জমজমাট প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস
এবার নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে মোহাম্মদ আলী লড়াইয়ে নামার ঘোষণা দিয়েছেন। যার ফলে এই আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকা দীর্ঘ হলো। সাবেক সংসদ ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য শাহ আলমের পর এবার মোহাম্মদ আলীও সেই খাতায় নাম লেখালেন। তবে মোহাম্মদ আলী বিএনপির মনোনয়ন না পেলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার আভাস দেয়ায় মনে করা হচ্ছে তিনি নির্বাচন করবেনই।
এই আসনে মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন সাংসদ হিসেবে দায়িত্ব পালনের সুযোগ পেলেও মোহাম্মদ আলী সাংসদ হয়ে দায়িত্ব পালনের স্থায়ীত্ব হয়নি। সূত্র বলছে, ১৯৯১ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেছিলেন মোহাম্মদ আলী। সে নির্বাচনে সামান্য ভোট ব্যবধানে বিএনপির প্রার্থী কমান্ডার সিরাজুল ইসলামের কাছে হেরেছিলেন তিনি। পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন থেকে তিনি বিএনপির টিকেটে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০০১ সালে মোহাম্মদ আলীকে চাপ দিতে থাকে নির্বাচনের জন্য। কিন্তু মোহাম্মদ আলী নির্বাচনে সরাসরি যেতে রাজী না। নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি করতেই প্রয়াস তার। বিএনপির প্রার্থী ভালো না থাকায় যে কোন মূল্যে ফতুল্লা আসনটি নিজেদের নিয়ন্ত্রনে রাখতে শুরু হয় পরিকল্পনা।
সেবার বিএনপর আর্শিবাদ লাভ করেছিল সিদ্ধিরগঞ্জের ধনকুবের বিএনপি নেতা সফর আলী ভূইয়া। বিএনপি থেকে প্রথমে তাকেই নমিনেশন দেয়া হয়। তবে তাকে নিয়ে নির্বাচনী তরী পার হওয়া নিয়ে সংশয় থাকায় মোহাম্মদ আলী বেছে নেন গিয়াসউদ্দিনকে। ওই বছরের ১৪ আগস্ট গিয়াসউদ্দিন কৃষক লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতির পদ ছেড়ে বিএনপিতে যোগ দেয়। আর সেই ঘটনার পুরো পরিকল্পনায় ছিলেন মোহাম্মদ আলী। পরে তিনিই গিয়াসউদ্দিনকে ওই বছরের ১ অক্টোবর সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন এনে দেন। মোহাম্মদ আলীর কারিশমায় নির্বাচনে গিয়াসউদ্দিন বিপুল ভোটে শামীম ওসমানকে পরাজিত করে।
গিয়াস উদ্দিন এমপি নির্বাচিত হয়ে বিএনপির রাজনৈতিক অঙ্গনে রাতারাতি আলোচনায় ওঠে আসেন। পরবর্তীতে রাজনৈতিক এবং বিভিন্ন ইস্যুর কারণে গিয়াসউদ্দিনের সাথে বিরোধ সৃষ্টি হয় মোহাম্মদ আলীর পরবর্তীতে একে অপরের প্রতিপক্ষ হয়ে উঠেন। ২০০৮ সালের ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে বিএনপির সাবেক এমপি গিয়াসউদ্দিন মনোনয়ন দাখিল করলেও ঋণখেলাপীর কারণে বাতিল হয়ে যায়। মোহাম্মদ আলী নতুন নেতার তালাশ শুরু করেন। নিয়ে আসেন শিল্পপতি শাহআলমকে। সেই নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী শাহআলম পরাজিত হন।
আর শাহআলমের বিপক্ষে আওয়ামীলীগ প্রার্থী সারাহ বেগম কবরী নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য হিসেবে জয় লাভ করেন। নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের উপ-নির্বাচন প্রার্থী হয় ব্যবসায়ী নেতা সেলিম ওসমান যাঁর সঙ্গে মোহাম্মদ আলীর এক আত্মীয় সম্পর্ক ছিল। ওসমান পরিবারের পক্ষে মাঠে নামেন মোহাম্মদ আলী। সেলিম ওসমানের পক্ষে বিভিন্ন স্থানে ক্যাম্পেইন শুরু করেন। বিএনপির অনেক নেতাকর্মী যারা সেলিম ওসমানের বিরুদ্ধে কাজ করার প্রয়াস চালিয়েছিল স্ব কারিশমায় তাদেরকে বশে আনেন মোহাম্মদ আলী বদলে যায় ভোটের চিত্র।
এরপর থেকেই ওসমানদের সাথে মোহাম্মদ আলীর ঘনিষ্ঠতা রাজনীতিতে এবং ওসমানদের অর্থাৎ শামীম ওসমান সেলিম ওসমানের সিদ্ধান্তের সাথে একাগ্রতা প্রকাশ করে নারায়ণগঞ্জ জুড়ে পদচারণা ছিল তার। কিন্তু নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপিতে ওসমানদের সাথে লড়াই সংগ্রাম অত্যাচার নির্যাতনের প্রতিবাদী কন্ঠসুর থেকে নারায়ণগঞ্জে ওসমান পরিবারের বিরুদ্ধে লড়াই করে রাজনৈতিক সিংহপুরুষ হয়ে উঠেন গিয়াসউদ্দিন। এছাড়া নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি হয়ে শামীম ওসমানের সাথে রাজনৈতিক মোকাবিলা করে সফলভাবে দায়িত্ব পালন করেন গিয়াসউদ্দিন।
এছাড়া সাংসদ হয়ে জনগণের প্রত্যাশা পূরণে এবং রাজনৈতিকভাবে ব্যাপক ভাবে গ্রহণযোগ্যতা থাকায় বিএনপির একজন হেভীওয়েট প্রার্থী হিসেবে আলোচিত ছিলেন আওয়ামীলীগ শাসন আমল থেকে তবে মোহাম্মদ আলী বিরুদ্ধে আওয়ামীলীগ প্রীতি এবং দোসর আখ্যা দেয়া হয়েছে আওয়ামীলীগ পতনের পর এবং ডিসি অফিসে জয় বাংলা বলে রাজনৈতিক সর্বমহলের নেতাদের তোপের মুখে পড়েন মোহাম্মদ আলী। কিন্তু সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে বিএনপি থেকে প্রার্থী না দেয়া জোট বা দলীয় প্রার্থী নিয়েও বহু হিসেব নিকেশ থাকায় নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে মোহাম্মদ আলী সংসদ নির্বাচনের ঘোষণা দেন।
তবে সম্প্রতি তিনি ধানের শীষের পক্ষে পোস্টারিং ও করেছেন যার কারণে তাকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে ধরে নেয়া যাচ্ছে। তবে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ারও আভাস দিয়েছে। এই আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে শাহ আলম, মশিউর রহমান রনি, মামুন মাহমুদরা থাকলেও মোহাম্মদ আলী বিপরীতে বাাজিমাত করতে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে অন্যতম সাবেক সাংসদ মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন।


