জবাবদিহিতা থাকলে সকল সেক্টরে দুর্নীতি কমে যাবে : মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন

যুগের চিন্তা রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন
জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন বলেছেন, আমরা আজকে যারা এখানে রয়েছি সকলেই বিভিন্ন বক্তব্যের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জের সকল সমস্যাকে চিহ্নিত করে তা প্রতিকারের কথা বলবো বা বলবেন। স্বপ্ন দেখাবেন নারায়ণগঞ্জবাসীকে কিন্তু স্বপ্ন দেখা আর বাস্তবায়ন করা এক বিষয় নয়। স্বপ্ন অনেক কিছু দেখা যায় কিন্তু সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার জন্য সকলের সুচিন্তিত মতামত এবং সুষ্ঠ পরিকল্পনা প্রনোনয়ন এর পর তা বাস্তবায়নের কৌশল নির্ধারণ ও বাস্তবায়নে কাজ করা প্রয়োজন। আমরা কেমন নারায়ণগঞ্জ চাই। একে একে যদি আমাদের চহিদার কথা তুলে ধরি তাহলে সেই চহিদার তালিকা অনেক বড় হবে। এটাই হওয়া কাম্য কারণ নারায়ণগঞ্জ একটি শিল্প-ঐতিহ্যেবাহী এলাকা। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখে নারায়ণগঞ্জ। অতীতে যারা বলেছেন আমাদের দূর্নাম রয়েছে সুনাম-সুখ্যাতির ও কোন অভাব নেই। বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে, বিভিন্ন অর্থনৈতিক উন্নয়নে দেশের কল্যানে অনেক উল্লেখ যোগ্য ভূমিকা নারায়ণগঞ্জের মানুষ পালন করেছে অনেক ইতিহাস তৈরি করেছে। গতকাল নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাব ভবনের ৭ম তলায় ‘ আমরা কেমন নারায়ণগঞ্জ চাই?’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। ‘আমার নারায়ণগঞ্জ’ এই গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে।
তিনি আরো বলেন, কিছু ক্ষেত্রে কারো কারো আচরণে বা কার্যক্রমের কারণে আমাদের নারায়ণগঞ্জের দূর্নাম হয়েছে। কেউ আমরা এই দূর্নামটা চাই না, আমরা সুনাম চাই। আগামী দিনে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন। মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে নারায়ণগঞ্জের একজন নাগরিক হিসেবে নিজেকে স্বগৌরবে প্রকাশ করতে পারে।
তিনি বলেন, আর কথা বলতে পারে সে রকম একটি নারায়ণগঞ্জ অবশ্যই আমরা চাই। আমরা সেই নারায়ণগঞ্জ চাই যে নারায়ণগঞ্জে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যারা ভূমিকা রাখে সে সকল প্রতিষ্ঠানের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এমন হওয়া উচিত যাদের মধ্যে মানবিক গুনাবলি থাকবে। যারা মানুষ হবে তাদের নেতৃত্ব আমরা নারায়ণগঞ্জে দেখতে চাই। নেতৃত্ব যদি মানবিক গুনাবলিসম্পন্ন ব্যাক্তিদের ভালো মানুষে মাধ্যমে তৈরি করা যায় তাহলে ক্রমাগতভাবে নারায়ণগঞ্জকে এগিয়ে নেওয়া যাবে। নারায়ণগঞ্জের মানুষের যে চাহিদা তা পূরণ করা যাবে কাঙ্খিত লক্ষে আমরা পৌঁছাতে পারবো। নারায়ণগঞ্জের সুনাম সুখ্যাতি আমরা আনতে পারবো। এই কাজগুলো করতে আমাদের কিছু চিন্তা-চেতনার পরিবর্তন করা প্রয়োজন।
তিনি আরো বলেন, আমরা প্রায় সময় দেখতে পাই নারায়ণগঞ্জে একজন নতুন জেলা প্রশাসক, এসপি বা কোন থানার ওসি আসলো। এলেই নিলর্জ্জের মতো ধাক্কাধাক্কি শুরু হয় কে আগে ফুলের তোড়া নিয়ে নিয়ে দৌঁড়ে গিয়ে সংবর্ধনা জানাবো। কে তার কাছে গিয়ে ছবি উঠিয়ে পরবর্তী সময় অপকর্ম করে বাচঁতে পারবো তার কারণে এগিয়ে যাই। এর থেকে লজ্জাজনক, দূভাগ্যেজনক আর কিছু হতে পারে না। আমরা অবশ্যই কোন একজন ব্যাক্তি ফুলের তোড়া দিয়ে সংবর্ধনা জানাবো পরে সংসার করবো তার কর্মটাকে দেখে। যখন একজন নারায়ণগঞ্জের মানুষের সেবায় কাজ করতে আসবে তখন সে নারায়ণগঞ্জের মানুষের চাকর। সরকারী চাকুরী করে পাবলিক সাবমেন্ট বাংলায় বলে চাকর। এই চাকর কাজ করে মানুষের কল্যাণে কাজ করবে। সেই কল্যাণকর কাজ করার শেষে একদিন সে এখান থেকে বিদায় নিবে, সেদিন তার শুভেচ্ছা জানাই, প্রশংসা করি। তাহলে কে আসলেই একটি থানার ওসিকেসহ ফুল দিয়ে আমরা সংবর্ধনা জানাই। আমাদের চারিত্রিক অবক্ষয় এর থেকে নিজেকে উত্তোলন করতে হবে। প্রশাসন দিয়ে রাষ্ট্রের সকল কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এই প্রশাসনের উপর এই নারায়ণগঞ্জবাসীর অবশ্যই একটি চাপ থাকতে হবে। যেমন দাবি থাকবে তা বাস্তবায়নে চাপ ও থাকতে হবে। সেখানে চামচাগিরি করার অব্বাসটাকে পরিহার করতে হবে। ব্যাক্তিগম স্বার্থ নিয়ে দেনদরবার অবশ্যই পরিহার করতে হবে। তা না হলে কাঙ্খিত উন্নয়ন আমরা অর্জন করতে পারবো না।
তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জের অনেক চাহিদার মধ্যে ধরা যায়। নারায়ণগঞ্জের মানুষ শিল্প থেকে রাষ্ট্রকে অনেক অর্থ উপার্জন করে দেয়। সে অনুযায়ী নারায়ণগঞ্জের উন্নয়ন নেই। আমাদের দেশের গার্মেন্টস শিল্প বৈদেশিক অর্থ উপার্জনের একটি বড় মাধ্যম আর এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জ ও একটি অংশ। যাকে ঘিরে আমরা তো দাবি করতে পারি এই নারায়ণগঞ্জে একটি টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ এখানে হবে। আমরা একটা পাবলিক বিশ^ বিদ্যালয় দাবি করতে পারি। আমরা প্রত্যেকটি থানায় একটি করে খেলার মাঠ দাবি করতে পারি। আমার নারায়ণগঞ্জ এই সংগঠনের মাধ্যমে এই গোল টেবিল বৈঠকের আয়োজন। আমি মনে করি সকল রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী সংগঠক, শিক্ষাসাহিত্যে, সাংস্কৃতিক প্রতিটি ক্ষেত্রে যারা বিশিষ্টজন তাদের সম্বনয়ে এই সংগঠন থেকে একটি কমিটি গঠন করা যেতে পারে। এই কমিটির মাধ্যমে যে কোন সমস্যা হোক, কোন দুর্নীতি হোক, কোন ব্যাক্তির স্বার্থে এই নারায়ণগঞ্জের সম্মান ভুলণ্ঠিত করে এমন বিষয়ে কেউ যদি কমিটির কাছে অভিযোগ করে সেটা যাচাই-বাছাই করে একটা ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়। এমন একটি ফোরাম এই সংগঠনের মাধ্যমে তৈরি করা যেতে পারে। জবাবদিহিতা থাকলে সর্বক্ষেত্রেই সকল দূর্নীতি কমে যাবে। আর আগামীতে আরো গুনিজ্ঞনী ব্যাক্তি যোগ করে এমন পোগ্রাম যদি প্রচলিত রাখা যায় তাহলে আজকের প্রোগ্রামের যে লক্ষ্য এটা বাস্তবায়ন করা সহজ হবে।
গোলটেবিল বৈঠকে নারায়ণগঞ্জের নানাবিধ সমস্যা ও সমাধান সম্পর্কে বক্তব্য উপস্থাপন করেন নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন, নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহবায়ক এড.সাখাওয়াত হোসেন খান, সদস্য সচিব এড.আবু আল ইউসুফ খান টিপু, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদের সদস্য মাওলানা মঈনুদ্দিন আহমদ, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী প্রাইম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবু জাফর আহমেদ বাবুল, বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি প্লামি ফ্যাশনস এর এমডি ফজলুল হক, জামায়াতে ইসলামী নারায়ণগঞ্জের আমীর মাওলানা আব্দুল জাব্বার, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি, মানবাধিকারকর্মী ও নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি এড.মাহবুবুর রহমান মাসুম, নাগরিক কমিটির সভাপতি এবি সিদ্দিকী, আমরা নারায়ণগঞ্জবাসী সংগঠনের সভাপতি হাজী নুরউদ্দিন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সভাপতি মুফতি মাসুম বিল্লাহ, গণসংহতি আন্দোলনের নারায়ণগঞ্জ সমন্বয়ক তরিকুল সুজন, ন্যাপ নারায়ণগঞ্জের সাধারণ সম্পাদক এড.আওলাদ হোসেন, বাংলাদেশ টেক্সটাইল গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি এড. মাহবুবুর রহমান ইসমাইল, নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি আরিফ আলম দিপু, সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জীবন প্রমুখ। গোলটেবিল বৈঠকে নারায়ণগঞ্জ জেলার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।