সেতু নির্মাণে ঐক্যমত্যে শহর-বন্দরে প্রশংসা

লতিফ রানা
প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

সেতু নির্মাণে ঐক্যমত্যে শহর-বন্দরে প্রশংসা
# শহরের-বন্দরের যে কোন উন্নয়নে মতানৈক্য দূর করার প্রত্যয়
শীতলক্ষ্যা নদীর উপর দিয়ে শহর-বন্দরের সহজ যোগাযোগের জন্য একটা সেতু নির্মাণের দাবি ছিল যুগের পর যুগ ধরে। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জনপ্রতিনিধি এই আশা পূরণের আশ্বাস দিলেও কথা রাখেনি কেউ। বন্দরবাসীর এক সময়ের এই প্রাণের দাবি ধীরে ধীরে অস্তিত্বের দাবিতে পরিণত হয়। তাই কদম রসূল সেতু নামে সেই স্বপ্নের সেতু বাস্তবায়নের কাজের সূচনা লগ্নে নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার শঙ্কায় ক্ষোভে ফেটে পড়ে বন্দরবাসী। শুধু বন্দর নয়, সমালোচনা আসতে থাকে শহর থেকেও। তবে শহর ও বন্দরের মধ্যে যে আত্মার সম্পর্ক, হৃদয়ের সম্পর্ক, তার প্রমাণ দিয়ে সেতু নির্মাণে কোন প্রকার বাধা সৃষ্টি বা নির্মাণ কাজ বন্ধের সকল বিষয় উড়িয়ে দিয়ে এই সেতু নির্মাণ চলমান রাখার বিষয়ে কোন বিরোধিতা ছাড়াই ঐক্যমতে পৌছানোর বিষয়টিকে শহর ও বন্দরবাসীর পক্ষ হতে সাধুবাদ জানানো হচ্ছে। একই সাথে নারায়ণগঞ্জের যেকোন উন্নয়ন ও নিরাপত্তা বিষয়ক ইস্যুতে শহর বন্দরের সম্মিলিত প্রচেষ্টা গ্রহণের বিষয়েও খুশি তারা।
শীতলক্ষ্যা সেতুটি শুধু যে বন্দরবাসীর স্বপ্ন বা দাবি তা নয়, শহর ও বন্দরের উভয় এলাকার জনগণই এই সেতু নির্মাণের দাবিতে সোচ্চার ছিলেন প্রতিনিয়ত। বিভিন্ন সভা-সমাবেশে কিংবা গণমাধ্যমের শিরোনামেও এই সেতুর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা ও লেখালেখি হয়েছে বছরের বছর। তাই শহর বন্দরের জনগণের দীর্ঘদিনের দাবির পর বাস্তবায়িত হতে যাওয়া সেতুটি নকশা জটিলতা নিয়ে আলোচনা শুরু হলে বন্দরবাসী ভ্রণেই তাদের সেতুর মৃত্যুর আশঙ্কা করে এর প্রতিবাদ শুরু করে। শুধু যে বন্দর থেকেই প্রতিবাদ তা নয়, শহর বন্দরের ভ্রাতৃত্ববোধের এই সেতুবন্ধনের নির্মাণ বন্ধের সম্ভাবনা নিয়ে সমালোচনা শুরু করেন শহরের একটি বড় অংশ। তবে সেতু নির্মাণ কাজ বন্ধ না করার বিষয়টিকে খোলাসা করার জন্য উদ্যোগ নেয় নারায়ণগঞ্জ নাগরিক আন্দোলন। যেখানে বক্তারা স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন যে, এই সেতু শুধু বন্দরের দাবি না, নারায়ণগঞ্জবাসীও এই সেতুর দাবিতে সোচ্চার। শহর বন্দরের দীর্ঘদিনের ভ্রাতৃত্বের বন্ধন, বন্ধুত্বের বন্ধনকে তারা কখনও অস্বীকার করতে পারবে না জানিয়ে এই সেতুর নির্মাণ কাজকে বাধাগ্রস্ত করা যাবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাঁরা।
নিজেদের মধ্যকার কাদা ছোড়াছুড়ি বন্ধ করা এবং দূরত্ব দূর করার লক্ষ্যে গত শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) নারায়ণগঞ্জ নাগরিক আন্দোলনের ব্যানারে অনুষ্ঠিত এই উম্মুক্ত মতবিনিময় সভায় কদম রসূল সেতু নির্মাণ কাজ শুরু করার বিষয়ে বক্তব্য প্রদান করেন। একই সাথে এই নির্মাণ কাজ চলমান অবস্থায় সেতুর পশ্চিম পাশের র্যাম্প এলাকার মুখ কোন্ দিক দিয়ে হবে তা নির্ধারণে শহর-বন্দরের ঐক্যমতে প্রকৌশলীদের সাথে পরামর্শ করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানানো হয়। বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বি’র সভাপতিত্বে এই মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট মাহাবুবুর রহমান মাসুম, নারায়ণগঞ্জ কলেজের অধ্যক্ষ ড. ফজলুল হক রুমন রেজা, নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সভাপতি অ্যাড. এবি সিদ্দিক, আমরা নারায়ণগঞ্জ বাসি’র সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজী নূর উদ্দিন আহমেদ, জেলা বাসদের সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম খান বিপ্লব, ইসলামী আন্দোলনের নারায়ণগঞ্জ মহানগরের সভাপতি মুফতি মাসুম বিল্লাহ, গণসংহতি আন্দোলন নারায়ণগঞ্জ জেলার সমন্বয়ক তরিকুল সুজন, এনসিপি মহানগরের সাবেক সভাপতি আহমেদুর রহমান তনু, সাবেক নাসিক কাউন্সিলর অসিত বরণ বিশ্বাস, জেলা ন্যাপ’র সাধারণ সম্পাদক এড. আওলাদ হোসেন, মহিলা পরিষদ নেত্রী শাহানারা বেগম, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক ধীমান সাহা জুয়েল, সাবেক সভাপতি ভবানী শংকর রায়সহ জেলার বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাপানি দাতা সংস্থা জাইকার অর্থায়নে শীতলক্ষ্যা নদীর উপর দিয়ে দুটি সেতুর পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ হাতে নেওয়া হয়। এর একটি হাজীগঞ্জ-নবীগঞ্জ ঘাট এলাকায়, অপরটি শহরের প্রাণকেন্দ্রের ৫নং খেয়াঘাট এলাকায়। এরমধ্যে নবীগঞ্জ-হাজীগঞ্জ খেয়াঘাট নিয়ে ৯৪০ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতুটি চার লেনের হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। যার মধ্যে নবীগঞ্জ অংশে থাকবে ২৮০ মিটার, নদীর মাঝখানে থাকবে ৪২০ মিটার ও হাজীগঞ্জ এলাকায় থাকবে ২৪০ মিটার। চার লেনের এই সেতুর দুটি লেন দিয়ে সাধারণ মানুষ পারাপার হবে। আর বাকি দুই লেন দিয়ে যানবাহন চলাচল করবে। সেতুটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ৬৪০ কোটি টাকা। সেতু নির্মাণের যে তিনটি ধাপ পেরুতে হয় সেগুলো নিয়ে কাজ চলছে বলেও জানানো হয়। তবে সেই সেতুটি এখনও পর্যবেক্ষণ পর্যায়ে আছে বলে জানা যায়।
অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)’র অধীনে কদম রসুল সেতু নামে দ্বিতীয় সেতুটি নির্মাণ প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদিত হয় ২০১৭ সালে। প্রকল্পটি ২০২৬ সালের জুন মাসের মধ্যে সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল। এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৭৩৫ কোটি টাকা। প্রস্তাবিত সেতুটি নগরের ফলপট্টি এলাকা থেকে শুরু হয়ে বন্দর উপজেলার নবীগঞ্জ এলাকায় গিয়ে মিলিত হবে। সেতুর দৈর্ঘ্য ৩৮০ মিটার, প্রস্থ ১২ দশমিক ৮০ মিটার এবং সংযোগ সড়ক ১ হাজার ৩৭৯ মিটার।