কালাম পরিবারের তিন প্রজন্মের রাজনীতি
# পুত্র কাউসারকে বন্দরবাসীর জন্য দান করেছেন আবুল কালাম
# আশা সংসদ নির্বাচনের জন্যও প্রস্তুত আছে বলে ভক্তদের দাবি
পারিবারিকভাবেই রাজনীতিতে আছেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের বিএনপি মনোনীত ৩ বারের সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আবুল কালাম। এর আগে তার পিতা হাজী জালাল উদ্দিন জিয়াউর রহমানের সরকারের নেতৃত্বাধীন সংসদের সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। এখনও বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় আছে কালাম এবং তার পরিবারের তৃতীয় প্রজন্মের সদস্য আবুল কাউসার আশা। এরই মধ্যে আসন্ন ত্রয়োদ্বশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করে মাঠে গণ সংযোগসহ দলীয় ৩১ দফার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন অ্যাড. আবুল কালাম। তবে আসন্ন নির্বাচনের দলীয় মনোনয়ন পেলে এটাই যে, তার শেষ সংসদীয় নির্বাচন হতে যাচ্ছে এই বিষয়ে একটি স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। গত ২০ অক্টোবর ৩১ দফা বাস্তবায়নের প্রচারণা শেষে বন্দর শহীদ মিনারে এক সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে একমাত্র ছেলে আবুল কাউসার আশাকে বন্দরবাসীর জন্য দান করার ঘোষণার মাধ্যমে তিনি এই ইঙ্গিত দেন বলে সচেতন মহলের দাবি।
এক আবেগঘন আবুল কালাম বলেন, “আমি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ৩ বার আপনাদের ভোটে এমপি হয়েছি। আমার বাবা মরহুম জালাল হাজীও আপনাদের সেবায় নিয়োজিত ছিলেন। আর আমার একমাত্র ছেলে আবুল কাউছার আশাকে বন্দরবাসীর জন্য দান করে দিলাম।” রাজনৈতিক বোদ্ধাদের মতে এই ঘোষণার মাধ্যমে তিনি হয়তো দু’টি বিষয়ে প্রতি ইঙ্গিত প্রদান করেছেন। প্রথমত যেহেতু তিনি এখন প্রবীণ হয়ে পড়েছেন, তাই এই নির্বাচনের পর আগামীতে হয়তো তিনি দলীয় মনোনয়নের জন্য অনেকটা নিজেকে বেশি বয়স্ক হিসেবে মনে করেন। অন্যদিকে নিজের একমাত্র ছেলেও এই রাজনৈতিক পরিবারে অবস্থানের মাধ্যমে দলীয় তৃণমূল পর্যায় থেকে বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত থেকে ধীরে ধীরে নিজেকে এখন জাতীয় পর্যায়ে কাজ করার মতো যোগ্যতা অর্জন করেছেন। তাই দাদা ও পিতার পথ ধরে আগামীতে হয়তো নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন থেকে সংসদ সদস্য হিসেবে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অংশ নিবেন। অনেকেতো আবার এক ধাপ এগিয়ে বলতে শুরু করেছেন, এই বারের নির্বাচনেও যদি আবুল কাউসার আশাকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয় তাতেও আশ্চর্য্য হওয়ার কিছু নেই।
এই পরিবারের বিএনপির রাজনীতিতে প্রথম প্রজন্ম হিসেবে এর আগে ১৯৭৯ সালে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৩২ আসন (নারায়ণগঞ্জ অঞ্চল) থেকে নির্বাচিত হন আবুল কালামের পিতা হাজী জালাল উদ্দিন। এরপর জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকার পর ১৯৯১ সালের ফেব্রুয়ারিতে পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে যখন বিএনপি আবারও সরকার গঠন করে সেই নির্বাচনে এই আসন থেকে বিএনপির রাজনীতিতে এই পরিবারের দ্বিতীয় প্রজন্মের সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন অ্যাডভোকেট আবুল কালাম। এরপর ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এবং ২০০১ সালের ১ অক্টোবরের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে গঠিত সরকারেও নির্বাচিত হন আবুল কালাম। এরই মধ্যে এই পরিবারের তৃতীয় প্রজন্মের সদস্য আবুল কাউসার বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকায় অংশগ্রহণ করেন এবং নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে সেই জনপ্রিয়তায় ওয়ার্ড কাউন্সিলর হিসেবে নির্বাচিত হন।
স্থানীয়ভাবে দলের একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে, স্থানীয়ভাবে তরুন প্রজন্মের একটি শক্তিশালী কর্মী বাহিনী গড়ে তুলেছেন আবুল কাউসার আশা। আসন্ন ত্রয়োদ্বশ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পিতা আবুল কালামের মনোনয়নের জন্য মনোনয়ন চাইলেও আশা এই নির্বাচনেও প্রতিযোগিতার জন্য প্রস্তুত আছেন বলে মনে করেন তার ভক্তরা। এমনকি এই নির্বাচনেও দল তাকে প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করলেও আশ্চর্র্য্য হওয়ার কিছু নেই বলেও জানান তারা। তাদের মতে, জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে এই আসনে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন হাজী জালাল উদ্দিন, বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে প্রতিনিধিত্ব করেছেন আবুল কালাম। তাই আগামীতে তারেক রহমানের নেতৃত্বে তাদের তৃতীয় প্রজন্ম আবুল কাউসার আশা এই আসনের প্রতিনিধিত্ব করবেন এটাই স্বাভাবিক। এরই মধ্যে আগামীতে বিএনপির সমর্থন নিয়ে সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য সব রকমের প্রস্তুতি নেওয়া আছে বলেও তাদের দাবি।


