
পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে উত্তপ্ত রাজনীতি
ত্রয়োদশ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দল গুলোর সম্ভাব্য এমপি প্রার্থীরা প্রচারনায় ব্যস্ত রয়েছে। একই সাথে দল থেকে মনোনয়ন পেতে দলীয় কর্মসূচি পালনের পাশাপাশি নানা সামাজিক মুলক কাজ করে যাচ্ছেন। নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী বনাম বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে মহানগর বিএনপির রাপজথে থাকা শীর্ষ নেতাদের মাঝে কথার লড়াইয়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে। একে নির্বাচনের মাঠে নেমে একই দলের হয়ে একে অপরকে ঘায়েল করতে ব্যস্ত রয়েছেন। এতে করে দলের সুনাম ক্ষুন্ন হওয়ার পাশা পাশি নিজেদের ইমেঝ নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে।
এদিকে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী শিল্পপতি মাসুদুজ্জামান পুরোদমে মাঠে নেমে গণসংযোগ করে যাচ্ছেন। একই সাথে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহাবয়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খাঁন ও সদস্য সচিব এড. আবু আল ইউসুফ টিপু মাঠে রয়েছেন। কিন্তু দুই পক্ষ একে অপরকে নিয়ে ঘায়েল করতে মন্তব্য করে যাচ্ছেন। পাল্টা পাল্টি বক্তব্যে নেতাকর্মীদের মাঝে উত্তেজনা বিরাজ করছে। তবে এই কালাচারাল ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ও নেতাদের মাছে ছিল। কিন্তু ২০২৪ সনের ৫ আগষ্টের পরেতো এখন আর ফ্যাসিস্টরা নেই। তাহলে তাদের কালাচারাল কারা ফিরিয়ে আলো।
অপরদিকে খোঁজ নিয়ে জানাযায়, বিগত ১০ বছর নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনটি শিল্পপতিদের দখলে ছিল। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ শাসনামলে এই আসনটি রাজনৈতিক নেতারা উদ্ধার করতে চেয়েও পারে নাই। ২০১৪ সনে থেকে এই আসনটি ব্যবসায়ী নেতা সাবেক এমপি সেলিম ওসমানের নিয়ন্ত্রণে ছিল। যদিও তিনি জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন নিয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষে কাজ করেছে। তবে তার কাছে রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা মূল্যায়ন পায় নাই।
আগামীয় জাতীয় ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ ৫ আসন থেকে বিএনপির নেতাদের সাথে পাল্লা দিয়ে দুই শিল্পপতি মনোনয়ন চেয়ে মাঠে নেমে নিজের অবস্থান জানান দেন। বিশেষ করে মহানগর বিএনপির আহবায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খাঁন এই আসন থেকে মনোনয়ন চেয়ে দল গুছানোর সাথে গণসংযোগ করে যাচ্ছেন। একই সাথে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন থেকে মনোনয়ন চেয়ে বিএনপির ভারপ্রাপত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেয়া রাষ্ট্রমেরামতে ৩১ দফা প্রচার করে যাচ্ছেন শিল্পপতি মাসুদুজ্জামান মাসুদ। তবে সম্প্রতি এই এমপির প্রার্থীর বক্তব্য এবং মহানগর বিএনপির সদস্য সচিবের মন্তব্য নিয়ে সমর্থকদের মাঝে উত্তাপ তৈরী হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ বিএনপিতে দীর্ঘদিন যারা রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করেছে তাদেরকে হতাশ করে দিয়ে ৫ আগস্টের পর থেকে শিল্পপতি মাসুদুজ্জামান মাসুদ ওরফে মডেল মাসুদ নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপির দলীয় প্রতীক ধানের শীষের মনোনয়ন চাইছেন। এ লক্ষ্যে তিনি ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। অতি সম্প্রতি তিনি বিশাল আয়োজন করে ঢাকায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গিয়ে বিএনপিতে যোগদান করেন।
সম্প্রতি জেলা মিুক্তযোদ্ধাদের সাথে মতবিনিময় সভায় সোমবার ১৩ অক্টোবর দুপুরে জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় মাসুদুজ্জামান মাসুদ মহানগর বিএনপির শীর্ষ নেতার নাম না নিয়ে তাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, অনেকে প্রশ্ন করেন আমি বিএনপি করি কিনা। আমি ১৯৯৩ সনে যুবদলের নেতা ছিলাম। মহানগর বিএনপির শীর্ষ নেতা এড. সাখাওয়াত-টিপুর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, চেয়ারে বসতে হলে চেহারা লাগে, যোগ্যতা লাগে। আন্দাজে বললেই হবে না। যারা এইসব কথা বলেন, তারা ইউনিয়ন পরিষদে মেম্বার নির্বাচন করে দেখেন, পাস করতে পারেন কিনা। মেম্বার অব পার্লামেন্ট ভিন্ন জিনিস। এইটার মানে আপনি যদি আমাকে বোঝাতে পারেন, তাহলে আসেন, আমি পেছনে চলে যাবো। ঢাল নাই তলোয়ার নাই নিধিরাম সরদার। আমাকে চাইলেই আপনারা মিশায়া দিতে পারবেন না।
মাসুদুজ্জামানকে কড়া ভাষায় জবাব দিয়ে মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু বলেন, উনি তো রাজনৈতিকভাবে শিশু বাচ্চা। শিল্পপতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। রাজনীতি কাকে বলে তিনি জানেন নাকি। ১৬ বছর সে কি করছিলো, কোথায় ছিলো? উনার জীবনে উনি কাউকে এমপি, কমিশনার মেম্বার বানাইছে? আমরা বানাইছি। যোগদানে উনি আমাদের বলেছেন উনাকে জনগণের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে, আমরা বলেছি আমাদের নেতা তারেক রহমানকে দিয়ে ফোন করান, যদি উনি বলে তাহলে উনার নির্দেশনা মানবো।
টিপু বলেন, আন্দোলন সংগ্রাম করলাম আমরা, তিনি এখন সুসময়ে এমপি হতে আসছে। কেউ কেউ এমপি হওয়ার পর গডফাদার হয়েছে আর তিনিতো নমিনেশন পাওয়ার আগেই গডফাদারের ভাষায় কথা বলতেছে। সে যে দলের থেকে মনোনয়ন আশা করে, সেই দলের অভিভাবকই আমাদের আহবায়ক ও সদস্য সচিব বানিয়েছে। অতএব এখন এই কমিটির বিরুদ্ধে কথা বলা মানে সেন্ট্রালের হাইকমান্ডের বিরুদ্ধে কথা বলা। দলের হাইকমান্ড জানে আমাদের ত্যাগ কতটুকু। আমার ৪৫ বছরের রাজনৈতিক জীবনে আমরা বহু এমপি, চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র, কমিশনার মেম্বার বানাইছি। ক্ষমতার দাম্ভিকতায় অনেক বড় বড় কথা বলতেছে। টাকা না থাকলে উনার মত মাসুদুজ্জামান মাসুদের রাজনীতিতে কোন অস্তিত্বই থাকবে না।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ,মতে একই দলের এমপি মনোনয়ন প্রত্যাশী দলের শীর্ষ নেতাদের এই ধরনের কাদা ছোড়া ছুড়ি নেতাকর্মীদের মাঝে প্রভাব ফেলবে। এতে করে দলের সুনাম ক্ষুন্ন হবে বলে মনে করেন রাজনৈতিক সচেতন মহল। তারা যদি ঐক্যবদ্ধ না হয়ে দলের প্রচারনায় না থাকতে পারেন তাহলের তা নির্বাচনের সময়ে ভোটের মাঠে দলের প্রার্থীর জন্য ক্ষতির হয়ে দাড়াবে। আর এতে করে আগামীতে তাদের দুই পক্ষকেই পস্তাতে হতে পারে। তাই এখনি সময় ঐক্যবদ্ধ হয়ে এক সাথে মাঠে নামার।