Logo
Logo
×

জনদুর্ভোগ

অচল বন্দর এখনও হয়নি সচল

Icon

লতিফ রানা

প্রকাশ: ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০০ এএম

অচল বন্দর এখনও হয়নি সচল

অচল বন্দর এখনও হয়নি সচল

Swapno

# ২০২৩ সালের ৫৫ কোটি টাকার সংস্কার টেকেনি ছয় মাস

# খুব শীঘ্রই শুরু হবে দীর্ঘস্থায়ী সংস্কারের কাজ : নির্বাহী প্রকৌশলী সওজ

 

বন্দরের সাথে সড়ক পথে নারায়ণগঞ্জ শহর, রাজধানী ঢাকা কিংবা বন্দরের বাহিরের যেকোন জেলা-উপজেলার সাথে যোগাযোগের জন্য একমাত্র মাধ্যম হলো মদনপুর-মদনগঞ্জ সড়ক। অথচ বছরের পর বছর এই সড়কটি চলাচলের অযোগ্য হয়ে বিড়ম্বনার সৃষ্টি হলেও বিষয়টি নিয়ে মাথা ব্যথা নেই কারও। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মেয়াদে বন্দরবাসীর অভিভাবকের দায়িত্বে থাকা জনপ্রতিনিধি কিংবা দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাগণকে বিষয়টি নিয়ে কোন প্রকার দায়িত্ব বা কর্তব্য পালনে সচেষ্ট হতে দেখা যায়নি। বরং জোড়াতালি দিয়ে এই সমস্যার সমাধানের নাম করে এদের অনেকেই প্রতিনিয়ত তাদের নিজেদের পকেট ভারি করেছেন বলে বিভিন্ন সময় অভিযোগ আসে। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মিডিয়ায় বিভিন্ন সময় সংবাদ হয়ে আস্লেও সেসব জনপ্রতিনিধি কিংবা দায়িত্বে থাকা কর্তৃপক্ষের লোলপ দৃষ্টিকে এখানে আবদ্ধ করা সম্ভব হয়নি, তাদের দৃষ্টি ছিল আরও দূরে, উপরি টাকা কামানোর দিকে। সর্বশেষ ২০২৩ সালেও ১২ কিলোমিটার এই সড়কটির সংস্কারের নাম করেই খরচ দেখানো হয় ৫৫ কোটি টাকা। অথচ সেই সংস্কারের সুফল ছয় মাসও ভোগ করতে পারেনি বন্দরবাসী। তবে নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপথের বর্তমান কর্তৃপক্ষ খুব শীঘ্রই বিষয়টির দীর্ঘস্থায়ী সমাধান হবে বলে আশ্বাস প্রদান করেছেন। তাদের এই আশ্বাস বাস্তবে রূপ নিলে বন্দরের প্রায় ছয় লাখ লোকের যুগের পর যুগ ধরে শিকার হওয়া ভোগান্তির লাঘব হবে বলে মনে করেন বন্দরবাসী।

 

স্থানীয় একাধিক সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ১৯১০-১৯১৪ সালের মধ্যে টঙ্গী-ভৈরব-আখাউড়া রেললাইন তৈরি করে আসাম-বেঙ্গল রেলওয়ে কোম্পানি। পরে ১৯৭০ সালে এ লাইনের নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশন থেকে নারায়ণগঞ্জের মদনগঞ্জ পর্যন্ত রেললাইনটি তৈরি করা হয়। তবে বিভিন্ন দুর্নীতির কারণে এই রেলপথটি অলাভজনক হওয়ায় ১৯৭৭ সালে এই লাইনটি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেন তৎকালীন সরকার। এরপর ৮০ দশকের প্রথম দিকে বেশ কিছুদিন এই রেল লাইন দিয়ে রেল চলাচল করলেও ১৯৮৪ সালে রেল লাইন উঠিয়ে ফেলা হয়। তখন থেকে প্রায় দশবছর এই সড়কটি পরিত্যাক্ত হিসেবে পড়ে থাকে এবং অপরাধীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়। এরপর নব্বইয়ের দশকের প্রথম দিকে বিএনপি সরকার বন্দর এলাকার মদনগঞ্জ থেকে মদনপুর পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার এই পরিত্যাক্ত সড়কটিকে যানবাহন চলাচলের উপযোগী করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং একই দশকের মাঝামাঝি সময় এই সড়কটিতে কার্পেটিংয়ের মাধ্যমে বাস সার্ভিসসহ যানবাহন চলাচল শুরু করা হয়। যা প্রায় এক দশক সময় ভালোই সার্ভিস দেয়।

 

তবে সড়কটি ব্যবহারের বয়স বাড়ার সাথে সাথে ধীরে ধীরে তার বিভিন্ন এলাকায় ক্ষত সৃষ্টি হওয়া শুরু হয়। প্রথম অবস্থায় সেই ক্ষত মেরামতে কোন প্রকার তৎপরতা দেখাতে উৎসাহী হয়নি সড়ক ও জনপথ বিভাগের তৎকালীন দায়িত্বরত ব্যক্তিরা। এরপর থেকে যখন ফ্যাসিস্ট সরকারের তাবেদার ব্যক্তিরা দায়িত্বে বসতে শুরু করেন এবং স্থানীয় কিছু ফ্যাসিস্টবাদীরা প্রভাবশালী বনে যান তখন থেকেই এই দুই পক্ষের মধ্যে একটি সমঝোতার মাধ্যমে শুরু হয় সংস্কার সংস্কার খেলা। গত ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় এই সড়কটিতে দেশের উন্নয়নের গান গেয়ে তার স্থানীয় দোসররাও তাদের হেভী ওয়েট নেতাদের গুণকীর্তন করার মাধ্যমে বন্দরের সকল উন্নয়নকে গ্রাস করেছে বলে কথিত আছে। তাদের উন্নয়ন কীর্তনের তালে তালে সড়ক ও জনপথ বিভাগে থাকা তৎকালীন কর্মকর্তা কর্মচারীদের সংস্কার সংস্কার নৃত্যের ঝংকারের দৃশ্যায়নে চাপা কষ্টে দগ্ধ হয়েছেন বন্দরের প্রায় ছয় লাখ বাসিন্দা। এতে করে তাদের পকেটে কিংবা ব্যাংক একাউন্টে টাকার অংক বাড়ার সাথে সাথে বেড়েছে বন্দরবাসীর ভোগান্তি।

 

সর্বশেষ ২০২২ সালে তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু উদ্বোধনের পর ২০২৩ সালে সড়কটির দুই পাশে তিন ফুট করে ছয় ফুট প্রশস্তসহ সংস্কার করতে সড়ক ও জনপথ (সওজ) প্রায় ৫৫ কোটি টাকা ব্যয় করে। সে সময় তাদের কাজের প্রক্রিয়ায় বিস্মিত হয়ে এত টাকা ব্যয়ে তাদের সংস্কার কাজের স্থায়ীত্ব নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে প্রশ্ন করলে তৎকালীন কর্মকর্তারা বিষয়টিকে কোন গুরুত্বই দেননি। বরং তারা খুব হেভি করে সংস্কার করা হচ্ছে বলে তা টেকসই ও দীর্ঘস্থায়ী হবে বলে দাবি করেন এবং প্রশ্নবোধক সংস্কারের বিষয়টিকে উপহাস করেন। তবে তাদের সেই উপহাসের ৫৫ কোটি টাকার সংস্কার ধসে গেছে মাত্র ছয় মাসে। ধীরে ধীরে অচল হয়ে পড়া বন্দরের সড়ক পথে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম এখন সম্পূর্ণ অচল। তবে ৫ আগস্টের পরে যখন বিষয়টি নিয়ে মিডিয়ায় লেখালেখি হয়, তখন বিষয়টি নিয়ে কাজ করার অঙ্গীকার করেন নারায়ণগঞ্জ এর জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মিঞা এবং সড়ক জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুর রহিম। সড়কটির সংস্কারের স্থায়ীত্ব বৃদ্ধির লক্ষ্যে ঢাকা থেকে সড়ক ও জনপথের দক্ষ একটি প্রকৌশলী দল দিয়ে সার্ভে করানো হয় বলে উভয় সূত্র থেকে জানানো হয়।

 

মদনগঞ্জ-মদনপুর সড়কের রাস্তা মেরামতের দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের উদ্যোগের সর্বশেষ অবস্থা জানতে চাইলে সড়ক ও জনপথ নারায়ণগঞ্জ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুর রহিম যুগের চিন্তাকে বলেন, এই সড়কটির দীর্ঘ স্থায়ী মেরামতের প্রায় সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন। তবে এখন কাজ শুরু করলে মেঘলা দিন হওয়ার কারণে তাতে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে না। তাই সুদিনের (শুষ্ক মৌসুমের) জন্য কিছুটা সময় অপেক্ষা করতেছি। যেহেতু শীতের সময় শুরু হতে যাচ্ছে, তাই আমরা খুব শীঘ্রই এই সড়কটি দীর্ঘস্থায়ী মেরামতের কাজে হাত দিবো। তিনি আরও জানান, এই সড়কটি এর আগে বেশ কয়েকবার সংস্কার করা হয়েছে কিন্তু সেসব কাজ বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। তাই ঢাকা থেকে দক্ষ প্রকৌশলীর একটি দল এসে সরেজমিনে এখানকার সমস্যাগুলো পর্যবেক্ষণ করে গেছেন। এখানে কী ধরণের কৌশলে মেরামতের কাজ করলে তা দীর্ঘ স্থায়ী হবে সে বিষয়ে যাচাই-বাছাই করে মেরামতের পন্থা অবলম্বন করেছেন। আমরা আশা করি এবারের সংস্কারের মেয়াদ দীর্ঘস্থায়ী হবে এবং খুব শীঘ্রই বন্দরবাসী তার ফলাফল দেখতে পাবে।

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন