মনোনয়ন লড়াইয়ে নারায়ণগঞ্জের ৫টি আসনে বিএনপির একাধিক প্রত্যাশীরা জেলা। নির্বাচনের দিন যতটা ঘনিয়ে আসছে ততই প্রতিটি আসনেই বাড়ছে বিভক্তি ও লড়াই। মনোনয়ন পেতে সম্ভাব্য প্রার্থীরা কেন্দ্র থেকে নিজ আসনের পাড়া মহল্লায় ছুটছেন। তবে বিএনপি’র সাবেক সংসদ সদস্যরা অনেকটাই নির্ভার। ৫টি আসন নিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা। কিন্তু গত ১৬ বছরে আওয়ামী লীগ নির্বাচনের নামে দখল করে রেখেছিল পুরো নারায়ণগঞ্জ। এ সময়ে আওয়ামী লীগের শাসন আর শোষণে বিএনপি হয়ে পড়ে কোণঠাসা। মামলা, হামলা আর নির্যাতনে অধিকাংশ নেতাই ছিলেন আত্মগোপনে। কিছু নেতা অবশ্য আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা করে এলাকায় ছিলেন। গত বছর ৫ই আগস্টের পর হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন নেতাকর্মীরা। এলাকায় প্রবেশ করেন। কিন্তু এ প্রবেশ তাদের সুখ দিতে পারেনি। কোনো কোনো নেতা আওয়ামী লীগের রেখে যাওয়া চাঁদার স্পটগুলো দখলে নেয়। কেউবা নতুন করে চাঁদার স্পট তৈরি করে। পাশাপাশি আগামী নির্বাচন নিয়ে জড়িয়ে পড়ে গ্রæপিং। প্রতিটি আসনেই সম্ভাব্য প্রার্থীদের অনুসারী তৈরি হয়।তারা মিছিল, মিটিংয়ের পাশাপাশি অন্য পক্ষের সঙ্গে সংঘাত, সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ অবস্থায় সাধারণ মানুষ তাদের প্রতি ক্ষুব্ধ। কিন্তু প্রকাশ্যে কেউ কিছু বলতেও পারছে না। এদিকে আগামী বছরের ফেব্রæয়ারির প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি প্রার্থী মনোনয়ন ও আসন ভাগাভাগিতে নজর বিএনপি নেতাদের। এদিকে বর্তমানে ইসলামী আন্দোলন, জামায়াতে ইসলামী, খেলাফত মজলিস নিজেদের প্রার্থী ঘোষণা করায় বর্তমানে প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পাড় করছেন সেই দলের নেতাকর্মীরা। এদিকে মনোনয়ন চ‚ড়ান্ত না হওয়ায় বর্তমানে প্রচারণা সাইডে রেখে মনোনয়নে নজর বিএনপির। কিন্তু বর্তমানে আলোচনা উঠছে আগামী এক মাসের মধ্যেই প্রার্থী ঘোষণা ও প্রচারণা শুরু হতে পারে বিএনপি সেই দিকে বিবেচনা করেই কাজ করছে। যাকে ঘিরে বর্তমানে প্রচারণার থেকে বেশি সময় মনোনয়নে নজর রেখেছে। তা ছাড়া বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা মনে করছেন, মনোনয়ন পেলেই আগামী নির্বাচনে অটো ভোট পেয়ে সাংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া যাবে। কিন্তু ডাকসু-জাকসু নির্বাচনের পর এবার মনোনয়ন পেলেও জয় নিয়ে চিন্তিত রয়েছে বিএনপি। তা ছাড়া গত ১৩ মাস বিএনপির মাথায় চিন্তা ছিলো নির্বাচনের কিছু মাস পূর্বে মনোনয়নে বিএনপির প্রার্থী ঠান্ডা মাথায় ঘোষণা করবেন কিন্তু ডাকসু ও জাকসু নির্বাচনের পর এবার তাদের চিন্তা হলো ক্লিন ইমেজ দিয়ে জয় ছিনিয়ে আনা সে দিকে লক্ষ্য রেখে আগামী ১ মাসের মধ্যে বিএনপির মনোনয়ন দিয়ে প্রার্থী ঘোষণা করে ব্যাপক প্রচারণা সৃষ্টি করে নির্বাচনী আমেজ তৈরি করতে হবে, জনগণের কাছে বিএনপির ১৩ মাসের সকল ভ‚ল ক্ষমা চেয়ে ধানের শীর্ষের প্রতি জনগণকে আকৃষ্ট করাই মূল কাজ হিসেবে হাতে নিবে বিএনপি সেই হিসেব বিবেচনায় বর্তমানে দ্রæত প্রতিটি জেলা ও মহানগরে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনগুলো শক্তিশালী করতে কাজ শুরু করতে যাচ্ছে বিএনপি এর পরপরই নির্বাচনী প্রচারণায় আমেজ ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ করা হবে বলে জানিয়েছে সূত্র। এদিকে বর্তমানে নারায়ণগঞ্জের ৫টি আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা যে যার যার মতো কাজ করে আসলে ও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের মনোনয়ন দ্ব›েদ্ব বিভক্তি প্রকাশ্যে। এই আসনে দুই শিল্পপতির সাথে বিএনপির চার নেতার মনোনয়ন যুদ্ধ শুরু হয়েছে। তা ছাড়া ইতিমধ্যে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে টাকার জোড়ে সব বিএনপিসহ অঙ্গসংগঠনের নেতাদের কিনে ফেলা মডেল গ্রæপের কর্ণধার শিল্পপতি মডেল মাসুদের নানা বেফাঁস বক্তব্যে ঠিক করতে কড়া হুঁশিয়ারী দিয়েছেন মহানগর বিএনপির আহŸায়ক এয. সাখাওয়াত হোসেন খান ও সদস্য সচিব এড. আবু আল ইউসুফ খান টিপু। এরা দুইজন ও একই আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী। তা ছাড়া বর্তমানে নারায়ণগঞ্জের বাকি ৪টি আসন ঠান্ডা থাকলে ও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে মনোনয়ন দ্ব›দ্ব পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে ইতিমধ্যে স্বগরম হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক অঙ্গন।

গত (৩০ সেপ্টেম্বর) বিএনপির নবাগত নেতা মডেল গ্রæপের কর্ণধার মাসুদুজ্জামান মাসুদ বন্দরে পূজা মন্ডব পরিদর্শন শেষে তিনি বলেন, কোন ধরনের দলীয় পদ ও দলকে ব্যবহার করে ব্যাক্তি স্বার্থ উদ্ধার করতে চাই না। একটা পক্ষ ত্যাগ ত্যাগ বলতে বলতে হাপিঁয়ে যাচ্ছে। আমরা ও দেখেছি গত ৫ আগষ্টের পরবর্তী সময়ে ত্যাগের কত মূল্য দিতে হয়েছে শহর-বন্দরবাসীকে। আমরা গেন রাজনীতি করতে চাই না, আমরা নতুন ধারার রাজনীতি করতে চাই। আপনারা হিন্দু-মুসলিম ভাইয়েরা আমার সঙ্গে থাকবেন।

একই দিনে তার এমন বক্তব্যে রাতে পাল্টাপাল্টিভাবে বন্দর ঢাকাশরী মন্দিরসহ বিভিন্ন পূজা মন্ডব পরিদর্শনকালে এক বক্তব্যে মহানগর বিএনপির আহŸায়ক ও সদস্য সচিব মাসুদুজ্জামানকে উদ্দেশ্য করে নানান কড়া বার্তা দেন।

মাসুদুজ্জামানকে উদ্দেশ্য করে মহানগর বিএনপির আহŸায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খান বলেছেন, আমাদের বিএনপিতে একজন শিল্পপতি গত (২২ সেপ্টেম্বর) ২০ টাকা দিয়ে নতুন সদস্য ফ্রম পূরন করেছেন সারা বাংলাদেশে এমন ৫ কোটি লোক এমন নতুন সদস্য ফ্রম ক্রয় করবেন। ইতিপূর্বে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহনগরীতে কয়েক লাখ লোক নতুন সদস্য ফ্রম কিনে বিএনপির সদস্য হয়েছেন। কিন্তু গত ২২ তারিখে সেই শিল্পপতি সদস্য হয়ে নারায়ণগঞ্জের মালিক বনে গিয়েছেন। তিনি এখন যারা দলের জন্য যারা মাসের পর মাস জেল খেটেছে, আওয়ামী লীগের নির্যাতনসহ শত শত মামলা খেয়ে ঘর ছাড়া হয়ে পালিয়ে বেড়িয়েছে গত ১৫ বছর মিছিল মিটিংয়ে আওয়ামী লীগের নির্যাতন সহ্য করে উপস্থিত ছিলো গতকাল এসেই আজকে তাদের বিরুদ্ধে কথা বলবেন এটা কিন্তু মানুষ ভালো চোখে দেখবে না, সুতরাং সাবধান হয়ে যান।

তিনি বলেন, আমরা আপনার উপরে সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলাম আপনি যদি সহযোগীতার হাতকে দুর্বলতা মনে করেন তাহলে সেটার দায় দায়িত্ব আপনাকে বহন করতে হবে। দলের চেইন অব কমান্ড মেনে চলুন। তা না হলে আপনার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব এড. আবু আল ইউসুফ খান টিপু নতুন সদস্য মডেল মাসুদকে হুশিয়ার দিয়ে বলেছেন, রাজনৈতিক বক্তব্য দেওয়া এখানে সমীচীন নয়, তারপরও বলতে চাই নারায়ণগঞ্জ বিএনপিতে যারা নতুন এসেছেন, বিশেষ করে কয়েকজন শিল্পপতি, তারা যেন দলের গঠনতন্ত্র ও চেইন অব কমান্ড মেনে কাজ করেন। কিন্তু মাত্র কয়েকদিন আগে যোগদান করেই আপনি দলের ব্যানার ব্যবহার করে পাল্টা কাজ করছেন। আপনার আশপাশে রয়েছেন ওসমান পরিবারের দোসররা, যারা দল থেকে বহিষ্কৃত। আন্দোলন-সংগ্রামে যাদের কোনো ভূমিকা ছিল না, বরং তারা কর্মীদের ভয় দেখাতেন।

তিনি আরো বলেন, আজ আপনি পূজা মÐপে গিয়ে রাজনৈতিক বক্তব্য দিচ্ছেন এবং বলছেন দলে বিভক্তি করবেন না। অথচ বিভক্তি তো আপনিই করছেন। আপনাকে এ দায়িত্ব কে দিয়েছে? তারেক রহমান কি দিয়েছেন? দলের নেতৃত্বের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করার কথা থাকলেও আপনি তা করেননি। আপনি যদি চেইন অব কমান্ড ভেঙে দলকে বিভক্ত করার চেষ্টা করেন, তবে বিগত বছরগুলোতে যারা ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন, তারা কিন্তু কোনোভাবেই ছাড় দেবেন না। আমরা তিল তিল করে এই দলকে দাঁড় করিয়েছি। আপনার শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালিকানা যেমন আপনার, তেমনি বিএনপি আমাদের ঘাম ও রক্তের বিনিময়ে গড়ে তোলা সংগঠন। একে ব্যক্তিগত সম্পত্তি মনে করার সাহস দেখাবেন না।

তিনি বলেন,  আপনি দলে এসেছেন, স্বাগত জানাই। তবে দলের আদর্শ, গঠনতন্ত্র ও নেতৃত্বকে অমান্য করে বিভক্তি তৈরি করলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমরা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে প্রস্তাব রাখব। ওসমান পরিবারের দোসরদের পৃষ্ঠপোষকতা করে বিএনপিকে দুর্বল করার ষড়যন্ত্র সফল হবে না।

নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মাঝে এমন বিভক্তি ও লড়াইয়ে সৃষ্টি হয়েছে নয়া সমীকরণ। বর্তমানে এই আসনে নয়া মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে নিজেকে ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি আরেক শিল্পপতি প্রাইম গ্রæপে কর্ণধার আবু জাফর আহম্মেদ বাবুল।

তা ছাড়া বর্তমানে ইসলামী দল প্রচারণায় ব্যস্ত থাকলেও মনোনয়ন না পেয়ে ও বর্তমানে বিএনপির একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশীরা মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। ইতিমধ্যে নারায়ণগঞ্জ-৩ ও ৪ আসন জুড়ে নিয়মিত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৩১ দফা জনগণের কাছে ছড়িয়ে দিচ্ছেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক সাংসদ সদস্য আলহাজ¦ মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন ও তার দুই ছেলে তা ছাড়া তিনি তার লোকদের ঘোষণা দিয়েছেন লিফলেটের মাধ্যমে বিএনপির নির্বাচনী প্রচারণা অবহৃত রাখতে। একইভাবে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে ব্যাপক প্রচারণায় রয়েছেন মনোনয়ন প্রত্যাশী নব্য বিএনপির সদস্য শিল্পপতি মাসুদুজ্জামান মাসুদ। এর বাহিরে ও মহানগর বিএনপির আহŸায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খান ও সদস্য সচিব এড. আবু আল ইউসুফ খান টিপু নানাভাবে মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে নিজেদের নির্বাচনী প্রচারণা অবহৃত রেখেছেন। তা ছাড়া এই আসনে নতুন প্রচরণায় নামার ঘোষণা দিয়েছেন আরেক শিল্পপতি আবু জাফর আহম্মেদ বাবুল। একইভাবে নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে মোস্তাফিজুর রহমান ভ‚ঁইয়া দিপু ও কাজী মনিরুজ্জামান মনির এবং নারায়ণগঞ্জ-২ আসনে নজরুল ইসলাম আজাদ এবং মাহমুদুর রহমান সুমন নানান কৌশলে প্রার্থী চ‚ড়ান্ত না পেয়ে ও নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যস্ত রয়েছেন। এদিকে বর্তমানে বিএনপিতে মূল টার্গেট মনোনয়ন সেই দিকে লক্ষ্য রেখেই কাজ করছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা যার ফলে একে অপর মনোনয়ন প্রত্যাশীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন বক্তব্যে ফুঁসে উঠছেন যাকে ঘিরে বিভক্তি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।