কদম রসূল সেতু নিয়ে মতবিনিময় সভায় বক্তারা
নির্মাণ কাজ বন্ধ করা যাবেনা

লতিফ রানা
প্রকাশ: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

কদম রসূল সেতু নিয়ে মতবিনিময় সভায় বক্তারা নির্মাণ কাজ বন্ধ করা যাবেনা
# র্যাম্প এরিয়া নিয়ে ঐকব্যদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান বক্তাদের
# দ্বিমত থাকতে পারে, তবে সেতুর কাজ যেন বন্ধ না হয় : রফিউর রাব্বি
# সমান ট্যাক্স দিয়েও বন্দরের কোন উন্নয়ন নাই : এড. মাহবুবুর রহমান মাসুম
# সেতুটা এখানেই হওয়া উচিৎ, এতে দ্বিমত নেই : রুমন রেজা
# যানজটে শুধু র্যাম্প না, বিকল্প বিষয়গুলো বের করতে হবে : তরিকুল সুজন
# এই সেতু নির্মাণের দাবিতে আমরাও আন্দোলন করেছি : হাজী নূর উদ্দিন
বন্দর ও শহরের মানুষের মধ্যে কোন বিভাজন বা বিভেদ নয়, নারায়ণগঞ্জের সকল সমস্যা সমাধানে শহর-বন্দরের মানুষকে ঐকবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন নারায়ণগঞ্জ নাগরিক আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ। তাই বন্দরবাসীর দীর্ঘদিনের প্রতাশ্যায় বাস্তবায়ন হতে যাওয়া কদম রসূল সেতুর নির্মাণ কাজ বন্ধ না করে চলমান রাখতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে দাবি করে এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে সেতুর র্যাম্প এড়িয়া নিয়ে শহর-বন্দরের সকলের ঐক্যমতে প্রকৌশলীদের সাথে আলাপ করে একটি দুর্ভোগমুক্ত সমাধান খুঁজে বের করার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে বলেও ঐক্যমতে পৌছান তারা। গতকাল শনিবার শহরের আলী আহাম্মদ চুনকা নগর মিলনায়তনের ৫ম তলায় নারায়ণগঞ্জ নাগরিক আন্দোলনের ব্যানারে অনুষ্ঠিত এক উম্মুক্ত মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন।
বন্দর প্রেসক্লাবের অর্থ বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল লতিফ রানা বলেন, স্বাভাবিকভাবে দীর্ঘদিনের দাবির পরে যদি একটি এলাকার মানুষ তাদের প্রাণের চাহিদা পূরণ করতে না পারে, তখন তাদের মনের ভিতর ক্ষোভ ও কষ্ট তৈরি হতেই পারে। এটা অস্বাভাবিক কিছু না। বন্দরবাসীর একটি আক্ষেপ হলো, আমরা এই র্যাম্প এলাকা নিয়ে যারা কাজ করতেছি, তারা যদি এখানকার যানজট নিরসনের বিষয়গুলো চিহ্নিত করে এরকম জোর দিয়ে কাজ করতাম তাহলে মনে হয় শহরে এতদিনে যানজট থাকতো না। সিরাজউদ্দৌলা সড়ক একটি মরা নদীর মতো অচল। তাই এই র্যাম্প এখানে নতুন করে অচল করার মতো কিছু করবে না। এটা সচল করা যায় কীভাবে, সেটা খুঁজে বের করেন। বন্দরবাসীর কথা হলো, এই সেতুটা যেন তৈরি হয়। কোন একটা ইস্যুর কারণে যেন এর নির্মাণ কাজ বন্ধ না হয়। এটা বন্দরবাসী প্রাণের কথা। এই র্যাম্পিং কোন্ দিকে দিয়ে নামবে, এটা নিয়ে বন্দরবাসীর সমস্যা নাই। এখন একটা মতপার্থক্য দেখা যাওয়াতে এধরণের কথাবার্তা আসতেছে। এই সেতু নির্মাণ করতে হয়তো দুই-তিন বছর সময় লাগবে। এই সময়ের মধ্যে যদি নদীর উপর মূল সেতু নির্মাণ হয়, এই সময়ের মধ্যে যদি আপনারা র্যাম্প এড়িয়া নিয়ে কোন বিকল্প বের করতে পারেন তাতে বন্দরবাসীর সমস্যা নাই। তবে কোন অবস্থায়ই সেতু নির্মাণ কাজ যেন বন্ধ না হয়।
গণসংহতি আন্দোলন নারায়ণগঞ্জ জেলার সমন্বয়কারী তরিকুল সুজন বলেন, বন্দরের আলোচনা সভায় শহরের মানুষের এবং শহরের আলোচনা সভায় বন্দরের মানুষের উপস্থিত না থাকাকে আমি স্বাভাবিক হিসেবে দেখি না। সমাজে একটা ঘৃণার এবং বিভাজনের রাজনীতি আছে, শহর ও বন্দরকে সংযুক্ত করার জন্য কদম রসূল সেতুর যে প্রয়োজনীয়তা, তা নিয়ে আমাদের কারও কোন দ্বিমত নাই। শহরের জন্য এই সেতু শুধু সৌহার্দ্যের ও সৌন্দর্য্যরে হলেও বন্দরবাসীর জন্য সেটা তাদের বিকশিত হবার জায়গা। দিনে কিংবা রাতে যখন তাদের জরুরী কোন প্রয়োজন পড়ে, কিংবা শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের জন্য যাতায়াতের বিষয়টা আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে। এখানে র্যাম্প এলাকার বিষয়ে বন্দরের মানুষ জনের সাথে কথা বলে ঐকমতের ভিত্তিতে এই বিষয়ে কথা বলতে পারতাম। আমি মনে করি নারায়ণগঞ্জের যানজটের জন্য শুধু এই র্যাম্পকে দায়ী না করে যানজট নিরসনের বিকল্প বিষয়গুলো আমাদের বের করতে হবে।
আমরা নারায়ণগঞ্জবাসীর সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজী নূর উদ্দিন আহমেদ বলেন, শহর ও বন্দরের সহজ যোগাযোগের জন্য শীতলক্ষ্যা নদীর উপর দিয়ে একটি সেতু নির্মাণের জন্য আমরা বিভিন্ন সময় আন্দোলন করে আসছিলাম। বন্দরবাসী যেন প্রয়োজনে সহজভাবে যোগাযোগ করতে পারে। কয়লা ঘাট দিয়ে যে সেতুটি হয়েছে বন্দরবাসীর জন্য তা কোন উপকারে আসে না। এটা একটি পরিত্যাক্ত সেতু। তাই কদম রসূল সেতুটি নির্মিত হোক এটা আমি চাই। নদীর পূর্ব পার থেকে নির্মাণ কাজ আগে শুরু হোক, তারপর নদীর উপর দিয়ে মূল সেতুটি নির্মাণের কাজও চলতে থাকুক। র্যাম্পের জন্য যেখানে সবার সুবিধা হয় সেখানেই করা হোক কিন্তু সেতু নির্মাণ কাজ যেন চলমান থাকে।
নারায়ণগঞ্জ কলেজের অধ্যক্ষ ফজলুল হক রুমন রেজা বলেন, আমরা যখন থেকেই সাংবাদিকতা শুরু করেছি তখন থেকেই আমাদের নিউজে বন্দরের সাথে সহজ যোগাযোগের জন্য শীতলক্ষ্যা নদীর উপর একটি সেতুর দাবি জানিয়ে তার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেছি। তাই এই সেতু শুধু বন্দরবাসীর দাবি নয়, আমাদের সকলের দাবি। এই ব্রিজটি এইখান দিয়েই হওয়া উচিৎ, কারণ এখান দিয়েই মানুষের বেশি চলাচল ও দুর্ভোগ বেশি। তাই এই সেন্ট্রাল ঘাটের ছবি দিয়েই নিউজ করতাম। আমরা একটা বিষয়ে একমত যে, আমরা এখান দিয়ে সেতু চাই। এই সেতু আমাদেরও স্বপ্ন। সাংবাদিকতার পেশাগত জীবনে আমরা এই দাবি নিয়ে বেশি সোচ্চার ছিলাম। এখানে কোন দ্বিমত নেই। যেহেতু নদীর উপর দিয়ে সেতু তৈরি করা এবং নদীর পূর্ব পারের কাজ সারতে কমপক্ষে দুই থেকে আড়াই বছর লাগতে পারে, এই সময়ের মধ্যে আমরা সম্মিলিতভাবে প্রকৌশলীদের সাথে কথা বলে র্যাম্প এলাকার বিষয়টি নিয়ে কাজ করবো। সেতু নির্মাণ কাজ বন্ধ করা যাবে না। তবে র্যাম্প এমনভাবে নির্মাণ করতে হবে যাতে আমাদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করা যায়। আমরা নিজেরা বিভাজিত না হয়ে ঐক্যমতভাবে প্রকৌশলীদের সাথে আলাপ করে যেটা ভালো হয় সেটাই করার চেষ্টা করবো। আমাদের মধ্যকার ভুল বুঝাবুঝিগুলো দূর করতে হবে।
নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি এডভোকেট মাহবুবুর রহমান মাসুম বলেন, আপনারা খেয়াল করবেন, আমাদের জাতীয় নির্বাচনে এই আসনটির নাম দেওয়া আছে সদর-বন্দর এলাকা। আমরা একই পরিবারের এবং একই দুর্ভোগের শিকার। তাই শহর ও বন্দরের মধ্যে কোন বিভাজন করার প্রশ্নই উঠে না। আমি বন্দরবাসীর উদ্দেশ্যে বলবো, হয় আপনারা এখানে আসেন; আমাদের সাথে বসেন, কিংবা আমাদের বন্দরে যেতে হলে আমরাও বন্দরে যাবো; আপনাদের সাথে বসবো। মোট কথা একসাথে ঐকবদ্ধ হয়ে কাজ করবো। আমাদের মধ্যে কোন বিরোধ নেই, আমরা কোন বিরোধ বা বিভাজন শব্দটি শুনতে চাই না। আমাদের সমস্যাও এক তাই প্রয়োজনে দশবার একসাথে বসবো, কিন্তু এখানে ব্রিজ হতেই হবে। ব্রিজ একটা হবে না; আরও কয়েকটা হতে হবে। এই শীতলক্ষ্যা নদী বন্দর ও শহররে মধ্যে বিভাজন তৈরি করে ফেলেছে। মতিঝিলের ট্যাক্স, নারায়ণগঞ্জ শহরের ট্যাক্স এবং বন্দরের ট্যাক্সের পরিমানও এক। অথচ বন্দরে সে তুলনায় কোন উন্নয়ন নাই। এই সেতু নিমার্ণের কাজ বন্ধ করা যাবে না, চলমান থাকবে। র্যাম্প কোন দিক দিয়ে নামবে তা নিয়ে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবো। নারায়ণগঞ্জকে গড়ে তোলার জন্যই বন্দরের উন্নয়নে আমাদেরও কাজ করতে হবে।
নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের উপদেষ্টা রফিউর রাব্বি বলেন, আমাদের কাজে সফলতা তখনই আসে, যখন আমরা সকলে সম্মিলিতভাবে, সততার সাথে কাজ করতে পারি। আমাদের নারায়ণগঞ্জে সমস্যার অন্ত নেই। আজকের আলোচনায় আমরা কদম রসূল সেতু নিয়ে প্রত্যেকে নিজেদের মতামত উপস্থাপন করলাম। এখানে দ্বন্দ্বের কিছুই নেই। একটি পরিবারের মতো আমাদের মধ্যেও মত পার্থক্য থাকতেই পারে। প্রত্যেকের মতামতের উপর আমাদের শ্রদ্ধাবোধ রেখেই আমরা ঐকবদ্ধ হয়ে কোন রকম বিভাজনে যুক্ত না হয়ে আমরা সমাধান করার চেষ্টা করবো। তবে কদম রসূল সেতুর কাজটি যেন বন্ধ না হয়, চলমান থাকে এবং এই সেতু বাস্তবায়নে যাতে কোন দুর্ভোগ সৃষ্টি না হয়, সঙ্কট বৃদ্ধি না করে সেভাবে আমাদের কাজ আমরা অব্যাহত রাখবো। আমাদের এই বার্তাটা সমস্ত নারায়ণগঞ্জ জেলার জন্য।