না.গঞ্জ-৪ আসন নিয়ে বাড়ছে ভাবনা
গত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তৎকালীন ফ্যাসিস্ট রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ (বর্তমানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ) নারায়ণগঞ্জের ৫টি আসনের মধ্যে ৪টি আসনের দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করলেও ঘোষণা করেনি নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের প্রার্থীর নাম। তখন এই আসনটি কার জন্য ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল তা নারায়ণগঞ্জবাসী ঠিকই বুঝতে পেরেছিল। ঠিকই একইভাবে আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির পক্ষ হতে তাদের দলীয় প্রার্থী হিসেবে নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি আসনের মধ্যে চারটি আসনের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হলেও ঘোষণা করা হয়নি নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের দলীয় প্রার্থীর নাম।
যার ফলে এই আসন নিয়ে হিসেব নিকেশ কষার প্রতীক্ষার সময় আরও বেড়ে গেলো। স্থানীয় বিএনপির নেতা, কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে উকি দিচ্ছে নানা রকমের প্রশ্ন। এই আসনটি কি শরীক দলকে উদ্দেশ্য করে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে নাকি স্থানীয় কোন বিশেষ প্রভাবশালী নেতাকে সুযোগ করে দেওয়ার জন্য ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে নাকি দলীয় প্রার্থীর বিষয়ে কোন নতুন চমক আসছে সে বিষয় নিয়েই চলছে আলাপ আলোচনা ও বিশ্লেষণ।
জেলা শহর সংলগ্ন ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকা নিয়ে গঠিত এই আসনটি শিল্প ও বাণিজ্য অঞ্চল হওয়ায় বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি আসন। শ্রমিক অধ্যুষিত এ আসনটি দীর্ঘদিন যাবতই ছিল ওসমান পরিবারের প্রভাবশালী ও বিতর্কিত নেতা নারায়ণগঞ্জের গডফাদারখ্যাত শামীম ওসমানের দখলে। তার আঙুলের ইশারায়ই চলতো এখানকার প্রশাসন ও রাজনীতি। তবে গত বছরের ৫ আগস্টের জুলাই অভ্যুত্থানে শামীম ওসমান গং পালিয়ে গেলে এখানে বিএনপি, জামায়াত, হেফাজতসহ বিভিন্ন ইসলামী দলগুলোর রাজনীতি অনেকটাই সচল হয়ে উঠেছে।
এরই মধ্যে এই আসন থেকে যারা বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন জেলা বিএনপি আহ্বায়ক মামুন মাহমুদ, সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন, যুগ্ম আহ্বায়ক মাশুকুল ইসলাম রাজীব, ফতুল্লা থানা বিএনপির সভাপতি শহীদুল ইসলাম টিটু, সদস্য সচিব আব্দুল বারী ভূঁইয়া, সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম, জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনির নাম। অন্যান্য দলের প্রার্থীর দৌড়ে আছেন, জামায়াতে ইসলামীর নারায়ণগঞ্জ মহানগর শাখার আমির মাওলানা মো. আবদুল জব্বার, ইসলামী আন্দোলনের মুফতি ইসমাঈল সিরাজী আল মাদানী, খেলাফত মজলিসের ইলিয়াস আহমদ, আছে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি)’র নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার প্রধান সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট আল আমিনের নাম।
তবে এই আসনে এবার সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আছেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মুফতি মনির হোসাইন কাসেমীর নাম। অনেকেরই ধারণা এই আসনটি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো এবারও বিএনপির পক্ষ হতে মনির হোসেন কাশেমীর জন্য ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে বিষয়টির সাথে আবার একমত হতে পারছেন না অনেকে। তাদের যুক্তি, ২০১৮ সালে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মনোনয়নে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন মনির হোসেন কাশেমী।
কিন্তু এবার যদি মনির হোসেন কাসেমী এই আসন থেকে বিএনপির সাথে জোটবদ্ধ নির্বাচন করেন তাতেও বেশি একটা সুবিধে করতে পারবেন না। কারণ এবার নির্বাচনের নতুন নিয়মানুসারে তিনি ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করতে পারবেন না। তাকে নিজ দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করতে হবে। আর তেমনটা হলে এই আসন থেকে বিএনপির একাধিক নেতার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিযোগিতা করার সম্ভাবনা আছে।
স্থানীয় সূত্রমতে এই আসনে এবারের বিএনপির দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সবাই শক্তিশালী। তবে এর মধ্যে বেশ কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি আছে যারা এই এলাকায় দীর্ঘদিন যাবত রাজনীতিসহ গণসংযোগের মাধ্যমে ব্যক্তিগতভাবে খুব প্রভাবশালী হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন। এর মধ্যে অধ্যাপক মামুন মাহমুদ দীর্ঘদিন যাবত এখানে রাজনীতি নিয়ে কাজ করার কারণে একটি সমর্থক বলয় তৈরি করতে পেরেছেন।
যার ফলে, জেলা বিএনপির আহ্বায়কের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদটি এখন তার দখলে। গিয়াসউদ্দিন ২০০১ সালের ৭ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জের গডফাদারখ্যাত শামীম ওসমানকে হারিয়ে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ দিয়েছেন। এরই মধ্যে নারায়ণগঞ্জের গিয়াস উদ্দিনেরও একটি বড় জনসমর্থন আছে। অন্যদিকে নতুন করে আলোচনায় আছেন নারায়ণগঞ্জ বিএনপির এক সময়ের প্রভাবশালী নেতা শাহআলম। একদিকে রাজনীতির পরিচিত মুখ অন্যদিকে প্রভাবশালী শিল্পপতি, সবকিছু মিলিয়ে এবারের নির্বাচনেও আলোচনায় আছেন শাহআলম।
সবকিছু ছাপিয়ে এ মুহূর্তে নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক অঙ্গনে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন নিয়ে চলছে নানান প্রশ্ন, বিশ্লেষণ। বিএনপি কাকে মনোনয়ন দিবে, ছাড় দিবে কি না ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়। এরমধ্যে এই আসনটিতে বিএনপি দলীয় মনোনয়ন না দিলে দলের একাধিক নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেয়ার সম্ভাবনা আছে বলে রাজনৈতিক বোদ্ধাদের ধারণা।


