Logo
Logo
×

রাজনীতি

বিএনপির বহিষ্কৃতরা দলে ফেরার স্বপ্ন বুনছেন

Icon

এম মাহমুদ

প্রকাশ: ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০০ এএম

বিএনপির বহিষ্কৃতরা দলে  ফেরার স্বপ্ন বুনছেন

বিএনপির বহিষ্কৃতরা দলে ফেরার স্বপ্ন বুনছেন

Swapno

# গতকাল দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বিএনপির ৭জন নেতার বহিষ্কার প্রত্যাহার হয়


দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং দলের নীতি ও আদর্শ পরিপন্থী কার্যকলাপের জন্য বহিষ্কৃত ৭ নেতাকে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। ২০২৪ সালের ৫ই আগস্টে পর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরবর্তী সময়ে নানা অপকর্মে জড়িয়ে বহিষ্কার হন দেশব্যাপী বিএনপির প্রভাবশালী নেতারা সেই সাথে নারায়ণগঞ্জেরও বহু ভাগা ভাগা নেতা নানা অপকর্ম দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং দলের নীতি ও আদর্শ পরিপন্থী কার্যকলাপের জন্য বহিষ্কৃত হন। কিন্তু দেশব্যাপী বহিষ্কৃত বিএনপি নেতারা বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহারের জন্য আবেদন করে ক্ষমা প্রার্থনা করেও কোন প্রকার প্রতিক্রিয়া না পেলেও গতকাল ২৪অক্টোবর দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর দেশে বহিষ্কৃত বিভিন্ন অঞ্চলের মাত্র ৭জন নেতার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। ৭জনের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের মধ্য দিয়ে নারায়ণগঞ্জেও বিভিন্ন সময় দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং দলের নীতি ও আদর্শ পরিপন্থী কার্যকলাপের জন্য বহিষ্কৃত নেতারা বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের মাধ্যমে দলে ফেরার স্বপ্ন বুনছেন।

সূত্র বলছে,দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং দলের নীতি ও আদর্শ পরিপন্থী কার্যকলাপের জন্য দলের ৭ নেতাকে প্রাথমিক সদস্যসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। আবেদনের প্রেক্ষিতে দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে প্রাথমিক সদস্য পদ ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। প্রাথমিক সদস্য পদ ফিরে পাওয়া বিএনপির ওই ৭ নেতা হলেন- জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য ও ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলাধীন ভালুকা উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ফখর উদ্দিন আহমেদ বাচ্চু, গাজীপুর মহানগর বিএনপির সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক রাকিবুল উদ্দিন সরকার পাপ্পু, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আমিন ও পিরোজপুর জেলাধীন মঠবাড়িয়া উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক রুহুল আমিন দুলাল,নীলফামারী জেলাধীন জলঢাকা উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি তাহমিদ ফয়সাল চৌধুরী কমেট, রংপুর জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য মোকাররম হোসেন সুজন এবং রংপুর জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য মো. আলি সরকার। এদিকে নারায়ণগঞ্জ জেলায় বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা আওয়ামীলীগের শাসন আমলেই দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং দলের নীতি ও আদর্শ পরিপন্থী কার্যকলাপের জন্য বহিষ্কার হন। পরবর্তীতে ২০২৪ সালের ৫ই আগস্টে পর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরবর্তী সময়ে নানা অপকর্মে জড়িয়ে বহিষ্কার হন নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী একাধিক নেতা। তাদের বহিষ্কারের ঘটনা পর্যালোচনা করে দেখা যায়।

গত ১০আগস্ট দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ, চাঁদাবাজি এবং দলের নীতি ও আদর্শ পরিপন্থী কর্মকান্ডে জড়িত থাকার সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে নারায়ণগঞ্জ জেলাধীন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপি'র সহ-সভাপতি এস এম আসলাম এবং সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপি'র সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক টিএইচ তোফাকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি'র প্রাথমিক সদস্যসহ সকল পর্যায়ের পদ থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। এর আগে গত ৬আগস্ট দিবাগত রাত সাড়ে ১২ টায় অভিযান চালিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জের ৬নং ওয়ার্ডের এস.ও রোড এলাকার নিজ বাসা থেকে এস এম আসলামকে এবং সিদ্ধিরগঞ্জের ৫নং ওয়ার্ডের আজিবপুর এলাকায় নিজ বাসা থেকে টি এইচ তোফাকে আটক করে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। পরদিন সকালে তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ৩(২) ধারায় ডিটেনশনের জন্য বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর আবেদন করে পুলিশ। বিকালে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ৩০ দিনের ডিটেনশনের আদেশ দিয়ে তাদেরকে কারাগারে পাঠায়।  গত ২৩ জুলাই বিকেলে ফতুল্লার সোনালী সংসদ মাঠে অনুষ্ঠিত বিএনপির সদস্য নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহ অনুষ্ঠানে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক লুৎফর রহমান খোকা একটি বক্তব্য দেন,শাহ আলমের জন্য আমরা নমিনেশন আনব। প্রয়োজনে আমরা আত্মাহুতি দেব কেন্দ্রীয় অফিসের সামনে। তারেক রহমান, দেশনেত্রী খালেদা জিয়া ও বিএনপির মহাসচিবকে ঘেরাও করব। এমন বক্তব্যের পর ২৯জুলাই দল থেকে বহিষ্কার হন লুৎফর খোকা। ফতুল্লা থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াদ মোহাম্মদ চৌধুরীকে সম্প্রতি চাঁদাবাজির একটি মামলায় গত ১৫মে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। একই দিনে বিএনপি থেকে বিবৃতি দিয়ে তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করেন। গত ১৩ডিসেম্বর সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন বাসের ভেতর তর্ক করায় চালককে পিটিয়ে রক্তাক্ত এবং বাধা দেয়ায় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সাংবাদিককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার অভিযোগে বিএনপি থেকে বহিষ্কার হয়েছিলেন ইকবাল। বিএনপির এসকল ভাগা ভাগা নেতারা ৫ই আগস্টের পর নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ অনেকে গ্রেপ্তান হন সেই সাথে বহিষ্কারও হন। এর আগে আওয়ামীলীগের শাসন আমলে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং দলের নীতি ও আদর্শ পরিপন্থী কার্যকলাপের জন্য বহিষ্কৃত হন নারায়ণঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপির নেতাদের অনেকেই বহিষ্কার হন। বহিষ্কার প্রত্যাহার চেয়ে আবেদন করে এখনো তার রেহাই পাননি। তাছাড়া বিভিন্ন সময় নানা আকুতি মিনতি করেও আক্ষেপ প্রকাশ করে তার ভাগ্যে জোটেনি বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার। এসকল নেতারা হচ্ছেন- ২০২২ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে অংশ নিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির তৎকালীন আহ্বায়ক তৈমুর আলম খন্দকার বহিষ্কৃত হন। তার পাশাপাশি তার নির্বাচনের এজেন্ট নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক  এটি এম কামালও বহিষ্কৃত হন। বিএনপি থেকে তৈমুর আলম খন্দকার বহিষ্কার হয়ে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার না করায় আওয়ামীলীগের চক্রান্তে তৃণমূল বিএনপি নামক বিএনপি ভাঙার মিশনের ফাঁদে পা দেন এবং এই ফাঁদে পা দিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানসহ বিএনপির বিরুদ্ধে নানা রকম বিদ্রুপ করা শুরু করেন। কিন্তু আওয়ামীলীগের ফাঁদে পা দিয়েও সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে হোঁচট খান। কিন্তু এরমধ্যে আওয়ামীলীগের পতন ঘন্টা বেজে যাওয়ার পরবর্তী সময় থেকে আবারও বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের মাধ্যমে বিএনপিতে ফেরার মিশনে রয়েছেন। সেই সাথে তার সাথে বহিষ্কার হওয়া এটি এম কামাল আওয়ামীলীগ শাসন আমলে দেশত্যাগ করলে এখন প্রবাস থেকেই অনলাইনে তার বহু হামলা মামলার চিত্র দেখিয়ে মিডিয়ার বরাতে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের মাধ্যমে বিএনপিতে ফিরতে মরিয়া। সম্প্রতি দেশে ফিরেও এটি এম কামাল বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হন। অপরদিকে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী সেলিম ওসমানের নির্বাচনী প্রচার কার্যক্রমে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম-আহ্বায়ক আতাউর রহমান মুকুল, ১২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শওকত হাসেম শকু, বন্দর উপজেলা বিএনপি নেতা হান্নান, সুলতান আহম্মেদ, গোলাম নবী মুরাদ বহিষ্কার হয়েছিলেন।

কিন্তু তারা বহিষ্কার হওয়ার পরও বিএনপির ব্যানারে রাজনীতিতে সক্রিয় রয়েছে। তবে বর্তমানে বিএনপি থেকে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন এসকল নেতারা। নারায়ণগঞ্জের এসকল প্রভাবশালী বিএনপির নেতারা দীর্ঘদিন বহিষ্কারাদেশ থেকে প্রত্যাহারের লক্ষ্যে নানা ভাবে লবিং তদবীর চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে কোন প্রভাবেই লবিং তদবীরের ফলাফল বহিষ্কারাদেশ থেকে প্রত্যাহার হচ্ছিল না। সেই সাথে তাদের জন্য দুঃসংবাদ ছিল আসন্ন ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের পূর্বে বহিষ্কৃতরা দলে ফিরতে পারছে না। কিন্তু এরমধ্যেই গতকাল ২৪অক্টোবর দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর দেশে বহিষ্কৃত বিভিন্ন অঞ্চলের মাত্র ৭জন নেতা বহিষ্কারাদেশ থেকে প্রত্যাহারের মাধ্যমে বিএনপির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থেকে নানা অপকর্মের সাথে জড়িয়ে থাকা ভাগা ভাগা নেতারা বহিষ্কারাদেশ থেকে প্রত্যাহারের জন্য স্বপ্ন বুনছেন।

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন