Logo
Logo
×

রাজনীতি

শহরে বিএনপিতে ঐক্যের সুর

Icon

লতিফ রানা

প্রকাশ: ১২ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০০ এএম

শহরে বিএনপিতে ঐক্যের সুর

শহরে বিএনপিতে ঐক্যের সুর

Swapno

# মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর বিভেদ প্রকাশ্যে আসে

# নেতারা একতাবদ্ধ হলে ব্যবাসায়ীরা মনোনয়ন পাবে না বলে দাবি

# ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচনকে লটারীতে পরিণত করে


অনেক বছর গত হলো নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির নেতৃবৃন্দকে একসাথে দেখা যায় না। বিশেষ করে মহানগর বিএনপির বর্তমান আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর বিভিন্ন ইস্যুতে দ্বিমত সৃষ্টি হওয়ার কারণে দুটি বলয়ে বিভক্তি প্রকাশ্যে আসে। এর পর থেকে একই কমিটির এই দুই বলয়ের সদস্যদের হাসিমুখে একসঙ্গে বসে কথা বলতে কিংবা কোন সিদ্ধান্ত নিতে দেখেনি দলের কর্মী-সমর্থকরা। তাইতো বিএনপির জাতীয় কর্মসূচী কিংবা দলীয় কর্মসূচীতেও দেখা যায় আলাদা আলাদা বাস্তবায়ন করতে। যা বিএনপি প্রেমিকদের মনে এক ধরণের হতাশা ও কষ্টের জন্ম দেয়। তবে গতকাল শনিবার একটি শো-রুমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উভয় পক্ষকে একসাথে বসে খোশগল্প করতে দেখার দৃশ্যের প্রশংসা করেছেন দলের শুভাকাঙ্খীসহ কর্মী ও সমর্থকেরা। অনেককেই বলতে শোনা যায় এতদিন পর এমন দৃশ্য দেখে খুবই ভালো লাগছে। রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে এমন একতা থাকলে ব্যক্তিগত ক্ষোভ বাদ দিয়ে দলের প্রয়োজনে এক ছাতাতলে বসার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারলে নেতৃত্ব নেতাদের মধ্যেই থাকতো। ব্যবাসায়ীদের দখলে যাওয়ার কোন সুযোগই থাকতো না। এমন দৃশ্য দেখলেও নয়ন জুড়ায়।

 

বিগত সরকারের শুরুতে অর্থাৎ ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতায় আসার পর তৎকালীন স্বৈারাচার আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থায় এমন একটি পরিবেশ তৈরি করে যে, কোন প্রার্থী একবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বাগিয়ে নিতে পারলেই তার সংসদে প্রতিনিধিত্ব করা নিশ্চিত হয়ে যেতো। তাই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়াকে লটারী পাওয়া হিসেবে ভাবা হতো এবং দল ও দলের নীতিনির্ধারকদের কোটি কোটি টাকা উপঢৌকন দিয়ে মনোনয়ন বাগিয়ে নেওয়ার একটা প্রতিযোগিতা তৈরি হয়ে যেতো। যার ফলে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশের অন্যতম শক্তিশালী রাজনৈতিক দল বিএনপিসহ একাধিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকে তখন জাতীয় সংসদের ৩০০টি আসনের মধ্যে ১৫৪টি আসনেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাংসদ বনে যান। গত বছরের ৫ আগস্ট স্বৈরাচার ও ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর যখন আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ার পর আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে বাংলাদেশের রাজনীতির অপর বৃহত্তর দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির জয়ী হওয়া সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায় তখন অনেকেই এই দলের মনোনয়ন পেতে ব্যস্ত হয়ে উঠে। এরমধ্যে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনেই বিএনপির প্রায় দশ জনের মতো প্রথম সারির নেতা মনোনয়ন নিতে মাঠে কাজ করছেন বলে জানা যায়। এর বাইরেও বিকল্প সুযোগের অপেক্ষায় আছেন অনেকে।

 

বিভিন্ন মাধ্যম থেকে প্রাপ্ত তথ্য ও দলীয় একাধিক সূত্র থেকে জানা যায়, ২০১৭ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের বিএনপি সমর্থিত তিনবারের সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আবুল কালামকে সভাপতি এবং এটিএম কামালকে সাধারণ সম্পাদক করে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আংশিক কমিটি ঘোষণা ঘোষণা করা হয়। নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। ওই কমিটিতে সভাপতি হিসেবে ছিলেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আবুল কালাম এবং সাধারণ সম্পাদক ছিলেন এটিএম কামাল। ২০১৯ সালের ৩০ অক্টোবর ১৫১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়। সেই কমিটিতে সাখাওয়াত হোসেন খানকে ১নং সহসভাপতি, আবু আল ইউছুফ খান টিপু ও আবুল কাউছার আশাকে সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়। এরপর তৎকালীন স্বৈরশাসকের টর্চারের শিকার হয়ে বিভিন্ন চড়াই-উৎরাই পার হয়ে নড়বড়ে হয়ে যাওয়া মহানগর বিএনপির কমিটিকে পুনর্গঠন করা হয়।

 

২০২২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর ঘোষণা করা কমিটিতে ২০১৬ সালে বিএনপির সমর্থনে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে নির্বাচনে অংশ নেওয়া অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানকে আহ্বায়ক, অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপুকে সদস্য সচিব করা হয়। সেই কমিটিতে সাবেক এমপি আবুল কালামকে না রাখা হলেও তার পুত্র সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কাউসার আশাকে যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে ঘোষণা করা হয়। তবে সে সময় থেকেই কালাম পরিবার ও তাদের সমর্থকদের সাথে নতুন আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের সমর্থকদের মধ্যে বিরোধ প্রকাশ্যে আসে। এরপর থেকে উভয় গ্রুপই দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচী কিংবা আন্দোলন সংগ্রাম আলাদা পালন বা বাস্তবায়ন শুরু করে। সর্বশেষ ত্রয়োদ্বশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় সীমা ঘোষণা করলে বিএনপি থেকে মনোনয়ন দৌড়ে যোগ হন নারায়ণগঞ্জের দুই প্রভাবশালী শিল্পপতি মাসুদুজ্জামান মাসুদ ওরফে মডেল মাসুদ ও আবু জাফর আহমেদ বাবুল ওরফে প্রাইম বাবুল। বিএনপির সূত্র মতে, মহানগর বিএনপির নেতাদের মধ্যকার আভ্যন্তরীণ দূরত্বের সুযোগে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের বিএনপির মনোনয়ন দৌড়ে দলীয় নেতাদের থেকে তারা দুইজনই বেশ খানিকটা এগিয়ে আছেন।

 

তবে গতকাল নারায়ণগঞ্জের বিবি রোড এলাকার গলাচিপা মোড় এলাকায় ভিভো’র একটি শোরুম উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে উভয় বলয়ের প্রভাবশালী নেতাদের একসাথে হওয়াকে আসন্ন নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী নির্ধারণে নতুনমাত্র যোগ হতে পারে বলে স্থানীয় বিএনপির কর্মী ও সমর্থকদের ধারণা। যেখানে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান, সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু এবং যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল কাউসার আশাকে একসাথে বসে আলাপচারিতা করতে এবং খোশগল্পে করতে দেখে অনেকেই আশান্বিত হয়েছে। তাদের মতে নারায়ণগঞ্জ বিএনপিকে শক্তিশালী করতে এবং রাজনীতিকে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের মাঝে ধরে রাখতে এই ঐক্যের কোন বিকল্প নেই।


Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন