ফুটপাত-সড়ক দখলদারে জিম্মি
নারায়ণগঞ্জ শহরের বাসিন্দারা দখলদারের হাতে জিম্মি রয়েছেন। যার কারণে প্রতিনিয়ত দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে পথচারী ও যাত্রীদের। দখলের একদিকে রয়েছে ফুটপাত, অন্যদিকে মূল সড়ক। ফুটপাত ও সড়ক জুড়ে হকারদের দখল যাকে ঘিরে নিত্যদিন সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট ও বিশৃঙ্খলা। এই বিশৃঙ্খলা থামাতে গিয়ে হামলার শিকার হতে হচ্ছে যানজট নিয়ন্ত্রণে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবকসহ সাধারণ জনগণ। অবৈধ এই হকার্সদের নিয়ে কথা বললেই মহানগর হকার্স শ্রমিক দলের সভাপতি ফুঁসে উঠেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তা ছাড়া ও জানা গেছে, হকার্স শ্রমিক দলের নিয়ন্ত্রণে এবং তাদের নির্দেশনায় গত ৫ আগষ্টের পর থেকে ফুটপাতের পাশাপাশি সড়ক ও দখলে নিয়েছে একদল হকার্স।
এদিকে স্থানীয় সচেতনমহলের মতে বঙ্গবন্ধু সড়কের ফুটপাত থেকে যদি হকারদের সরিয়ে নেওয়া যায় তাহলে শহরকে অচল করে দেওয়ার মতো যে সমস্যা অর্থাৎ যানজটও প্রায় অর্ধেকে নেমে আসবে। যদিও অনেকেই হকারদের পক্ষ নিয়ে বিভিন্ন যুক্তি তর্ক দাঁড় করানোর চেষ্টা চালিয়ে যান। তবে পড়ে খোঁজ নিয়ে দেখা যায় তাদের অনেকেই মানবতার চেয়েও আর্থিক লব্দিকে পুজি করে এধরণের অবস্থান নিয়ে থাকেন। তা ছাড়া বর্তমানে হকার্সদের বিরুদ্ধে পড়ছে না কোন অভিযান। যাকে ঘিরে দিনে দিনে তাদের বেপরোয়াতা অনেকটাই বৃদ্ধি পাচ্ছে। এদিকে বর্তমানে বিদ্যুৎ লাইন অবৈধভাবে দিয়ে ৫০/৬০ টাকা করে উঠাচ্ছে একদল প্রভাবশালী। একই সাথে হার্কস শ্রমিক দলের নামে চাঁদাবাজি এমনকি দোকানের পজিশন বিক্রিসহ নানা অভিযোগ রয়েছে শহরের হকার্সসহ হকার্স নেতাদের বিরুদ্ধে।
সরেজমিনে দেখা যায়, নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়া, মিশনপাড়া, গলাচিপা, উকিলপাড়া, গ্রীনলেজ ব্যাংকের মোড় সর্বত্রই হকারের বিস্তার। এদিকে হকারদের বিস্তার এতোটাই ছড়িয়েছে যে ফুটপাতের পাশাপাশে বর্তমানে দখলে নিয়েছে রাস্তা। এদিকে বর্তমানে সিটি কর্পোরেশনের ড্রেনেজ কাজ চলমান রয়েছে। সেখানে সেই কাজের কারণে বর্তমানে রাস্তা সংকীর্ণ থাকার পরে ও বর্তমানে রাস্তা দখল রেখেছে একাধিক হকার্স নামধারী নেতাদের শেল্টারে। যাকে ঘিরে বর্তমানে দিনরাত যানজট লেগেই থাকে। আর ফুটপাতগুলো পথচারীদের নিরাপদে চলাচলের জন্য নির্মাণ করা হলেও এখন তা হকারদের স্থায়ী দখলে চলে গেছে।
স্থানীয়রা বলছেন, আগে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের টাকা দিয়ে হকাররা বসতো। তাও মাঝেমধ্যে পুলিশ ও সাবেক মেয়র আইভীর জোড়া জুড়িতে অনেকেই উঠে যেত। কিন্তু ৫ আগস্টের পর আর হকারদের উঠতে হয়না। এখন বিএনপিপন্থি লোকজনকে টাকা দিয়ে স্থায়ীভাবে হকাররা বসে গেছে। কাপড়, জুতা, ফল, ইলেকট্রনিক্স, এমনকি খাবারের দোকানও স্থায়ীভাবে বসেছে ফুটপাতে। ফলে পথচারীদের বাধ্য হয়ে নামতে হচ্ছে মূল সড়কে, যেখানে ইজিবাইক ও অন্যান্য ছোট যানবাহন দাপটের সাথে চলছে। তা ছাড়া হকারদের দাবি, আর্থিকভাবে বিভিন্ন লোকজন ম্যানেজ করেই তারা বসছেন। বিনা পয়সায় বসছেন তাও নয়। যেই টাকার ভাগ রাজনৈতিক নেতা, পুলিশের হাতেও পৌছে যায়।’ অথচ এই কারনে পথচারীরা চলাচল করছেন ঝুঁকি নিয়ে।
নারায়ণগঞ্জের সুশিল মহল বলছেন, এই সমস্যার মূল কারণ পরিকল্পনার অভাব ও রাজনৈতিক সদিচ্ছার ঘাটতি। ফুটপাত হকারমুক্ত না করলে, এবং সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে না আনলে, শহরের মানুষের নাগরিক অধিকার ভীষণভাবে ক্ষুণ হচ্ছে। বার বার দাবি জানালেও অজানা কারণে তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। জেলা প্রশাসক, নাসিক প্রশাসক, পুলিশ প্রশাসনের কাছে বার বার স্মারকলিপি দিয়েও কাজ হয়নি। একই বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে এই শহরের শৃঙ্খলার বিষয়। যে যার মত করে শহর চালিয়ে নিচ্ছে। আর ভুগছে সাধারণ মানুষ।
নগর বিশ্লেষকরা বলছেন, ৫ আগস্টের পর মানুষ যেই আশা আকাক্সক্ষা করেছিলো এই শহর নিয়ে। তা বাস্তবে হয়নি।
উল্টো দখলদারের কবলে চলে গেছে পুরো শহর। দখলদার আর শেল্টারদাতারা নিয়ন্ত্রন করছে পুরো শহরকে। কোটি কোটি টাকা আর কর্মঘণ্টা নষ্ট হলেও কারও কোন নজর নেই। প্রশাসনিক উদাসীনতা আর নানা মহলের সুবিধাবাদিতাই এই পরিস্থিতি তৈরি করেছে। কঠোরতা ছাড়া এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়। সবমিলিয়ে ফুটপাত ও সড়ক দখলের এই সংস্কৃতি এখন নগরজীবনের এক ভয়াবহ অভিশাপে পরিণত হয়েছে। দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতে নাগরিক দুর্ভোগ আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন নগরবাসী।
তা ছাড়া সর্বশেষ চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জে সাবেক জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞার সাথে এক মতবিনিময় সভায় এই হকার সমস্যার সমাধানে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করার দাবি জানানো হয়। বিষয়টিকে খুব গুরুত্বের সাথে নিয়ে জেলা প্রশাসক এই বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে আশ্বাস প্রদান করেন। এমনকি তিনি শুধু কাগজে কলমে নয়, বাস্তবায়নের অঙ্গীকারও করলে ও তা আর বাস্তবায়িত হয়নি। কিন্তু বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আধাঘন্টার নাটকীয় অভিযানে কোনভাবেই মুক্ত হয় না হকার।
তারা গেলেই আবার রাস্তা দখল করে বসে পরে। কিন্তু বর্তমানে হকারদের মুখে বুলি ফুটেছি, আমরা সকল সেক্টরে টাকা দিয়েই বসি, আমাদের উঠানোর সাহস কাউর নেই। এদিকে গতকাল ম্যাজিস্ট্রেট হঠাৎ হকার বিরোধী অভিযানে মাঠে নামলে ২০ মিনিট রাস্তা-ফুটপাত খালি হলে ও একটু পর আবারো সেই পুরনো দশাই।


