ফের রাজপথের কর্মসূচিতে জামায়াত-ইসলামী আন্দোলন

যৃুগের চিন্তা রিপোর্ট
প্রকাশ: ০১ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০০ এএম

ফের রাজপথের কর্মসূচিতে জামায়াত-ইসলামী আন্দোলন
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যেসব রাজনৈতিক দল একসঙ্গে ভূমিকা রেখেছিলো, সেই দলগুলোর মধ্যে এখন বিভক্তি স্পষ্ট। নির্বাচন এবং সম্ভাব্য ক্ষমতার লড়াইয়ে বিএনপি এবং জামায়াতের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে। এনসিপিও রাজনীতিতে তৎপর হয়েছে নিজস্ব বক্তব্য নিয়ে। কিন্তু বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে আবারও নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এবার তারা পাঁচ দফা দাবির পক্ষে ১২ দিনের যুগপৎ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে, যা আগামী ১ অক্টোবর থেকে শুরু হয়ে ১২ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে। দলটির নেতারা জানিয়েছেন, সরকারের প্রতি জনগণের ন্যায্য দাবি মেনে নেওয়ার আহŸান জানানো হলেও তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। ফলে বাধ্য হয়েই দ্বিতীয় দফা আন্দোলন শুরু করা হচ্ছে।
এদিকে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর মগবাজারের আল ফালাহ মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার এই কর্মসূচির ঘোষণা দেন। দলীয় কর্মসূচিত ঘোষনা অনুযায়ী নারায়ণগঞ্জ জেলা মহানগর জামায়াতে ইসলামীও ১ অক্টোবর থেকে মাঠে থেকে জনমত গঠনের লক্ষ্যে গণসংযোগ করে যাবেন। সেই সাথে দলীয় নির্দেশনা মতে তারা তা বাস্তবায়ন করে যাবেন বলে জানান।
দলটির ঘোষণা অনুযায়ী কর্মসূচির ধাপগুলো হচ্ছে ১. ১ থেকে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত ৫ দফা গণদাবির পক্ষে জনমত গঠনের লক্ষ্যে গণসংযোগ।. ১০ অক্টোবর ঢাকায় ও বিভাগীয় শহরে ব্যাপক গণমিছিল। ১২ অক্টোবর জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান। তাছাড়া জামায়াতের পাঁচ দফা দাবির মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো জুলাই সনদের বাস্তবায়ন এবং জাতীয় নির্বাচনকে পিআর পদ্ধতিতে (প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন) আয়োজন করা। তাদের দাবিগুলো হলো
১.জুলাই সনদের ভিত্তিতে পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। ২. নির্বাচন অবশ্যই পিআর পদ্ধতিতে হতে হবে। ৩. সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে। ৪. গণহত্যার বিচার দৃশ্যমান করতে হবে। ৫. বিশেষ ট্রাইব্যুনালে ভারতীয় তাবেদার ও ফ্যাসিবাদের দোসর জাতীয় পার্টি এবং ১৪ দলের বিচার করতে হবে। বিচার চলাকালীন তাদের কার্যক্রম নিষিদ্ধ রাখতে হবে। এর মধ্যেই জামায়াত নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে বলছে, তারা কোনোভাবেই নির্বাচনী দাবির প্রশ্নে আপোস করবে না।
অপরদিকে জামায়াতের এই নতুন কর্মসূচি রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে জুলাই সনদের আইনি বৈধতা ও পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবি নিয়ে সরকার ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের প্রতিক্রিয়া কেমন হবে তা এখন সবার নজরে। অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, এ ধরনের কর্মসূচি সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে এবং নির্বাচনকালীন রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ তৈরি করবে। জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্রঘোষিত কর্মসুচি বাস্তবায়নে নারায়ণগঞ্জ জেলা মহানগর জামায়াতে ইসলামী প্রস্তুত রয়েছে বলে জানান দলটির নেতৃবৃন্দ। এছাড়া জামায়াতে এই কর্মসুচির পাশা পাশি ইসলামী আন্দোলন সহ অন্যান্য একাধিক ইসলামী দল গুলোও নানা দাবী নিয়ে মাঠে নামছে। যা জেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীরাও বাস্তবায়ন করছে।
একই ভাবে নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত সহ সারাদেশে ১২ দিনের কর্মসূচি ঘোষনা করেছে ইসলামী আন্দোলন। আর এজন্য নারায়ণগঞ্জ জেলা মহানগর ইসলামী আন্দোলনের নেতাকর্মীরা তা বাস্তবায়নে রাজপথে সক্রিয় ভুমিকা পালনে প্রস্তুত রয়েছে। তবে তারা জামায়াতে ইসলামীর সাথে কর্মসুচি পালন না করলেও দলীয় ভাবে আলাদা করে কর্মুচি পালন করবেন।
এর আগেও একই দাবীতে রাজপথে আন্দোলন করেছে জামায়াতে ইসলামী সহ অন্যান্য ইসলামী দল গুলো। এতে সরকার তেমন কোন কর্ণপাত না করায় আবারও তারা ১২ দিনের কর্মসূচি যাচ্ছে। এতে করে নারায়ণগঞ্জ জেলা মহানগর পর্যায়ে দলের নেতৃবৃন্দরা প্রস্তুত রয়েছে তা বাস্তবায়নে।
নারায়ণগঞ্জ মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমীর আবদুল জব্বার বলেন, “জনগণ ন্যায্য অধিকার চায়। সরকার যদি সেই অধিকারকে অস্বীকার করে, তবে আমরা রাজপথে আন্দোলন চালিয়ে যাব। আমাদের এই আন্দোলন গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ। তাছাড়া দলীয় কর্মসূচি বাস্তবায়নে আমরা সর্বদা প্রস্তুত রয়েছি।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ নারায়ণগঞ্জ মহানগর সভাপতি মুফতি মাসুম বিল্লাহ বলেছেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পরে সংস্কার, বিচার ও নির্বাচনের ইস্যুতে আমরা সরকারকে সর্বাত্মক সহায়তা করেছি। কিন্তু দুঃখজনক বাস্তবতা হলো, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রধান চাওয়া “স্বৈরতন্ত্রের স্থায়ী বিলোপ” পূরণে কার্যকর কোন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা যায় নাই। জুলাই সনদে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ঐকমত্য হয় নাই, যে সব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে সেগুলোর আইনি ভিত্তি নিয়ে টানাপোড়েন এখনো শেষ হয় নাই। ফ্যাসিবাদের সঙ্গে জড়িতদের বিচারে ধীরগতি ও স্বল্পমাত্রা হতাশা তৈরি করেছে। পুলিশের হিসাবমতেই ফ্যাসিবাদের সঙ্গে জড়িত আটক হওয়া ব্যক্তিদের ৭৩ শতাংশ জামিন পেয়ে যাচ্ছে। আমরা ন্যায় প্রতিষ্ঠায় ইসলামী আন্দোলন ঘোষিত দলীয় সকল কর্মসূচি পালনে মাঠে থাকবো।