
রাজনীতির মাঠে উদ্বেগ!
সামনে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। একদিকে দল গুছানো অপরদিকে প্রতিপক্ষের গতিবিধি লক্ষ্য করা। সব দিক মিলিয়ে বিএনপি,জামায়াতে ইসলামী,ইসলামী আন্দোলন,জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম,গন পরিষদ,এনসিপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীদের মধ্যে টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছে। নির্বাচনের আগে রোড ম্যাপ কি হবে তা নিয়েও মহা ছক কষছে রাজনৈতিক দলগুলো। ইতমধ্যে নারায়ণগঞ্জেও চলছে বিভিন্ন প্রার্থীদের চুল চেরা বিশ্লেষণ। তবে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে বেশ কিছু ঘটনার অবতারণা হতে পারে বলেও মন্তব্য রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জে বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে অনৈক্য বিদ্যমান। এছাড়া পিআর নিয়েও যে রাজনৈতিক অস্থিরতা রয়েছে তা সমাধান না হলে তফসিল ঘোষণার আগে রাজিৈনতক দলগুলো যে আন্দোলন করবে তা নিয়েও চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।
আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পর থেকে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সৌহার্দপূর্ন মনোভাব ছিলো তা এখন অনেকটা ম্রিয়মান। নির্বাচন যতো ঘনিয়ে আসছে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে চলছে টানপোড়ন। বেশ কিছু বিষয়ে ঐক্য হলেও বিশেষ করে পিআর পদ্ধতি নিয়ে চলছে দরকষাকষি। বেশিরভাগ ইসলামী দল পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন দাবী করে আসছে। তবে নির্বাচন কমিশন বলছে ‘আরপিওতে পিআর নেই এবং আরপিও সামনে রেখেই কমিশনকে এগোতে হচ্ছে’। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের এমন বক্তব্য নিয়েও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জে এখনো পর্যন্ত নির্বাচনী মাঠ গুছানো বাকি রয়েছে দলগুলার। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ছাড়া বাকি দলগুলোর হাতেগুনা কয়েকজন বাদে প্রার্থী বা কর্মীদের মধ্যে এখনো পর্যন্ত রাজনীতির মাঠে দেখা যাচ্ছে না। বিশেষ করে বিএনপির মধ্যে এখনো অনিশ্চয়তা রয়েছে প্রার্থী নির্বাচনে। সবদিক মিলিয়ে বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি এখনো মাঠে থাকলেও অনেকটা নীরব ভুমিকায়।
নারয়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি প্রতিটি থানা এলাকায় একাধিক বলয় থাকার কারনে কেন্দ্র যেমন বিব্রত অবস্থায় রয়েছে,তেমনি থানা নেতৃবৃন্দও রয়েছেন গা ছাড়া ভাবে। প্রতিটি থানা এলাকায় বিএনপির কর্মী পরিচয়ে বেশ কিছু ব্যক্তির বিতর্কিত কর্মকান্ডেও অনেকটা কঠোর অবস্থানে দলের নীতি নির্ধারনী ফোরাম। জাতীয় নির্বাচনের প্রশ্নে বিএনপির নেতাকর্মীরা হয়তো একাট্টা হয়ে মাঠে থাকবে। কিন্তু নির্বাচন পরবর্তী সময়ে দলের মধ্যে কোন্দল আশংকা করেছে অনেকে। বিশেষ করে আওয়ামীলীগ সময়ে মুষ্ঠিমেয় মানুষের কাছে নারায়ণগঞ্জ জেলায় যেমন ক্ষমতা কুক্ষিগত ছিলো,ঠিক তেমনই হবে বিএনপির বেলায়। এমন শংকাও উড়িয়ে দিচ্ছে না কেউ কেউ। নির্বাচনের পূর্বে বিভিন্ন সেক্টর দখলে যে হিড়িক পড়েছিলো তা নিয়েও জেলা বিএনপির অনেকেই বিরক্ত ।
বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর কর্ম পরিকল্পনা মোতাবেক এগিয়ে গেলেও অন্য ইসলামী দলগুলোর সাথে বেশ কিছু বিষয় নিয়ে মত প্রার্থক্য রয়েছে। এই মত প্রার্থক্য নির্বাচনের আগে শেষ হয়ে যাবে বলেও মনে করছেন বিশ্লেষকরা। পিআর নিয়ে এই দুটি দল ছাড়া বাকি ইসলামী একমত পোষণ করেছেন। সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন মাজার ও খানকায় হামলার ঘটনায় ইসলামী দলগুলো তাদের কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। ফলে সাধারণ জনগনের মধ্যে ইসলামী দলগুলোর প্রতি কিছুটা মনোক্ষুন্ন। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড করতে হলে দেশের সব ধরনের মতাদর্শের প্রতি সম্মান না দেখালে তাদের ভোটের মাঠে বড় ধরনের খেসারত দিতে হতে পারে বলে অনেকে আশংকা করছেন।
অপরদিকে,বাংলাদেশে ইসলামপন্থী দলগুলোর মধ্যে মতের ভিন্নতা থাকলেও 'এক বাক্সে ভোট’ আনার ব্যাপারে তারা একই সুরে কথা বলছেন। কওমী মাদ্রাসা ভিত্তিক পাঁচটি দল নির্বাচনী জোট করার তৎপরতা চালাচ্ছেন। অন্যতম প্রধান দল বিএনপিও ইসলামী দলগুলোকে কাছে টানার চেষ্টায় রয়েছে। তবে ইতিমধ্যে ওলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ বিএনপির সাথে জোট করেছেন। তবে জামায়াতের সাথে বিএনপি এবার জোট না করার সম্ভাবনাই বেশি। শেষ পর্যন্ত ইসলামপন্থী রাজনীতির মেরুকরণ কোথায় গিয়ে ঠেকবে,এই প্রশ্নে এসব দলের মধ্যেই চলছে নানা আলোচনা।