জামাতার বেয়াদবির কারণে গ্রহণযোগ্যতা হারাচ্ছেন শ্বশুর
পরিচয় প্রকাশ গুপ্ত
প্রকাশ: ১২ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
জামাতার বেয়াদবির কারণে গ্রহণযোগ্যতা হারাচ্ছেন শ্বশুর
ফার্সী কবি, দার্শনিক ও সাধক শেখ সাদীকে চেনে না এমন মানুষ এ উপ মহাদেশে খুঁজে পাওয়া ভার। বিশেষ করে মুসলমানদের মধ্যে। সাদীর কবিতা অবলম্বনে সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের উপদেশমূলক সেই কবিতাটি (কুকুর মানুষকে কামড়ালেও কুকুরকে পাল্টা কামড়ানো মানুষের ধর্ম নয়) অনেকেই বাল্যাবস্থায় এ কবিতাটি পড়েছেন। তার ‘বালাগাল উলায়ে কামালেহী, কাশাবাশ দুঁজায়ে জামালেহী ... সাল্লি ওলাই ওসালিহী’ কবিতাটি মুসলমানরা ঘরে ঘরে দরুদজ্ঞানে চর্চা করে।
ফার্সীতে সাদীর একটি বয়েৎ (কবিতা পংক্তি আছে, ‘লোকমান হোসেন পুরশি দান, আদব আজ কুজামুক্তি, আজ বেয়াদবা। অর্থ, আপনি এত আদব-কায়দা কার থেকে শিখেছেন, বেয়াদবের কাছ থেকে বলে সাদী উত্তর দিয়েছেন। অর্থাৎ বেয়াদবের কাছ থেকেও অনেক শিক্ষনীয় আছে।
আজকের লেখায় উপরোক্ত বয়েতের অবতারণার কারণ, নারায়ণগঞ্জ-৩ (সিদ্ধিরগঞ্জ-সোনারগাঁ) আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রাপ্ত আজহারুল ইসলাম মান্নানের মেয়ের জামাতার সাম্প্রতিক চরম বেআদবী।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, গত ৩ নভেম্বর কেন্দ্রের প্রাথমিক ঘোষণায় মান্নানকে সিদ্ধিরগঞ্জ-সোনারগাঁ আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসাবে প্রাথমিক ঘোষণা করা হয়। এর একদিন পর গত ৫ নভেম্বর সনমান্দি ইউনিয়নের অলিপুরা বাব্জারে এক পথসভায় মান্নানের মেয়ের জামাই তামিম বিল্লাহ যারা ইতিপূর্বে বিএনপির অন্য মনোনয়ন প্রার্থীদের হয়ে কাজ করেছেন তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, সাবধান, হুশিয়ার, এটাই লাষ্ট ওয়ার্নিং। এখন থেকে আপনারা মান্নানের পক্ষে কাজ করবেন। তাকে ধানের শীষ দেয়া হয়েছে। এর ব্যত্যয় ঘটলে পরিণতি ভয়াবহ হবে। এরপর আর কোন ওয়ার্নিং দেয়া হবে না। সরাসরি এ্যাকশনে চলে যাওয়া হবে। উল্লেখ্য, মাসুম বিল্লাহ সনমান্দি ইউনিয়ন বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক।
এদিকে, মাসুম বিল্লার এ বেয়াদবি ও ঊদ্ধ্যত্যপূর্ণ বক্তব্যের পর সোনারগাঁয়ে শ্বশুর-জামাতা দু’জনকে নিয়েই দলীয় নেতাকর্মী ও ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে। সনমান্দি ইউনিয়ন বিএনপি সাবেক সভাপতি ও উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক যথাক্রমে রমযান আলী সরকার ও আশরাফ মোল্লা এ প্রসঙ্গে বলেন, এ আসরে ৪ বারের এমপি বিএনপি নেতা অধ্যাপক রেজাউল করিম ও ২০০১ সালে শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে জয়ী মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিনের পক্ষে আমরা জনমত গঠনে কাজ করেছি। শেষ পর্যন্ত তারা মনোনয়ন পায়নি। এ কারণে আমাদের কোন অপরাধবোধ নেই।
কারণ আমরা সাচ্চা বিএনপি কর্মী এবং ধানের শীষেই আমরা ভোট দেব। মান্নানের কাছে আমরা মাথা বিক্রি করিনি এবং তা করবোও না। মাসুম বিল্লার হুমকিকে আমরা থোরাই কেয়ার করি। এ ব্যাপারে গতকাল বৈদ্দেরবাজারের চায়ের দোকানে আলাপকালে দোকানের খরিদ্দার সাধারণ ভোটাররা জানান, মান্নান এবং তার মেয়ের জামাই মাসুম বিল্লাহ দু’জনই লেখাপড়ায় সাক্ষাৎ বিদ্যাসাগর। প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষ্ার কোন কাগজ তাদের নেই। এজন্যই আদব-কায়দা ও সৌজন্য ভদ্রতার ব্যাপারে তারা এমন উদাসীন। তবে, সোনারগাঁ একটি ঐতিহ্যবাহী জনপদ। মাসুম বিল্লাহ ত্ার বেয়াদবির জন্য অলিপুরা বাজারে আবার সমাবেশ করে ক্ষমা না চাইলে এ জনপদের মানুষ শ্বশুর-জামাই দু’জনের দিক থেকেই মুখ ফিরিয়ে নেবে।


