মদনপুর-মদনগঞ্জ সড়কে বছর জুড়ে চলে ভাঙা ও মেরামতের খেলা
এবার দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের আশ্বাস

লতিফ রানা
প্রকাশ: ২৪ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম

মদনগঞ্জ-মদনপুর সড়কের উপর সারিবদ্ধভাদে দাঁড়িয়ে থাকা যানবাহনের বেশিরভাগই সিমেন্ট কোম্পানীর অতিরিক্ত ওজনের গাড়ি। অতিরিক্ত ওজনের কারণে রাস্তার মাঝে ঢেবে গেছে সিমেন্টবোঝাই গাড়ি। প্রতিনিয়ত এধরনের যানজট বিড়ম্বনায় ভূগছে বন্দরবাসী।
# খুবই শীঘ্রই আপনাদের কষ্ট লাগব হবে : জেলা প্রশাসক
# হেডকোয়ার্টার থেকে অভিজ্ঞ একটি টিম এসে দেখে গেছে, দ্রুত সমাধান হবে : সওজ
# সওজের সংস্কার খেলায় বন্দরবাসী অতীষ্ঠ হয়ে উঠেছে : বন্দর নাগরিক কমিটি
বন্দরের মদনপুর-মদনগঞ্জ সড়কের বেহাল দশা নিয়ে লেখালেখি কম হয়নি। সড়কটির সংস্কার খেলায় বছরে দু’একবার টাকা কড়ি খরচের উৎসব দেখা যেতো বিগত বছরগুলোতে। দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের আশ্বাসেরও কমতি ছিলো না। তবে সমাধানে পরিকল্পিত উদ্যোগে ছিলো না কার্যকরী কোন পদক্ষেপ। তাই প্রতিনিয়ত সংস্কারের নাটক দেখা এবং এমন দূরাবস্থার শিকার হওয়াটাকে অনেকটা নিয়তি হিসেবেই মেনে নিতে হয়েছে বন্দরবাসিকে। তাই গত ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট ও স্বৈরাচার সরকারের পতনের পর নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করে তারা। বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জে জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব নেওয়া মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞার বেশ কিছু উদ্যোগই এই স্বপ্ন দেখাচ্ছে সংস্কার সংস্কার খেলায় অতীষ্ঠ বন্দরবাসিকে। এরই মধ্যে সমস্যাটির একটি দীর্ঘস্থায়ী সমাধানে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছেন বলেও জানা গেছে।
এই বিষয়ে বন্দর নাগরিক কমিটি (বনাক) এর সাধারণ সম্পাদক এরশাদুল কবির সোহেল দৈনিক যুগের চিন্তাকে বলেন, একটি সড়ক নির্মাণ করার একটি নির্দিষ্ট সময় পর ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং মেরামত করা হবে এটাই স্বাভাবিক। আর এই মেরামত বা সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। যা যতদিন রাস্তা আছে ততদিনই চলতে থাকবে। কিন্তু এই সংস্কার বা মেরমতেরও একটি স্থায়িত্ব আছে। অর্থাৎ সেই রাস্তার উপর দিয়ে চলাচল করা যানবাহন এবং মেরামতের কৌশলের উপর নির্ভর করে সড়কটি কতদিন পর্যন্ত ভালো থাকতে পারে তার একটি আনুমানিক সময়সীমা। কিন্তু মদনপুর-মদনগঞ্জ সড়কে এসব সকল নিয়মকানুনের গন্ডি পেরিয়ে সড়ক ও জনপথের সংস্কার সংস্কার খেলায় বন্দরবাসী অতীষ্ঠ হয়ে উঠেছে। বছরের বেশিরভাগ সময়ই এই রাস্তা ভাঙ্গা থাকে। আবার প্রতিবছরই দু’একবার মেরামত করতেও দেখা যায়। কিন্তু সড়ক ও জনপথের এমন দক্ষ প্রকৌশলীরা কেন এই বিষয়ে দীর্ঘস্থায়ী কোন সমাধানে যেতে পারছে না তা খুবই রহস্যজনক ছিল। তবে বর্তমান সরকারের আমলে যেহেতু সওজের প্রশাসন পরিবর্তন হয়েছে শুনেছি তারা বিষয়টি সমাধানে উদ্যোগ নিয়েছে। যা আমাদের জন্য আশারবানী।