শিল্পপতি প্রার্থীদের নিয়ে অন্যান্য প্রার্থীদের অস্বস্তি

যুগের চিন্তা রিপোর্ট
প্রকাশ: ১১ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০০ এএম

শিল্পপতি প্রার্থীদের নিয়ে অন্যান্য প্রার্থীদের অস্বস্তি
সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে নারায়ণগঞ্জের দুজন বিশিষ্ট শিল্পপতি সরাসরি বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী হওয়ার পর থেকেই অস্বস্তি দেখা দিয়েছে অন্যান্য প্রার্থীদের মধ্যে। প্রতিনিয়ত বিএনপির শিল্পপতি প্রার্থীদের নিয়ে কাউন্টার বক্তব্য রাখছেন অন্যান্য প্রার্থী এবং সমর্থকরা। এদিকে গরম তেলে ঘি ঢালার জন্য মহানগরের নেতাদের মন্তব্য করার ইস্যু তৈরী করে দিচ্ছেন নানা বক্তব্য কর্মকান্ডের মাধ্যমে শিল্পপতি প্রার্থীরা। যেটা নারায়ণগঞ্জ মহানগরের দলীয় শীর্ষ পদে থাকা নেতারা কোন ক্রমেই ছাড় দিচ্ছে না।
সূত্র বলছে, সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী শিল্পপতি মাসুদুজ্জামান বিএনপির সদস্য হিসেবে যোগদানের পর থেকেই নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির নেতাদের মধ্যে তাঁকে নিয়ে অস্বস্তি শুরু হয়। শুরু হয় তাঁকে নিয়ে নানাবিধ মন্তব্য কেননা মাসুদুজ্জামানের বলয়ে যোগ দিচ্ছেন মহানগর বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের অনেকেই। এদিকে দলে যোগাদানের পরই পরই মাসুদুজ্জামান তাঁকে নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে এমনটা জানানোর পর সংবাদ সম্মেলন করে তাঁকে নিয়ে ষড়যন্ত্রের বিষয়টি স্পষ্ট করেন। এদিকে শিল্পপতি মাসুদুজ্জামান বিএনপির সদস্য হিসেবে যোগদানের পর আরেক শিল্পপতি আবু জাফর বাবুল নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বহু আগেই প্রার্থী হয়ে থাকলেও জোড়ে শোড়ে বিএনপির ব্যানারে শিল্পপতি বাবুলের কার্যক্রম শুরু হয়ে গিয়েছে। এদিকে মাসুদ বলয়ের নেতাদের অভিমদ মাসুদুজ্জামানকে মনোনয়ন প্রতিযোগীতায় দমাতে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন খান এবং সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপুর ইন্ধন দিয়ে শিল্পপতি বাবুল সক্রিয় করে তুলেছেন। তবে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন খান এবং সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু। এছাড়া নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক সাংসদ আবুল কালাম পুত্র আশা এই বিশিষ্ট দুই শিল্পপতিকে উদ্দেশ্য করে নানাবিধ মন্তব্য করছেন।
গত ৯অক্টোবর নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী শিল্পপতি মাসুদুজ্জামান সংবাদ সম্মেলন করে নয়া আলোচনা সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন। তার এই বক্তব্যের পর নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন খান বলেছেন, অনেক শিল্পপতি সালমান এফ রহমানের মতো টাকা কামাতে রাজনীতিতে আসছে। সুসময়ে টাকা কামাতে বিএনপির মনোনয়ন বাগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। এই শিল্পপতিকে দুঃসময়ে পাওয়া যাবে না। তারেক রহমানের ওপর আমাদের আস্থা আছে। তিনি ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করবেন। নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু বলেন, ঠাকুর ঘরে কে রে, আমি কলা খাইনা। অর্থের জোরে কেউ নিজেকে নেতা সাজাতে পারে না। মাসুদুজ্জামান মাসুদ মহানগর বিএনপির ব্যানারে যে কয়েকটি কর্মসূচি পালন করেছেন, তা দলের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করার উল্লেখযোগ্য ঘটনা। গত ২২সেপ্টেম্বর মাসুদ যখন যোগদান করেন, তখন মহানগরের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন এবং স্বাগত জানিয়ে তাঁকে দলের নিয়ম ও চেইন অব কমান্ড মেনে চলতে বলা হয়েছিল। সেদিন মাসুদ কর্মী হিসেবে যোগদান করেছেন ও নিয়ম নীতি মেনে মহানগরের নেতৃত্বে চলার কথা বললেও, আদো সে সেটা করে নাই। এখনো সে আমাদের সাথে বসে এক কাপ চাও খায়নি। নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল কাউছার আশা বলেন, আমরা কোনো বিত্তশালী মানুষ না বা বর্তমান প্রেক্ষাপটে এতো অলস অর্থ নাই যে, কারো বিরুদ্ধে ৩০ লক্ষ টাকা দিয়ে কাউকে অপমান অপদস্থ করবো। এই ধরণের পারিবারিক বা ঐতিহ্য কোনটাই আমরা বিলং করি না।
প্রসঙ্গত, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী মাসুদুজ্জামান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, তাঁর রাজনৈতিক ক্যারিয়ার বিনষ্ট করতে একটি মহল ৩০ লাখ টাকা খরচ করে তাঁর বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মিথ্যা মামলা সাজানোর চেষ্টা করছে। তাঁকে মনোনয়নের দৌড় থেকে দূরে রাখতে এবং দলের কাছে হেয় প্রতিপন্ন করতে বিএনপির ‘ঐতিহ্যবাহী একটি পরিবার’ এই জঘন্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। যে গ্রুপটিকে ভাড়া করা হয়েছে, তারাই এসে তাঁকে এই ষড়যন্ত্রের কথা জানিয়েছে। তিনি জানান, ঐ গ্রুপের পর একজন প্রথমে আমাকে ফোন করে বলে, আপনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে, আপনার সাথে এ ব্যপারে কথা বলতে চাই। পরে আমি তাদের আমার অফিসে আসতে বলি।তারা অফিসে এসে তাঁকে জানায় যে, এই মামলার জন্য ৩০ লাখ টাকা ভাড়া ঠিক করা হয়েছে এবং ইতোমধ্যে ১৫ লাখ টাকা অগ্রিম হিসেবে দেওয়া হয়েছে। ষড়যন্ত্রকারীরা তাঁকে জানিয়েছে, তাদের কাছে মামলার ‘যাবতীয় প্রমাণ’ও তৈরি আছে। ষড়যন্ত্রের প্রক্রিয়া জানিয়ে মাসুদ বলেন, মামলা হওয়ার পর পরই ভাড়াটে গ্রুপটি প্রায় এক হাজার লোক নিয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যাবে। তাদের মূল উদ্দেশ্য হলো—কেন্দ্রে গিয়ে মাসুদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করে দলের কাছে তাঁর ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করা এবং তাঁকে যেন কোনোভাবেই মনোনয়ন দেওয়া না হয়, সেই বিষয়ে চাপ সৃষ্টি করা। মূলত, বর্তমানে সকল ঘটনা বিষয় বস্তু মিলিয়ে বলা যায় বিএনপির শিল্পপতি প্রার্থীদের নিয়ে অন্যান্য প্রার্থীদের অস্বস্তি দেখা দিয়েছে।