৩০০ শয্যা হাসপাতালে দালালদের দৌরাত্ম্য

যৃুগের চিন্তা রিপোর্ট
প্রকাশ: ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০০ এএম

৩০০ শয্যা হাসপাতালে দালালদের দৌরাত্ম্য
নারায়ণগঞ্জ শহরের খানপুরে অবস্থিত নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল ঘিরে অন্তত কয়েক ডজন খানেক দালাল চক্র সক্রিয় আছে। দীর্ঘদিন ধরেই এসব দালালের হাতে জিম্মি রোগী ও তাদের স্বজনরা। এসব দালালের উৎপাতে চিকিৎসা সেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে অভিযোগ ভুক্তভোগিদের। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের ফুসলিয়ে বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যাচ্ছে দালাল চক্র। বিভিন্ন সময় প্রশাসন অভিযান চালিয়ে দালাল চক্রের কয়েক সদস্যকে গ্রেপ্তার করে সাজা দিয়েছে ভ্রাম্যমান আদালত মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে।
তথ্যমতে, তারই ধারাবাহিকতায় সোমবার ১৩ অক্টোবার খানপুর ৩শ’ শয্যা হাসপাতালে যৌথবাহিনী অভিযান চালিয়ে দালাল চক্রের নারী সদস্য ১৪জনকে আটক করে। ওই দিন দুপুরে র্যাব পুলিশ জেলা প্রশাসন মিলে এই অভিযান চালান। আটককৃত মধ্যে ৭ নারীকে তিন দিন এবং বাকী ৭জনকে ৭ দিনের কারাদন্ড প্রদান করেন ভ্রাম্যমান আদালত।
এদিকে স্থানীয় মাধ্যম ও প্রত্যক্ষ সূত্রে জানা গেছে, ৩০০ শয্যা হাসপাতালের আশপাশে গড়ে ওঠা বেশ কয়েকটি বেসরাকরি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অন্তত ডজন খানেক দালাল হাসপাতালের জরুনি ও বহির্বিভাগে ঘুরাফেরা করতে দেখা যায়। এসব দালাল চক্রের মধ্যে নারীও রয়েছে। যাদের দেখে বোঝার উপায় নেই এরা দালাল চক্রের সদস্য।
অপরদিকে তথ্যমতে, নারায়ণগঞ্জ শহরের খানপুর ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট খানপুর হাসপাতালে যৌথবাহিনীর অভিযানে নারী সহ দালাল চক্রের ১৪ সদস্যকে আটক করা হয়েছে। সোমবার (১৩ অক্টোবর) দুপুরে র্যাব ও জেলা প্রশাসন এ অভিযান চালায়। সেই সাথে আটকৃতদের মধ্যে ৭ নারীকে তিনদিন করে ও বাকী ৭ জনকে ৭দিনের কারাদণ্ড প্রদান করে ভ্রাম্যমান আদালত। সাজাপ্রাপ্তরা হলেন মো. চিনু ইসলাম (৩৮), সোমন মিয়া (২৫), কামরুল ইসলাম (৩০), মো. আলমগীর কবির মো. মাসুম (৪০), মো. ফরিদ (২৫), মো. মো. রবিন (৩৮), শিউলি আক্তার (৩৫), ফরিদা পারভীন (৫২), মোছা. আম্বিয়া (৪৮), রাজিয়া বেগম (৪৫), কাকুলি আক্তার (৩৬), মোছা. রোখসানা (৫০) ও মোছা. মাকছুদা (২৫)।
৩শ’ শয্যা হাসপাতালের চিহ্নিত দালাল হারুন। এই হারুন দালাল ৩শ’ শয্যা হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী রাজিয়ার স্বামী। রাজিয়া এই হাসপাতালের ফার্মেসি বিভাগে কর্মরত। এছাড়া দালাল হারুনের মেয়ে নাসরিন সুলতানা মুক্তাকে দুর্নীতির অভিযোগে নগরীর খানপুর ৩শ’ শয্যা হাসপাতাল থেকে বদলি করে ঢাকার দোহার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বদলি করা হয়েছে। ৫ আগষ্টের পরে আবার তিনি নারায়ণগঞ্জ ৩শ’ শয্যা হাসপাতালে বদলী হয়ে আসেন। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে এই মুক্তার মালিকানাধীন গ্যাষ্ট্রোলিব ডায়াগনিষ্টিক সেন্টারে ৩শ’ শয্যা হাসপাতাল থেকে রোগি নিয়ে যান তারই পিতা দালাল হারুন।
দালালদের সন্ধ্যার পরে দুর্নীতির অভিযোগের বদলী হওয়া নাসরিন সুলতানা মুক্তা চক্রের সদস্যদের বখরা প্রদান করেন। এই দালাল সিন্ডিকেটের মুল হোতা হারুন। প্রধান সহযোগি হিসেবে কাজ করেন হাসপাতালে কর্মরত তারই স্ত্রী রাজিয়া। তার বিরুদ্ধেও অভিযোগের শেষ নেই। তাদের মেয়ে মুক্তা নানা অপকর্মের অভিযোগে এখান থেকে বদলী হন। কিন্তু তার পরেও তাদের অপকর্ম থেমে নেই। মুক্তার গ্যাষ্ট্রোলিব ডায়াগনিষ্টিক সেন্টারের মাধ্যমে রাতারাতি কোটি পতি বনে গেছেন। তার বদলী হলেও তার মা এবং বাবার সিন্ডিকেট চক্র গড়ে তুলে হাসপাতালের রোগিদের জিম্মি করে রেখেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাসপাতালের ডাক্তারের রুমের ভেতর থেকে কোন রোগী বাইরে বের হওয়া মাত্রই তাদের প্রেসক্রিপশন নিয়ে নেন দালাল চক্রের সদস্যরা। এরপর রোগীদের বিভিন্ন বেসরকারি গ্যাষ্ট্রোলিব ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যেতে বাধ্য করেন। একদল আবার বেশি অসুস্থ রোগী দেখলেই চিকিৎসা পেতে দেরি হবে বলে বাইরের ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়ার পায়তারা করেন।
সংঘবদ্ধ দালাল চক্রটি দুটি অংশে কাজ করে। এক অংশ হাসপাতালের বহির্বিভাগে কাজ করে। আরেকটি অংশ কাজ করে হাসপাতালের বাইরে। ডাক্তারের কাছ থেকে যখন রোগী চিকিৎসা নিয়ে বের হয় তখন ভেতরের দালাল চক্রটি রোগীদের বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যাওয়ার জন্য বলে।
আরেক দল থাকে বাইরে যারা খুব বেশি অসুস্থ রোগী হাসপাতালে ঢুকতে দেখলে হাসপাতালে দ্রুত চিকিৎসা পাওয়া যাবে না বলে বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান। প্রতিটি রোগী নিয়ে যাওয়ার জন্য ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে কমিশন পান দালালরা। রোগীর খরচ যত বেশি হয় তাদের কমিশন তত বেশি হয়। যা সন্ধ্যার পরে বখরা প্রদান হিসেবে দিয়ে থাকেন মুক্তা। তাদের সিন্ডিকেট চক্রের সদস্যদের থেকে মুক্তি চান নগরবাসি।