নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন (সদর-বন্দর)
মাসুদুজ্জামান মাসুদের নাকচে বিএনপির প্রার্থী সাখাওয়াত
যুগের চিন্তা রিপোর্ট
প্রকাশ: ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
মাসুদুজ্জামান মাসুদের নাকচে বিএনপির প্রার্থী সাখাওয়াত
‘নিরাপত্তা শঙ্কার’ কথা জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মো. মাসুদুজ্জামান মাসুদ। তবে তিনদিন পরে আবার নির্বাচনে ফেরার ঘোষণা দেন তিনি। তবে ততক্ষণে দেরী হয়ে গেছে। ইতিমধ্যে সেই আসনে বিকল্প প্রার্থী হিসেবে রাজপথের লড়াকু সৈনিক ও ত্যাগী রাজনীতিবীদ মহানগর বিএনপির আহবায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খানকে মনোনীত করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খান নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে দলীয় মনোনীত প্রার্থী এমনটাই জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। এড. সাখাওয়াত হোসেন খান জানিয়েছেন, গত শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) দলীয় কার্যালয়ে ডেকে আসনটিতে নির্বাচনের প্রস্তুতির জন্য বলা হয়েছে বলে জানান এ বিএনপি নেতা। একই সাথে তিনি জানিয়েছেন ২০ ডিসেম্বর “আমাকে দল আজ প্রার্থী হিসেবে প্রশিক্ষণও দিয়েছে। আমিসহ এ প্রশিক্ষণে ১০০ জন প্রার্থী ছিলেন। এর আগে আরও ২০০ জন প্রার্থীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে”, যোগ করেন সাখাওয়াত।
জানা গেছে, গতকাল (২০ ডিসেম্বর) সকালে গুলশান পার্টি অফিসে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ভাচুয়ালি প্রধান অতিথি থেকে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় ডাক পান তিনি। সেখানে অংশগ্রহণ শেষে পরবর্তীতে এয়োদশ জাতীয় সাংসদ নির্বাচন ২০২৬ সালের প্রশিক্ষণ কর্মশালায় অংশ নেন সাখাওয়াত। এদিকে তিনি মনোনয়ন পাবে এমন খবরে গুলশান কার্যালয়ের সামনে হাজারো বিএনপি নেতাকর্মী ও সাখাওয়াত সমর্থকরা ভিড় জমান। পরবর্তীতে বিকাল সাড়ে ৪ টায় তিনি প্রশিক্ষণ থেকে বেড় হয়ে নেতাকর্মীদের জানান তিনি নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের মনোনয়ন পেয়েছেন এবং সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে ধানের শীষের পক্ষে কাজ করার অনুরোধ ব্যক্ত করেন।
এর আগে সাখাওয়াতের মনোনয়ন পাওয়া খবরে গতকাল সকাল থেকেই সদর-বন্দরে বিএনপি নেতাকর্মীদের মিষ্টি বিতরণ লক্ষ্য করা যায়। তা ছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ এর ঢেউ ছুটতে দেখা যায়। গুলাশানে মনোনয়ন কার্যক্রম শেষ করে এসে চাষাড়া মিশনপাড়ার হোসীয়ারী সমিতিতে যান তিনি। তার উপস্থিতির খবরে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের ৩টি থানা ও ওয়ার্ড-ইউনিয়নের একাধিক নেতাকর্মী মিষ্টি ও ফুলের মালা নিয়ে তাকে বরণ করে নেন। এদিকে মহানগর বিএনপির সদস্য সচিবকে মনোনয়নের সু-খবর জানিয়ে বুকে টেনে নেন সাখাওয়াত।
একই সাথে মহানগর বিএনপি নেতা ও মনোনয়ন বঞ্চিত আবু জাফর আহম্মেদ বাবুলের বাসায় গিয়ে তাকে না পেয়ে পরবর্তীতে মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক সাংসদ সদস্য এড. আবুল কালামের বাসায় গিয়ে তাকে মনোনয়ন পাওয়া সু-খবর দেন সাখাওয়াত। সে সময় কালাম বলেছেন, মনোনয়ন চূড়ান্ত ঘোষণার পরপরই তাকে সমর্থন দিবে বলে প্রতিশ্রুতি জানান। তা ছাড়া ও জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি জাকির খানের বাসভবনে তার সাথে সাক্ষাৎ করতে যান সাখাওয়াত। সেখানে গেলে জাকির খান সাখাওয়াতকে মিষ্টি মুখ করিয়ে বুকে জড়িয়ে নেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইতিমধ্যে এড. সাখাওয়াতের কার্যালয়ের উপরে ও নিচে নেতাকর্মীদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য যাচ্ছে। সকলেই সাখাওয়াতকে ধানের শীষের কান্ডারী হিসেবে পেয়ে অনেকটাই আনন্দিত ও উল্লাসিত হয়ে উঠেছেন। একই সাথে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপির সাবেক মনোনীত প্রার্থী মাসুদুজ্জামানের পাশে যাওয়া একাধিক নেতাকর্মী বর্তমানে সাখাওয়াত খানের সাথে একত্মতা প্রকাশ করতে শুরু করছেন বলে জানা গেছে। এদিকে ত্যাগী ও রাজপথের নেতার হাতে মনোনয়ন উঠায় উজ্জ্বীবিত হয়ে উঠেছে বিএনপি নেতাকর্মীরা
মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খান বলেছেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। তিনি আমাকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে সাংসদ সদস্য পদে নির্বাচন করার জন্য বিএনপির মনোনয়নে ধানের শীষ মার্কা দিয়েছেন। যাকে ঘিরে তারেক রহমানের পাশাপাশি দলের প্রতি ও কৃতজ্ঞ।
তিনি বলেন, গত ১৫ বছর আমরা যারা মাঠে সক্রিয় থেকে আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। এ ছাড়া সেই আন্দোলনে যাদের আমরা পাশে পেয়েছি তাদের নিয়েই নির্বাচন পাড় করবো। তা ছাড়া নারায়ণগঞ্জ-৫ হলো বিএনপির ঘাঁটি এই আসনের সদর-বন্দরের মানুষ বিএনপিকে ও তারেক রহমান, বেগম খালেদা জিয়া ও জিয়াউর রহমানকে ভালোবাসে। সেই হিসেবে আমরা যেহেতু জনগণের পাশে ছিলাম, জনগণের সুখে দু:খে ছিলাম এবং মিছিল-মিটিংয়ে থেকে মামলা মোকাদ্দমা খেয়েছি এবং নির্যাতনসহ করেছি।
তিনি আরো বলেন, আগামী দিনে আমাদের যে নির্বাচন হবে সেটা সুষ্ট ও সুন্দর নির্বাচন হবে সেখানে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল জনগণের ভোটে নির্বাচিত হবে।
তিনি বলেন, মনোনয়ন চাওয়াটা হলো দলের ভিতরের একটি গণতান্ত্রিক পক্রিয়া সেই হিসেবে আমি চেয়েছি। অনেকেই চেয়েছে সেই চাওয়ার মধ্যে আমাদের কোন বিরোধ নেই। আমরা সকলেই ঐক্যবদ্ধ থাকবো, আর সকলকে এক বিন্দুতে নিয়ে আসবো। তা ছাড়া নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিগত দিনে ও যতবার সুষ্ট নির্বাচন হয়েছে ততবারই ধানের শীষ বিজয়ী হয়েছে। এখানে আমি বড় কথা নয়, এটা ধানের শীষের নির্বাচন, তারেক রহমান ও বেগম খালেদা জিয়া ও জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত দলের নির্বাচন। এই দলের সবাই কর্মী, সবাই নেতা। আমরা সকলেই ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচন করবো।
নিরাপত্তা নিয়ে এড.সাখাওয়াত বলেন, অনেকেই খাবার খেতে নিলে, খাবার গলায় ঠেকে মারা যায়। সে জন্য কি খাবার বন্ধ করে দিবো। তা ছাড়া রাস্তা দিয়ে গেলে ভাগ্যে থাকলে এক্সিডেন্ট হতে পারে তাহলে কি রাস্তায় চলাচল বন্ধ করে দিবো। এ সব কথা বাদ দিয়ে আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকতে চাই।
