে। এরকম ঘটনা অহরহ ঘটছে কিন্তু নিরসনের কোন উদ্যোগ নাই। এর থেকে পরিত্রাণের জন্য যার যার যে ভূমিকা ও নিজ নিজ কাজগুলো করে আমরা সেগুলোই স্বরণ করিয়ে দিতে চাই। আমরা নিজেরাও যাতে এসব বাণিজ্যে জড়িয়ে না যাই সে বিষয়টা খেয়াল রাখতে হবে। আমরা দেখছি নিরাপরাধদেরও মামলায় জড়িত করা হচ্ছে শুধুমাত্র মামলা বাণিজ্য করার জন্য। তাহলে কি একটি মাফিয়া গোষ্ঠির কাছ থেকে আরেকটি মাফিয়া গোষ্ঠি হয়ে শুধু আমাদের ঘাড়ে চাপবে? আমরা এর বদল চাই। প্রশাসন ও সিটি কর্পোরেশন যদি তাদের দায়িত্বগুলো ঠিকমতো পালন না করে আমরা যারা নারায়ণগঞ্জে রয়েছি আমরা তাদেরকে বাধ্য করবো সেই কাজগুলো করার জন্য। তাদের ভূমিকাগুলো জনবান্ধব করার জন্য।