
আজব এক ফুটওভার ব্রিজ
# ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হয়ে ফুটওভার ব্রিজে উঠত ও নামতে হয়
# এটা সম্পূর্ণ অপরিকল্পিত ডিজাইন : সচেত# রাস্তা পারাপারের ঝুঁকিতো রয়েই গেলো : পথচারী
ফুটওভার ব্রিজ তৈরি করা হয় যানবাহনের চলাচলের স্থানগুলো দিয়ে সাধারণ মানুষের নির্বিঘ্ন চলাচলের জন্য। বিশেষ করে ভারি যানবাহন চলাচল করা এলাকার যেসব স্থানে অধিক মানুষজনকে চলাচল করতে হয় এমন এলাকা দিয়েই সরকার অনেক টাকা ব্যয় করে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করে থাকে। তবে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের অন্যতম ব্যস্ত এলাকা হিসেবে পরিচিত নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর উপজেলার মদনপুর এলাকায় এমন একটি ফুটওভার ব্রিজ তৈরি করা হয়েছে যা দিয়ে পারাপার করতে হলেও রাস্তা ঝুঁকি নিয়ে পায়ে হেটে রাস্তা পার হয়ে সেই ফুট ওভার ব্রিজে উঠতে হয়। আবারও ব্রিজ থেকে নেমে ঝুঁকি নিয়ে পায়ে হেটে রাস্তা পার হয়ে নিরাপদ স্থানে যেতে হয়। অর্থাৎ ফুটওভার ব্রিজে উঠতে হলেও আপনাকে দুইদিকে দুইবার ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হতে হবে। তাই এই ফুটওভার ব্রিজকে অনেকেই মজা করে নাম দিয়েছেন আজব কারিগরের আজব ফুটওভার ব্রিজ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মদনপুর এলাকায় গড়ে উঠা ফুটওভার ব্রিজের উত্তর দিকের মুখটি নেমেছে মদনপুর-নয়াপুর সড়কের ঠিক মাঝখানে। অন্যদিকে দক্ষিণ প্রান্তের মুখটিও নেমেছে মদনপুর-মদনগঞ্জ সড়কের ঠিক মাঝখানে। ব্রিজে উঠতে কিংবা নামতে হলে দুই দিক দিয়েই দুটি সড়ক হেটে পার হয়ে যেতে হয়। বিষয়টি খুবই বিস্ময়কর! ফুটওভার ব্রিজের উভয় পাশেই রয়েছে সিএনজি, অটো ও রিকশার স্ট্যান্ড। একই সাথে বন্দর উপজেলার একমাত্র প্রধান সড়ক হওয়ায় এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করছে সকল প্রকার যানবাহন। বিশেষ করে বিভিন্ন সিমেন্ট কারখানার যানবাহনসহ বন্দরের বিভিন্ন মিল কারখানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ভারি যানবাহনও চলাচল করছে এই সড়কটি দিয়ে। এরফলে এই সব যানবাহনের ঝুঁকি নিয়েই রাস্তা পার হয়ে ফুটওভার ব্রিজের উঠতে কিংবা নামতে হচ্ছে পথচারীদের। এখানকার মানুষের প্রশ্ন, যে ফুটওভার ব্রিজ ঝুঁকিমুক্ত রাস্তা পারাপারের জন্য নির্মাণ করা হয়, সেই ফুটওভার ব্রিজে উঠতে কিংবা নামতে হলেও যদি ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হতে হয় তাহলে এত টাকা খরচ করে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণে কি লাভ হলো!
মদনপুর এলাকার ব্যবসায়ী নাদিম আহমেদ ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের এই এলাকাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখান দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার লোককে ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার হতে হতো। তাই এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় কোন ফুটওভার ব্রিজ ছিল না বলে বন্দরবাসী দীর্ঘদিন যাবত ফুটওভার ব্রিজের দাবি জানিয়ে আসছিল। যার ফলশ্রুতিতে এই ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হয়। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় ব্রিজের নকশাটি এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যা পথচারীদের ঝুঁকিমুক্ত পারাপারে কাজে আসছে না। তিনি বলেন, সাইনবোর্ডের ফুটওভার ব্রিজটির এক পাশেও এমন রাস্তার মাঝে নামানো হয়েছে। কিন্তু সেটারও একটা কারণ আছে। কিন্তু এই ফুটওভার ব্রিজটির দুই পাশেই কেন এমন রাস্তার উপর নামানো হয়েছে তা আমাদের সাধারণ জনগণের বোধগম্য নয়। এই ফুটওভার ব্রিজের নকশাই এমন করা হয়েছে নাকি ঠিকাদারের কাজে ত্রুটি হয়েছে সেটা দেখার বিষয়। দায়িত্ববান লোকেরা এমন একটা কাজ কীভাবে বুঝে নিয়েছে তা আমাদের বোধগম্য নয়।
বন্দর ধামগড়ের বাসিন্দা শিক্ষানুরাগী, কবি ও সাহিত্যিক মহিউদ্দিন আহমেদ যুগের চিন্তাকে বলেন, একটি স্থাপনা তৈরি করার পূর্বে প্রকৌশলীরা তা থেকে সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিতের বিষয়টি মাথায় রেখে ডিজাইন বা নকশা করার কথা, কিন্তু এই ফুটওভার ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়েছে সম্পূর্ণ অপরিকল্পিতভাবে। এই কাজের সাথে জড়িত থাকা প্রকৌশলীরা হয় অদক্ষ অথবা যেনতেনভাবে এই কাজটি করার তাড়ায় ছিল। তা নাহলে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তৈরি করা ফুটওভার ব্রিজটির নকশা এমন করা হবে কোন যুক্তিতে! তা আমাদের মাথায় আসছে না। খুব শীঘ্রই এই ফুটওভার ব্রিজের সংস্কার করা প্রয়োজন। এখানে মহাসড়কের উত্তর পাশ থেকে যারা আসবে তাদেরও মদনপুর-নয়াপুর সড়ক পার হয়ে ব্রিজে উঠতে হয়, আবার দক্ষিণ দিকে উঠতে হলেও মদনপুর-মদনগঞ্জ সড়ক পার হয়ে রাস্তায় উঠতে হয়। উভয়পাশেই সিএনজি, অটো, মিশুকের ঘিঞ্জিসহ এই সড়কগুলো দিয়ে অনেক ভারি যানবাহন চলাচল করে।