সাখাওয়াত হোসেন খান ২০১৪ সালে নারায়ণগঞ্জে আলোচিত সাতখুনের ঘটনার পর বাদীপক্ষের আইনজীবী হয়ে আলোচনায় আসেন। এ আইনজীবী ওই সময় বিভিন্ন গণমাধ্যমে বক্তব্য দিয়ে সারাদেশে পরিচিত পান। এ পরিচিতি তাকে ২০১৬ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে মেয়র পদে বিএনপির মনোনয়ন পেতে সহযোগিতা করে। যদিও ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীর কাছে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিলেন ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন করা সাখাওয়াত। পরে ২০১৮ সালেও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন বিএনপির এ নেতা।
কিন্তু সেবার তিনি মনোনয়ন পাননি। দল নির্বাচনী জোটের শরিক দলকে আসনটি ছেড়ে দেয়। ওই নির্বাচনে নাগরিক ঐক্যের উপদেষ্টা এসএম আকরাম ধানের শীষ নিয়ে ভোট করেন। যদিও বিতর্কিত ওই নির্বাচনে আসনটি বাগিয়ে নেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী সেলিম ওসমান। এবারও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে ধানের শীষের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন সাখাওয়াত হোসেন। কিন্তু গত ৩ নভেম্বর সারাদেশে দলীয় প্রার্থী ঘোষণার সময় নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে ব্যবসায়ী নেতা ও ক্রীড়া সংগঠক মাসুদুজ্জামান মাসুদের নাম ঘোষণা করে।
দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর টানা গণসংযোগে ছিলেন মাসুদুজ্জামান। কিন্তু গত ১৬ ডিসেম্বর দুপুরে হঠাৎ এক সংবাদ সম্মেলন ডেকে মাসুদুজ্জামান বলেন, পরিবারের সদস্যরা তার নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় থাকায় তিনি নির্বাচন করবেন না। তবে, গত ১৯ ডিসেম্বর নেতা-কর্মীদের চাপে তিনি পুনরায় নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন। তার নির্বাচনে ফেরার এই ঘোষণার পরদিনই সাখাওয়াত হোসেন দাবি করেছেন, তিনি দলটি থেকে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে প্রার্থী হচ্ছেন।
তা ছাড়া ২০২২ সালে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়কের দায়িত্ব পেয়ে মহানগর বিএনপিকে আলোচনা ও রাজপথে উজ্জ্বীবিত রেখেছিলেন এই সাখাওয়াত। এর আগে গত ১৫ নভেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে সাখাওয়াত, কালাম, টিপু, আবুল কাউসার আশা এবং আবু জাফর বাবুল অভিযোগ করেন, “মাসুদুজ্জামান কখনো বিএনপি করেননি। গত ১৫ বছরে তিনি সরকারঘনিষ্ঠ সুবিধা পেয়েছেন। বিএনপির আন্দোলন-সংগ্রামেও ছিলেন না। আমরা চাই, ধানের শীষ এমন কাউকে দেওয়া হোক, যিনি অন্তত গত ১৫ বছর দল করেছেন।” এ দাবিতে তারা নিয়মিত কর্মসূচি পালন করেন এবং তৃণমূলে সমর্থন গড়ে তোলার চেষ্টা চালান এবং নানাভাবে সফলতা ও অর্জন করেন।
পরবর্তীতে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন খান এবং সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু সম্ভাব্য প্রার্থী বিরোধীতায় থাকলেও সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী মাসুদুজ্জামানকে সমর্থন জানান। কারণ তিনি দলীয় প্রার্থী এবং দলীয় সিদ্ধান্তের সাথে একমত। যাকে ঘিরে দলে লক্ষ্য করা যায় নানা সমীকরণ। কিন্তু বর্তমানে কোনভাবেই থেমে নেই প্রতিযোগীতা বর্তমানে মনোনীত প্রার্থী নিজের শক্তি বড় করতে মনোনয়ন বঞ্চিতদের পাশে চাইছেন একই সাথে মনোনীত প্রার্থীর বিরোধীতা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের দিন পর্যন্ত দেখতে চাইছেন মনোনয়ন বঞ্চিতরা। পরবর্তীতে মাসুদুজ্জামান মাসুদ নির্বাচন থেকে সরে আসলে গতকাল এড. সাখাওয়াত হোসেন খানকে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপির মনোনয়ন দেন।


