পরিহার হয়েছে আক্রমণাত্মক ভাষা
নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন থেকে বাংলাদেশের বৃহত্তর রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের দীর্ঘ তালিকা থাকায় শুধু নারায়ণগঞ্জ জেলায়ই নয়, দেশ জুড়ে রাজনীতির দৃষ্টি এখন নারায়ণগঞ্জের এই আসনটির দিকে। অন্যদিকে মনোনয়ন প্রত্যাশীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় প্রচারণার এক পর্যায়ে প্রতিদ্বন্দ¦ী প্রত্যাশীকে ঘায়েল করতে এরই মধ্যে আক্রমনাত্মক বক্তব্যসহ শুরু হয় কাদা ছোড়াছুড়ি। তবে দলীয় হাই কমান্ড মনোনয়ন প্রত্যাশীর কিছু প্রথম সারির নেতাকে ডেকে নিয়ে এসব কর্মকাণ্ড না করার জন্য কড়া হুশিয়ারি দিয়েছেন বলে স্থানীয় বিএনপির একটি সূত্র থেকে জানা গেছে। বিষয়টি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দৃষ্টি গোচর হওয়ার তার নির্দেশেই এই সতর্ক বার্তা দেওয়া হয়েছে বলে সূত্রটি জানিয়েছে। একই সাথে দলীয় মনোনয়নের তালিকায় এখন পর্যন্ত কারা এগিয়ে আছেন সেই বিষয়েও একটি ধারণা পাওয়া গেছে বলে সূত্র থেকে জানানো হয়েছে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো মনোনয়ন প্রত্যাশীরা তাদের আক্রমণাত্মক ভাষা পরিহার করে দলীয় অনুগত্যের বিষয়ে ঐক্যের সুরে কথা বলছেন।
দলের বিভিন্ন মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায়, নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় ঘোষণা হওয়ার পর দলীয় মনোনয়ন পেতে দেশব্যাপী শুরু হয় বিভিন্ন নেতাদের দৌড়ঝাঁপ। বৃহত্তর দল হিসেবে সেই দৌড়ঝাঁপে বিএনপির প্রতিদ্বন্দ্বীর সংখ্যা অনেক বেশি। সেই ধারাবাহিকতায়ই নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন আসনে বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রার্থী হয় প্রায় এক ডজন। যে তালিকায় ছিল একই আসন থেকে বিএনপির তিনবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আবুল কালাম, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন খান, সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু, যুগ্ম আহ্বায়ক মাশুকুল ইসলাম রাজীব (যদিও এখন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে আছেন বলে জানা যায়) কেন্দ্রীয় যুবদলের বর্তমান সহসভাপতি গোলাম মোস্তফা সাগর, মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদসহ নারায়ণগঞ্জ বিএনপির বেশ কয়েকজন প্রথম সারির নেতার নাম। তবে এর বাইরে নারায়ণগঞ্জের দুই পরিচিত ও খ্যাতিমান শিল্পপতি মডেল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদুজ্জামান মাসুদ এবং প্রাইম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবু জাফর আহাম্মদ বাবুলও এই দুইজন প্রভাবশালী ব্যক্তি এই আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী হলে পুরো নারায়ণগঞ্জের ফোকাস এসে পড়ে এই আসনের উপর।
তবে মনোনয়ন প্রার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে এই আসনের লড়াইয়ে থাকা প্রতিদ্বন্দ্বিদের মধ্যে একদিকে যেমন নিজেদের যোগ্যতা তুলে ধরার চেষ্টা বাড়ে, তেমনি বাড়তে থাকে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে কাদা-ছোড়াছুড়ির ঘটনা। এরই মধ্যে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে একে অপরের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনাসহ বিভিন্ন অপ্রীতিকর মন্তব্য করা হয় বলে বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশ হয়। বিষয়টি নিয়ে যখন স্থানীয় বিএনপি বিভ্রান্তিকর অবস্থায় পড়তে শুরু করে এবং নারায়ণগঞ্জ বিএনপির ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে বিষয়টি নেগেটিভ প্রভাব পড়বে বলে তাদের মধ্যে এক ধরণের ক্ষোভ সৃষ্টি হতে থাকে। তাই বিষয়টি দলীয় হাই কমান্ডের নজরে পড়লে তারা লাগাম টেনে ধরার সিদ্ধান্ত নেন এবং গত ২০ অক্টোবর মহানগর বিএনপির দায়িত্বশীল নেতাদের কেন্দ্রে ডাকা হয়। যেখানে উপস্থিত হন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাখাওয়াত, সদস্য সচিব টিপু, যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল কাউসার আশা ও মাশুকুল ইসলাম রাজীব। সেখানে মনোনয়ন প্রত্যাশী মাসুদুজ্জামানও উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে। সেখানে দলীয় ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হয় এমন কোন কাজ না করার জন্য সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে জানা যায়। মূলত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশেই এই সতর্কবার্তা দেওয়া হয় বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, গত বছরের ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনুস এর নেতৃত্বে অন্তবর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করা হয়। এরপর থেকেই ত্রয়োদ্বশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের জন্য এই সরকারের উপর চাপ করেন বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো। এরপর বিভিন্ন রাজনৈতিক চাপের মুখে চলতি বছরের গত ৬ জুন জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া এক ভাষণে আগামী বছরের এপ্রিলের প্রথমার্ধের যেকোনো একটি দিন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান প্রধান উপদেষ্টা। তবে পরে গত ৫ আগস্ট অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস জানান, আগামী ফেব্রয়ারির প্রথম দিকে অর্থাৎ আসন্ন রোজার আগে ত্রয়োদ্বশ জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করার জন্য নির্বাচন কমিশনকে চিঠি পাঠানো হবে। এই ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই সারা বাংলাদেশের মতো নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন আসনেও শুরু হয় প্রার্থী হতে ইচ্ছুকদের দৌড়ঝাঁপ।


