জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায়
শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডে বিভিন্ন দলের প্রতিক্রিয়া
প্রকাশ: ১৯ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডে বিভিন্ন দলের প্রতিক্রিয়া
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে ঘোষিত রায় মৃত্যুদণ্ডে সন্তুষ্টি জানিয়েছে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। তার মনে করে, এই রায় দেশের জন্য মাইলফলক। তবে কিছু দল এও বলছে যে, একমাত্র রায় কার্যকরের মাধ্যমে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে। একই সাথে নারায়ণগঞ্জে যারা ফ্যাসিস্ট আমলে গডফাদারের ভূমিকায় ছিলেন এবং সর্বশেষ ছাত্র-জনতার উপরে গুলি চালিয়ে হত্যা করেছেন এদের ও দ্রুত বিচারের আওতায় আনার হুঁশিয়ারী দেন নেতারা।
গতকাল সোমবার (১৭ নভেম্বর) রায়ের পর বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের ফেসবুক পোস্টে বলতে দেখা গেছে, ‘আলহামদুলিল্লাহ’ এই সাথে অনেকেই লিখছে, আজকের রায় কেবল শেখ হাসিনার অপরাধের রায় নয়, বরং এই দেশের মাটিতে সব ধরণের স্বৈরাচারের কবর রচনা হলো। আর দ্রুত নারায়ণগঞ্জে ছাত্র জনতার উপরে গুলি চালানো সেই ওসমান পরিবারের ফাঁসি কার্যকর দেখতে চাই। একই সাথে রায়ের পর থেকেই নারায়ণগঞ্জের চাষাড়া, মিশনপাড়া,গলাচিপা, মাসদাইর, নিতাইগঞ্জ, টানবাজার, সিদ্ধিরগঞ্জসহ জেলার বিভিন্নস্থানে আনন্দ মিছিল এবং মিষ্টি বিতরণ লক্ষ্য করা গেছে। তা যারা বিগত দিনে শেখ হাসিনা দ্বারা নির্যাতিত সকল রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা আজকে অনেকটাই উচ্ছ্বাসিত। বর্তমানে এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক দলেল নেতাকর্মীদের প্রতিক্রিয়া হলো।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ যুগের চিন্তাকে বলেন, হাসিনার বিরুদ্ধে যে রায়টি ঘোষণা হলো সেটা খুবই প্রত্যাশিত ছিলো। যার হাতে হাজার হাজার ছাত্র-জনতার রক্তের দাগ লেগে আছে তার বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের মতো রায় অনেকটাই সুন্তুষ্টির বিষয়। এর পাশাপাশি এখান থেকে একটি শিক্ষা ও নেওয়া যাবে যে যারা স্বৈরাচার হয়ে যায় তাদের বিচার দুইদিন আগে বা দুইদিন পরে বিচার হয় এই শিক্ষাটা সকলের মধ্যে এখন হবে। আমাদের দাবি একটাই থাকবে বাংলাদেশে আর যেন কোন ফ্যাসিবাদের জন্ম না হয়। তা ছাড়া শুধু রায় দিলেই হবে না, এই রায় দ্রুত কার্যকর করতে হবে জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে আমরা দ্রুত এই রায় কার্যকর হবে দেখতে চাই।
মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খান যুগের চিন্তাকে বলেন, আজকে আন্তজার্তিক ট্রাইব্যুনালে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ একটি বিচারের রায় আমরা দেখতে পেয়েছি। এই বিচারের সকল কিছু পরীক্ষা-নীরিক্ষার মাধ্যমেই একটি যুক্তি সংঘত রায় প্রধান করা হয়েছে। আর তার বিরুদ্ধে যে সকল এভিডেন্স রয়েছে এর মধ্যে কিছু এভিডেন্স আছে যে এভিডেন্সগুলো জাতিসংঘ পর্যন্ত বিশেষ সংস্থাকর্তৃক তদন্ত হয়ে সেগুলো প্রমানিত হয়েছে। যেমন, কল রেকডিং ফাঁসে গুলি করার নির্দেশ এগুলো। যাকে ঘিরে আমরা মনে করি এই মৃত্যুদন্ডের রায়টি ন্যায় সংহত আর এটার মাধ্যমেই প্রমানিত হলো দেশ এখন সুষ্ঠ এবং সুন্দর বিচার ব্যবস্থার দিকে রয়েছে। তা ছাড়া আমরা আশা করি আগামী দিনে এমনভাবেই নিরপেক্ষতা বজায় রেখে জুলাই বিপ্লবে যতগুলো হত্যাকাণ্ড ঘটেছে সকল হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠ বিচার হবে এটাই নারায়ণগঞ্জসহ সারা বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশা।
মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব এড. আবু আল ইউসুফ খান টিপু বলেন, গত ১৬ বছর খুনি হাসিনা বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীদের যেভাবে হত্যা করেছে একই সাথে সর্বশেষ ২০২৪ সালের জুলাই-আগষ্টের আন্দোলনে ছাত্র জনতার উপরে গুলি চালিয়ে যেভাবে হত্যাকাণ্ড পরিচালনা করেছে আর সেই আন্দোলনে যারা যার হত্যার শিকার হয়েছেন আজকের এই রায় তাদের আত্মা কিছুটা হলে ও শান্তি পেয়েছে। এটা বাংলাদেশের বিজয়-দেশের জনগণের বিজয়। আর এই ফাঁসির আদেশ যদি দ্রুত কার্যকর করা হয়, তাহলে শহীদদের আত্মা পুরোপুরি শান্তি পাবে। তা ছাড়া আমরা চাই না আর এমন ফ্যাসিস্ট জন্ম হোক।
তিনি বলেন, আজকে বিএনপিসহ যে যে দল ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রামে ছিলেন সকলের বিজয় হয়েছে। একই সাথে শুধু শেখ হাসিনার ফাঁসি হলে হবে না। নারায়ণগঞ্জের গডফাদার ওসমান পরিবার, গাজী গোলামদস্তগীর, নজরুল ইসলাম বাবুসহ নারায়ণগঞ্জ এবং বাংলাদেশের যত গডফাদার রয়েছে সকলের ফাঁসি চাই। বর্তমানে নাশকতা পরিচালনায় যারা ওসমান পরিবার থেকে টাকা নিচ্ছে তাদেরও বিচার চাই।
মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা আব্দুল জব্বার যুগের চিন্তাকে বলেন, রায় ঘোষণায় সারাদেশের মতো নারায়ণগঞ্জের ছাত্র-জনতাসহ সাধারণ জনগণ উচ্ছ্বাসিত হয়ে রয়েছে। সকলে এটাই চেয়েছিলো সেই রায় ঘোষণা হলো এখন দ্রুত এই রায় বাস্তবায়ন হোক।
জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনি যুগের চিন্তাকে বলেন, শেখ হাসিনার ফাঁসির রায়ের অপক্ষোয় ছাত্র-জনতাহ বাংলাদেশের প্রত্যোকটি মানুষ অতি আগ্রহে বসে ছিলেন। দীর্ঘ দিন পর তার অপকর্মের ফল হিসেবে তার ফাঁসির রায় আসলো। এখন আমরা দ্রুত এই রায়ের কার্যকর চাই। একই সাথে শেখ হাসিনার দোসর হিসেবে ছিলো নারায়ণগঞ্জের শামীম ওসমান, সেলিম ওসমান, অয়ন ওসমান, আজমেরী ওসমান। তারা নারায়ণগঞ্জের মানুষদের বিগত দিনে জিম্মি করে রেখেছিলেন। তাদের যন্ত্রণায় শুধু সাধারণ মানুষই নয় নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ীরা ও শান্তিতে কোন কাজ করতে পারতো না। নারায়ণগঞ্জে কিছু করতে হলেই তাদেরকে টাকা বা কর দিতে হতো। তা ছাড়া সর্বশেষ ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে এই