গিয়াসউদ্দিনের সামনে আরেকটি সুযোগ
‘পরাজয়ে ডরে না বীর’, স্কুলের ফাইনাল পরীক্ষায় আমাদেরকে অতীতে উপরোক্ত বাক্যের কারক ও বিভক্তি নির্নয় করতে বলা হতো। এ বাক্যের অর্থ, প্রকৃত বীর কখনো পরাজয়ে মুষড়ে পরে না। ব্যার্থতার গ্লানি মুছে সে তৎক্ষনাৎ ঘুরে দাঁড়ায় এবং সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে। চৌকষ বিএনপি নেতা ও ভোটযুদ্ধের বীর সেনানী মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন এখন এ কাজটিই করছেন। নাগঞ্জ-৩ (সিদ্ধিরগঞ্জ-সোনারগাঁ আসনে বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়ন আয়ত্বে ব্যার্থ হয়ে তিনি এক মুহূর্তও দেরী করেননি, তৎক্ষনাৎ নাগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা) আসনের মনোনয়ন যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন।
উল্লেখ্য, বিএনপির ২৩৭টি আসনের প্রাথমিক মনোনয়ন ঘোষণায় এ আসনটি বাদ পড়েছে। বিএনপি নেতাকর্মীদের ধারণা, এ আসনটি বিগত যুগপৎ আন্দোলনে সঙ্গী কোন বিশেষ দলকে ছেড়ে দেয়া, অথবা বিএনপির কোন নেতাকেই দেয়া হতে পারে। বিশেষ দল বলতে অনেকে জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামকে মনে করেন। মনে করেন, ২০১৮ সালের মতো এ দলের বড় নেতা মুফতি মনির হোসেন কাসেমীকেই এ আসন ছেড়ে দেয়া হতে পারে।
তবে বিগত নির্বাচনের অভিজ্ঞতা থেকে অনেকেই কাসেমীকে নির্ভরযোগ্য নেতা মনে করেন না। কারণ সেবার নির্বাচনের দিন এ আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী শামীম ওসমানের ভয়ে কাসেমী ভোটের মাঠ ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন। বর্তমানে এ আসনটিতে মনোনয়ন পেতে গিয়াসউদ্দিন ছাড়াও হাফ ডজন বিএনপি নেতা তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। এর মধ্যে রয়েছেন, জেলা বিএনপি সাবেক সহ সভাপতি শিল্পপতি শাহ আলম, রিয়াদ মোহাম্মদ চৌধুরী, মাসুকুল ইসলাম রাজিব, যুবদল নেতা মশিউর রহমান রনি প্রমুখ।
রাজনৈতিক মহলের মতে, মনোনয়ন পেতে এ আসনে বিএনপির যারা তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের মধ্যে মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিনই সবচে’ যোগ্য। একটি জমি যে কৃষক আগেও চাষ করেছে তারপক্ষেই আবার চাষ করা সবচে’ সহজ। কারণ সে জানে, এ জমির কোন দিক উঁচু কোন দিক নীচু। কোথায় মাটিতে আদ্রতা বেশী, কোথায় মাটি একেবারে খড়িমাটির মতো খড়খড়ে। সে কৃষক জানে কোথায় কিভাবে লাঙ্গল চালাতে হবে, বৃষ্টির পানি বের করে দিতে কোথায় নালা কাটতে হবে। অভিজ্ঞ কৃষকের মতোই গিয়াসউদ্দিনেরও ফতুল্লার নির্বাচন ক্ষেত্রটি চেনা। ইতিপূর্বে ২০০১ সালে তিনি এ আসন থেকেই প্রথম এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। সে নির্বাচন ছিল অত্যন্ত চ্যালেজ্ঞিং। কারণ, আওয়ামী লীগের গডফাদার তক্মাধারী নেতা শামীম ওসমান এ আসনটিকে তার একান্ত আপনার মনে করতো।
সে চাইতো না এ আসনে তাকে চ্যালেজ্ঞ করে কেউ নির্বাচনে আসুক। সে সময় এ এলাকায় শামীম ওসমানের অন্ততঃ দশ হাজার অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীর একটি নিয়মিত বাহিনী ছিল। যারা এলাকায় নিয়মিত সসস্ত্র মহড়া দিতো। সেই বৈরী সময়ে বিএনপির কেউ নাগঞ্জ-৪ আসনে নির্বাচন করতে সাহস না পেলে প্রথমে জাতীয় পার্টির আদমজী শ্রমিক নেতা সফর আলী ভ্ইুয়াকে হায়ার করা হয়। এক পর্যায়ে সফর আলী ভুইয়াও পিঠটান দিলে কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় ষাধারন সম্পাদক মুহাম্মদ গিয়াউদ্দিনের হাতে ধানের শীষ তুলে দেয়া হয়। তারপরের কথা মানুষ এখনো ভুলতে পারেনি। গিয়াসউদ্দিন এলাকায় কোন কোন মিটিং, কোন সমাবেশ, এমনকি কারো সাথে হাত মেলাতেও পারেননি।
কারণ সবারই জানা ছিল, কেউ গিয়াসউদ্দিনের সঙ্গে কেউ কথা বললে বা হাত মেলালে সে রাতেই শামীম ওসমানের সসস্ত্র সন্ত্রাসীরা তার বাড়ী চড়াও হবে। সে সময় গিয়াসউদ্দিন সালামের ভঙ্গীতে হাত তুলে একাকী মহল্লাগুলোতে ঘুরে বেড়িয়েছেন এবং এলাবাসীর কাছে চোখের দৃষ্টিতে ভোটের আকুতি জানিয়েছেন। এলাকাবাসীরাও দরোজা জানালার আড়াল থেকে চোখের দৃষ্টিতে তাকে ভোট দেয়ার আশ্বাস জানিয়েছেন।
গিয়াসউদ্দিন সে সময় নির্বাক মানুষের চোখের ভাষা ঠিকই পড়তে পেরেছিলেন। তারপরের ঘটনা একেবারে রূপকথার মতো। সে নির্বাচনে শামীম ওসমান বিপুল ভোটে গিয়াসউদ্দিনের কাছে পরাজিত হন। সেটাই ছিল শামীম ওসমানের প্রথম পরাজয় এবং দলবল ও পরিবার পরিজন নিয়ে প্রথম দেশ ছেড়ে পলায়ন। অতীত বিচারে যে ক’জন এখন ফতুল্লায় বিএনপির মনোনয়ন প্রার্থী তাদের মধ্যে গিয়াসউদ্দিনই সবচে’ যোগ্য।