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে সড়ক ও জনপথ (সওজ) নারায়ণগঞ্জ জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুর রহিম যুগের চিন্তাকে বলেন, এই সড়কটির কয়েকটি জায়গা ক্র্যাক করেছে এগুলো আমাদের হেডকোয়ার্টার থেকে একটি টিম এসে দেখে গেছে। বিয়টি পর্যালোচনা করে ওনারা যে নির্দেশনা দিবে আমরা সেই অনুযায়ী দীর্ঘস্থায়ী ব্যবস্থা নিতে চেষ্টা করবো। এখানে কেনো সমস্যা হলো সেই বিষয়টি দেখার জন্য ঈদের আগে (গত ঈদ-উল-আজহার আগে) এসে দেখে গেছে। বিষয়টি নিয়ে ওনারা পরিক্ষা-নিরীক্ষা করতেছে। তারা যে রিপোর্ট প্রদান করবে, আমরা তার উপর ভিত্তি করে বড় কাজটি করবো। এই বিষয়ে আমাদের প্রক্রিয়া চলমান আছে। আপনারা একটি বিষয় খেয়াল করলে দেখবেন যে, সড়কটি কিন্তু পুরোটা ভাঙ্গে নাই। প্রাথমিকভাবে আমরা দেখেছি যেসব অংশে সড়কটি বেশি ক্ষতি হচ্ছে সেসব জায়গার দুইপাশে পুকুর বা ডোবা আছে। সেই পুকুরের পানির কারণে সড়কটির নিচের বেজ অনেকটা ভিজে থাকে। তাছাড়া বন্দরের এই সড়কটি দিয়ে বেশ কয়েকটি সিমেন্ট কারখানার ভারি ভারি যানবাহন চলাচল করে। আমরা বিষয়টি নিয়ে তাদের সাথে মিটিং করেছি এবং মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করার জন্য জেলা প্রশাসক বরাবর লিখেছি। যাতে করে এই সড়ক দিয়ে এসব কারখানাগুলো তাদের অনুমোদনের অতিরিক্ত ওজনের যানবাহন চলাচল করতে না পারে।
এই বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ এর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা যুগের চিন্তাকে বলেন, এই বিষয়ে কোন লিখিত আবেদন করার প্রয়োজন নেই। আমরা সড়কটির কাজ নতুনভাবে করছি। খুবই শীঘ্রই আপনাদের কষ্ট লাগব হবে। আমাদের মেজারমেন্ট সম্পন্ন হয়েছে। যেহেতু এই রাস্তাটি এতো হেভি গাড়ি চলাচলের উপযুক্ত ছিলো না। কিন্তু তারপরও হেভি গাড়িগুলো চলছে এবং এগুলো বন্ধ করা যাচ্ছে না। তাই এই বিষয়ে বিকল্প ব্যবস্থা কি করা যায় সেই বিষয়ে আমরা কথা বলেছি। এই রাস্তাটাকে কিভাবে হেভি গাড়ির উপযোগী করা যায় সেই হিসেবে মেজারমেন্ট নিয়ে গেছে। মন্ত্রনালয় এই প্রজেক্টটা অনুমোদন দিলে কত টাকা লাগবে সেই অনুযায়ী কাজ শুরু করবে। এই বিষয়টা আমাদের নজরে আছে এবং আমরা গুরুত্ব দিয়েই বিষয়টা নিয়ে কাজ করছি। আমরা বুঝতে পারছি যে এলাকাবাসীর সমস্যা হচ্ছে কষ্ট হচ্ছে। এই সড়কটির দীর্ঘস্থায়ী একটি সমাধানের জন্য আমাদের কাজ চলতেছে।