ওসমান পরিবার যেভাবে অস্র নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন সেটাকে উপেক্ষা করেই নারায়ণগঞ্জবাসী তাদেরকে নারায়ণগঞ্জ থেকে বিতাড়িত করেছে। আমি যতটুকু শুনেছি মানুষ যেন না চিনে পটপরিবর্তনের পর সেন্টু গেঞ্জি ও লুঙ্গি পরে দেশ থেকে পালিয়ে ছিলেন শামীম ওসমান। আমরা বিশ্বাস শামীম ওসমান নারায়ণগঞ্জে ৭৬ জনের বেশি হত্যা করেছে এই জুলাই আন্দোলনে তার গুলি ৪ জন মারা গিয়েছে। আমরা বিশ্বাস নারায়ণগঞ্জের আদালতে এই শামীম ওসমানের ও ফাঁসি হবে।
মহানগর যুবদলের সদস্য সচিব মনিরুল ইসলাম সজল যুগের চিন্তাকে বলেন, গত ১৬ বছর খুনি হাসিনা নির্যাতনের শিকার লক্ষ লক্ষ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ আজকে সস্তির নি:শ্বাস ফেলছেন। সকলের দীর্ঘদিনের অপেক্ষা আজকে এই রায় ঘোষণার মাধ্যমে পূরণ হলো। বর্তমানে আমাদের এখন মূল চাওয়া আমরা এই রায়ের কার্যকারিতা দ্রুত সময়ের মাধ্যমে বাস্তবায়ন হোক সেটা দেখতে চাই।
গণসংহতি আন্দোলন নারায়ণগঞ্জ জেলার সমন্বয়ক তরিকুল ইসলাম সূজন যুগের চিন্তাকে বলেন, দেশে এবং জাতি এই রায়ের জন্যই অপেক্ষা করছিলো। যারা বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার বুকের ভিতরে গুলি চালিয়েছিলো যেখানে অনেকেই হত্যার শিকার হয়েছেন আবার অনেকেই অঙ্গহানিতার শিকার হয়েছেন এবং ৩০ হাজারের অধিক লোক ফ্যাসিস্টদের ছোঁড়া বুলেটে আহত হয়েছে। সেই অবস্থাতে বাংলাদেশের মানুষ আশা নিয়ে বসে ছিলেন শেখ হসিনার বিরুদ্ধে এই বিচার ব্যবস্থাটা একটু আগাবে তা আজকে আমরা এই সুষ্ঠ রায়ের মাধ্যমে উপলব্ধি করতে পাচ্ছি।
তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার গণহত্যার জন্য শেখ হাসিনা দায়ী। বাংলাদেশের মানুষ শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যে রায় চেয়েছিলো সেই প্রতিফলন আজকে হয়েছে। বর্তমানে আমরা দ্রুত এই রায়ের কার্যকর দেখতে চাই। একই সাথে বিগত দিনে নারায়ণগঞ্জকে যারা সন্ত্রাসের জনপথ যারা পরিণত করেছিলো। তা ছাড়া অজস্র হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে তাদের ও দ্রুত বিচারের আওতায় আনা হোক এবং ফাঁসির রায় দিয়ে তা কার্যকর করা হোক।
জাতীয় নাগরিক পার্টি এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আহমেদুর রহমান তনু যুগের চিন্তাকে বলেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা যেভাবে বিগত দিনে রাষ্ট্রযন্ত্রটাকে অকেজু করেছে এবং এই অভুন্থানে যত শহীদ এবং আহত সকল শ্রেনীর মানুষ যে হতাহতের শিকার হয়েছেন। সেই সকল কিছুর বিচারের রায় আজকে ঘোষণা করা হয়েছে এই শেখ হাসিনার মৃতুদণ্ড রায়ের মাধ্যমে। আজকে প্রমান হলো বাংলাদেশ এখন সুষ্ঠ বিচার ব্যবস্থার দিকে যাচ্ছে। একই সাথে এই বিচারের আমরা দ্রুত কার্যকারিতা চাই। এর পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জে যারা শেখ হাসিনার দোসর হিসেবে বিভিন্ন অপকর্ম পরিচালনা করেছেন তাদের ও দ্রুত বিচারের আওতায় আনা হবে বলে প্রত্যাশা রাখছি।


