মুক্তি মিলছে না আইভীর, নতুন মামলায় শ্যোন অ্যারেস্ট
লতিফ রানা
প্রকাশ: ১২ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
মুক্তি মিলছে না আইভীর, নতুন মামলায় শ্যোন অ্যারেস্ট
খুব শীঘ্রই মুক্তি পাচ্ছেন না নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন (নাসিক) এর সাবেক মেয়র এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ (কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষিত) নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি সেলিনা হায়াত আইভী। আইভীকে আরো দুই মামলায় শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো হয়েছে। এর মধ্যে একটি হত্যা মামলা, আরেকটি পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলা। এতে তার জামিন প্রক্রিয়া ফের আটকে গেছে।
গতকাল সোমবার (১০ নভেম্বর) সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও অপারেশন) তারেক আল মেহেদী এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘটনায় ফতুল্লা থানায় দায়েরকৃত একটি হত্যা মামলা এবং পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় সদর মডেল থানায় দায়েরকৃত মামলায় গতকাল রবিবার (৯ নভেম্বর) রাতে ডা. সেলিনা হায়াত আইভীকে শ্যোন আরেস্ট দেখানো হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ সদর ও ফতুল্লা মডেল থানায় দায়ের করা এ মামলা চারটিতে পুলিশের ‘শ্যোন অ্যারেস্ট’ দেখানোর আবেদন শুনানির জন্য আদালত আগামী ১৩ নভেম্বর তারিখ ধার্য করেছেন বলে জানিয়েছেন আদালত পুলিশের পরিদর্শক কাইউম খান। তিনি বলেন, রোববার বিকেলে সংশ্লিষ্ট আমলী আদালতে মামলা চারটিতে আইভীকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেন তদন্তকারী কর্মকর্তারা। পরে আদালত শুনানির জন্য তারিখ নির্ধারণ করেন।
এর আগে একইদিন দুপুরে হাইকোর্টের বিচারপতি এএসএম আবদুল মোবিন ও বিচারপতি মো.সগীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আইভীকে পাঁচটি মামলায় জামিন দেন। নারায়ণগঞ্জ শহরের নিজ বাসা থেকে গ্রেপ্তার হওয়ার পর গত ৬ মাস ধরে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগারে বন্দি সাবেক এ সিটি মেয়র।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, নতুন করে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করা মামলা চারটির তিনটি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সংঘটিত হত্যার ঘটনায় ফতুল্লা মডেল থানায় দায়ের করা। অপরটি আইভীকে গ্রেপ্তারে বাধা এবং পুলিশের উপর হামলার অভিযোগে সদর মডেল থানার পুলিশ বাদী হয়ে করা মামলা। চারটি মামলার একটিতেও আইভী এজাহারনামীয় আসামি নন। যদিও পুলিশ বলছে, তদন্তে মামলায় বর্ণিত অপরাধের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা পাওয়ায় গ্রেপ্তারের আবেদন জানানো হয়েছে।
সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নাছির আহমদ বলেন, মামলার এজাহারে আসামির তালিকায় আইভীর নাম না থাকলেও তদন্তের স্বার্থে তাকে গ্রেপ্তার দেখানোর প্রয়োজনীয়তা থেকে শ্যোন অ্যারেস্টের আবেদন করা হয়েছে। ফতুল্লা মডেল থানার ওসি আনোয়ার হোসেনও একই কথা বলেন।
২০২২ সালে টানা তৃতীয়বারের মতো নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। গত বছর গণঅভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার ১৯ আগস্ট সারাদেশে সিটি কর্পোরেশনের মেয়রদের অপসারণ করলে পদ হারান আইভীও। পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হত্যা ও সশস্ত্র হামলা চালিয়ে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে নারায়ণগঞ্জের একাধিক থানায় দায়ের করা অন্তত পাঁচটি মামলায় আসামি করা হয় আইভীকে। গত বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর আন্দোলনে শহীদ পোশাক শ্রমিক মিনারুল ইসলাম হত্যা মামলায় প্রথমবারের মতো আসামি করা হয়।
২০২৪ সালের ২০ জুলাই সন্ধ্যায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে আদমজী এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন পোশাক শ্রমিক মিনারুল ইসলাম। পরে নারায়ণগঞ্জ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। সরকার পতনের পর মিনারুলের ভাই নাজমুল হক শেখ হাসিনাসহ ১৩২ জনের নামে ও অজ্ঞাত আরও ৩০০ জনকে আসামি করে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা করেন। এ মামলার ১২ নম্বর আসামি সেলিনা হায়াৎ আইভী।
রাতভর অপেক্ষার পর গত ৯ মে সকালে নারায়ণগঞ্জ শহরের পশ্চিম দেওভোগের নিজ বাড়ি থেকে আইভীকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পরে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। পথে আইভীকে বহন করা পুলিশের গাড়িবহরে হামলার ঘটনাও ঘটে।


