মাঠ ছাড়েননি কালাম-বাবুল
নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে মনোনয়নকে ঘিরে নানা নাটকীয়তার মধ্যে দিয়ে ও মাঠ ছাড়েনি সাবেক সাংসদ সদস্য এড. আবুল কালাম ও মহানগর বিএনপি নেতা আবু জাফর আহম্মেদ বাবুল। এই দুই মনোনয়ন বঞ্চিত চূড়ান্ত মনোনয়ন ঘোষনার শেষমুহুর্ত্ব পর্যন্ত মাঠে থাকবে বলে জানিয়েছেন।
এদিকে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপির মনোনয়ন ঘোষণার পরপরই মনোনীত ও বঞ্চিতদের মধ্যে অভ্যন্তরীন দ্বন্দ্ব, পাল্টপাল্টি বক্তব্যে, পাল্টপাল্টি সভা-সমাবেশ লক্ষ্য করা গেলে ও সকলেই চূড়ান্ত মনোনয়ন ঘোষণার দিন পর্যন্ত যার যার অবস্থান থেকে মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছিলেন ৪ মনোনয়ন বঞ্চিত নেতা। তখনই সেখান থেকে ঐক্যেজোট ভেঙে মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব এড. আবু আল ইউসুফ খান ছিটকে গিয়ে মাসুদুজ্জামানকে সমর্থন করেন।
কিন্তু মনোনয়ন বঞ্চিত সাখাওয়াত-কালাম-বাবুল ঐক্যেজোট করেই মাঠে থাকলে ও গত (১৬ ডিসেম্বর) প্রাথমিক মনোনীত প্রার্থী মাসুদুজ্জামান নির্বাচন না করার ঘোষণা দিলে সেই আসনে (২০ ডিসেম্বর) সাখাওয়াত হোসেন খান দাবি করেন তাকে মনোনীত করা হয়েছে। এদিকে মাসুদুজ্জামান পরবর্তীতে তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে নির্বাচনে আসার ঘোষনা দেন। কিন্তু এখন তার অংশ নেওয়াটা দল কতটা গ্রহণ করবে সেটা দেখার বিষয় থাকলে ও নানা নাটকীয়তার মাঝেও মাঠ ছাড়েনি দুই হেভিওয়েট নেতা আবুল কালাম ও আবু জাফর বাবুল।
জানা গেছে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) প্রতিষ্ঠাতা অন্যতম সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য হাজী জালালউদ্দিন আহমেদের ছেলে এড. আবুল কালাম। ১৯৯১ সাল থেকে টানা ছয় বার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হয়ে তিনবার সংসদ সদস্য হয়েছিলেন। বন্দরের সন্তান হিসেবে আবুল কালাম শহর-বন্দরের সাধারণ মানুষের মধ্যে জনপ্রিয় রয়েছেন। ক্লিন ইমেজের এই নেতা ইতোমধ্যে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সভাপতি দায়িত্ব পালন করেছেন একই সাথে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য রয়েছেন। আওয়ামী লীগ আমলে আবুল কালাম একাধিকবার গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে ছিলেন।
বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও হাজী জালাল উদ্দিন আহমেদের আদর্শে ছোট বেলা থেকে আবুল কালাম ও তার উত্তরসূরিরা দলের তৃনমূল পর্যায়ে রাজনীতিতে সক্রিয় রয়েছেন। ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত মেনে নির্বাচনে অংশ নেননি আবুল কালাম। বয়স্ক হলেও মহানগর বিএনপি সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে সকল স্তরের নেতা-কর্মীদের এক কাতারে রেখেছিলেন তিনি।
এদিকে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী প্রাইম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবু জাফর আহমেদ বাবুল। যিনি বিএনপির বড় কোন পদে থাকা থাকলেও বিএনপি পরিবার ও বিএনপির মনা ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত বাবুল। এদিকে বিগত দিনে বিএনপির দলীয় আন্দোলন সংগ্রামে বিএনপিকে অর্থায়ন সার্পোট হিসেবে নাম রয়েছেন এই বাবুলের। এদিকে গত ২০১৭ সালে সর্বশেষ তিনি বিএনপির সদস্য পদ নবায়ন করেছিলেন।
যা বিএনপির নেতাকর্মীরা অনেকেই অবগত না থাকলে ও আওয়ামী লীগের একটি পক্ষ তা জানতেন সেই সূত্রে নারায়ণগঞ্জের গডফাদার শামীম ওসমান তার বাসভবন ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে একাধিকবার হামলা ও করেছিলেন। কিন্তু গত ৫ আগষ্টের পরবর্তীতে প্রকাশ্যে আসেন এই প্রাইম বাবুল। পরবর্তীতে তিনি বিএনপি নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী থাকলে ও তাকে দেওয়া হয়নি মনোনয়ন। কিন্তু তিনি শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকার আশা ব্যক্তয় করেছেন।
এদিকে গত (৩ নভেম্বর) প্রথম দফায় বিএনপি সারা দেশে ২৩৭ জনকে প্রাথমিকভাবে মনোনয়ন দেয়। ওই তালিকায় নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে সদ্য বিএনপিতে যোগ দেওয়া ম মাসুদুজ্জামান মাসুদের নাম ছিল। তবে তাঁর নাম ঘোষণার পরপরই চার মনোনয়নপ্রত্যাশী ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাঁর বিপক্ষে মাঠে নামেন। গত (১৫ নভেম্বর) সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খান, সদস্যসচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু, সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম এবং প্রাইম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবু জাফর আহম্মেদ বাবুল।
দফায় দফায় মাঠে পরিবর্তনের দাবীতে আন্দোলনরত অবস্থায় মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব এড. আবু আল ইউসুফ খান টিপু মাঠ ছেড়ে মাসুদুজ্জামানকে সমর্থন দিলে শুরু হয় সমর্থন। কিন্তু মাঠে সক্রিয় ছিলেন সাখাওয়াত-কালাম-বাবুল। এরা হাল না ছেড়ে মনোনয়ন চূড়ান্ত পর্যন্ত দলের সিদ্ধান্ত নিতে বসে থাকলে ও গত ১৬ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় মাসুদুজ্জামান মাসুদ নিরাপত্তা, পারিবারিক চাপসহ পারিপার্শ্বিক কারণ দেখিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন।
বিএনপির একটি সূত্র জানায়, কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়াই এমন ঘোষণা দেওয়ায় দলের নেতারা তাঁর ওপর অসন্তুষ্ট হন। এ সময় তাঁর অনুগত কর্মী ও সমর্থকেরা প্রেস ক্লাবেই কান্নায় ভেঙে পড়েন এবং তাঁকে সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের অনুরোধ জানান। দুদিন পর (১৮ ডিসেম্বর) মাসুদুজ্জামান আবার নির্বাচনে থাকার ঘোষণা দেন।
পরবর্তীতে সাখাওয়াত হোসেন খান জানিয়েছেন, গত শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) দলীয় কার্যালয়ে ডেকে আসনটিতে নির্বাচনের প্রস্তুতির জন্য বলা হয়েছে বলে জানান এ বিএনপি নেতা। একই সাথে তিনি জানিয়েছেন গতকাল (২০ ডিসেম্বর) “আমাকে দল প্রার্থী হিসেবে প্রশিক্ষণও দিয়েছে। আমিসহ এ প্রশিক্ষণে ১০০ জন প্রার্থী ছিলেন। এর আগে আরও ২০০ জন প্রার্থীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে”। যাকে ঘিরে বর্তমানে সাখাওয়াতকে বরণ করে নিচ্ছেন বিএনপির কর্মী সমর্থকরা।
এই খবরে কিছুদিন পূর্বে যারা মাসুদুজ্জামানকে সমর্থন দিয়ে তার পাশে গিয়েছিলেন এদের মধ্যে অনেকেই ফেসবুক স্ট্যাটাসসহ নানাভাবে সাখাওয়াতের সাথে এসে একত্মতা প্রকাশ করছেন। সকলেই বলছেন ‘আলহাদুলিল্লাহ’ দল দেরিতে হলে ও ত্যাগীকে মূল্যায়িত করেছেন। যাকে ঘিরে বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপির দুই প্রার্থীই মাঠে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। একই সাথে মনোনয়ন না পেয়ে ও চূড়ান্ত ঘোষিত তালিকা পর্যন্ত মাঠে সক্রিয় থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন আবুল কালাম ও আবু জাফর বাবুল।


