টেক্কা মারতে পারেন মোহাম্মদ আলী
কেউ বলেন তাকে কিং মেকার আবার কেউ বলেন ফতুল্লার মুরুব্বী তিনি। সব কিছু মিলিয়ে নাারয়ণগঞ্জের রহস্যময় ব্যক্তিও তাকে বলা হয়। আর এই রহস্যময় ব্যক্তিটিই হলেন বিএনপির সাবেক সাংসদ মোহাম্মদ আলী। এক সময় হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের ছোটো ভাই হিসেবে নাারয়ণগঞ্জে পরিচিত ছিলেন তিনি। এরপরে বিএনপিতে যোগ দিয়ে ১৯৯৬ সালে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন। যদিও সেই সংসদ বেশিদিন স্থায়ী হয়নি।
বিভিন্ন সময়ে তাকে নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হলেও তিনি এগিয়ে যাচ্ছেন তার মতো করেই। গতকাল বিএনপি সারা দেশে ২৩৮টি আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করেছে। তবে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে বিএনপি কোনো প্রার্থীতা দেননি। ধারণা করা হচ্ছে শরীক দলের জন্য এই আসনটি ছেড়ে দিয়েছে দলটি। মুফতি মনির হোসেন কাশেমী হবেন জোটের প্রার্থী। সেই হিসেবে এই আসনটিতে ধানের শীষ প্রতীক থাকছে না।
আর এতেই জেনো নাারয়ণগঞ্জ-৪ আসনে বেশ কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর জন্য সোনায় সোহাগা হবে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। গুঞ্জন উঠেছে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে মোহাম্মদ আলী এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন। গত কয়েকদিন আগে এনিয়ে মোহাম্মদ আলী শিবিরে আলাপ আলোচনাও হয়েছে বিস্তর। যদি বিএনপি সরাসরি ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী না দেন তবে এ আসনটিতে অনেকের সাথে মোহাম্মদ আলীই হচ্ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী। এমন আলোচনাই গতকাল বিকেল থেকে ফতুল্লা অঞ্চলে শুরু হয়েছে। অপরদিকে মোহাম্মদ আলী বলয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে “ মোহাম্মদ আলীর জন্য শুভ কামনা ’ বার্তাও পোস্ট করতে দেখা গেছে।
সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী ফেব্রয়ারী মাসেই অনুর্ষ্ঠিত হবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ডিসেম্বরের প্রথমেই তফসিল ঘোষণা করবেন নির্বাচন কমিশন। সেভাবেই এগিয়ে যাচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। গতকাল বিকেলে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ২৩৮টি আসনে বিএনপির সম্ভ্যাব্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তার দেয়া ঘোষণা মতে, নারায়ণগঞ্জের ৫টি আসনের মধ্যে ৪টিতে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেন ফখরুল। বাদ থেকে যায় নারায়ণগঞ্জ-৪। এই আসনে বিএনপির শরীক দল জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামকে দেয়ার কথা অনেক আগে থেকেই শোনা যাচ্ছিলো। সেই হিসেবে মনির হোসেন কাশেমী বিভিন্ন সভা সমাবেশও করে যাচ্ছিলেন। অবশেষে কাশেমী ও তার বলয়ে গতকাল আনন্দমূখর পরিবেশ বিরাজ করছে। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী যদি মোহাম্মদ আলী বা পরিচিত অন্য কোনো মুখ হয়,তাহলে তা জোটের প্রার্থী কাশেমীর জন্য হবে হিতে বীপরীত এমনটিই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
তথ্যমতে, গত কয়েকদিন আগে মোহাম্মদ আলী তার বলয়ের লোকজনদের নিয়ে একটি গোপন বৈঠক করেছেন। যদি বিএনপি নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে সরাসরি দলীয় মনোনয়ন না দেয় তাহলে অন্যদের সাথে মোহাম্মদ আলীই হবেন স্বতন্ত্র প্রার্থী। তবে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন থেকে দলীয় প্রতীকের যদি মনোনয়ন না দিয়ে প্রার্থীকে শরীক দলের প্রতীকেই নির্বাচন করতে হয়, তাহলে সুপার ফ্লপ করতে পারেন জোটের প্রার্থী এমনটাই মনে করছেন অনেকে। ২০১৮ সালে মুফতি মনির হোসেন কাশেমী জোটের প্রার্থী হিসেবে আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী নেতা একেএম শামীম ওসমানের সাথে প্রতীদ্বন্ধীতা করেছিলেন।
মনিরের তেমন পরিচিতি ছিলো না। শুধুমাত্র বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী হওয়ার কারনে প্রায় ৮০ হাজার ভোট তিনি পেয়েছিলেন। এবার মনির কাশেমী জোটের প্রার্থী। সেই হিসেবে তাঁর প্রতীক হবে খেজুর গাছ। এই প্রতীক হওয়ার কারনে ভোটাররা মূলত ব্যাক্তিকেই ভোট দেবে। মনির কাশেমীর তেমন পরিচিতি নেই বল্লেই চলে। তবে তিনি বিগত দিনে সভা সমাবেশে ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে নিজেকে তুলে ধরেছিলেন।
গত ২৩ অক্টোবর উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে বড় পরিবর্তন এনে আরপিও সংশোধনে নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় উপদেষ্টা পরিষদ। এতে জোটভুক্ত হলেও প্রার্থীকে নিজ নিজ দলের প্রতীকে ভোট করার বিধান যুক্ত করা হয়। ভোটের সময় অনেকে জোটভুক্ত হলে জনপ্রিয় বা বড় দলের মার্কায় ভোট করতেন। সেই সুযোগ বন্ধ করা হয় আরপিও (২০ ধারা) সংশোধনের মাধ্যমে। সরকার গঠিত নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশ আমলে নিয়ে এই সুযোগ বন্ধের প্রস্তাব করা হয়েছিল। এরই ধারাবাহিকতায় নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে পাঠানো প্রস্তাবে এই সুপারিশ অপরিবর্তিত রাখা হয়।
সরকারের এমন সিদ্ধান্ত যদি বহাল থাকে তাহলে দেশের বিভিন্ন আসনের মতো নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ঝুঁকি হবে বড় দলের শরীক প্রার্থীর জন্যে। কারন বেশিরভাগ ভোটাররা দলীয় প্রতীককেই ভোট কেন্দ্রে বেশি প্রাধান্য দেন। নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে (ফতুল্লা) যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন তাদের সাথে প্রতিদ্বন্ধী প্রতীক ধানের শীষ না থাকলে,এটা অনেকটা স্বতন্ত্র প্রার্থীর জন্য আশির্বাদের মতোই হবে বলেও মন্তব্য করছেন অনেকে। সেই হিসেবে ব্যক্তি মোহাম্মদ আলীর যে পরিচিতি রয়েছে তাতে জোটের প্রার্থী কাশেমী ধানের শীষ প্রতীক না পেলে খেজুর গাছে কতোটা সুবিধা করতে পারবেন এনিয়েও চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে সর্বত্র।


