Logo
Logo
×

রাজনীতি

এড. তৈমুর আলমের বহুরূপ

Icon

যৃুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশ: ০২ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

এড. তৈমুর আলমের বহুরূপ

এড. তৈমুর আলমের বহুরূপ

Swapno

নারায়ণগঞ্জের র্জানীতিতে অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার এক পরিচিত নাম। তবে এক কালে বিএনপিতে তার যেমন কদর ছিল আবার দল থেকে বহিস্কার অন্য দলে যাওয়ায় তেমনি সমালোচনা রয়েছে এই নেতার নামে। কিন্তু নানা আলোচনা সমালোচনার মাঝে তিনি রাজনীতি থেকে ছিটকে যান। তবে রাজনীতিতে একটি কথা রয়েছে আর তা হলো রাজনীতিতে শেষ বলে কিছু নেই। তার বেলায় যেন এই কথাটি বাস্তবে মিলে গেছে। তিনি কখনো বিএনপি কখনো তৃনমুল বিএনপি আবার কখনো দল থেকে বহিস্কার হয়ে সময় অতিবাহিত হয়েছেন।  সম্প্রতি মিডিয়ায় তৃণমুল বিএনপির মহাসচিব এড. তৈমুর আলম খন্দকার জানান, তিনি তো বিএনপি ছেড়ে যেতে যাননি। তাকে বিএনপি ছেড়ে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। বিএনপির বহিস্কৃত এই নেতাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়া হয় নাই। আর এতে করে তিনি বিএনপির প্রয়াত নেতা নাজমুল হুদার প্রতিষ্ঠিত দল ‘তৃণমূল বিএনপি’তে ২০২৩ সনের ১৯ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দিলেন তৈমুর আলম খন্দকার।  তখন তিনি দলটির মহাসচিব নহিসেবে দায়িত্ব গ্রহন করেন।

এর আগে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জেলা বিএনপির সভাপতি থাকা সময়ে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে মেয়র নির্বাচনে অংশ নেন তৈমুর আলম খন্দকার। ওই নির্বাচনে তিনি ৯২ হাজার ৫৬২ ভোট পেলেও  তৎকালিন সময়ের আওয়ামী লীগের নির্বাচিত মেয়র আইভীর জয়ের কাছেও যেতে পারেনি। সিটি নির্বাচনে অংশ গ্রহন দল থেকে বহিস্কার হতে হয়েছে। নগরবাসী অনেকেই বলেন, অতি লোভের কারণেই তৈমূরের রাজনীতিতে বিএনপি থেকে এ বিদায় ঘণ্টা বাজে।

তথ্যমতে, ২০২২ সনে ১৮ জানুয়ারি দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে তৈমূর আলম খন্দকার ও এবং তার প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট ও মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামালকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এমনকি তাদের প্রাথমিক সদস্যপদ বাতিল করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন রিজভী। এর আগে, ভোট বয়কটের দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক পদ ও দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা পদ থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার বলেন, সিটি নির্বাচনের সময় বিএনপির মহাসচিব নিজে মিডিয়াতে বলেছেন স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করা যাবে। এজন্য আমি সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলাম। তিনি নিজে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীদের আমার পক্ষে কাজ করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছিলেন। কিন্তু এই নির্বাচনে অংশ গ্রহন করেই তার কপাল পুড়ে। সেই থেকে দীর্ঘ দিন পদবিহীন থাকায় এবং বিএনপিতে তাকে না নেওয়ায় তিনি প্রয়াত নাজমুল হুদার প্রতিষ্ঠিত দল তৃনমুল বিএনপিতে চলে যান।  সেখানে চলে যাওয়ার পড়ে ২০২৪ সনের ডামি নির্বাচনে তিনি নারায়ণগঞ্জ-১ আসন থেকে এমপি নির্বাচন করে পরাজীত হন। এই ডামি নির্বাচনে তিনি বিএনপির অনেক সিনিয়র নেতাকে তার দলে ভীড়ানোর জন্য নানা ভাবে তৎপরতা চালিয়ে ব্যর্থ হন। এমনকি ডামি নির্বাচনে তার দল সবচেয়ে বড় বিরোধী দল হবে বলে মন্তব্য করেন। এখন তিনি সেই দল ছেড়ে আবারও বিএনপিতে ফিরে আসতে চান বলে জানান তার সমর্থকরা। আর এজন্য তিনি তৃনমুল বিএনপি ত্যাগ করে এখন পড়াশোনায় মনোযোগি হয়ে রয়েছেন।

তৃণমূল প্রসঙ্গে তৈমূর আলম খন্দকার বলেন, ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা আমার সিনিয়র। তিনি নিবন্ধন পাওয়ার তিনদিন পরই মারা গেছেন। আমি উনার কাছে কথা রক্ষা করতে গিয়ে আটকে গেছি। কিন্তু এখন আমি সাংগঠনিক দায়িত্ব থেকে বিরত। আমি জানিয়ে দিয়েছি ওই দল করি না করবো না। ওই দলের সাথে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এখন আমি পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত। বিভিন্ন দেশের আদালতে ঘুরছি। আমি জাতীয়তাবাদী আদর্শে বিশ্বাসী। বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে মানি।

২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে আনুষ্ঠানিকভাবে তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দেন তৈমূর আলম খন্দকার। যে বিএনপি দিয়ে রাজনীতি করতে গিয়ে সমাদৃত তৈমূর তিনিই নিজ হাতে ভাঙার চেষ্টা করেন জিয়াউর রহমানের হাতে গড়া দলটিকে। বিএনপির সাবেক এমপিদের লোভ দেখিয়ে তৃণমূলে ভেড়ানোর জন্য প্রাণান্তর চেষ্টা করেন ২০২৪ সনের ডামি নির্বাচনের আগে। যে খালেদা জিয়ার বদৌলতে তৈমূর বার বার জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক থেকে সভাপতি, মহানগর কমিটির সভাপতি, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এমনকি আগে বিআরটিসিরি চেয়ারম্যান, ডেপুটি এটর্নি জেনারেলের মত রাষ্ট্রীয় অতি গুরুত্বপূর্ণ পদের চেয়ারে বসেছিলেন সেসব ইতিহাসকে মীরজাফরের মত বিএনপির সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে স্বৈরাচার হাসিনার দোসর হওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু বেঈমানীর ফলাফল যে নির্মম হয় সেটা ২০২৪ এর ৭ জানুয়ারীর নির্বাচনে রূপগঞ্জবাসী প্রমাণ করে দেয়।

যে রূপগঞ্জের সাড়ে ৪শ বেকারকে বিআরটিসিতে বিনা টাকায় চাকরিয়ে দিয়ে ওয়ান এলেভেনের পর দুর্নীতি মামলায় কারাভোগ করতে হয়েছিল, যে নাওরাতে বিদ্যুতের সংযোগ দিয়ে গ্রামকে আলোচিত করেছিল সেই জনপদের মানুষ কার্যত ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করেন একজন বেঈমান তৈমূরকে। নির্বাচন জুড়ে আলোচনায় থাকা এই নেতা শেষতক জামানত হারিয়ে পরাজয় বরণ করেছেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন তৈমুর আলমের লোভের কারণে তাকে এখন ভাসমান হয়ে ঘুরতে হচ্ছে। তিনি যখন যেখানে সুবিধা পেয়েছে তখন সেখানে আশ্রয় নিয়েছে। বিএনপির এখন কিংবা সামনে সময়টা ভালো ভেবে তিনি এখন বিএনপিতে আসতে তৃণনুল বিএনপির সাথে তার সম্পৃক্ত নেই বলে মন্তব্য করেছে। কিন্তু বিএনপি যে তাকে গ্রহন করবে তার নিশ্চয়তা কতটুকু ?তাছাড়া ২০২৪ সনের ৫ আগষ্টের পরে আওয়ামী লীগ পালিয়ে যাওয়ার পরে তাকে বেইমান হিসেবে আখ্যায়িত করেছে নারায়ণগঞ্জ বিএনপি নেতাকর্মীরা। আবার অনেকে তাকে সুবিধাবাদী বহুরূপি বলেও আখ্যায়িত করেন। কেননা তিনি নানা রূপ ধারণ করে বিভিন্ন দল থেকে সুবিধা নিয়েছেন।

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন