স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে আগ্রহী বঞ্চিতরা
যুগের চিন্তা রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে আগ্রহী বঞ্চিতরা
দুই দফায় ২৭৩টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছেন বিএনপি। যাকে ঘিরে মনোনীত প্রার্থীরা উচ্ছ্বাসিত ও বঞ্চিতরা উত্তেজিত। একই সাথে নির্বাচন কমিশনের দেয়া সূত্র অনুযায়ী আগামী ১১ ডিসেম্বর ঘোষণা হতে যাচ্ছে এয়োদশ জাতীয় সাংসদ নির্বাচনের তফসিল। যাকে ঘিরে বর্তমানে মনোনয়ন চূড়ান্ত নাকি প্রাথমিক সেই হিসেব-নিকেশ মিলাচ্ছেন বিএনপির মনোনীত ও বঞ্চিত নেতাকর্মীরা। এদিকে গত (৩ নভেম্বর) ২৩৭টি আসনে মনোনয়ন ঘোষণার পরপরই মনোনীত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে সারদেশে প্রায় ৫০টিসহ নারায়ণগঞ্জের ৩ টি আসনে মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার দাবিতে দলীয় নেতা-কর্মীদের বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ, সংবাদ সম্মেলনসহ মশাল মিছিল চলছে।
ইতিমধ্যে নারায়ণগঞ্জ-৩ ও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের মনোনয়নকে ঘিরে ব্যাপক উত্তেজনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এদিকে গত (৩ নভেম্বর) ঘোষিত তালিকায় নতুন, ‘হাইব্রিড’ ও আন্দোলনে নিস্কিয় ব্যক্তিদের স্থান দেওয়ায় বিভিন্ন আসনে ত্যাগী ও জনপ্রিয় নেতারা বাদ পড়েছেন। ফলে একাধিক আসনে ভাঙচুর, মানববন্ধন, সড়ক অবরোধ ও সমাবেশ মশাল মিছিলের মাধ্যমে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন বঞ্চিত নেতা-কর্মীরা। তা ছাড়া মনোনয়ন বঞ্চিত অনেকের বক্তব্যে একটা বিষয় উঠে এসেছে মনোনয়ন পরিবর্তন না হলে অনেকের এবারই শেষ নির্বাচন হিসেবে স্বতন্ত্র করার আভাস দিচ্ছেন।
একই সাথে অনেকে এখন হাল না ছেড়ে চূড়ান্তের শেষ দিন পর্যন্ত থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করছেন। এদিকে গত বৃহস্পতিবার নতুন করে আরো ৩৬টি আসনে বিএনপির প্রার্থী ঘোষণা করেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। যাকে ঘিরে ফের সেই সকল আসনে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসলে ও হাল ছাড়ছেন না মনোনয়ন বঞ্চিতরা শেষ পর্যন্ত মাঠে থেকে কোনঠাসা হয়ে নির্বাচনে স্বতন্ত্রভাবে অংশ নিতে পারে বলছে সূত্র। যাকে ঘিরে বর্তমানে স্বতন্ত্রের পথেই লক্ষ্য করা যাচ্ছে বিএনপিকে।
সূত্র বলছে, ঘোষিত মনোনয়নকে ঘিরে নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে বিএনপির প্রাথমিক মনোনীত প্রার্থী রূপগঞ্জে একটি ঐক্য সৃষ্টি করতে পেরেছেন।
যাকে ঘিরে মনোনয়ন বঞ্চিতরা সকলেই একে একে করে দিচ্ছেন তাকে সমর্থন। তা ছাড়া নারায়ণগঞ্জ-২ আসন (আড়াইহাজারে) বিএনপির প্রাথমিক মনোনীত প্রার্থী নজরুল ইসলাম আজাদ। যিনি ইতিমধ্যে মনোনয়ন বঞ্চিতদের ঐক্য করতে না পারলে ও তিনি এই আসনে মনোনীত প্রার্থী হিসেবে হেভিওয়েট বলছে তৃণমূলের নেতারা। বিগত স্বৈরাচার সরকারের আমল থেকে শুরু করে দলীয় কর্মসূচি এবং সর্বশেষ দলীয় ঘোষিত হরতাল-অবরোধে ব্যাপক ভূমিকা ছিলো এই নজরুল ইসলাম আজাদের যাকে ঘিরে তাকে মনোনীত প্রার্থী করায় অনেকটাই উচ্ছাসিত আড়াইহাজারবাসী।
কিন্তু বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ-৫ ও নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের মনোনয়নকে ঘিরে লক্ষ্য করা যাচ্ছে অসেন্তাষ। এই দুইটি আসনে বিতর্কিত লোক দ্বারা কমিটি গঠনে অনেকটাই অস্তোষ প্রকাশ করছেন তৃণমূল। তা ছাড়া ইতিমধ্যে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপির প্রাথমিক মনোনীত প্রার্থী মাসুদুজ্জামান মাসুদের আওয়ামী লীগ সংশ্লিতার কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে তা নিয়ে শুরু হয়েছিলো হৈ চৈ অনেকেই বলেছিলেন এগুলো এডিট না এ আই দিয়ে বানানো। কিন্তু গত (১১ নভেম্বর) মিট দ্যা প্রেসের ব্যানারে একটি অনুষ্ঠানে এই ছবিগুলো আসল এবং এগুলো আওয়ামী লীগের সেই সন্ত্রাসীদের চাপে পরে তোলা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন মাসুদুজ্জামান। এমনতা অবস্থায় মনোনয়ন বঞ্চিত চার নেতা সাখাওয়াত-কালাম-বাবুল-টিপু একাট্টা হয়ে মাঠে নেমে অনেকটাই চাপে রেখেছেন মনোনীত প্রার্থী মাসুদুজ্জামানকে।
বর্তমানে হাজারো হাজারো বিএনপির সমর্থকদের নিয়ে নিয়মিত বিএনপির ৩১ দফার প্রচারণাসহ নানাভাবে ঐক্যবদ্ধ বিএনপির কাজ করার পাশাপাশি পাল্টাপাল্টি সমাবেশ করছেন। এদিকে কিছুদিন পূর্বে ঐক্যজোট ভেঙে মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব এড. আবু আল ইউসুফ খান টিপু। ইতিমধ্যে তিনি মাসুদুজ্জামানকে সমর্থন দিয়ে তার পাশে যাওয়া বঞ্চিত ঐক্যজোট ৩ জনেই সীমাবদ্ধ হয়ে পরে। ইতিমধ্যে ৩ নেতাই মাঠে কঠোর অবস্থানে রয়েছে। একই সাথে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে বিএনপির প্রাথমিক মনোনীত প্রার্থী আজহারুল ইসলাম মান্নান যেন (সিদ্ধিরগঞ্জ-সোনারগাঁও) এর একটি বিতর্কিত নাম। যার বিরুদ্ধে গত ৫ আগষ্টের পর থেকেই চাঁদাবাজি, টোল প্লাজা লুট, স্ট্যান্ড নিয়ন্ত্রণসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। এর বাহিরে ও শত শত অভিযোগে কোনঠাসা তিনি।
এর বাহিরে ও গত (১০ নভেম্বর) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঢাকায় (মুক্ত খবরÑ পত্রিকার একজন গণমাধ্যমকর্মী তার বিরুদ্ধে উঠে আসা অভিযোগের বিষয়ে তার কাছে জানতে চাইলে তিনি তাকে বলেন, সারাদেশেই বিএনপির লোকেরা চাঁদাবাজি করে, তা ছাড়া তিনি বলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের লোকজন ঢাকায় চাঁদাবাজিসহ সব করে তাদের নিয়ে লিখেন। তার এমন মন্তব্যের মাধ্যমেই তার মনোনীত প্রার্থীতার যোগ্যতা যাচাই হয়েছে বলছেন তৃণমূলে। একই সাথে ইতিমধ্যে নিয়মিত মান্নানের মনোনয়ন বাতিলের দাবীতে সিদ্ধিরগঞ্জ-সোনারগাঁও এলাকায় চলছে নিয়মিত মশাল মিছিল এবং বিক্ষোভ মিছিল। এদিকে গত বৃহস্পতিবার ৩৬টি আসনে বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
যেখানে আগের বারের মতোই নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের নাম উঠে না আশায় বিএনপিতে বিড়ম্বনা লক্ষ্য করা যায়। এই আসনে বর্তমানে বিএনপির প্রার্থীরা কোনঠাসা হয়ে পরেছেন। এদিকে ইতিমধ্যে এই আসনে জোটের আওয়াজে সেই আসন স্বগরম প্রায়। যাকে ঘিরে সেই আসনে বিএনপির প্রভাবশালী, ত্যাগী, হেভিওয়েটের একাধিক নেতাকর্মী মনোনয়ন না পেলে স্বতন্ত্রের দিকে হাঁটবে সেই ইঙ্গিত ও গোপন বৈঠক চলছে নানা ভাবে জানিয়েছে সূত্র।সব মিলিয়ে বর্তমানে পরিবর্তন নাকি চূড়ান্ত তা নিয়েই নারায়ণগঞ্জে চলছে নানান আলোচনা।


