Logo
Logo
×

রাজনীতি

আবারও আলোচনায় শহরের বিষফোড়া মৌমিতা

Icon

লতিফ রানা

প্রকাশ: ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০০ এএম

আবারও আলোচনায় শহরের বিষফোড়া মৌমিতা

আবারও আলোচনায় শহরের বিষফোড়া মৌমিতা

Swapno

# মৌমিতার বেপরোয় চলাচলে গতকাল নিহত ১, আহত ২

# জুলাই মাসে দুই মৌমিতার প্রতিযোগিতায় পিষে মারা যায় একজন

# চাষাঢ়ার যানজটে মৌমিতার বড় ভূমিকা


যানজট হলো নারায়ণগঞ্জের বিষফোড়া। যা কমাতে এবং নিয়ন্ত্রণ করতে হিমশিম খাচ্ছে প্রশাসন এবং ধুঁকে ধুঁকে ভুগছে নগরবাসী। আর এই যানজট সমস্যার একটি অন্যতম কারণ হিসেবে ধরা হয় মৌমিতা পরিবহনের স্বেচ্ছাচারিতাকে। বেপরোয়া চলাচল, স্টাফদের উগ্র আচরণ, শহরের খানপুর থেকে চাষাঢ়া শহীদ মিনার পর্যন্ত পুরো জায়গা দখল করে রাখা এবং সামনে পিছনে থাকা কোন গাড়িকে গুরুত্ব না দিয়ে ‘ড্যাম কেয়ার’ ভাব নিয়ে গাড়ি চালানো তাদের নিত্যদিনে আচরণ বলে অভিযোগ। এর আগে নারায়ণগঞ্জের প্রশাসন, এমপি ও মেয়রসহ নগরবাসীর অভিযোগ ও আপত্তি থাকার পরও পরিবহনটির ক্ষমতা ও ছিল অভাবনীয় যা এখনও বিদ্যমান। ২০১৯ সালে বিআরটিএ নারায়ণগঞ্জ সার্কেলের তৎকালীন সহকারি পরিচালক (প্রকৌশলী) সৈয়দ আইনুল হুদা চৌধুরী জানিয়েছিলেন, তখন মৌমিতার ৩০টি বাসের অনুমোদন ছিল। অথচ তখন এই রুটে কমপক্ষে ৭০ থেকে ৮০টি বাস চলাচল করতো বলে জানা গেছে। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন মহল থেকে মৌমিতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আসলেও মৌমিতার দৌরাত্ম কমেনি বরং আরও বেড়েছে। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে নারায়ণগঞ্জ বিআরটিএ’র তৎকালীন সহকারী পরিচালক (প্রকৌশলী) মো. শামসুল কবীর জানান, তখন মৌমিতা পরিবহনের অনুমোদন ছিল ৭৮টি গাড়ির। যদিও এই গাড়ির প্রকৃত সংখ্যা শতাধিক বলেও জানিয়েছিলেন তিনি।

 

গতকাল সোমবার তাদের এই উগ্র আচরণের সর্বশেষ শিকার হয়ে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডে প্রাণ দিয়েছেন মোজাম্মেল হক (৫৫) নামে এক পথচারী। এসময় বাসের আঘাতে গুরুতর আহত হন ইজিবাইকের দুই চালক আনিসুর রহমান (৩৮) ও রানা বাবু (৪০)। এই ঘটনায় স্থানীয় বিক্ষুব্ধ জনতা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে বাসটি ভাঙচুর করে সড়কে অগ্নিসংযোগ করে। একই সাথে বাসচালক রুবেল (২৪) ও হেলপার নাঈম শেখকে (২৫) গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেন জনতা। ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পরও কমেনি তাদের দাপট, এখন বীরদর্পে শহরজুড়ে অবৈধ রাজত্ব করে যাচ্ছে এই মৌমিতা পরিবহন। অথচ এই পরিবহনের নাকি শহরে প্রবেশেরই কোন অনুমতি নেই। এর আগে গত ৮ জুলাই ঢাকার বকশি বাজার এলাকায় মৌমিতা পরিবহনের দুটি বাস যাত্রী তোলার প্রতিযোগিতা করার সময় তাদের দুই বাসের মধ্যে পিষ্ট হয়ে প্রাণ হারান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী রিফাতের বাবা জহুরুল হক সেলিম (৫২)। এতে ক্ষুদ্ধ হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মৌমিতার ১০টি বাস আটক করে খেলার মাঠে নিয়ে রাখে। আর এসব দুর্ঘটনাগুলো ঘটে শুধুমাত্র পরিবহন স্টাফদের বেপরোয়া আচরণের কারণে।

 

গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যম থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী মেয়াদোত্তীর্ণ, ফিটনেসবিহীন ও অনুমোদনবিহীন লক্কর-জক্কর মার্কা এসব গাড়ি শুধুমাত্র খুটির জোরে কোন নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা ছাড়াই দেদারসে চালিয়ে যাচ্ছে শহরের বুকের উপর দিয়ে। শহরের খানপুর থেকে শুরু করে চানমারি এলাকা জুড়ে তাদের নিদিষ্ট কোন টিকেট কাউন্টার ছাড়াই যত্রতত্র পার্কিং, স্ট্যান্ডিংয়ের মাধ্যমে যাত্রী তুলছে মৌমিতা। এরমধ্যে খানপুর থেকে চাষাঢ়া শহীদ মিনার পর্যন্ত পুরো এলাকাজুড়ে দখল নিয়ে রাখে মৌমিতা গাড়িগুলো। এখানে অন্যকোন গাড়ি চলাচল করতে পারলো কি না, কিংবা এম্বুলেন্সসহ বিভিন্ন জরুরী পরিবহনগুলো চলতে পারলো কি-না এগুলো দেখার কোন সময়ই যেনো তাদের হাতে নেই। তাই শহরের বিভিন্ন মহল থেকে এসব গাড়িগুলোকে নিয়ন্ত্রণের জন্য চাপ আসলেও দেখা যায় প্রশাসনের অসহায় দৃশ্য। এমনকি শহরের যানজটের একটি অন্যতম কারণ হিসেবেও এই মৌমিতা পরিবহনকে চিহ্নিত করেন সচেতন মহল। যার প্রমাণ পাওয়া যায় গত বছরের প্রথম দিকে যখন তৎকালীন দুই এমপি, মেয়র, জেলা প্রশাসক ও নারায়ণগঞ্জ পুলিশের যৌথ সিদ্ধান্তে শহরের মধ্যে বেশ কিছু দিন মৌমিতা পরিবহন প্রবেশ রোধ করা হয় তখনকার চিত্রে। আগের দিনও শহরের মধ্যে যে যানজট সৃষ্টি হয়েছিল, মৌমিতা প্রবেশ না করায় সেই যানজট অর্ধেকে নেমে আসে।

 

একটি সূত্র থেকে জানা যায়, মৌমিতা ট্রান্সপোর্ট লিমিটেড নারায়ণগঞ্জ শহরের খানপুর থেকে গাজীপুরের চন্দ্রা পর্যন্ত যাত্রী পরিবহন করে। এর আগে বিভিন্ন মহল অভিযোগ করে দাবি করেন তাদের এই পরিবহনের অনুমোদন সাইনবোর্ড পর্যন্ত। তাই নারায়ণগঞ্জ শহরে প্রবেশ করা তাদের জন্য আইনগত বৈধ নয়। তাই এই পরিবনহনকে শহরে প্রবেশের অনুমতি না দেওয়ার দাবি জানিয়ে প্রশাসনসহ বিভিন্ন জনপ্রতিনিধির কাছে দাবিও জানিয়েছিলেন তারা। কিন্তু এই পরিবহনের চেয়ারম্যান সাবেক ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার স্ত্রী আফরোজা জামান। তাই একজন প্রভাবশালী পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী চেয়ারম্যান হওয়ায় এই পরিবহনের বিরুদ্ধে কেউ কোন ব্যবস্থা গ্রহণের সফলতা অর্জন করতে পারেননি বলেও জানা যায়। এমনকি নারায়ণগঞ্জ এর সাবেক জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন মিয়া এই মৌমিতার দাপটে আক্ষেপ করে বলেছিলেন, “ যখনই মেট্রো হল দিয়ে আসি তখনই দেখি মৌমিতার ৩টি বাস একসাথে দাঁড় করিয়ে আমার গাড়ি আটকে দিয়েছে। আমার সঙ্গে থাকা পুলিশ যখন নামে, তখন তাড়াহুড়ো করে রাস্তা ছাড়ে। অনেক সময় মনে হয় নিজেই নেমে মারধর করি। পরে ভাবি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হয়ে নিজে কিভাবে মারি? আমি যদি মারি, তাহলে বিচার কে করবে? এটা ভেবে থেমে যাই। কয় হাজার অনুমতি দেয়া হয়েছে জানি না।”

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন