হ্যাঁ-না ভোটে বিভক্ত রাজনৈতিক দলগুলো
যৃুগের চিন্তা রিপোর্ট
প্রকাশ: ০২ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
হ্যাঁ-না ভোটে বিভক্ত রাজনৈতিক দলগুলো
জুলাই জাতীয় সনদ সম্পর্কে গণভোট কবে হবে, তা নিয়ে পাল্টাপাল্টি অবস্থানে দেশের প্রধান কয়েকটি রাজনৈতিক দলগুলো। ইতিমধ্যে জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলন নির্বাচনের আগে নভেম্বরেই চাইছেন গণভোট অন্যদিকে বিএনপি জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে আয়োজন করার বিষয়ে অনড়। অন্যদিকে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সুনির্দিষ্ট সময় না বললেও সংসদ নির্বাচনের আগেই গণভোট আয়োজনের দাবি জানিয়েছে। সারাদেশের ন্যায় নারায়ণগঞ্জে গণভোট নিয়ে নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এদিকে গণভোটকে ঘিরে শঙ্কা লক্ষ্য করা যাচ্ছে আগামী সাংসদ নির্বাচনে। এদিকে বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে হ্যাঁ ভোট, না ভোট নিয়ে চলছে হৈ চৈ। বর্তমানে বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল নিজেদের ফেসবুকে প্রোফাইল না দিয়ে রেখেছেন। একই সাথে শিবিরের কিছু নেতাকর্মীরা হ্যাঁ ভোট চাইছেন। সব মিলিয়ে বর্তমানে রাজনীতি মাঠ হ-য-ব-র-ল প্রায়।
সূত্র বলছে, অন্তবর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পুনর্বহাল এবং জুলাই সনদের গণভোট-এই তিনটি প্রশ্নে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে বিভাজন দেখা দিয়েছে। সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে শুরু করে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান এখন স্পষ্টতই ভিন্ন। কেউ নির্বাচন চায় দ্রুত, কেউ আবার গণভোট ছাড়া ভোটে যেতে নারাজ। এদিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস গত বুধবার যমুনায় উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে বলেছেন, ‘আসন্ন নির্বাচন বানচাল করার জন্য দেশের ভেতর ও বাইরে থেকে বড় শক্তি কাজ করবে। এই নির্বাচন হবে চ্যালেঞ্জিং।’ তার এই মন্তব্য রাজনীতিতে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে-এই ‘বড় শক্তি’ কারা, এবং তারা ঠিক কীভাবে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে? অনন্তবর্তীকালীন সরকারের এমন বক্তব্যে বর্তমানে রাজনীতির মাঠে একটাই প্রশ্ন গণভোট না হলে কি ফেব্রুয়ারির নির্বাচন হবে? না কি নতুন করে কোনো আপস বা সমঝোতার পথ খোঁজা হবে? তত্ত্বাবধায়ক সরকার, গণভোট ও অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা-এই তিন ইস্যুই নির্ধারণ করে দেবে, আগামী নির্বাচন কতটা নিরবচ্ছিন্নভাবে অনুষ্ঠিত হতে পারে। বর্তমানে সারাদেশের ন্যায় নারায়ণগঞ্জে বিএনপি ও ইসলামীদগুলো সকলেই গণভোটকে নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছেন।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ বলেন, নির্বাচনকে পিছিয়ে দিতে দেশে আবারো ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। সেই ষড়যন্ত্রের আরেক চিত্রই হচ্ছে এই গণভোট। আমরা জাতীয় সাংসদ নির্বাচনের আগে কোন প্রকারের গণভোট চাই না। নির্বাচনের বাকি আছে আর মাত্র কিছুদিন এর পর বা সেই নির্বাচনের দিনই যদি এই গণভোট পরিচালনা হয় তাহলে আমাদের কোন আপত্তি নেই। কিন্তু নির্বাচনের পূর্বে আমরা ভোটের নামে কোন বিশৃঙ্খলা চাই না তা আমরা মেনে নিবো না।
মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, বর্তমানে আমাদের মূল ফোকাস হচ্ছে জাতীয় সাংসদ নির্বাচন। কিন্ত কিছু ইসলামী রাজনৈতিক দলের ব্যাক্তিরা নভেম্বরেই গণভোট চাইছেন। তাদের কথা রেখে আমরা বলেছি যদি এই গণভোট করা হয় তাহলে জাতীয় নির্বাচনের দিন হলেই ভালো হয়। এদিকে জাতীয় সাংসদ নির্বাচন এগিয়ে এসেছে ফেব্রুয়ারী মাসের ৫ থেকে ১২ তারিখের যে কোন সময় হতে পারে। এর আগে এই অল্প সময়ে আরেকটি নির্বাচন করা মানেই হলো দেশে অরাজকতা পরিস্থিতি সৃষ্টি করা একইভাবে দেশের জনগণ, প্রশাসন, নির্বাচন কমিশনারের দৃষ্টি অন্যদিকে অতিবাহিত করা।
তিনি বলেন, বর্তমানে কিছু রাজনৈতিক দল নির্বাচনকে দীর্ঘআয়ু করার জন্য এই পরিকল্পনা করছেন। তা ছাড়া ও আমরা গণভোটের বিপক্ষে না। আমরা চাই এই গণভোট জাতীয় নির্বাচনের সাথেই হোক আমরা সেই আপত্তি জানাচ্ছি। এর বাহিরে ও বর্তমানে কিন্তু গণভোট করার মতো কোন পরিস্থিতি নেই, কিন্তু জামায়াতসহ কিছু ইসলামীদল কিছুদিন পিআর নিয়ে আন্দোলন করেছে এখন গণভোট নিয়ে নতুন করে শুরু করেছে এমন নানান দাবির মাধ্যমে দেশের জনগণ, প্রশাসন, সরকারকে নির্বাচন থেকে দূরে অন্যদিকে দাবিতে করতে চাইছেন। যাকে ঘিরে আমাদের আর বুঝতে বুঝতে বাকি নেই যে তারা দেশের প্রতি ষড়যন্ত্র করছে।
মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব এড. আবু আল ইউসুফ খান টিপু বলেন, গত ৫ আগষ্ট হাজার হাজার ছাত্র জনতাসহ বিএনপি নেতাদের রক্তের বিনিময়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে এই ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচারি সরকারকে পালাতে বাধ্য করেছে। গত ১৬ বছর এই স্বৈরাচার সরকার রাতের ভোটে ক্ষমতায় ছিলেন যাক ঘিরে কেউ নিজেদের ভোট প্রয়োগের মাধ্যমে দেশের নাগরিকতা প্রমান করতে পারেনি। যাকে ঘিরে বর্তমানে দেশের জনগণের আশা আকাঙ্খা একটি সুষ্ঠ নির্বাচন।
তিনি বলেন, বর্তমানে দেশে কোন জাতীয় নির্বাচন হলো না। এখনো অন্তবর্তীকালীন সরকার দেখাতে পারলো না তারা সুষ্ঠ নির্বাচন দিতে পারবে না। কিন্তু এখন তারা গণভোটের পায়তারা করে যাচ্ছেন এখানে জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটের কি প্রয়োজন। যখন একটি অবাধ ও সুষ্ঠ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে তখনই গণভোট হবে। জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটের কোন দরকার নেই বলে আমরা বিএনপি মনে করি। বর্তমানে জাতীয় নির্বাচনেই জনগণ ভোট দিতে চায় তার আগে জনগণ কোন ভোট দিতে চায় না
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কর্মপরিষদের সদস্য মাওলানা মইনুদ্দিন আহমাদ বলেন, জামায়াতে ইসলামী আগামী দিনের সুন্দর বাংলাদেশ গড়ার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে সেই হিসেবেই দেশের সংবিধানে কিছু পরিবর্তন আনা দরকার যাকে ঘিরে আগামী জাতীয় নির্বাচনে যেই সরকার হোক তারা যেন কেউ স্বৈরাচারের ভূমিকা যেতে না পারে সকলেই যেন সকলের অধিকার নিয়ে থাকতে পারে। সেই কারণে আমরা নির্বাচনের পূর্বে একটি গণভোট চাইছি। আশা করছি এটা বাস্তবায়িত হবে।
মহানগর জামায়াতের আমীর মাওলানা আব্দুল জব্বার বলেন, এই গণভোটে কিছু বেসিক বিষয় রয়েছে। এগুলো যদি এখনো সংবিধানভুক্ত হয় তাহলে সরকার যেই আসুক না কেন বিগত দিনের মতো ফ্যাসিস্ট সরকারের মতো আচরণ করতে পারবে না। এর মধ্যে রয়েছে একজন কতবছর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে থাকবে তা ছাড়া এখনো লেভেল প্লেন ফিল্ডের কিছু বিষয় রয়েছে। নিরপেক্ষ প্রশাসনের কিছু বিষয় রয়েছে।
তিনি বলেন, নির্বাচনের আগেই যদি হ্যাঁ ভোট বা না ভোট হয়। আমাদের বিশ্বাস হ্যাঁ ভোটই জয়যুক্ত হবে। তখনই এই নিয়মগুলো সংবিধানযুক্ত হবে। এর পর এখন থেকেই এগুলো কার্যকর শুরু হবে। কিন্তু বিএনপি এটা মানছে না তারা নির্বাচনের দিনই ভোট চাইছেন। আমরা বলেছি যদি নির্বাচনের দিন ভোট হয়। তাহলে কোন কোন পক্ষ ভোট ও ডাকাতি করবে জুলাই ভোট ও ডাকাতি হবে। আর এর মাধ্যমে আমরা যে সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চাইছি সেটা হবে না। তা ছাড়া এখন যদি গণভোট হয় তখন বিএনপির কিছু কিছু পক্ষ বলয় সৃষ্টি করে জোরপূর্বক ঘটনা ঘটালে এখানে দেশের মানুষের চোখে তাদের বিরুদ্ধে নেভেটিভ চিন্তা ভাবনা হতে পারে। সেই কারণে তারা চাইছেন জাতীয় সাংসদ নির্বাচনের দিনই এই গণভোট হলে সেই কোন পরিস্থিতি হলে তারা মাইনাস পয়েন্টে চলে গেলে সে সময় তাদের চিন্তা যা হওয়ার এক সাথেই হবে। আমাদের মনে হচ্ছে তাদের মনে নির্বাচনে বিজয় নিয়ে শঙ্কা রয়েছে তারাই এই গণভোট বিরোধী।
মহানগর ইসলামী আন্দোলনের সভাপতি মুফতি মাসুম বিল্লাহ বলেন, জামায়াত ও আমরা ইসলামী আন্দোলন, এসসিপিসহ আরো বেশ কয়েকটি দল আমরা চাইছি নির্বাচনের পূর্বে নভেম্বর বা ডিসেম্বরে একটি গণভোট হোক । কিন্তু বিএনপি এটা মানছে না তারা বলছে নির্বাচনের সাথেই একসাথে এই গণভোট হোক, একসাথে হলে তো একটি অরাজকতা পরিস্তিতি হয়ে যায় সেই কারণে আমরা চাইছি আগেই এই গণভোট হোক। এটার মাধ্যমেই আগামী দিনে দেশের সংবিধানে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। তা ছাড়া ও এই গণভোটে নির্বাচনের আগে হলে আমরা একটু স্বস্তি পাই। তা ছাড়া গণভোটে সকলেই কিন্তু একমত কিন্তু নির্বাচনের আগে পরে নিয়েই শঙ্কা রয়েছে। আমরা মনে করছি নির্বাচনের আগে দলে দেশে বিরাট একটি নির্বাচনী পরিবেশ লক্ষ্য করা যাবে।


