নতুন সীমানা-প্রার্থী চাপ তৈরি করতে পারে
যুগের চিন্তা রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
নতুন সীমানা-প্রার্থী চাপ তৈরি করতে পারে
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গত ৩ অক্টোবর গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জাতীয় সংসদের ৩০০টি আসনের মধ্যে ২৩৭ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থীর প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করেন। যেখানে নারায়ণগঞ্জের ৫টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ৪টি আসনের বিএনপির দলীয় এমপি প্রার্থীদের নামের তালিকা প্রকাশ করেন।
যেখানে নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনে মুস্তাফিজুর রহমান ভূইয়া দিপু, নারায়ণগঞ্জ-২ (আড়াইহাজার) আসনে নজরুল ইসলাম আজাদ, নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁও ও সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনে আজহারুল ইসলাম মান্নান এবং নারায়ণগঞ্জ-৫ (শহর ও বন্দর) আসনে মাসুদুজ্জামান মাসুদকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে ঘোষণা করা হয়নি নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা) আসনের প্রার্থীর নাম।
আসনটি জোটের জন্য ছেড়ে দেওয়া হতে পারে বলে রাজনৈতিক বোদ্ধাদের অভিমত। তবে এর মধ্যে বেশ কয়েকটি আসনেই বিএনপির মনোনীত কিংবা সমর্থিত প্রার্থী চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে। এখন কোন প্রার্থীকে কার সাথে লড়াই করতে হতে পারে, শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী কে, কিংবা কোন এলাকায় কতজন এবং কতটা শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন, এসব বিষয় নিয়ে চলছে চুল চেরা বিশ্লেষণ।
স্থানীয় বিএনপির বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, এরই মধ্যে ঘোষিত চারটি আসনেই বিএনপির নতুন মুখের নাম এসেছে। অর্থাৎ এই আসনগুলো থেকে এসব প্রার্থীরা এর আগে কখনও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেননি। অন্যদিকে ঘোষিত চারটি আসনের মধ্যে তিনটি আসনেই স্বতন্ত্র প্রার্থী দাঁড়ানোর সম্ভাবনা আছে। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জ-২, নারায়ণগঞ্জ-৩ ও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থীর অংশ নেওয়ার সম্ভাবনা আছে তবে নারায়ণগঞ্জ-৩ ও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের প্রার্থীকে প্রচুর চাপে পড়তে হতে পারে বলে দলীয় নেতা কর্মী ও সমর্থকদের ধারণা।
তাদের মতে এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জ-২ আসনে নজরুল ইসলাম আজাদকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হলেও শেষ পর্যন্ত স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন এই আসন থেকে বিএনপির সাবেক তিনবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য আতাউর রহমান খান আঙ্গুর। সাবেক এমপি হিসেবে স্থানীয়ভাবে আতাউর রহমানের আঙ্গুরের একটি জন সমর্থন আছে। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি পড়ার সম্ভাবনা আছে নারায়ণগঞ্জ-৩ ও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের বিএনপি প্রার্থীদের।
রাজনৈতিক বোদ্ধাদের মতে, নারায়ণগঞ্জ-৩ আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছেন সোনারগাঁও উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নানকে। এই আসনের নতুন ঘোষিত সীমানা অনুযায়ী সোনারগায়ের সাথে যুক্ত হয়েছে সিদ্ধিরগঞ্জ অঞ্চল। তাইতো চিন্তার ভাঁজ পড়েছে মান্নানের কপালে। কারণ এই আসনের বিএনপির আরও একজন শক্তিশালী মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন।
তিনি হলেন ২০০১ সালে নারায়ণগঞ্জ-৪ (পূর্বের সীমনায়) থেকে নারায়ণগঞ্জের গডফাদার খ্যাত শক্তিশালী প্রার্থী একেএম শামীম ওসমানকে হারিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া আলহাজ্ব গিয়াস উদ্দিন। যদিও কেউ কেউ আবার সাবেক প্রতিমন্ত্রী রেজাউল করিমের অংশ নেওয়ার সম্ভাবনার বিষয়টিকেও সামনে আনতে চাইছেন। তবে আজহারুল ইসলাম মান্নানের চিন্তা এখন গিয়াস উদ্দিনকে নিয়ে।
কেননা চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়ে গিয়াসউদ্দিন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে মান্নানের জন্য জয় পাওয়াটা কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে বলে তাদের অভিমত। এছাড়া বয়সের কারণে সাবেক প্রতিমন্ত্রী রেজাউল করিমের এই নির্বাচনে অংশগ্রহণের শেষ সুযোগ বলে মনে করা হচ্ছে। রেজাউল করিমের সোনারনগাঁয়ে এখনো ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে।
একই চ্যালেঞ্জ থাকছে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের প্রার্থী মাসুদুজ্জামান মাসুদের বেলাতেও। এই আসনে তার প্রতিপক্ষ হিসেবে দলীয় কোন স্বতন্ত্র প্রার্থী অংশগ্রহণ করার সম্ভাবনা নেই, আবার অনেকে বলছেন আছে। তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত বিষয়টি হয়তো সামনে আসবে না। তবে মাসুদুজ্জামান মাসুদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে বন্দর এলাকা থেকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক তিনবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান এবং গত উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে বন্দর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেন।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে, এই দুই প্রার্থীই টাকার কুমির। অন্যদিকে গত নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বন্দর উপজেলা নির্বাচনে জয়ী হয়ে মনোবলের দিকে অনেকটাই চাঙ্গা হয়ে আছেন। তাছাড়া শহর-বন্দরের এই আসনে শহরের তুলনায় বন্দর এলাকায় ভোটার সংখ্যা বেশি। তাই মাসুদ ও মাকসুদ উভয়েরই এখন নজর বন্দর এলাকার দিকে।
অন্যদিকে কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের কর্মী ও সমর্থকগণের বেশরিভাগই বিএনপি বিরোধী হওয়ায় মাকসুদ আহমেদ সেই সুযোগটি পেতে পারেন বলে মনে করা হয়। তাই আসন্ন নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে মাসুদুজ্জামানের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারে মাকসুদ হোসেন। তবে মাকসুদ ও তার পরিবারের বিগত দিনের অপকর্মের পাহাড় আর নানান বিতর্ক মাকসুদকে যে কোন নির্বাচনে কোনঠাসা করার জন্য যথেষ্ঠ। একসময় কুখ্যাত ওসমান পরিবারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে কুখ্যাতি রয়েছে মাকসুদের।


